– সাজিদ তুমি বদলে যাচ্ছ দিন দিন। কিন্তু এমন বদলে যাওয়ার কারনটা কি সাজিদ?
– আমি বদলে যাচ্ছি! কেমন?
– যে মানুষটা ঘন্টায় ঘন্টায় কথা না বল্লে পাগলামি করতো সেই মানুষটা এখন এক দিন কথা না বলে ও দিব্বি দিন কাটিয়ে দেয়।
– দেখ অদ্রিতা এসব তোমার ভুল ধারনা। আমি মোটে ও বদলাই নি।
– আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা ও ক্রমাগত কমতে শুরু করেছে।
– অদ্রিতা! তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। না আমি বদলেছি না তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কমেছে।
– ভুল আমার হচ্ছে না। ভুল করে চলেছ তুমি সাজিদ। আচ্ছা তুমি আমাকে একটা কথা বলতো সাজিদ।
– কি কথা বলো!
– তোমার এমন পরিবর্তন হওয়ার কারন কি! আমার কোন কথায় কি তোমার মনে আঘাত পেয়েছে?
– অদ্রিতা বারবার তুমি একই কথা কেন বলে যাচ্ছ তা আমার বোধগম্য না। কিন্তু আমি আবার ও বলছি আমার পরিবর্তন হইনি।
– আচ্ছা তুমি আমার সাথে আজ বিকালেই দেখা করবা।
– তুমি বল্লেই কি আমি আসতে পারবো! আমি তো অন্য একজনের অফিসের কর্মকর্তা। আমার ও কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে অফিসে, বল্লেই তো আসা যায় না
– তোমার অফিসের প্রতি দ্বায়বদ্ধতা আছে। আর আমার প্রতি কিছু নেই তাই না? আমি বিকালে থাকবো সেই জায়গায় তোমার জন্য। বাকিটা তোমার ইচ্ছা।
– অদ্রিতা পাগলামো করো না। আমি….
ওপাশ থেকে ফোনের লাইন কেটে দিয়েছে অদ্রিতা। মেয়েটা ইদানীং একটু বেশি পাগলামি করছে। অবশ্য অদ্রিতা’র এমন পাগলামি নতুন কিছু নয়। সম্পর্কের পর থেকেই এমন পাগলামি সাজিদ মেনে নিয়ে এপর্যন্ত এসেছে। তবে আজকের পাগলামি’র সাথে সাজিদ পরিচয় হয়নি আগে কখনও। এমন কথা অদ্রিতা আগে কখন ও বলেনি। বলার মতো সুযোগ কখনও সাজিদ দেয়নি। কিন্তু আজকের এই কথা বলার মতো এমন কি দেখেছে সাজিদের মাঝে তা সাজিদের নিজেরই অজানা। অদ্রিতা বলেছে বিকালে সে আসবে। সাজিদ জানে একবার বলেছে আসবে তো মেয়ে টা ঠিকই এসে বসে থাকবে সাজিদের জন্য।
অদ্রিতা তাদের প্রিয় স্থান ছোট্ট খালের পাশে বসে আছে। এই নগরীতে পুকুর বা ছোট্ট একটা খাল পাওয়া কষ্টসাধ্য। তবে এই জনবহুল নগরীর পাশ ঘেসা ছোট্ট খালটা তার অস্তিত্ব ধরে রেখেছে। নগরীর মানুষ গুলোকে দূরে রেখে এসে এখানের শুনশান পরিবেশ, হালকা বাতাস। এমন যাদি হতো এই বাতাসে হলদে কাগজে একটা চিঠি লিখে নীল খামে মুড়িয়ে উড়িয়ে দিলে সাজিদের কাছে নিয়ে যাবে তবে এই মুহূর্তে অদ্রিতা সেটাই করত। কষ্টের রং নাকি নীল হয় তাহলে নীল কালি দিয়ে হলদে কাগজে লিখে নীল খামে মুড়িয়ে দিলে কষ্টদান করা হবে হলদে কাগজের উপর। নাহ কষ্ট গুলো হয়তো হলদে কাগজ সহ্য করতে পারবে না। বরং কিছু কষ্ট সবার অগোচর হয়েই থাকুক। কষ্ট গুলো আজকাল বড্ড বেহাপানা করে। অদ্রিতা’র ভাবনা’র জগতের কষ্ট গুলো আসলেই কি সত্যতা হয়ে রুপ নেবে! নিলেই বা অদ্রিতা কি করবে! সাজিদ কি সব সময়ের মত পাশে এসে হাত টা ধরে বলবে তোমার কষ্টের ভাগ দিও আমাকে!
– নাহ এই পরিবেশে’র সাথে এই সব উদ্ভট চিন্তাধারা যায় না। এই পরিবেশ শুধু মাত্র রোমান্টিকতার জন্য মানানসই।
অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সাজিদ এসেছে ছোট্ট এই খাল পাড়ে। অদ্রিতা বসে আছে বেনি করা চুলে। অদ্রিতা আগে কখনও বেনি করা চুলে সাজিদে’র সাথে দেখা করতে আসেনি। অদ্রিতার খোলা চুলে নাকি অদ্রিতা কে অধিক থেকে অধিকতর সুন্দরি সঙ্গে মায়াবী লাগে। সাজিদের কথায় অদ্রিতা পেছনে ফেলে আসা কলেজ জীবন থেকে খোলা চুলে সাজিদের সামনে আসতে এখন অভ্যস্ত। তবে আজ অদ্রিতা’র বেনি করা চুল সাজিদ’কে বেশ বিব্রত করেছে। পেছন থেকে গিয়ে নীরবতা নিয়ে বসেছে সাজিদ। অদ্রিতা গভীরতর কোন চিন্তাজগতে ডুব দিয়ে আছে। কাঁশি দিতেই অদ্রিতা পাশ ফিরে সাজিদের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আবার অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। অদ্রিতা’র এই আড় চোখে তাকানো’তে কি ভালোবাসা ছিল! নাকি ছিলো সাজিদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ! নাহ সাজিদ এই বিষয় টা বুঝতে পারেনি, বুঝতে হলে প্রথমত মেয়েটি’র চোখে চোখ রেখে কথা বলা প্রয়োজন। তবে অদ্রিতা এখন সাজিদের দিকে তাকাবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
– হটাৎ এমন জরুরি তলফ তোমার!
অদ্রিতার ভঙ্গিমা দেখে মনে হল অদ্রিতা কিছুই শুনছে না। সাজিদ অদ্রিতা’র বাম হাতটা ধরে বসে রইল। নীরবতা দুজনের মাঝেই বিরাজমান। এই মুহূর্তে কি বল্লে বা কি করে অদ্রিতা’র রাগ ভাঙ্গানো যাবে সাজিদ ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। এবার বুঝি দুজনের নিরবতায় ছেদ ফেললো অদ্রিতা।
– এই ভাবে হাত ধরে রাখার মানে কি?
– হাত ধরতে আবার মানে দরকার পড়ে নাকি! আর দরকার পড়লে ও তো এর মানে আমার জানা নেই।
– মানে জানা না থাকলে তবে হাত কেন ধরছ!
অদ্রিতা নোনাজলে টলমলানো চোখে সাজিদে’র দিকে তাকিয়েছে। যেন আকাশে ঘনকালো মেঘেরা জমাট বেধেছে। এখনই তারা মুশলধারা বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়বে। চোখ থেকে পানি গড়ি পড়তে সাজিদ শক্তিগড় হাতে চোখের পানি মুছে দিল।
– এই তুমি কান্না কেন করছ?
– এর উত্তর বুঝার ক্ষমতা তোমার এখন ও হয়নি সাজিদ। তুমি কেন বুঝতে চাও না আমাকে!
– এই যে তুমি আবার শুরু করে দিলে! আচ্ছা কি করলে বা কি ভাবে থাকলে তোমাকে বুঝতে পারব বলে তোমার ধারনা?
– না কোন ভাবে না। বুঝতে হবে না তোমার আমাকে, থাকো তুমি।
– আরে এই! অদ্রিতা…এই অদ্রিতা!
অদ্রিতা’র অভিমান আজ বেশ গাড় রুপ নিয়েছে তা বুঝতে কষ্ট হলনা সাজিদের। অদ্রিতা উঠে বাসার দিকে পাথরে’র রাস্তা ধরেছে। সাজিদ বাধা দিলনা, বাধা দিলে ও অদ্রিতা এখন বাধা মানবে না তা সাজিদের অজানা নয়। সাজিদ বসে অদ্রিতা’র চলে যাওয়া’র পথ দেখছে। সাজিদে’র চোখ ঝাপসা হচ্ছে ক্রমশ। অদ্রিতার চলে যাওয়া পথে আর তাকাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। অদ্রিতা পেছন ফিরে তাকিয়ে সাজিদের চোখে’র দিকে নজর ফেললে হয়তো আবারও আসতো ফিরে। তবে নাহ অদ্রিতা আজ আর ফিরে তাকাবে না। অভিমানী’র অভিমান গুলো আজ জমাট থেকে মুক্তি পেয়েছে। বিকালের সূর্য পশ্চিমাকাশে লাল রঙ্গা হয়ে ঢলে পড়তে শুরু হয়েছে। খালের পানিতে সেই লাল হওয়া সূর্যের লালচে ভাব পড়েছে। কিছু সময়ের মাঝেই সূর্যে’র অনুপস্থিতি পেয়ে আধারেরা দল বেধে গ্রাস করে নেবে এই শরহটাকে। খাবারের খোঁজে বের হওয়া পাখি গুলো ফিরবে অপন বাসায়, সঙ্গে শহরের মানুষ গুলো ঘরে ফিরবে! হা আপন ঘরে। সাজিদের বাসায় ফেরার সময় হয়েছে, এবার ফিরতে হবে ঘরে সাজিদ কে।
সাজিদ অদ্রিতার প্রথম দেখা সাজিদের কাজিনের বিয়েতে। প্রথম দেখায় দুজন দুজন’কে পছন্দ করে গল্পটা ওদের মোটেও তেমন না। কাজিনের বিয়েতে স্টেজ দায়িত্ব, বর পক্ষে’র কাছে থেকে তাদের দায়িত্ব এমন বেশ কিছু দায়িত্ব নিয়ে সাজিদ বেশ ব্যস্ত। অদ্রিতা সাজিদের দুঃসম্পর্কে’র বড় খালার মেয়ে। আগে কখনও দেখা বা পরিচয় হয়নি দুজনের। বিয়ের আগের রাতে বাসার ছাদে সবাই বসে আড্ডা দেওয়ার ফাঁকে অদ্রিতা’র সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় সাজিদের আম্মা। সময়টাতে পরিচয় হওয়া পর্যন্তই শেষ হয়। পরের দিন বিয়ের পর্ব শেষে বাসা বেশ ফাঁকা। সবাই মেয়ে বিদায়দানে ব্যস্ত। বাসায় গার্ডিয়ানদের মোটা স্বরে কান্নার রোল। সাজিদ এই বিদায়দান পর্ব শেষে হাপ ছেড়ে বেঁচেছে। মাথা থেকে যেন বড় কোন একটা বোঝা দূর হয়েছে। চিন্তাদূর হয়ে সিড়িতে বসে গুন গুন সুরে কোন একটা গানের সুর তোলার চেষ্টা করছে, তবে সুরেরদল কোন ভাবেই ধরা দিচ্ছে না সাজিদের গলায়।
– গুন গুন করে না গেয়ে একটু গলা ছেড়ে গাইলে তো আমি ও শুনতে পারতাম।
– আপনি! আপনি আমার গুন গুন শুনছিলেন মনে হচ্ছে?
– নাহ তার সুযোগ আর হয়নি। আমি সবেমাত্র এসে দাঁড়ালাম। বসতে বলবেন না!
– জ্বী! ওহ হা বসেন, তবে সিড়ি তো খুব একটা চওড়া না।
– চওড়া না হলে ও চলবে। আমি বসতে পারবো সমস্যা হবে না আমার। ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসির রেখা টেনে সাজিদ বললো:
– তবে বসেন না। কথা বলা যাবে আপনার সাথে।
– থ্যাংকইউ।
দুজনের কথা বেশ জমে উঠেছে। অদ্রিতা হাসলে গালের দুপাশে ছোট্ট দুটো টোল পড়ে যা কথা বলার মাঝে হাসির এক পর্যায়ে ধরতে পেরেছিল সাজিদ। হাসলে অদ্রিতা’র দুগালে টোল পড়া সাজিদ বেশ মুগ্ধকর চোখে দেখছে। সাজিদের ইচ্ছা হচ্ছে অদ্রিতা’কে অনন্তকাল ধরে এমন ভাবে হাসাতে। মুখের সামনে হাত নাড়াতে সাজিদ নড়েচড়ে উঠছে।
– কি হলো তাকিয়ে আছেন কেন এই ভাবে? ধরা গলায় সাজিদ বলে উঠল:
– জ্বী! নাহ মানে ইয়ে নাহ এমনি। ওই যে সিড়ির ওই পাশে একটা টিকটিকি যাচ্ছিল। ওই তো ওই টিকটিকি দেখছিলাম।
– টিকটিকি ও এই ভাবে দেখতে হয়!
– নাহ। থাক বাদ দেন।
এভাবেই দুজনের পরিচয়, নাম্বার আদানপ্রদান, ফেসবুকে টেক্সট চালাচালি। দুজনের মাঝে গড়ে উঠা বন্ধুত্ব, সেই বন্ধুত্ব মোড় নেওয়া ভালোবাসার বন্ধন। শেষ হয় কলেজ জীবন, ভার্সিটি জীবন। সাজিদ পড়া শেষে পেয়েছে ভালো জব।
– আসব মা? চোখ মুছে স্বাভাবিক ভাব নিয়ে অদ্রিতা:
– ওহ বাবা! আসো বাবা ভেতরে আসো।
অদ্রিতার সামনে থাকা টুল টেনে খাটের পাশে বসেছে অদ্রিতার বাবা জামান সাহেব। চোখেমুখে তার অস্বস্তি’র চাপ। পাশে বসে জামান সাহেব উশখুশ করছেন। কিছু বলবে বলে যে তিনি অদ্রিতার রুমে এসে বসেছে তা খুব স্পষ্টতর।
– বাবা তুমি কি কিছু বলবা?
– মানে আরকি মা!
– বুঝতে পেরেছি তুমি বিয়ের কথা বলবা তাই তো? বাবা তোমাকে কত বার বলেছি বিয়েটিয়ে আমি করব না।
– দেখ মা সমাজ বলতে ও তো একটা কিছু আছে। আসে পাশের মানুষ গুলো বলা বলি করে মেয়ের বয়স হয়েছে কেন বিয়ে দেই না।
– বাবা…..
– আচ্ছা দেখ মা তুই এতো দিন তো অপেক্ষা করছিস কিন্তু সেই ছেলেটা কি ফিরে এসেছে? আসে নি।
তুই একবারের জন্য আমাদের সাথে পরিচয় ও করিয়ে দিসনি কখনও। ফিরে ও আসবে না মা ও। আর ওই ছেলের জন্যে তো গত চার মাসে কত গুলো সম্বন্ধ না করেছি। আর কত মা! এবার অন্তত আমাদের এই বুড়ো-বুড়ির কথা চিন্তা কর মা।
অদ্রিতা থমেরে বসে আছে। গত চার মাসে বেশ কয়েকটা সম্বন্ধ এসেছে তবে সব গুলোই অদ্রিতা না করে দিয়েছে। এবার জামান সাহেবে’র কথায় নিজের মাঝে নিজেকে অপরাধী বলে মনে হচ্ছে। নিজের জন্য বাবা- মা কে আর কষ্ট দিতে মন সায় দিচ্ছে না। মনের অবাধ্য হয়ে জামান সাহেব কে বললো:
– আচ্ছা বাবা তোমরা যেইটা বলবা আমি সেইটাই মেনে নিব। তোমাদের যেইটা ভালো মনে হয় তোমরা সেইটাই করো বাবা। এ কথায় জামান সাহেবের মুখে হাসি ফুটেছে।
– মা সত্যি তুই আমাদের কথায় রাজি হবি!
– হা বাবা।
– আচ্ছা একটা সম্বন্ধ আছে,
আমি আগামীকাল তাহলে তাদের আসতে বলবো। তুই তৈরী থাকিস মা। সাজিদে’র স্মৃতিময় সময় গুলো ভেবে চোখ ঝাপসা করে চলেছে অদ্রিতা। সাজিদ’কে শেষ বারের মতো কল করতে দিয়ে ও ফোনটা শাটডাউন করে রেখে দিল। অদ্রিতা’কে দেখতে এসেছে ছেলে পক্ষ। সাজিদের পছন্দ ছিল নীল রঙ্গের জমিনে লাল পাড়ের শাড়ি। যে মানুষটা নেই তার পছন্দ অপছন্দ নিয়ে আর ভাবতে চায় না অদ্রিতা, আর ডুব দিতে চায় না অতীতের স্মৃতিপটে। চোখেরজল মুছে চোখ দুটো’র মাঝে লাল রঙ্গের ছাপ ফেলে ছেলে পক্ষের সামনে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়েছে অদ্রিতা।
– মা আমি মেয়ে’র সাথে একান্তে কথা বলতে চাই।
– একান্তে কথা বলার কি আছে?
– এ যুগের মেয়ে যদি তার প্রিয় কেউ থাকে! যদি রাজি না থাকে! আমি নিজের জীবন নষ্ঠ করতে চাইনা, বিয়ে তো করবো পুরোটা জীবন এক সাথে থাকার জন্য। তাই আগে জিঙ্গেস করে নেওয়া দরকার।
– আচ্ছা ঠিকাছে তুই যা ভালো মনে করিস। তবে উল্টাপাল্টা আবার কিছু বলিস না। অদ্রিতা’কে দেখে আরিফের পরিবারের পছন্দ হয়েছে।
– মেয়ে তো আমাদের আগে থেকেই দেখে আসছি। নতুন করে আর কি বলবো! আমাদের পছন্দ হয়েছে মেয়ে। তবে বাকিটা আমাদের ছেলের উপর নির্ভর আপা।
– আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা মা তুই ছাদ থেকে ঘুরে আয় ছেলে টা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে তোর সাথে কথা বলতে।
অদ্রিতা’র জন্য বিরক্তিকর বিষয় হলে ও ছাদে যেতে হবে অদ্রিতা’কে। অদ্রিতা ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা কালো রঙ্গের শার্ট পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে’র থেকে বেশ দূরত্ব রেখে দাঁড়াল।
– আপনি কি জিঙ্গেস করার জন্য আমাকে ডেকেছেন তা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি। আমার আগে কেউ ছিল কি না তাই তো! জিঙ্গেস করতে হবে না আমিই বলছি। হা আমার জীবনে একটা মানুষ ছিলো। ভালোবাসতাম অধিক থেকে অধিকতর। তবে..
– সে ধোকা দিয়েছে?
– ইয়ে….
– কি হলো কিছু বলছেন না যে! বুঝেছি মন খারাপ হয়েছে। যাগ্গে বাদ দেন। যে গেছে সে শুধুই অতীত, তাকে ছুড়ে ফেলে দিন। দেখেছেন আকাশে মেঘের ঘনঘটা। এখনই মনে হয় মুশলধারা বৃষ্টি হবে।
– আপনি….
– কেন এই কথা বলছি তাই তো? অদ্রিতা’র মন ও যেন আকাশের মতোই মেঘলা হয়ে উঠেছে। কি বলা উচিত ছেলেটাকে জানা নেই অদ্রিতা’র।
– এই তো দেখেছেন বলতে না বলতেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কথাটা শেষ করে অদ্রিতার দিকে ফিরে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে:
– সাসাজিদ তুমি!
অদ্রিতা জমাট বাধা বরফের খন্ডের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে কোন অনুভূতি অদ্রিতাকে স্পর্শ করতে পারছে না। চোখ থেকে অনুভূতিহীন জল গড়িয়ে পড়ছে। বৃষ্টিজলে চোখের জল মিশ্রণে গাড়ো নাতুন করে ভালোবাসার উৎপত্তি। অদ্রিতা’র সামনে বাম হাটু গেড়ে হাতে রিং নিয়ে বসে আছে সাজিদ।
– উইল ইউ ম্যারি মি? অদ্রিতা হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছে সাজিদের হাতের উপর। রিং বেশ মানিয়েছে অদ্রিতার হাতে। ভেজা চুলে, ভেজা শাড়িতে, গাড় করে করে চোখে টানা কাজল, বৃষ্টি জলে গড়িয়ে পড়ছে কাজল মুখ বেয়ে, লিপিস্টিক মাখা পাতলা ঠোটে বারবার কিছু বলতে যেয়ে ও থেমে যাওয়া, সব মিলিয়ে মায়াবী অদ্রিতা দাঁড়িয়ে আছে সাজিদের সম্মুখে।
– এমনভাবে কাঁদালে কেন আমাকে?
– মায়াবতী’র ভেজা চোখ দেখতে। ভালোবাসো এখন! ভালোবাসো তোমার জীবনে জড়িয়ে থাকা সেই ছেলেকে?
– হু ভালোবাসি তো, খুব ভালোবাসি, খুবই।
অদ্রিতাকে বাহুডোরে শক্ত করে জড়িয়ে নিতে ভুল করেনি সাজিদ। বৃষ্টি শেষে বিস্তৃত ওই আকাশের বুকে মেঘ কেট গেছে। মেঘ কেটে সাতরঙা রংধনু ভরা আকাশের নিচেয় একে অপরকে বাহুডোরে আগলে দাঁড়িয়ে আছে সদ্য নতুন জীবনে পা রাখতে যাওয়া সাজিদ অদ্রিতা।
– মা ভাবি কিন্তু আমার পছন্দ।
– আরিফ তুই একটু বেশি কথা বলিস। আমরা পছন্দ করেছি এখন তোর ভাইয়া পছন্দ করলে তবেই তোর ভাবি হবে।
-সমাপ্ত