পকেট মার

পকেট মার

অনেক গুলো টাকা নিয়ে বাস থেকে নামলেন লোকটা! তাকে দেখেই টার্গেট করে ফেলে ছেলেটা! টাকাগুলি একটা কাপড়ের থলেতে ভরে এক মধ্য বয়ষ্ক লোক এক দোকানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো। ভাই পাউরুটি আর কলা আছে? দোকানি পাউরুটি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, কলা কয় হালি দেব?

লোকটি কিছুক্ষন ভেবে বলে, এক হালিই দেন! দোকানি ভেবেছিলো মনে হয় আরও বেশি নেবে তাই জিজ্ঞেস করে মাত্র এক হালি? লোকটা বলে, তাতেই হবে! লোকটা কলা পাউরুটির দাম দিতে কোমরে বাঁধা কাপড়ের পুটলি থেকে টাকা বের করে দেয়। দোকানী খেয়াল করে মোটামুটি অনেক টাকা ” দোকানী বলে, চাচা সাবধানে থাকবেন এখানে কিন্তু পকেট মারের অভাব নেই! লোকটা চিন্তিত মনে বলে, জ্বি আচ্ছা! সাবধানেই থাকবো!

তিনি পাউরুটি আর কলা নিয়ে চললেন এবং নিজের অজান্তেই তার পিছু নেওয়া লোককে সঙে করে। তার চেহেরায় রাজ্যের হতাশার ছাপ! এতগুলো টাকা সাথে করে নিয়ে যাচ্ছেন! সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই! রাস্তা দিয়ে হাটছেন ঠিক কিন্তু মনটা অন্য কোন খানে? হাঁটতে হাঁটতে একসময় রাস্তার মোড়ে এসে পড়লেন এখানে ফুটপাতের ওপর এত ভীড় যে ভালো করে হাঁটা যায় না ” ধাক্কাধাক্কি করতে হচ্ছে এগিয়ে যাবার জন্য। এমন সময় তিনি ধাক্কা লেগে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলেন, একটা যুবক তাকে ধরে ফেলে তাই রক্ষা! তিনি ছেলেটাকে ধন্যবাদ দিয়ে ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চলে এলেন। ছেলেটাও তার কাজে চলে গেল। আজ পিন্টুর খুব আনন্দের দিন চায়ের দোকানে সবাইকে সে চা খাওয়ালো। সে সমস্ত বিল সে পরিশোধ করে দিলো কারও জোরাজোরি ছাড়া!

বাজার থেকে ভালো ভালো বাজার করে সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে দিলো! এত দিনে যার যেটা আবদার ছিলো আজ পই পই করে মিটিয়ে দিলো! রাতের খাবার দাবার শেষ করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে এলাকার মোড়ে এসে বসে। ওখানে তার বন্ধু বান্ধবদের সাথে প্রতিদিনই আড্ডা হয়! ওদের মাঝে এক মাত্র সে কম লেখা পড়া! আর বাকি সবাই উচ্চ শিক্ষিত। ও সবচেয়ে গরীব! আর বাকি সবাই ধনীর দুলাল! কেউ ভালো চাকরি করে। কেউ করার চেষ্টায় আছে? কিন্তু সে কি করে? মনে মনে বলে, তা তো কারও কাছে প্রকাশ করা যায় না। অভাবের সংসার! তাই তাকে বাধ্য হয়ে অমন কাজে যেতে হয়েছে!

এখন করতে করতে পেশাদার হয়ে গেছে! রাত বারোটা বেজে যাচ্ছে প্রায়! সবাই আড্ডা শেষ করে! যে যার বাসায় চলে যায়! পিন্টুও গান গাইতে গাইতে বাড়ির দিকে চললো। বাড়িতে এসে দেখে চিৎকার চেচামেচি! কি হয়েছে জিজ্ঞেস করে কাছে গিয়ে দেখে ছোট বোনটা দা,য়ের উপর পড়ে গেছে! সারা ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে! তার মা তাকে কেঁদে বলে, তারাতাড়ি কিছু একটা কর? পিন্টু ও তার ছোট ভাই মিলে বোনকে মেডিকেল নিয়ে গেল। ছোট বোনের চিকিৎসা করাতে করাতে অনেক রাত হয়ে গেল। এখন বাড়ি ফিরতে হবে। তাই এমারজেন্সির সামনে এসে দাঁড়িয়ে রিকশা বা অটো খুঁজে দেখছে? এমন সময় দেখে একটা মধ্যে বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে মানুষের কাছে হাত পাতছে।

সে কাছে যেতেই বলে, বাবা! আমারে কিছু সাহায্য করুন? আমি খুব অসহায়! আমার টাকাগুলো আসার সময় হারিয়ে গেছে। কেউ বিশ্বাস করে দয়া করে কিছু দিচ্ছে। আবার কেউ ধান্ধাবাজ মনে করে সরে যাচ্ছে! পিন্টু দেখেই চিনতে পারে দুপুরের সেই চাচা! যাকে ফলো করতে করতে সে এই হাসপাতালের কাছাকাছি এসেছিলো। সেই ভিড়ের মধ্যে সে লোকটার টাকা মেরে দিয়েছিলো! কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে চাচা আপনার? বাবা! আমার ছেলেটা খুব অসুখ! ডাক্তার কবিরাজি কতকিছু দেখালাম গ্রামের মধ্যে কিন্তু লাভ হয়নি! যখন মরমর অবস্থা তখন হাসপাতালে আনলাম ডাক্তার বলে, অনেক টাকার খুব তারাতাড়ি!

ভিটে মাটির একটু বিক্রি করে টাকা জোগাড় করলাম কিন্তু টাকা গুলো আমার হারিয়ে গেছে। এই লোকটা হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো! পিন্টু লোকটাকে শান্তনা দিয়ে বলে, আপনার ছেলের এখন কি অবস্থা? ডাক্তার বলেছে এখনো যখন টাকা জোগাড় করতে পারলেন না। তখন পরে আমরা কিছু করতে পারবোনা? পিন্টুর হাত পা কেঁপে ওঠে শুনে এই টাকাগুলি হয়তো ছেলেটার চিকিৎসা করার জন্য লোকটা কত কষ্টে যোগাড় করেছে। হয়তো বিনাচিকিৎসায় ছেলেটি মারা যাবে!

এই লোকটার টাকা দিয়ে তার পরিবারের হাসি ফুটিয়েছে সে। বোনের চিকিৎসা করেছে। কিন্তু যার টাকা তার ছেলেই বিনাচিকিৎসায় হয়তো ধুঁকে ধুঁকে মরবে? এত পাপ তার সইবে কেমন করে? না জানি আরও কত মানুষ তার কারণে এমন ভাবে বিনা চিকিৎসায় মরেছে অথবা । হৃদয় ভাঙা হাহাকার করেছে। পিন্টু পাগলের মতো পকেট থেকে বাকি টাকা বের করে লোকটির হাতে দিয়ে পালিয়ে যায়। লোকটা পেছন হতে ডাকে বাবাজী এতো টাকা? পিন্টু মনে মনে স্থীর করে না খেয়ে থাকবে তবুও ও পথে আর নয়!

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত