সকালে অফিসে এসেই মোনার চোখে পড়লো একটা খাম। খাম মানেই ভিতরে চিঠি থাকবে।মোনা চিঠির খামটা হাতে নিলো,খামটা সুন্দর আসমানি নীল রঙের। কিন্তু কোন নাম বা ঠিকানা কিছুই লিখা নাই এতে।একি শুধু চিঠি নয় চিঠির সাথে একগোছা রজনীগন্ধাও আছে।একদম তরতাজা রজনীগন্ধা।মিষ্টি গন্ধে ভরপুর। মোনা আশেপাশে একবার তাকালো।না কেউ এদিকে তাকায় নি।মোনা ফুলগুলো টেবিলে ফুলহীন পড়ে থাকা ফুলদানীতে সাজিয়ে দিলো।চেয়ারে বসে মোনা ভাবতে লাগলো কে দিতে পারে চিঠি।কিন্তু মোনাকে চিঠি লিখার মতন তো তেমন কেউ নেই। অনুমান করতেও ব্যর্থ হলো মোনা।মোনা চিঠিটা খুব যত্নে খুললো। ওমা একি!খুলতেই খামের ভিতর থেকে টুপ করে দুটো নীল অপরাজিতা পড়লো। মোনা খানিক চমকে গেল সাথে খুশিও হলো। মোনা জলদি চিঠিটা পড়তে লাগলো।
প্রিয় মায়াবিনী,
কেমন আছেন!জানি চিঠিটা আপনাকে অনেক খানি অবাক করেছে।হয়তো আমি কে, কেনইবা চিঠি দিলাম আর কিভাবে দিলাম এসব ভাবনা আপনার মাথায় ঘুরছেএখন খুব।আচ্ছা অপরাজিতা দুটো কেমন লেগেছে!জানেন এই ফুল খুঁজতে অবশ্য একটু হয়রানি হতে হয়েছে।তবে এই কষ্ট কোনো ব্যাপার না আমার জন্য।
জানেন চিঠিটা পড়ার সময় আপনার মুখখানা কেমন অবাক হয়েছে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।তবে চাইলেই তো সব সম্ভব নয় তাই না বলুন।আর রজনীগন্ধা আমার খুব পছন্দের ফুল তাই পাঠিয়ে দিলাম।শুনেছি মেয়েরা ফুল পছন্দ করে কিন্তু আপনার পছন্দের ফুল কি আমার তা জানা নাই।জানলে অবশ্যই পাঠিয়ে দিতাম।
জানেন আপনার চোখ জোড়া অনেক উদাসীন তবে সুন্দর বেশ।আহামরি না হলেও কি যেন এক মায়া আছে আপনার চোখে।যে কেউ আপনার চোখের গভীরে হারাতে বাধ্য। কি বিশ্বাস হয়না!তবে নিজেই না হয় একদিন সময় করে দেখে নিবেন কেমন!এই দেখেন এভাবে লিখলে তো চিঠি রচনা হয়ে যাবে।তবুও আমার না রচনাই লিখতে ইচ্ছে করছে।এমন রচনা যেটা কখনোই শেষ হবে না আর সেটা পড়তে আপনি ক্লান্তি বোধও করবেন না।কিন্তু আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন কিনা কে জানে!জানেন আপনাকে না একদিন শাড়িতে হালকা সাজে দেখার খুব সাধ আমার।খোপায় ফুল জড়ানো,নাকে ছোট্ট নাকফুল আর হাতে আলতা কিংবা মেহেদী। ব্যস এতেই অপূর্ব লাগবেন আপনি।চাইলে পায়ে নূপুর পরে নিতে পারেন। তবে জানি এই সাধ আমার কখনোই পূরণ হবার নয়।
একটা পুরোদিন আপনার সাথে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে আমার শহরটা।আপনার মনের কথাগুলো শোনার ইচ্ছে।সুখ,দুঃখ, ইচ্ছে,স্বপ্ন,কষ্ট সবটা শোনার ইচ্ছে।রিকশা করে অথবা সাইকেলে কিংবা আপনি চাইলে হেঁটেই ঘুরতে পারি। আপনার পছন্দের খাবার খাওয়ার,আপনাকে গান শোনানোর।শুনেছি আপনি নাকি ভালো কবিতা বলতে পারেন। এক সময় না হয় একটা কবিতা শোনার বায়নাও হয়তো করে বসতাম।
হাহাহা কি হলো ভাবনায় পড়ে গেলেন নাকি!ভাবছেন এই পাগল-ছাগলটা আবার কে?আরে বাবা ভয় নেই আমি কোন কিডন্যাপার বা খারাপ মানুষ নই।আর আপনার সাথে আমার দেখা কখনোই হবে না।সুতরাং চিন্তা করবেন না অহেতুক।চিন্তা করলে চোখের নিচে কালি পড়ে যাবে যে তখন কিন্ত আর বিয়ে হবেনা। হাহাহা ঠাট্টা করলাম,তবে চোখ জোড়া মলিন হয়ে যাবে সত্যি। আর মলিন চোখে আপনাকে একদম মানাবে না বিষণ্ণ লাগবে।
আচ্ছা আপনার কি খুব বিরক্ত লাগছে এলোকেশী!আমি কিন্তু আপনাকে বেশ কয়েকটা নামে ডেকে ফেলেছি। রাগ করবেন না প্লিজ ঠিকাছে। জানেন শুনেছি মেয়েরা নাকি খুব যত্নবান হয় তাদের রুপ নিয়ে।তবে আপনি মনে হয় একদমই আলাদা।আপনাকে দূর থেকে কয়েক দিন দেখেছি কিন্তু তেমন যত্নবান মনে হয়নি।আজকালকার মেয়েদের মত ময়দার পাহাড় নেই আপনার মুখে।একদম ন্যাচারাল বিউটি যাকে বলে।আমার কাছে অন্তত তাইই মনে হয়েছে। আসলে কাছে এসে কিছু বলার সাহস হয়নি কখনোই। তাই চিঠিটা সাহস করে লিখলাম।
জানেন এই ইট পাথরের শহরে আর ভালো লাগেনা।কোথাও প্রাণের ছোঁয়া নেই।মাঝে মাঝে মনে হয় ছুটে পালাই তবে পাশে আপনার মত কেউ থাকলে সফর মন্দ হতোনা।তবে এখন আর আমার পালানোর জন্য হাহাকার করতে হবেনা।বিধাতা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন নিজে থেকেই।খুব শ্রীঘই পালাচ্ছি এ জগতের মায়া থেকে।
আমি আপনার অনেকখানি মুল্যবান সময় নষ্ট করে দিলাম,প্লিজ ক্ষমা করবেন সেই জন্য।আর আমি কে এটা আপনি কখনোই জানতে পারবেন না তাই মিছে খোঁজার চেষ্টা না করাই ভালো।থাকুক না কিছু অজানা। থাকুক কিছুটা রহস্য হয়ে মনের কোণে।
খুব বেশিদিন হয়তো নেই এই সুন্দর পৃথিবীতে।যে কটা দিন আছি অন্য রকম করে বাঁচতে চাই।আর শুরুটা একটা ইচ্ছে দিয়েই করলাম আর ইচ্ছেটা এখন খামের চিঠি হয়ে আপনার হাতে।ভালো থাকবেন অনেক ভালো।আর শুনুন আরেকটা কথা বলবো আপনার হাসিটাও না অনেক সুন্দর।হাসিটা খুব ভাল্লাগে।সব সময় হাসবেন কেমন সুহাসিনী!
ইতি,
অচেনা কেউ
অদ্ভুত এই চিঠি পড়ে মোনা খানিকক্ষণ কোন কথা বলতে পারলোনা।কয়েক মিনিট সে সময় নিলো আসলে তার সাথে হচ্ছেটা কি!এটা কি অফিসের কোন কলিগের মজা ছিলো।সে দৌড়ে দারোয়ান চাচার কাছে ছুটে গেল প্রথমে।চাচাকে জিজ্ঞেস করলো,চাচা বললো খুব সকালে এক ছেলে সাইকেল করে এসে চিঠি আর ফুলগুলো দিয়ে মোনাকে দিতে বলেছিলো।নাম জিজ্ঞেস করেছিলো কিন্তু সে নাম বলেনি শুধু মুচকি হেসে চলে গিয়েছিলো।
মোনা হাতে চিঠিটা নিয়ে রাস্তাটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ভাবছে হয়তো অদ্ভুত অচেনা ছেলেটা বুঝি এখনি আবার ফিরে আসবে আর বলবে,মোনা যাবেন নাকি আমার সাথে একটা দিন শহরটা ঘুরতে!জানেন ওপারে যাওয়ার টিকিট পেয়ে গেছি তাই কটা দিন স্বপ্নগুলো পূরণ করছি।হয়তো মোনার জবাব হতো হ্যাঁ যাবো চলুন ঘুরে দেখি একটা দিন এই চিরচেনা শহরটা অচেনা মানুষের সাথে।কিন্তু রাস্তাটা শূন্যতায় ভরে আছে।যতদূর চোখ যায় মোনা তাকিয়ে আছে কিন্তু কোথাও সেই অচেনা কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।মোনার চোখের কোণে অজান্তেই খানিক জল অবাধ্যতায় গড়িয়ে পড়লো।মোনা উদাস চোখে চেয়ে আছে অচেনা চিঠির সেই অচেনা মানুষটার আশায়।