ক্রস ক্রাশ

ক্রস ক্রাশ

বুকের উপর ধিড়িম করে এক কিল পড়তেই লাফিয়ে উঠলাম। ধপাস করে উঠে বসলাম। আমার একটা সমস্যা আছে ঘুম থেকে উঠলে পুরো পাঁচ মিনিটের জন্য আমি ব্ল্যাংক হয়ে যাই। আস্তে আস্তে মনে পড়ে আমার নাম, আমি কোথায় আছি, আমি কেন ঘুমাইছিলাম যাবতীয় সব কিছু। কিন্তু আজকে উঠে বসতেই দেখি বড় বড় চুল ওয়ালী দুই মেয়ে একটা আরেকটার চুল ধরে টানাটানি করছে। ভাল করে তাকিয়ে দেখি চুল টানাটানি না মারামারিই করছে। একমিনিট পরে বুঝতে পারলাম এরা আমার দুই বোন মিলি আর জিমি। নিজের বুকে ব্যাথা পেয়েছিলাম তাই বুকটা হাত দিয়ে ডলছি আর ভাবতেছি মারামারি করতেছে কেন এরা। এর পরে হঠাৎই মনে পড়ল আগে এদের থামাই না হলে একটা আরেকটার চুল ছিঁড়ে টাক না করে দেয়।

তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে দুটোকে আলাদা করলাম। এত সহজে কি আলাদা হয়। আমাকে ওভারটেক করেও একটা একটাকে মারতে যায়। এখনও তাদের পরনে স্কুল ড্রেস মানে স্কুল শেষে কোচিং করে মাত্র এসেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল এমন ভয়ংকর রেসলিং করতেছিল কেন দুইটা। দুইটা এখন দুই জায়গায় বসে আছে চোখ দিয়ে এমন করে একটা একটার দিকে তাকাচ্ছে যদি চোখ দিয়ে আগুন বের হওয়ার সিস্টেম থাকত তাই এতক্ষনে দুইটাই পুড়ে কাবাব হয়ে যেত। আমি নিজেও কিছুক্ষন চুপ করে বসে তারপর কয়েকটা বড় বড় নিশ্বাস নিলাম। দুইটাই চুপ হয়ে বসে আছে।

আমার বুকে কিলটা কে দিয়েছে? প্রশ্নটা করেই দুইটার দিকে তাকালাম। চোরের মত দুইটাই চুপ করে আছে। ” বাবু আপু বিশ্বাস করো আমি না মিলি মারছে” জিমি বলে উঠলো। ” তুই তো মিথ্যাবাদী এটা আপু ভাল করেই জানে। আপু জিমি মেরেছে তোমারে” মিলি ঝাজিয়ে বলে উঠলো। বুঝতে পারলাম যে আমার মাইরের রহস্য উদঘাটন আর হবে না। সেই চ্যাপ্টার ক্লোজ করে সোজা আসল ঘটনায় গেলাম। চোখ মুখ কুঁচকে বললাম ঠিক আছে বলতে হবে না কে আমাকে মেরেছিলি এখন বল তোরা নিজেরা কেন কামড়াকামড়ি করতেছিলি। দুইটাই চুপ যেন কোন মানুষ মারা গেছে সেই রকম পিনপতন নিরবতা রুম জুড়ে। এবার আরো জোরে বললাম যদি কারণ না বলিস সোজা ভাইয়ার কাছে বলব আমি। এবারের ওষুধে কাজ হল। দুটোই নড়ে চড়ে বসল। দেখ মিলি জিমি যদি তোরা না বলিস সত্যিই আমি ভাইয়ারে বলব বাকিটা তোরা বুঝে নিস। সাথে সাথেই মিলি বলে উঠল” আপু তুমি ভাইয়ারে বলো না, আমি বলতেছি”। ” হ হ বেশরমের রানী বল বল আপুরে বল, দেখিস আপু শুনলে তোরে করে কি!” ঝামটা মেরে বলল জিমি।

জিমি একটা কথা বলবি না আর হ্যাঁ মিলি তুই বল কি হইছে। কি নিয়ে রামায়ণের যুদ্ধ বাধাঁইছিস। ” বাবু আপু এই বজ্জাত আমার ক্রাশের উপরে ক্রাশ খাইছে” এই বলেই দাঁত কিড়মিড় দিতে থাকল মিলি। পুরো দুই মিনিট লাগল আমার বুঝতে যে কি বলল সে। জিমি আরো জোরে বলল ” সে তো তোর পারসোনাল সম্পদ যে অন্য কেউ নিতেই পারবে না”। মাথা ততক্ষনে আমার ভোঁ চক্কর কাটছে আমার। দুইটার মাথার মধ্যে দুই গাট্টা দিয়ে বললাম একদম চুপ কর তোরা। কি হয়েছে পুরোটা খুলে বল।

না হলে আমি ভাইয়ার অপেক্ষা করব না সোজা খালার কাছে নিয়ে যাব। দুটোই ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বলল যে তারা সব সত্যিই বলবে। যা বলল তার সারমর্ম হল এই ভাইয়ার এক বন্ধু আছে আমাদের ফ্যামিলির সাথে খুব ক্লোজ। নাম তার রাসেল। তার উপরে ক্রাশ খাইছে এই দুই বান্দরনী। আজকে কোচিং থেকে বাসায় আসার পথে একটা একটারে বলছে আর তাই এখন এই অবস্থা। মনে মনে একা একাই খিল খিল করে হাসতে ছিলাম তখন। আসলে রাসেলর চেহারা সত্যিই ক্রাশ খাওয়ার মতই। মাথা ভরা একরাশ চুল। নাকের উপরে বড় এক তিল। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।আর সব চেয়ে সুন্দর হল চোখ। পুরো পাঁচ ফিট দশ ইঞ্চি লম্বা। সে যাই হোক ক্রাশ খাওয়ার মতই।

পরে বললাম লেটেস্ট আপডেট বল সে তোদের কারে পছন্দ করে৷ মিলি তার বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলল আমারে পছন্দ করে। জিমি কটমট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে তখন। আমি বললাম তুই কি করে জানলি যে সে তোরে পছন্দ করে। মিলি স্কুল ব্যাগ থেকে ছোট্ট একটা বক্স বের করে টেবিলে রাখল। জিমির দিকে তাকিয়ে দেখলাম যেন একটা টমেটো হয়ে গেছে। মুখ পুরোই লাল। আমি কিছু না বলে মিলির দিকে মুখে প্রশ্নবোধক চিন্ত নিয়ে তাকালাম। মিলি খুশিতে বলল ” আজকে স্কুল থেকে আসার সময় এগুলো উনি আমার হাতে দিয়েছে আর একটু জানি কি বলেছি। খুশির ঠেলায় শুনিই নাই”।

বক্সটা আমারে দে আমি খুলে দেখি এই বলেই মিলির দিকে হাত বাড়ালাম। মিলি ছ্যাঁত করে সরে গেল বক্স হাতে নিয়ে বলল ” আমার বক্স আমি খুলবো”। আচ্ছা খোল কিন্তু আমাদের দেখাতে তো সমস্যা নেই তাই না? তাহলে আমাদের সামনেই বক্স খোল। মিলি সানন্দে বক্স খুলতে আরম্ভ করল। প্রথমেই বের হল খুব সুন্দর একটা কফি মগ যেখানে লাভ সাইনের ভিতরে আর প্লাস এন প্রিন্ট করা সেটা দেখেই মিলির মুখের ভাব কেমন জানি হয়ে গেল। পরে দুইটা চকলেট বের হল বক্স থেকে সর্বশেষ একটা চিঠি। জিমি আর আমি দুই জনেই বললাম মিলি জোরে জোরে পড়। মিলিও খুশিতে আটখানা হয়ে পড়ে শুরু করল।

” চশমা ওয়ালী ”
তোমার ওই বড় বড় সাদা চোখে আমি ডুবে যাই বারে বার। তুমি যখন বই নিয়ে বারান্দায় বসে পড়ো তখন আমি কতবার তোমার বারান্দার সামনে দিয়ে আসি যাই সেটা কি তুমি জানো? গভীর রাতে যখন বারান্দার লাইট অন করে আকাশের দিকে চেয়ে থাকো তখনও আমি চুপ করে তোমায় দেখি। আমিও তোমার সাথে একসাথে রাতের আকাশ দেখতে চাই। অনুমতি দেবে আমায়।

ইতি
রাসেল।

চিঠিটা পড়েই সবাই চুপ। মিলি জিমি এখন আমার দিকেই কটমট করে তাকিয়ে আছে। কারন পুরো ফ্যামিলির মধ্যে আমিই যে সাদা চোখওয়ালী।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত