তেত্রিশটা সুগন্ধি বকুল ফুলের মালা

তেত্রিশটা সুগন্ধি বকুল ফুলের মালা

ছোট্র মেয়েটা আধো আধো কথায় বলে বেড়াচ্ছে ফুল নিবেন কেউ,ফুল,মেয়েটার শরীরে ছেড়া একটি জামা চুলগুলো এলোমেলো।ধুসর গৌধূলি এর ন্যায় তাকে, মেয়েটা হয়ত ফুল গুলা বিক্রি করার জন্য এভাবে ডাকছে,কেননা ওর ফুল অনেক এখনো বিক্রি করতে পারে নি।অহনা আমার বাহুডোরে বাঁধা পড়ে আছে,অহনার দিকে চোখ মেলাতেই বললো আমি বকুল ফুলের মালা নেবো! মেয়েটাকে ডাক দিতেই দৌড়ে এলো আফা একটা ফুল নেন…!

সারাদিনে একটাও বেচবার পারি নাই। মেয়েটার প্রতি অস্মভব মায়া হলো অহনার,সহসা অহনা সবগুলো ফুল নিলো।মেয়েটা খুশি হয়ে আমার কাছে থেকে টাকা নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। ফুলের ঘ্রাণে অহনা আমারে আকস্মিক ভাবে চেপে ধরলো অহনা একটা গলায় পড়লো আরেকটা হাতে।অহনাকে ঠিক পরীর মতো লাগছে যদি ফুলটা খোপায় দিতো আরেকটু সুন্দর লাগতো কিন্তু শহরের মেয়ে তো তাই একটু স্ট্যাইলিসে চলে। অলীক কল্পনায় আমার নিদ্রা কাটিয়ে গেল বিছানার পাশে হাত বুলাচ্ছি অহনা নেই। আমি ভুলেই গেছি অহনার আজ সতের তম মৃত্যুবার্ষিকী। ঘুমিয়ে পড়লাম আবার।

পাখির কোলাহল চারদিকে কিচির মিচির শব্দে নিদ্রাটা আবার ভেঙ্গে গেল। ঘুম চোখে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হলাম। এর মধ্যে আমার পাজিটা উঠে পড়েছে।পাজিটা আর কেউ না আমার মেয়ে অথৈই,বাবা চলো না ঘুরে আসি কোথাও থেকে।ওকে মামুনি চলো। মেয়েটাকে নিয়ে হাতির ঝিলে ঘুরতে এলাম বাবা মেয়ে এক সাথে পায়চারি করছি। বারবার অহনার কথা মনে পড়ছে।আমার মেয়েটার হয়ত মনেই নেই ওর মা’র আজ মৃত্যুবার্ষিকী,থাকবেই বা কি করে জন্মের পর মা’কে দেখেনি। হঠাৎ একটা মেয়ে দৌড়ে আসলো স্যার ফুল নিন না স্যার বকুল ফুল।আমার মেয়েটা বকুল ফুল অনেক পছন্দ করে বুঝলাম,ঠিক যেন মায়ের মতো হয়েছে।

আব্বু আমি ফুল নেবো। না মা তোমাকে আমি অন্য ফুল কিনে দেবো,না আব্বু আমি এই ফুল ই নিবো।ওর জিদের কাছে পরাস্থ হতে যাচ্ছি,অথৈইকে জোর করে নিয়ে আসলাম। ভার্সিটি লাইফে যখন আমি আর অহনা এক সাথে পড়তাম,অজানা ভাল লাগা কাজ করতো আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে ভালবাসা।ভার্জিটি লাইফ শেষ করে আমি একটা জব নেয়,জব পাবার পর পরই দুই পারিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে হয়।অহনা রোজ বিকালে হাতির ঝিলে বেড়াতে যেত আমাকে নিয়ে।আমাদের বিয়ের এক বছর পার হয়ে গেছে তবু অহনার রুটিন মাফিক যাওয়া বন্ধ হয়নি।একদিন সকালে অহনা মাথা ঘুরে পড়ে যায়,ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে আমি খুশিতে আত্মহারা, আমাদের জীবনে আরেকজন আসছে।ডাক্তারের রুম থেকে বেড়িয়ে রিকশা নিলাম,অহনা আমার বাহুডোরে শক্ত ভাবে ধরে আছে।অহনার আজ তিন মাস চলছে আর সাত মাস পর আমাদের ঘরে নতুন মেহমান আসবে,দেখতে দেখতে সাতটি মাস অতিবাহিত হলো একদিন সকালে আমাদের ঘরে সেই থৈই থৈই হইচই অথৈই মামুনি চলে আসলো।

ছোট্র বোন নিঝুমের মুখে উপচে পড়া খুশির বাঁধ নেমে এসেছে।আচমকা অহনা বলছে চলো না হাতির ঝিল থেকে ঘুরে আসি। তুমি পাগল নাকি আজ না অন্যদিন,অহনার জিদের কাছে হেরে গেলাম নিয়ে গেলাম পাগলিটাকে! বকুল ফুল নিবেন বকুল ফুল,অহনা বকুল ফুল খুব পছন্দ করতো,কেননা এই ফুলের সুভাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়তো।পিচ্চি একটা মেয়ে শরীরে ছেড়া জামা পোশাকে কাছে এলো স্যার একটা ফুল নেন স্যার সারাদিন কিছুই বেচবার পারি নাই।

অহনা মেয়েটার কাছ থেকে সবগুলা ফুল নিলো আর টাকাটা নিয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে দৌড় দিলো,অথৈই তখন আমার কোলে।মেয়েটা এমন ভাবে রোড অতিক্রম করছিল যে কোনও সময় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।অহনা সাথে সাথে দৌড়_ রোডের কাছে যেতেই মেয়েটা একটা বাসের সাথে ধাক্বা খেয়ে ছিটকে পড়ে গেল।

অহনা আবার দৌড়ে মেয়েটার কাছে যেতে লাগলো একটা বাসের সাথে ধাক্কা খেলো অহনা।তখন অথৈই আমার কোলে ছিল! দূর থেকে অহনাকে চিৎকার করে বারবার বললাম যেয়ো না…! আমি দৌড়ে কাছে গেলাম দুজনকে নিয়ে হসপিটালে গেলাম,মেয়েটাকে বাঁচাতে পারলাম অহনাকে না। আজ সতের তম মৃত্যুবার্ষিকী অহনার! আমার অথৈই এর ওহ সতের তম জন্মবার্ষিকী।প্রতি বছর অথৈই এর জন্মদিনে আমি একটা করে বকুল ফুলের শুকনো মালা গিফট করতাম।সন্ধ্যার সময় অহনার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছি আর প্রতি বছরের ন্যায় অহনার কবরে একটা করে বকুল ফুলের মালা রেখে দিতাম।

সন্ধ্যায় অথৈই এর জন্মদিনের কেক কাটা হচ্ছে রোজ এই দিনে আমি হাসি ভরাক্রান্ত মুখে একটা শুকনো বকুল ফুলের মালা গিফট করি।আজ পারলাম না দিতে কেননা ষষ্টদশ বছরে বত্রিশ টা ফুল শেষ সতের বছরে তেত্রিশ নাম্বারটা অহনার কবরে দিয়ে আসছি। আব্বু কাদছো কেনো আমার বকুল ফুল লাগবে না তুমিই আমার সুগন্ধি বকুল ফুল!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত