কৃমির ঔষধ

কৃমির ঔষধ

খাওয়া মুখে দেওয়ার সাথে সাথে সাদিয়া বমি করতে লাগল।সকাল থেকেই বমি বমি ভাব ছিল। ভ্যাগিস তাঁর মা আজকে বাসায় নেই।না হলে যে কি হত! তাঁর সাথে পেট ব্যাথাও শুরু হল। তাড়াতাড়ি সাদিয়া ইমরানকে কল করল।ইমরানসাদিয়ার বয়ফ্রেন্ড। দুইজনেই একই ক্লাসে পড়ে। হ্যালো, ইমরান, আমি মনে হয় বেবি কন্সিভ করছি। কি বল? হ্যা।তোমাকে বলছি না।সকাল থেকেই আমার বমি বমি ভাব হচ্ছে।পেট ব্যাথা করতেছে। আমি ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখেছি বেবি কন্সিভ করলে এমন পেট ব্যাথা, বমি হয়।আর পেটও আগের থেকে কিছুটা বড় হয়েছে।

আমি মা হতে চলেছি আর তুমি বাবা। কি বল। আমার যে কি খুশি লাগতেছে।আমি বাবা হব! আচ্ছা আমাদের বেবিটা কি ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে। মেয়ে হবে।কারণ আমি গতকাল রাতে স্বপ্নে দেখেছি যে আমাদের একটা পরীর মত বেবি হয়েছে। কিন্তু একটা প্রব্লেম তো হয়ে গিয়েছে।আমরা তো এখনো বিয়ে করিনি! এখন কি হবে! আমি কিছু বুজতেছি না। তুমি কিছু কর!! আচ্ছা শুনো তুমি এই কথা কাউকে বলবে না।কেউ শুনলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এক কাজ কর। আমরা বিয়ে করে ফেলি! আচ্ছা তুমি টেনশন কর না আমি দেখতেছি। সাদিয়া তিনদিন থেকে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।তাঁর কিছুই খেতে ইচ্ছা করতেছে না।কিছু মুখে দিলেই বমি আসে। সাদিয়া তাঁর বাবা-মায়ের এক মাত্র মেয়ে। কয়েকদিন থেকে স্কুলেও যাচ্ছে না।প্রাইভেট টিউটর থেকে প্রতিদিন দুই তিন বার করে কল আসতেছে।

আন্টি ‘সাদিয়া আজ দুই তিন থেকে থেকে প্রাইভেটে আসতেছে না। কি হয়েছে ওর! সাদিয়া খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে শুনে তাঁর বাবা সাথে সাথে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় চলে আসছে।অনেক চেষ্টা করেছে সাদিয়াকে ভাত খাওয়ানোর জন্য। কিন্তু সাদিয়া কিছুতেই খাচ্ছে না।তাকে হসপিটালে নেওয়ার অন্য অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু সে যেতে রাজি হয়নি।কারণ ইমরান তাকে নিষেধ করেছে।ভুলেও তোমার বাবা মায়ের সাথে তুমি হসপিটালে যাবে না। গেলেই আমরা ধরা খেয়ে যাব। উপায় না দেখে সাদিয়ার বাবা তাঁর ডাক্তার বন্ধুকে কল দিয়ে নিয়ে আসল। সে এসে সাদিয়াকে কিচ্ছুক্ষণ দেখা শুনা করে। কই তাঁর তো কোন সমস্যা নেই।সব কিছুই নরমাল। তাহলে সে খাওয়া খাচ্ছে না কেন? সাদিয়া ডাক্তারে কথা শুনে মনে মনে বলল ‘বালের ডাক্তার কিছুই জানে না।

এইদিকে সাদিয়া খুবেই টেনশনে পড়ে গিয়েছে।  বারবার বাথরুমে গিয়ে পেট দেখতেছে।মনে হচ্ছে পেট দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে।নিশ্চয়ই বেবিটাও বড় হচ্ছে।সাদিয়ার হটাৎ মনে হল সেই একটা বিশাল বড় ভুল করতেছে। সে বইয়ের মধ্যে পড়েছে।বেবি কন্সিভ করলে মা’কে ভাল ভাল খাবার খেতে হয় আর তাহলে বেবি সুস্থ থাকে।এই কথা মনে হতেই সে আবার খাওয়া দাওয়া শুরু করল।কিন্তু ভাত মুখে দিলেই বমি চলে আসে। সাদিয়া অনেক কষ্টে বমি চেপে সামান্য সামান্য খাওয়া দাওয়া করে। বেবি সুস্থ রাখার জন্য এইটুকু কষ্ট তো করতেই হয়! মা হওয়া কোন সহজ ব্যাপার না। পেট প্রচন্ডব্যাথা করে।কিন্তু সাদিয়া সে দিকে গুরুত্ব দেয় না।নিশ্চয়ই বেবিটা পেটের ভিতরে খেলাধুলা করতেছে তাই পেট ব্যাথা করে। সাদিয়া মা অনেক বার জিজ্ঞাস করেছে। তুমি খাওয়া দাওয়া করতেছো না কেন? তোমার কি পেটে ব্যাথা? পেটে ব্যাথা হল বল তোমার বাবা তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। কিন্তু সাদিয়া অস্বীকার করেছে।

নিজের মধ্যে কেমন একটা মা মা ফিল হতে লাগল।বেবিটা যে পেটের ভিতর নড়াচড়া করে সাদিয়া এটা ফিল করতে পারে। যত একদিন যাচ্ছে ততই সাদিয়ার টেনশন বাড়তেছে।যদি বাবা এই ঘটনা জেনে ফেলে!! রুমের দরজা বন্ধ করে ইমরানকে কল করল। হ্যালো’ এই শুনো তুমি কোন ব্যবস্থা করলে।আমার পেট দিন দিন বড় হতেছে।নিশ্চয়ই কিছু দিনের মধ্যে মা-বাবা সব জেনে যাবে।আর শুনো পেটে অনেক ব্যাথা করে।নিশ্চয়ই বেবিটা পেটের ভিতরে অনেক নড়াচড়া করে।তোমার বেবিটা একদম তোমার মত দুষ্ট হয়েছে। সে বুজে না। যে সে নড়াচড়া করলে তাঁর আম্মু কষ্ট পাবে। আচ্ছা শুনো তো! আমাদের বেবিটার নাম কি হবে? অবশ্যই তাঁর বাবার নামে হবে।ইমরান থেকে ইমা।সুন্দর নাম না!! না না তাঁর নাম হবে তাঁরমায়ের নামে সাদিয়ার বেবি সবিতা। আর এটাই হবে নাম।তুমি যদি পাল্টানোর চেষ্টা কর তাহলে আমি কিন্তু খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিব। ওকে আমাদের মেয়ের নাম তাহলে সবিতাই হবে।

সাদিয়ার পেট প্রচন্ড ব্যাথা করতেছে। সাদিয়া ইমরানকে কল করলে। এই শুনো আমার পেট প্রচন্ড ব্যাথা করতেছে আমি সয্য করতে পারতেছি না। আরে পেটে বেবি আসলে পেট এমন ব্যাথা করেই।কিন্তু অনেক ব্যাথা আমি সয্য করতে পারি না।তাহলে এক কাজ কর এব্রেশ্ন করে ফেল।না না আমি সেটা কিছুতেই করব না। আচ্ছা তুমি কিছু করস? হ্যা, আমার একটা বন্ধুর কাকা কাজী। তাঁর সাথে কথা বলতেছি।সে বলছে বিয়ে পড়ানোর দায়িত্ব তাঁর।আমি শুধু সাক্ষী জোগার করতাম।তুমি টেনশন নিও না। আমি সব ম্যানেজ করতেছি।তুমি টেনশন করলে কিন্তু বেবির প্রব্লেম হবে।

এইদিকে সাদিয়ার পেটের ব্যাথা দ্রুত বাড়তেছে। সাদিয়া বার বার পেটে হাত দিয়ে বলতেছে। প্লিজ আম্মু নড়াচড়া কর না। মাকে কষ্ট দেওয়া বল না।তুমি না আমার লক্ষী বাবু। দেখে তুমি যদি আর নড়াচড়া কর।তাহলে কিন্তু আমি তোমার আব্বুর কাছে বল দিব। তোমার আব্বু এসে তোমাকে আচ্ছা করে পিটাবে। লক্ষী মা আমার নড়াচড়া করে না। প্লিজ….কিন্তু তাঁর লক্ষী বেবিটা কিছুতেই তাঁর কথা শুনতেছে না। রাতেই সাদিয়ার পেট ব্যাথা অসম্ভব রকম বেড়ে গেল।চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলতে লাগল। তাঁর বাবা তাড়াতাড়ি তাকে হসপিটালে নিয়ে গেল। এত কিছুই মধ্যেও সাদিয়া ইমরানকে কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে।

পেট ব্যাথা অসম্ভব রকম বেড়ে গিয়েছে।সে সিউর এটা প্রেগন্যান্সির ব্যাথা তাঁর মনে হয় ডেলিভারি হয়ে যাবে। তুমি তাড়াতাড়ি হসপিটালে এসো। এই অবস্থায় বেবির বাবা পাশে না থাকলে কিভাবে হবে!! হসপিটালে সাদিয়াকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হল।ডাক্তার পেট দেখতে চাচ্ছে। সাদিয়া কিছুতেই দেখতে দিচ্ছে না। সাদিয়া তুমি কোন ক্লাসে পড়? ক্লাস সিক্সে…আমার নাত্নী ক্লাস এইটে পড়ে। ডাক্তার সাদিয়ার পেট দেখেই তাঁর বাবাকে ধমক দিল।কি বাবা হলেন! মেয়ের তো কোন খবরেই রাখেন না। বলেই একটা পরীক্ষা দিল। সাদিয়ার ভয় হতে লাগল। ডাক্তার নিশ্চয়ই তাঁর বেবিটাকে নষ্ট করে ফেলবে।সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেলল। দরকার হয় জীবন দিয়ে দিবে।তবুও তাঁর বেবিকে নষ্ট করতে দিবে না।

রিপোর্ট দেখেই ডাক্তার অবাক হয়ে গেল। সাদিয়ার বাবাকে ডেকে নিয়ে আসা হল। কৃমি আপনার মেয়ের নাড়ী-ভুড়িতে পর্যন্ত পেঁচিয়ে গিয়েছে।আর আপনারা জানেন না! আজ অনেক দিন থেকে তাঁর পেটে কৃমি।নিশ্চয়ই আপনারা গ্যাস্টিকের ব্যাথা মনে করে কৃমির ঔষধ খাওয়াননি! আপনাদের মত শিক্ষিত মানুষ যদি ছেলে-মেয়ের প্রতি এত অবহেলা করেন তাহলে মূর্খরা কি করবে!! কৃমি তো তাঁর নাড়ী- ভুড়িতে পেঁচিয়ে গিয়েছে। এত বাচ্চা একটা মেয়ের পেটে এত কৃমি কোথায় থেকে আসল। লাষ্ট কবে ‘মেয়েটাকে কৃমির ঔষধ খাওয়াইছেন আল্লাহ জানে!!

সাদিয়াকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হল। পরের দিন সকালে সাদিয়ার জ্ঞান এলো।জ্ঞান এসেই দেখে সাদিয়ার পেটে ব্যান্ডেজ বাঁধা! সাদিয়ার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। কোন রকম মোবাইলটা হাতে নিয়ে সাদিয়া ইমরানকে কল করল ‘স্যরি ইমরান আমি তোমার বেবিকে বাঁচাতে পারলাম না। আই এম স্যরি ইমরান আমাকে ক্ষমা করে দিও!!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত