এনির ভালবাসা

এনির ভালবাসা

— এই যে মিষ্টার রাজ আজ আমায় মেলা থেকে কিছু কাচের চুড়ি এনে দিয়ো তো।
— কেন?

আমার কথার উত্তর না দিয়ে একটা ভেংচি কেটে চলে গেল এনি। আসলে মেয়েটা কি চায়, আমি কিছুই বুঝি না। ওর কিছুর দরকার হলেই এইটা এনে দাও, ওইটা এনে দাও। কিন্তু একটা টাকাও দিবে না। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে ওরে বলি আমি ওর বয়ফ্রেন্ড কি না?

ওর আর আমাদের বাড়ি একই তবে দুইজনেই এই বাড়ির ভাড়াটিয়া। বাড়িটা ৩ তলা আর আমাদের দুইটা পরিবারই এইবাড়ির ৩ তলার দুইপাশের ২ টা ফ্ল্যাটে থাকি। আমি আপাতত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ফাইনাল ইয়ারে পড়ি আর এনি কম্পিউটার বিষয়ে ১ম বর্ষে পরে আর একই ভার্সিটিতে। মাঝে মাঝে ওর সাথে তো আমার সিভিল আর কম্পিউটার বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয় কারন ও বলে ওর বিষয় নাকি খুব ভাল। কোনটার বেশি মূল্যায়ন সেটা তো চাকরী ক্ষেত্রেই বুঝা যায়।

বিকালে ফ্রেশ হয়ে বাড়ি থেকে বার হলাম মেলায় যাবো বলে। হঠাৎ পকেটে মোবাইল টা বেজে উঠলো। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি এনি ফোন দিয়েছে তাই ফোন রিসিভ না করে বাড়ির ৩ তলায় তাকালাম। দেখি এনি বেলকনি থেকে ইশারা করছে উপরে যেতে। ওহ মাত্র নিচে নামলাম আর আবার উঠতে হবে। আর যদি না যাই তাহলে এই মেয়ে আমার মায়ের কাছে বিচার দিবে। আর একবার মায়ের কাছে বিচার দিলে, মা আমায় বকতে বকতে ওর দলের হয়ে অস্কার জয় করবে। তাই আর লেট না করে বাধ্য হয়ে ৩ তলায় উঠলাম। দেখি ও ওদের দরজার সামনে সেজে দাড়িয়ে আছে।

— কি হলো আমায় উপর ডেকে তুললে কেন?
— আমিও তোমার সাথে যাবো তাই।
— আমি কোথায় যাবো তুমি কি জানো?
— অবশ্যই তুমি মেলায় যাচ্ছো। আর এখন জানতে চাইবে কি করে আমি এতো শিউর? কারন আমি সকালে তোমাকে ফোনে কথা বলতে শুনেছি তুমি তোমার বন্ধুদের সাথে মেলায় যাবে।
— হায়রে জানোই যখন তাহলে বুঝতেই পারছো আমি বন্ধুদের সাথে যাবো। এখন তুমি কেন যেতে চাও?
— আগে আমায় মেলা থেকে ঘুড়িয়ে আনো, এরপর ওদের সাথে রাতে যেও।
— আমি পারবো না।
— কি বললে?? কথাটা বলো তো আরেক বার।
— বলেছি আমি পারবো না।সবাই হয়ত আমার জন্য এখন রাস্তায় অপেক্ষা করছে।
— আমি এতো কিছু শুনতে চাই না। তুমি আমায় নিয়ে যাবে কি না এটা বলো?
— না যাবো না।
— ওকে ভাল। তুমি দুই মিনিট এখানে দাড়াও আমি আসতেছি।

বলেই ও দৌড়ে আমাদের ঘরে চলে গেল। তার মানে আর বুঝতে বাকি রইলো না যে মায়ের কাছে আমার নামে নালিশ করতে গেছে। আমিও ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ওয়েট করতেছি কখন আমার উপর ঝড় আসতে চলেছে। আর দেরি হলো না, সাথে সাথে আমার মা এসে হাজির…
— কিরে তুই এখন কোথায় যাচ্ছিস?
— একটু বন্ধুদের সাথে মেলায় যাবো।
— তুই নাকি কোন মেয়ের সাথে ঘুরতে যাচ্ছিস। যদি এনিকে সাথে নিয়ে যেতে পারিস তাহলে যাবি নয়ত যা ঘরে গিয়ে বসে থাক।
কথাটা বলেই মা চলে গেল আর এনি আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।মায়েরা সব সময় মেয়েদের কথা কেন বিশ্বাস করে,কেউ কি বলতে পারেন?

— এটা কেমন বিচার হলো?
— মা জনিত বিচার।
— ওকে আর কথা না বলে চলো।
ও হাসতে হাসতে আমার সাথে আসতেছে আর বকবক করতেছে। ও যে কি বলতেছে এই কথা গুলো মনে হয় এক কান দিয়ে শুনতেছি আর আরেক কান দিয়ে বার কারে দিতেছে। কারন ওর কথা মাথায় নিলেই ঝামেলা। আসলে ওর নাম আমি আমার ফোনে মিস. ঝামেলা লেখেই সেভ করেছি। ও হয়ত এটা জানে না। জানলে আমার চুল একটাও থাকবে না।

ও আর আমি পাশাপাশি মেলায় হাটছি। আর ও এখনো কত কথা বলতেছে আর আমি নিরব শ্রুতা হয়ে সব শুনতেছি। ও হঠাৎ বলল চলো কোথাও একটু বসি। তারপর ওরে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে ঘাসের উপর বসলাম……

— এই যে এতখন ধরে বকবক করতেছি, তুমিও তো কিছু বলতে পারো।
— আমি কি বলবো?
— কিছুই কি বলার নেই। তাহলে তোমার অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলো।
— আমার অতীত হলো তখন আমার কোন চাপ ছিল না, এখন বর্তমান হলো আমার কোন চাপ নেই আর ভবিষ্যৎ হলো একটা মহা চাপ আমায় চাপীয়ে রাখবে।
— ঠিক বুঝলাম না।
— আরে অতীতে কখনো প্রেম করি নি তাই আমার কোন চাপ ছিল না আর চাপ না থাকলে মানুষের জীবন ভালই কাটে আর বর্তমানটা ঠিক তাই কোন চাপ নাই। আর ভবিষ্যৎ জীবনে একটা বউ আসবে আমার জীবনে আর আমায় এটা কিনে দাও ওইটা কিনে দাও এইসব চাপে আমায় চাপীয়ে রাখবে।
— বুঝলাম তবে তুমি বউকে চাপ মনে করো কেন? হয়ত ও তোমায় এত্তো এত্তো ভালবাসবে।
— ওরে মা রে আগের দিনের শাবানা জসিমের ছবির মত ভালবাসা এখন আর নাই। এখন জামাইয়ের পকেট খালি থাকলে বউ হাওয়া হয়ে যায়।
— ওই কি বলে আমি তোমার মা?
বলেই আমায় মারতে শুরু করলো। আচ্ছা মা বলাটা ভুল কিসের? প্রতিটা মেয়েই তো মা জাতি তাই মা ডাকলে দোষটা কই?
— আরে মারছো কেন? ব্যাথা পাচ্ছি তো।
— ব্যাথা পাওয়ার কারনে তো মারছিই। আর মেয়েদের এমন ভাবো না। দেখবে তোমার জীবনে আমার মত একটা মেয়ে আসবে যা তোমায় পাগল করে ছাড়বে।
— একটা পাগলাগারদের টিকিট কেটে রাখো তো।
— মানে??
— বললে না আমার বউ আমায় পাগল করে দিবে তাই বললাম এখনই একটা পাগলাগারদেরর টিকিট কাটতে।
— ওইটা না হয় সময় হলেই কেটে দিবো।
— তুমি বুঝি ওই সময় থাকবে?
— থাকবো মানে কি হে? তোমায় তো বিয়েটা আমিই করবো।
ওর কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে ঘাসের উপরই শুয়ে পরলাম। কারন ও যা বলল তা পুরুই অসম্ভব। কারন আমার কেন জানি ওরে ভাল লাগে না বরং ও আমায় শুধু জ্বালায়।
–ওই হাসতেছো কেন?
— তোমার কথা শুনে। তুমি আমায় বিয়ে করবে এটা কিভাবে সম্ভব?
— কেন অসম্ভবের কি হলো??
— তুমি যে পাগল মেয়ে, কবে জানি আমিই পাগল হয়ে যাই।

এরপর এনি আর কোন কথাই বলল না। হয়ত আমার কথা গুলো ওকে কষ্ট দিয়েছে। ওরে আমার ভাল লাগে তবে বন্ধু হিসেবে। আমরা প্রায় ২ বছর ধরে বন্ধু হিসেবে রয়েছি। কিন্তু কখনো ওরে আমি নিজের লাভার হিসেবে কল্পনাও করি নি। এখন ও যদি আমায় ভালবাসে তাহলে তো আমার কিছু করার নেই।

মেলায় ওরে নিয়ে আরো কিছুখন ঘুরে বাসার যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠলাম। কিন্তু ও খুব চুপ হয়ে আছে। আসলে যারা সবসময় বকবক করে তারা হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেলে কেমন যেন লাগে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম…
— কি হলো হঠাৎ দেখছি কখন থেকেই চুপ হয়ে আছো?
— না তেমন কিছু না। আসলে আমারর পাওয়ার থেকে চাওয়াটা একটু বেশি হয়ে গেছিল। হয়ত এটা সম্ভবই না কারন আমি তো আসলেই একটা পাগল। একটু বেশি কথা বলে পাগল করে দেই।
(কথাটা বলে ও কেমন যেন চুপ হয়ে গেল আর মাথা নিচু করে রাখলো)
— আসলে আমি তেমন ভাবে এতো কিছু ভেবে বলি নি। আমি হয়ত ভাবলাম তুমি মজা করতেছো তাই আমিও মজার মত বলে দিলাম।
— হুমম তাই তো হওয়ার কথা। যে মেয়ে সব সময় কাউকে হাসাতে চেষ্টা করে সে তো মূল্যহীন জুকার তাই না।
— আসলে তা নয় বোকা মেয়ে।
— সত্যি আমি খুব বোকা নয়ত কি আর কেউ নিরবে এতো সময় ধরে না বলে কাউকে ভালবেসে যায়।
— আচ্ছা আমি দুঃখিত।
— আপনার এইসব বলার কোন প্রয়োজন নেই। আমি সব বুঝে গেছি।

আমি আর কি বলবো ভেবে পাই নি তাই চুপ করেই রইলাম। ও আমার পাশে বসে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। আমার কাছে খুব খারাপ লাগছে কারন আমার কারনে কারো মন খারাপ হয়ে যাবে ভাবতেও পারি নি। তবে দোষ তো আমারই, হয়ত ওরে আলাদা ভাবে বুঝাতে পারতাম। এমন করে না বললেও পারতাম।

রিকশা থেকে নেমে এনি সরাসরি বাড়িতে চলে গেল কিন্তু আমার জন্য একবার পিছনেও তাকায় নি। আমি রিকশার ভাড়া মিটিয়ে চলে আসলাম। আমি ভাবলাম ও হয়ত ওদের দরজার সামনে আমার জন্য দাড়াবে কিন্তু এটাও আমার ভুল চিন্তা ছিল। আমিও আমাদের ফ্ল্যাটে চলে আসলাম। তারপর আমার রুমে এসে দেখি অামার ছোট বোন অন্তরা আমার কম্পিউটারে গান শুনতেছে।
— অন্তরা তুই তোর রুমে যা।
— না যাবো না। তোর মন চাইলে এখন তুই ছাদে যা। আমি এখন গান দেখছি চোখে দেখস না।

ধ্যাত ওর উপর আর কি বলবো? তাই আমি নিজেই ছাদে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বার হলাম। এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আর এই সময়টা ছাদ থেকে দেখলে হয়ত মনটা ভাল লাগবে তাই ছাদে গেলাম। ছাদে গিয়ে দেখি এনি ছাদের মেঝেতে বসে আছে। তাই আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম। তখন সাথে সাথে ও ওর চোখ মুছলো…..
— আসো তারা গণনা করি? ওই যে দেখো একটা তারা আর এর নাম শুকতারা।
— ( ও কোন কথা বলল না আর চুপ করেই রইলো)
— আচ্ছা বাবা আমি সরি তো। আমার এমন করে বলা ঠিক হয় নি।

ও কোন কথা বলল না বরং চুপ করে উঠে চলে গেল। ধ্যাত ভাল লাগছে না, সামান্য একটা মেয়ের রাগ কমাতে পারছি না। কি করলে যে ওর রাগ কমবে বুঝতে পারছি না।এইসব ভাবতে ভাবতে আমি আমার রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে দেখি অন্তরা সেই আমার কম্পিউটার নিয়েই ব্যস্ত। আচ্ছা ওর থেকে কিছু সাজেশন নিলে কেমন হয়। দেখি তো ও কি বলে…
— আচ্ছা অন্তরা মনে কর তোর উপর কোন মেয়ে যদি রাগ করে থাকে তাহলে তার রাগ কি করে ভাঙ্গাবি?
— ভাইয়া তোর মতলবটা ঠিক কি রে?
— উল্টা প্রশ্ন না করে উত্তর দে।
— এর আগে বল আমি কেন অন্য মেয়ের রাগ ভাঙ্গাবো। আর যদি ভাঙ্গাতে হয় তাহলে ওর গলা জড়িয়ে জুড়ে একটা পাপ্পি দিবো।
— কি তাহলে কি এখন আমিও ওই মেয়েরে পাপ্পি দিতাম?
— তুই দিবি মানে?
— মানে আমার উপর একটা মেয়ে রাগ করে আছে?
— ও আচ্ছা, তাহলে তুই এইসব করতে যাস না। তাহলে চড় একটাও পিঠে পরবে না বরং গালেই দিবে।
— তাহলে এখন আমি কি করবো?
— আমি সব বলবো, তার আগে বল মেয়েটার নাম কি?
— এনি।
— মানে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের এনি আপু।
— হুমম।
— তা রাগ করলো কি নিয়ে?
— ও নাকি আমায় ভালবাসে আর আমি এটা মজা করে উড়িয়ে দিছি। ( কথাটা বলার সাথে সাথে মুখে হাত দিলাম কারন সবই তো বলে দিলাম)
— এমন করাটা ঠিক হয় নি ভাইয়া।
— এখন বল তো কি করবো?
–( ও চুপ হয়ে আছে)
— কি হলো কিছু তো বল?
— আরে ভাবতে তো দিবি। এখন থেকে আমি যা যা বলবো তুই তাই করবি। আর আজ ২০টা সাদা গোলাপ নিয়ে আসবি।
— সাদা গোলাপ কেন?
— আরে সাদা গোলাপ দিয়ে বলবি তুই ওর বন্ধু হতে চাস আর এমন মজাও করবি না। আর সব থেকে বড় ডায়লগ হবে ” সাদা গোলাপ হলো বন্ধুত্বের প্রতিক, আর রাগ করো না”
— কাজ হবে তো?
— সন্ধেহ থাকলে দূরে যা।
— আরে এতো রাগছ কেন? তুই না আমার মিষ্টি বোন।
— হুমম এখন ১০০ টাকা ছাড়ো কারন শুকনা কথায় চিড়া ভিজে না।
— তাহলে পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নে।
— কী?? দাড়া মাকে বলতেছি
— আরে করস কী?? এই নে টাকা। কিছু হলেই শুধু টাকা আর টাকা।
— হুহ আমায় দিতে তো শরীর পুরাবেই। এটা যদি এনির ছোট বোন বর্ষা চাইতো তাহলে তো লাফিয়ে টাকা দিয়ে দিতে। শালীর দাম আছে আর আমি বুঝি বন্যায় ভেসে আসছি।
— থাক আর কথা না শুনিয়ে টাকা নে। একটা কথার জন্য কত্তো গুলো কথা শুনতে হলো।

পরের দিন বিকালে ছাদে দাড়িয়ে আছি আর অন্তরার কথা মত ঠিক ২০ গোলাপই আনছি। আর ছাদে এসেই এনিকে ফোন দিলাম ছাদে আসতে। কিছুখন দাড়িয়ে থাকতেই দেখি এনির আগমন ঘটলো। মেয়েটা চোখের নিচটা কেমন যেন কালো মনে হচ্ছে। হয়ত ঠিক মত ঘুম হয় না। আগে তো আমায় ফোন দিয়ে জ্বালিয়ে ফেলতো আর এখন তো ফোন দিলেও দেরি করে ধরে…
— তোমার চোখের নিচে এমন কালো হলো কেন?
— আপনার এটা জানাটা কি জরুরি?
— বললে কি ক্ষতি হয়?
— আসলে চোখে কাজল বেশি দেই তো তাই এমন দেখাচ্ছে।
— আমার সাথে মিথ্যা কি না বললেই নয়। আর আমায় আপনি করে বলছেন কেন?
— সত্যি মিথ্যা যাচাই করার ক্ষমতা যার নেই তার সামনে কথা বলাটাই নির্বোধ প্রকৃতির মানুষের প্রকাশ। আর আপনি আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন তাই মনে হচ্ছে আপনি বললেই ভাল হবে।
— আচ্ছা আমি কথার পেচেঁ পরতে চাই না। যে কারনে তোমায় এখানে ডেকেছি। এই ফুল গুলো ধরো।
— কেন?
— আরে ধরো তো। আগে ডায়লগ গুলো বলতে দাও। এনি তোমার সাথে মেলায় এমন মজা করে কথাটা বলা ঠিক হয় নি। আমি তোমার ভাল বন্ধু হতে চাই। আর সাদা গোলাপ হলো বন্ধুত্বের প্রতিক, বন্ধুত্বের মাঝে কি রাগ করলে চলে।
( কথাটা বলতে লেট হলো কিন্তু গোলাপ গুলো আমার উপর ছুড়ে মারতে সময় লাগলো না)
তাই আবার আমি বললাম….
–কি হলো ফুল ফেলে দিলে কেন?
— বন্ধুত্ব থেকে ভালবাসা সম্ভব তবে ভালবাসা থেকে বন্ধুত্ব সম্ভব না।

কথাটা বলেই ও দৌড়ে চলে গেল। ওকি বললো, বন্ধুত্ব থেকে ভালবাসা সম্ভব কিন্তু ভালবাসা থেকে বন্ধুত্ব সম্ভব না। কথা ভাবতেছি আর দেখি অন্তরা আমার সামনে দাড়িয়ে চকলেট খাচ্ছে…
— দেখ তোর প্লেন কচু হলো? মাঝখান থেকে আমার টাকা গুলো গেল।
— ভাইয়া প্রেম করবি আর টাকা খরচ করবি না এটা কেমন হয়।
— হইছে তুই আর কথা বলিস না।
— আরে শুনতো, তোরে একটা হেব্বি প্লেন দিচ্ছি। আমি শিউর এবার ওর রাগ কমে যাবে।
— ওকে বল।
— তুই ওরে প্রপোজ করে দে।
— কি বলিস? আমি তো ওরে ভালই বাসি না তাহলে প্রপোজ কেন করবো শুনি?
— নেকামীটা একটু কম করলেই তো পারিস। যদি ওরে ভাল না বাসিস তাহলে তোর কম্পিউটারে এনি আপুর ছবির জন্য আলাদা ফাইল করা কেন?আর ওরে নিয়ে তো কম কবিতা লেখিস নি ডায়রীতে। আর এটাই ভালবাসা অন্য কিছু না।
— আরে এইসব কিছু না। আমি ওরে ভালবাসি না, শুধু বন্ধু মনে করি।
— ও আচ্ছা তাহলে প্রমান দে।
— কী প্রমান চাস বল?
— তুই ১ সপ্তাহের জন্য বাইরে কোথাও ঘুরতে যা। আর ওই খানে গিয়ে যদি ওরে মিস করিস তাহলে মনে করবি ওরে তুই ভালবাসিস আর ওর কথা যদি মনে না পরে তাহলে তুই ওরে ভালবাসিস না।
— ওকে তাই হোক।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বার হয়ে গেলাম মামার বাড়ি যাবো বলে। মোটামোটি অনেকটা দূরের রাস্তা। নরসিংদী টু ফরিদপুর। প্রায় যেতে যেতে ৬ ঘন্টা লেগে গেল। মামার বাড়িতে যেতেই মামাত ভাই অংকনের সাথে দুষ্টামীতে মেতে উঠলাম। আমি যদি কোথাও বেড়াতে যাই তবে এখানেই একটু বেশি আসি।অংকন আর আমি মোটামোটি সমবয়সী তাই সময় যে কোথায় দিয়ে পার হয় বুঝতেই পারি না।

রাতে আমি আর অংকন শুয়ে আছি। বাড়ির সবাই মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে। তবে অংকনের কারনে আমার ঘুম হচ্ছে না। কারন, ওর জি এফের সাথে কখন থেকে ফোনে বকবক করছে। আমি বুঝি না একটা মানুষ ফোনে কত কথা বলতে পারে। মনটায় বলতাছে ওর ফোনটা ভেঙ্গে দেই। আর নিজেও একটু বোরিং হচ্ছি। তবে সত্যি বলতে এনির কথা মনে পড়ছে। ও তো মাঝে মাঝে এতো রাতে আমায় ফোন দিয়ে কথা বলতো।

একবার রাত প্রায় ১২টা উপরে বেজে গেছে। আর আমিও শুয়ে আছি ঘুমিয়ে যাবো বলে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো, তাকিয়ে দেখি এনি ফোন দিয়েছে…
— এতো রাতে ফোন দেওয়ার মানে কি?
— কেন কোন মানা আছে নাকি ফোন দেওয়ার মাঝে? আমি জানি আপনার গার্ল ফ্রেন্ড নাই তাই আমায় একটু সময় দিলে কি হয় শুনি?
— গার্লফ্রেন্ডের মাঝে আমার একটু চুলকানি আছে তাই এইসব কথা বাদ দাও আর ঘুমিয়ে পরো। আমি ফোন রাখছি।
— আরে শুনো তো
— আবার কি?
— চলেন না বাইরে ঘুরতে যাই আর এক সাথে আইসক্রিম খাবো নে।
— এই রাতে নাইট গার্ডের কাজ করার কোন শখ আমার নেই আর কি বললে আইসক্রিম এটার দোকানের মালিক সহ দোকানও ঘুমিয়ে আছে।
— যাবে কি না বলো?
— জ্বী না।
— আসলে তোমার মনে না মায়াদয়া বলতে কিছু নাই। একটা রোবট কোথাকার।
— মেন ইন বাংলাদেশি এই এক পিছ।
— হুহহ
— ওকে আমি রাখছি।
বলেই ফোনটা কেটে দেই। আর ভাবি মানুষ কি করে এতো কথা বলে।

— কিরে কি নিয়ে এতো ভাবছিস? ঘুমাবি না, রাত তো অনেক হয়েছে।
( তার মানে এতোখন এনি কে নিয়ে ভাবছিলাম।)
–এই তো ঘুমিয়ে যাবো। তোর ফোনের বকবকের কারনে তো ঘুমাতে পারছি না।
— ওকে শুয়ে পর।
এরপর আমি আর অংকন ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে ঘুম ভাঙ্গলো পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে। তবে কি যেন মিস করতে শুরু করেছি। সত্যি বলতে এনি কে দেখতে খুব ইচ্ছা করতেছে। ওর সাথে আমার প্রথম দেখাটা ছাদেই হয়েছিল।আমি তখন ছাদে উঠতেই দেখি এনি দুই হাত বাড়িয়ে প্রকৃতি শান্ত বাতাস অনুভব করতেছে।
— আপনি বুঝি কাকতাড়ুয়া?
আমার কথাটা শুনে পিছনে ফিরে তাকালো এনি। তখন আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো।তাই আবার বললাম..
— আপনি আমায় চিনবেন না। আমিও এই ফ্ল্যাটে থাকি তবে নতুন এসেছি ৫ দিন হবে। আজ ঘুম ভেঙ্গে গেল তাই ছাদে আসলাম পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শুনতে। এসে আপনাকে দেখলাম কাকতাড়ুয়ার মত দাড়িয়ে আছেন। তাই বললাম আপনি কাকতাড়ুয়া কি না।
— আপনার মাথায় হয়ত সমস্যা আছে। মানুষ কি কখনো কাকতাড়ুয়া হয়?
— হুমম হয়, উদাহরন সরূপ আপনি।
— আজব।
বলেই এনি চলে গেল। এরপর আস্তে আস্তে এনির সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল কিন্তু আমি জানতাম আমি ওরে ভালবাসি না তবে আজ বুঝতে পারছি আমি সত্যি ওরে কতটা ভালবাসি। হ্যা এনি আমি তোমায় ভালবাসি। তাই আর লেট না করে ফ্রেশ হয়ে বিদায় নিয়ে মামার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরলাম।

বাড়িতে এসে আমাদের ফ্ল্যাটের কলিং বেল চাপতেই অন্তরা দরজা খুলল। আর ও আমায় দেখে অবাক হওয়ার বদলে হাসতে লাগলো।
— কি হলো এতো হাসি কি হলো?
— যাই হোক, এখন কি প্রমান হলো? তুই এনি কে ভালবাসিস তাই তো।
— আসলে তাই কিন্তু…
— কোন কিন্তু নেই তুই আজ বিকেলে এনি আপুকে প্রপোজ করছিস এটাই ফাইনাল।
–ওকে।

হাতে একটা কদম ফুল নিয়ে ছাদে দাড়িয়ে আছি। আর এনিকে ফোন দিয়েছে ছাদে আসতে। যদিও ও মানা করছে ছাদে আসবে না তবুও আমি সিউর ও না এসে থাকতে পারবে না। একটু পরেই এনির নুপুরের আওয়াজ শুনছি। মানে এনি আসতেছে। ও আস্তে আস্তে এসে আমার সামনে এসে দাড়ালো।
— আসলে এনি তোমায় একটা কথা বলার ছিল?
— বলেন?
— আমায় আপনি নয় বরং তুমি করেই বলো।
— সেটা হয়ত আর হওয়ার নয় কারন আপনি তো আমার কেউ না। আর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি ভার্সিটির হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করবো তাহলে হয়ত আমায় আপনাকে দেখতে হবে না। আপনি আমার জন্য বাড়ি থেকে না গেলেও পারতেন।
— চুপ একদম চুপ, আর একটা কথাও না। আমি যা বলতে চাই তা শুনো।
— জ্বী।
— আমি ১ টা দিন দূরে ছিলাম শিউর হতে তোমাকে ভালবাসি কি না। কিন্তু আমি শিউর হলাম যে তুমি আমার বন্ধু নও তবে ভালবাসার জায়গাটা পুরুটা নিয়ে নিয়েছো। তুমি বলে সব সময় ডাকার অধিকার দিতে চাই তোমায়। একটু ভালবাসবে কি আমায়। আমি তোমায় খুব ভালবাসি।

কথা গুলো বলে ওর দিকে ফুলটা বাড়িয়ে দিলাম কিন্তু ও কিছু বলল বরং চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে। তাই আবার বললাম…
— কি হলো কিছু বলো?
ও কোন উত্তর দিলো না বরং ফুলও নিলো না। চুপ করে ছাদ থেকে চলে গেল। আমার খুব খারাপ লাগছে। তবে একটা কথা মনে পরতেছে। কে যেন বলছিল, ভালবাসায় মেয়ে বুঝলে ছেলে বুঝে না আর ছেলে বুঝলে মেয়ে বুঝে না। হয়ত আমার থেকে চাওয়ার থেকে মাত্রাতিরিক্ত কষ্ট পেয়েছে যার কারনে কিছু না বলেই চলে গেল।

সকালে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বার হলাম। আমি সরাসরি সিভিল ভবনে চলে গেলাম যদিও এনিকে দেখতে কম্পিউটার বিভাগে যেতে মনটা চাচ্ছিল। ক্লাসে গিয়ে খুব কষ্টে একটা ক্লাস করলাম। কেন জানি ভাল লাগছে না তাই ক্লাস থেকে বার হয়ে গেলাম। বাইরে বার হয়ে অন্যমনস্ক হয়ে হাটতে লাগলাম। হঠাৎ শ্রাবনী আমায় ডাক দিলো। শ্রাবনীও কম্পিউটার বিভাগে পরে আমার সেম ব্যাচ। আমরা বন্ধু বলতেই পারা যায়….
— কি খবর রাজ তোমার তো আজকাল কোন দেখাই মিলে না? কই থাকো সববসময়। আমাদের ভবনে কি আসা যায় না।
— আসলে তা নয়, আমি তো মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ছিলাম। তাই ভার্সিটিতে আসতে পারি নি।
— ও আচ্ছা
হাটতে হাটতে শ্রাবনীর সাথে কথা বলছি। হঠাৎ কই থেকে যেন এনি আমার সামনে এসে হাজির….
— এনি তুমি এখানে?
— কাল বিকেল আমায় প্রপোজ করলি আর এখানে অন্য মেয়ের সাথে ঘুরতেছিস তাই না। আসলে তোর চরিত্র ভাল না। তুই থাক আমি গেলাম।

আমাকে কোন কথা বলতে না দিয়ে রাগ দেখিয়ে চলে গেল এনি। আসলে ওর কোন কথাই আমার মাথায় যাচ্ছে না। তখন শ্রাবনী আমায় বলল…
— রাজ আসলে সরি। আমার জন্য হয়ত মেয়েটা তোমায় ভুল বুঝলো। তুমি যাও ওর কাছে, আর ওরে বুঝাও।
— ওকে বায়

শ্রাবনীর থেকে বিদায় নিয়ে দৌড়ে ভার্সিটির গেটের সামনে আসলাম। দেখি এনি একটা রিকশা নিয়ে চলে যাচ্ছে তাই আমিও আরেকটা রিকশা নিয়ে ওর পিছু নিলাম।

রিকশা এসে আমাদের বাড়ির সামনে থামলো। ও ওর ভাড়া দিয়ে উপরে চলে গেল । তারপর আমিও আমার ভাড়াটা দিয়ে চলে আসলাম। তিনতলায় উঠে আমি রুমে না গিয়ে ওর ফ্ল্যাটে কলিং বেল বাজাতে এনির মা এসে দরজা খুলল….
— আন্টি এনি আছে।
— মাত্র আসলো আর আমার হাতে ব্যাগ দিয়ে বলল ছাদে যাচ্ছে।
— ওকে আন্টি আসি।
আমি আর লেট না করে দৌড়ে ছাদে গেলাম। গিয়ে দেখি মেডাম গাল ফুলিয়ে বসে আছে আর চোখ দিয়ে স্রোত ধারা বয়ে চলেছে।
— তুমি তো আমায় ভালই ভালবাসো না। তবে…..
— কে বলল তোমায় ভালবাসি না। আর কতবার কত ভাবে বুঝাবো আমি তোমায় কতটা ভালবাসি।
— তাহলে কাল রাজি হলে না কেন?
— এমনি, ভাবলাম তুমি হয়ত আমার জন্য একটু ওয়েট করতে পারবে কিন্তু না তা করে ওনি অন্য মেয়ের সাথে ঘুরে।
— আরে তুমি যা ভাবছো তা ভুল। ও তোমাদের বড় আপু হয় তোমাদের বিভাগের।
— ঠিক তো।
— একদম পাক্কা। আর এই যে তোমার হাতটা ছুয়ে বলছি খুব খুব খুব বেশি ভালবাসি আমি তোমায়।
— ছেড়ে যাবে না তো কখনো।
— একদম না তবে আপসোস একটা বিষয়ে।
— কি?
— তুমি অভিশাপ দিয়ে ছিলে না তোমার মত পাগল মেয়ে আমার কপালে জুটবে। আর তাই হলো।
— ওই তুমি না। ( বলেই ও মারতে শুরু করলো।)
আসলে ভালবাসাটা বুঝার ক্ষমতা সবসময় থাকে না। তবে এবার যেহেতু এনির ভালবাসাটা বুঝেই গেলাম তাই আর ওর হাত ছাড়ছি না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত