অপূর্ণতার ভালোবাসা

অপূর্ণতার ভালোবাসা

( পর্ব –০১)

রিয়াজের একটা পোড়া কপাল।আজ অব্দি বিয়ে করা হয়নি তার।সে বিয়ে করছেনা যে তা নয়।ওর বিয়েই হচ্ছেনা।সেদিন এক মেয়েকে প্রফোজ করেছে।মেয়ে রেগে গিয়ে “ঠাসসসসসসসস”

বুঝিতেই পারছেন কি হয়েছে।এই পোড়া কপাল নিয়ে আর সামনে এগিয়ে যেতেও পারছিনা।একদিন রাস্তায় এক মেয়েকে দেখেই রিয়াজ ফিদা।মেয়ের টানা টানা চোখ,মাথার কেশ দেখলে যে কেও প্রেমে পড়ে যাওয়ার কথা,মুখের উজ্জ্বলতা যেনো এলাকাটা আলোকিত করে তুলছে।নিশ্চয় ফেয়ার এন্ড লাভলী মেখে এমন কমলা সুন্দরী হয়ে উঠেছে। আর যাইহোক,আমি এই মেয়ের পিছনে অবশ্য এক চেস্টা দিতে পারি। লোকমুখে শুনা যায়,গত ২ বছরে সে ৪০৭ টা মেয়েকে প্রফোজ করেছে।এরমধ্যে ৩৫৭ টা থাপ্পড় খেয়ে মাওলানা হয়ে গেছি। ৪৫ জনের উত্তর এসেছে,” দেখো? আমার বিয়ে হয়েছে আরো আগে,এখন আমার বাচ্চাও আছে, তুমি ওদের দায়িত্ব নিতে পারলে আমি রাজি”।

কথাটা শুনে আমার পিছনে তাকানোর সাহস হয়নি।আল-বারাকা বাস পিছনে ফেলে দৌড় মেরেছি।অন্য বাকি ৫৫ জন উত্তর দিয়েছে

” এই কাইল্লা বলদ মার্কা চেহারা নিয়া আমারে প্রফোজ করলি।তোর সাহস তো কম না? দাড়া এক্ষুনি তোকে পুলিশে দিচ্ছি”

এই কথা শুনে আমি তক্ষুনি ওদের পায়ে পড়ে ক্ষমা চেয়েছি।কান ধরে উঠবস করেছি।জীবনে আর কোনোদিন কোনো মেয়েকে প্রফোজ করবেনা বলেও জানিয়ে দিয়েছি। তবে এতে কোনো লাভ হয়নি।এলাকার কিছু বড় ভাই এসে কয়েকটা লাথি উস্টা মেরে চলে গেছে।মাইর খাইয়া হাভা হয়েই দাঁড়িয়ে ছিলাম।তবে আমি হার মেনেছি তা নয়।আমিও প্রতিশোধ নিয়েছি,কড়া প্রতিশোধ। সব মেয়েকে এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়ার পাত্র আমি নয়।মনে মনে দু চারটা গালি দিয়ে প্রতিশোধ আমি নিয়েছিই হুহহ।

এই হচ্ছে রিয়াজের ( আমার) লাইফ স্টোরি।আজ অব্দি একটা মেয়েও পটাইতে পারলাম না। সবাই দেখি রাস্তায় রাস্তায় নিজেদের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরাঘুরি করে।বিশ্বাস করেন,মনডা চায় তক্ষুনি পোলাডারে ইচ্ছেমত কেলানি দিয়ে ওর গার্লফ্রেন্ডটা নিয়া বেগে যাই।কিন্তু তা তো স্বপ্নই স্বপ্ন রয়ে গেলো।পোলাডারে মারতে গেলে তো ওর হাতেই আমি কেলানি খাবো।নাহহ,পকেটে টাকা পয়সা নেই,এখন যদি কেলানি খাই,তবে ডাক্তার খরচ দিতে পারবোনা।

কিন্তু আজকে যে মেয়েকে দেখেছি,এইডারে তো পটাইয়া ছাড়ুম।এই মাইয়া পটাইতে পারলে এলাকায় আমি শার্টের বোতাম খুইলা হাটতে পারবো, আর সবাইকে বলতেও পারবো, দেখ শালারা, না থুক্কু,শালা কইলে মাইর খাইতে হইবো।বলবো, দেখেন দেখেন সবাই,আমারও গার্লফ্রেন্ড আছে,একটা মাল।দেখ দেখ দেখ।

কিন্তু এই মেয়েকে পটাবো কেমনে।মেয়েতো দেখতে পুরো নায়িকা।নিশ্চয় বড়লোক কোনো বুইড়ার মাইয়া হইবো।একটা বস্তির মেয়েকে পটাতে পারলাম না,এর এই মাইয়ারে যে কেমনে পটাই।তাও বুকের মধ্যে ৬ কেজি সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলাম।)

— এই যে আপু।
— জ্বী বলুন?

( আহা,মেয়েটির গলার আওয়াজ শুনে আমি শিহরিত। মনে হচ্ছে ওর গলার ভয়েজ রেকর্ড করে বাসায় নিয়ে যাই।তক্ষনি মেয়েটির শব্দ ভেসে আসে)

— কি হলো,হাবলার মতো কি ভাবছেন।কিছু কি বলবেন..?
— না মানে ইয়ে মানে উফফফফ
— কি হইছে,এমন ঘাবড়াচ্ছেন কেন।যা বলার ক্লিয়ার বলেন।আমার তাড়া আছে।
— জ্বী,আমার নাম রিয়াজ।
— তো আমি কি করবো.?

( শালার মেয়ে নাকি রোহিঙ্গা। বুঝেওনা কিছু।)

— না মানে আপনার নামটা কি জানতে পারি..?
— আমার নাম দিয়ে আপনি কি করবেন?
— আছে না..? অনেক কাজ।আপনি বলুন না।
— আজব একটা ছেলে আপনি!
— জ্বী সবাই বলে, কিন্তু এইটা গুজব,আমি আজব ছেলে না।
— থাপ্পড় খাবেন..?
— নাহ,বুঝে গেছি।এইটাও হলোনা।
— কি..?
— কিছুনা।ভালো থাকবেন।
— এইজে শুনুন..?
— আজকে থাপ্পড় খাওয়ার মোড নাই।অন্য একদিন দেখা হলে মাইরেন।
—( ঠাসসসসসসসসসসসসসসসস)
— আজব,মারলেন কেনো..?আমি কিছু বলেছি নাকি।
— বলেননি দেখেই তো মারলাম।আপনার ফোন বের করুন।
— ১মাস আগে নতুন ফোন কিনছি।তাও আব্বুর পকেট কেটে কিনেছি। পরে আপনি ভেঙে ফেললে আমি শেষ।
— ওই ছেরা,ফোন দিতে বলছি ফোন দে,নাইলে আরেকটা থাপ্পড় খাবি।
( মেয়েটির কথা শুনে নাকের আগায় দম চলে আসছে

যে থাপ্পড় মারছে,এমনিই বোঝা যায় ওর হাতের মধ্যে দজ্জালের সমান শক্তি আছে। তাই ভয় পেয়ে ফোনটা বের করে ওর হাতে দিলাম।মেয়েটি আমার ফোন নিয়ে লক খুলতে পারেনি।আবার আমার হাতে ফোন দিয়ে বলল)

–একটা নাম্বার তুলুন।
— মানে?
— নাম্বার তুলতে কইছি শালার বয়রা।
— রেগে যাচ্ছেন কেন।বলুন নাম্বার
— ০১৭ এতো এতো এতো
–হুম তুললাম,কিন্তু এইটা কার নাম্বার।
— আমার নাম্বার, রাত ১২ টার পরে ফোন দিবেন।

( বলেই মেয়েটি চলে যেতে লাগলো।আমার পায়ের নিছে মাটি আছে নাকি নেই,সেটাও বুঝতে পারছিনা।এতোদিন পর কি তাহলে আমার কপালের ভাগ্যে খুলেছে? কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম।সবার হাটাহাটির মধ্যে আমিই একমাত্র ব্যাক্তি,যে চুপ করে হতভাগার মতো দাঁড়িয়ে আছি।যেনো দুনিয়াতে আমিই একমাত্র ব্যাক্তি,যে এখন কল্পনার জগতে হারিয়ে গেছে।এই নিস্তব্ধতা বেশিক্ষন থাকেনি।একটু পর হাত পা ছেড়ে দিয়ে এমন নাচা নাচতেছি,এবার সবাই হা করে আমার দিকে  তাকিয়ে আছে।আমি সবার মাঝখানে ধুমতাড়াক্কা নাচতাছি।কিছুক্ষন নাগিন ডান্স,কিছুক্ষন ডিংকা চিকা আবার কিছুক্ষন শিলা কি জোয়ানি গানের ডান্স।গান ছাড়া আমার বান্দর নাচ সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।একটু পর একজন লোক এসে আমার মাথায় এক থাপ্পড় দিয়ে বলল

” শালা নাচতে পারিস না,আবার নেচে নেচে টাকা তুলতে আসছিস।এইজে তোর আশেপাশে মোট ৬০-৭০ টাকা জমেছে।এগুলা নিয়ে বাসায় যা।আরো কিছুক্ষন নাচলে গন ধোলাই খাবি।”

লোকটির অদ্ভুত কথা শুনে পায়ের দিকে তাকালাম।আরে!সত্যিই সবাই আমার নাচ দেখে টাকা ছুটেছে।সব ২ টাকা আর ৫ টাকার নোট।বেইজ্জতি বেইজ্জতি বেইজ্জতি। ততক্ষনাৎ জায়গাটা ছেড়ে চলে আসলাম বাসার দিকে।বাসায় আসতেই আম্মুর হুংকার)

— ওই ছাগল, সারাদিন কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াস,বাড়িতে একটু থাকতে পারিস না..? বাড়ি আমি একা,একটু হেল্প করলেই তো পারিস।
— হুহহ হুহহ হুহহ, বলছি না..? বিয়া করান আমারে? তাইলেই তো একটা পরী কাজের মেয়ে পাবেন।
— তবে রে..?

( দিলাম এক দৌড়।এক দৌড়ে রুমে এসে দরজা বন্ধ।আম্মুকে মাঝে মধ্যেই রাগিয়ে দিই, বল যে আব্বু একটা পরী কাজের মেয়ে আনছে,( আম্মুকে বললাম😁) এবার আমারটা কবে হবে।

কিন্তু আম্মুর রোজ দৌড়ানি খেতে খেতে একটা উপকারও পাচ্ছি।ব্যায়াম টুকু হয়ে যায় এখানেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বিকেল ৫ টা বাজে। উফফ কখন যে রাত ১২ টা বাজবে?  খাটের উপর শুয়ে ফেসবুক লগইন করলাম।ঢুকতেই দেখি কতো মানুষের মেসেজ।কেও কেও বলে( রিয়াজ ভাইয়া,এতো ভাব নেন কেন)( রিয়াজ ভাই,রিপ্লে দিতে পারেন না নাকি)(ভাই আমার রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেন)। মাগো মাগো মাগো,এক লগে ১০০-১৫০ মেসেজ।আমি একটা অসহায় দুর্বল পোলা।কয়জনকে রিপ্লে দিবো,তাই আবার হুট করে ফেসবুক থেকে বাহির হয়ে গেছি।ছোটখাটো গল্প টল্প লিখি বলেই এমন মেসেজ,নাইলে হয়তো কেও রিকুয়েস্ট ও পাঠাতো না 😁।

সময় তো যাচ্ছেনা,সেই ১২ টা বাজার অপেক্ষা করতে করতে আমার নিজেরই ১২ টা বাজতাছে।

মেয়েটির কথা চিন্তা করতে করতে হুট করেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।উঠে দেখি ১১:৪৫ বেজে গেছে।ওরে খোদা,অন্যদিন আম্মু শান্তিতে এক ফোটা ঘুমাইতে দেয়না।আর আজকে দরকার ছিলো বলে ডাকতেও আসেনি। আমি জানি,আম্মু নিশ্চয় আব্বুর গুপ্তচর। সব সময় আমার বিরুদ্ধে কাজ করে। হায় হায়,১২ টা বাজতে বেশিক্ষন নেই,ধপাস করে শুয়া থেকে উঠে দরজাটা খুললাম।এরপর আগুন বেগে বাসার বাহিরে চলে আসছি। বাহির থেকে বাইক( আব্বুর বডবডি,যা ১৯৭০ সালে বুইড়ারা চালাতো) নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। ভাবছেন কোথায় যাচ্ছি? হু, এক টান দিয়ে সোজা গ্রামিন টাওয়ারের নিছে গিয়ে দাড়ালাম।যাতে নেটওয়ার্ক ভূলেও এদিক সেদিক না হয়। ঘড়ির দিকে তাকালাম,ওরে আব্বা,১২:০৪ বেজে গেছে।জলদি কমলা সুন্দরীরে কল করলাম।নাম জানিনা,তাই বর্তমান আপনাদের বোঝানোর জন্য কমলা সুন্দরি বললাম আরকি।এমন সময় ওপাশ থেকে।)

— হ্যালো..
— আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহু।
— বাহহ,এতো লম্বা করে? ওলাইকুম আসসালাম।কি খবর?
— জ্বী ভালো,চিনতে পারছেন?
— হুম,সে বলদ মার্কা চেহারার কিউট রিয়াজ।
— বলদ, আবার কিউট।কোনটা।
— ২ টাই।
— হিহিহি,আপনি খুব মজার মাইয়া
— তেতো নাকি মিষ্টি
— ইয়ে মানে ২ টাই।

( তক্ষুনি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি ৩ মিনিট হয়ে গেছে,ফোনে মোট ৫ টাকা আছে।হায় হায়,টাকা শেষ হইলে তো এই মাইয়া ভুলেও ফোন দিবোনা।)
— আচ্ছা? আপনার ফেসবুক আইডি নাম্বারটা দিন ?
–এইটাই আমার ফেসবুকের নাম্বার।
— ওকে,আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি,বাড়িতে গিয়ে মেসেজ করবো।
— ঠিক আছে

( টাকা যে নাই, সেটা আর বুঝতে দিলাম না।আবার বাইক,হুরর বাইক না,আব্বুর বডবডিটা নিয়া এক টানে চলে আসলাম বাড়িতে।এমা,আম্মু তো  দরজা বন্ধ করে দিছে।বুঝতে পারছি,আজকে আর বাড়িতে জায়গা হবেনা।তবে আমিও কম চালাক না।শুরু করে দিলাম মিশন)

— ওরে আল্লাহ গো….. ওরে মা,, গেলাম রে.. মাইরা ফেলতাছে রে….

( বাসার ভিতর থেকে আম্মুর গলার আওয়াজ)
— লাভ হইবো না,তোর এই প্রতিদিনের অভিনয় আমার জানা আছে,নতুন কিছু শিখে আসিস।

( দিলোনি ইজ্জতে ফালুদা করে। আর উপায় নেই, বাসার পিছনের গাছ বেড়ে বাসায় ঢুকলাম, ভাগ্যিস ,ছদের দরজা খোলা ছিলো। রুমে এসেই নাম্বারটা দিয়ে ফেবুতে সার্চ দিলাম।নাম আসলো ( শালা মারবো এখানে,লাশ পড়বে বুইঝা নে)। নাম দেখেই লাফাইয়া উঠছি।খেয়াল করে দেখি একটা নাম্বার ভুল হইছে,শেষে ৬৩ এর জায়গায় ৬৪ দিয়ে ফেলছিলাম। ঠিক করে আবার কল দিলাম, onamika nusrat tabassom নামের একটা আইডি পেলাম।

বি:দ্র- গল্প মিলানো জন্য এসব নাম ব্যবহার করেছি। বাস্তবের সাথে কোনো কিছুই মিল নেই।

( আইডিতে ঢুকতেই দেখি সে আমাকে আগে থেকেই মেসেজ দিয়ে রেখেছিলো।মেসেজ করলাম)

— হাই চুনা😝
— হ্যালো সোনা ( খাজ বাংলা)
— কেমন আছো বেপি😍
— ভালো বেপি,তুমি কেমন আছো জানু❤
— এতোদিন কেমন ছিলাম জানিনা,এখন অন্নেক ভালো চুনা💖
— ওহহ তাই নাকি,উম্মাহ সোনা..?
— যাহহ, লজ্জা লাগেনা বুঝি…? 🙈🙈🙈

শুরু হয় এক ভালোবাসার বন্ধন।এভাবে প্রতিদিন একজনের খেয়াল একজন রাখছি।মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করি খেয়েছে কিনা,তারপর আমি খাওয়ার প্রস্থুতি নিতাম।সারাদিন প্রেমালাপ শুরু হয়ে যায়। দিন নেই রাত নেই, খাকি মেসেজে চুম্মা চুম্মিতে কেটে যায় আমাদের ৬ মাস। শুধু মেসেজেই না, সরাসরিভাবেও ১৭ বার কিস করেছিলাম।আহা,আমি এখন অনেক বড় কিছু।কোনো মেয়েকে পাত্তাই দেইনা।প্রেমিকা আমার লারে লাপ্পার, এর চাইতে ভালো প্রেমিকা আর হবেওনা।

হটাৎ একদিন নুসরাতে ফোন)
— হ্যালো?
— জ্বী বলো জানু?
— কেমন আছো।
— ভালো,কি হয়েছে তোমার,গলা এমন শুনাচ্ছে কেন।
— অনেক বড় একটা বিপদ হয়ে গেছে রিয়াজ।
— কি বিপদ,বলো আমাকে..?
— আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
— মানে..?
— হুম রিয়াজ,লন্ডন থেকে আমার আব্বুর বন্ধুর একটা ছেলে এসেছে।তার সাথেই।তোমার কথা বলেছি আমি আব্বুকে।কিন্তু তোমার কোনো চাকরী নেই বলে আব্বু রিজেক্ট করে দিয়েছে।
— তো কি হয়েছে,চলো পালিয়ে যাই..?
— না রিয়াজ।তোমার নিজের কোনো ইনকাম নেই। আমি চাইনা এখন তোমার উপর বোঝা হয়ে থাকতে।
— এই এই চুপ.. 😡( চোখ লাল করে) আমি তোমাকে ভালোবাসি নুসরাত।আমি কাজ করে খাওয়াবো তোমাকে,তবুও প্লিজ ছেড়ে যেওনা আমায়।
— টুট টুট টুট

( ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে গেলো। বুকের ভিতর ধুপ করে একটা টান মারে আমার।চিন চিন উঠে যায় বুকের বাম পাশে।চোখ দুটো লাল হয়ে যায়,পানি বের করতে চাইনি,তবুও আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গাল বেয়ে পানি ঝরতে থাকে।মেজাজ খারাপ হওয়ার কারণে রুমের মধ্যে নিজের ব্যবহারিক জিনিষপত্র এদিক সেদিক ছুড়তে লাগলাম।মাথা কিছুই বুঝতে চেস্টা করছেনা।এমন সময় একটা মেসেজ আসে।লেখা ছিলো)

“আমি জানি তুমি আমার সাথে কথা বললে কস্ট পাবে।তাই কল কেটে দিয়েছি।আসলে আজকেই আমার গায়ে হলুদ।আগামীকাল আমার বিয়ে।নিজের যত্ন নিও।ভালো থেকো,দেখবে আমার থেকেও ভালো কাওকে পাবে।””

মেসেজটা দেখে এবার আর নিজেকে সামলাতে পারিনি।দরজাটা খুলে দৌড় দিলাম নুসরাতের বাড়ির দিকে।পুরো শরীর ঘামে ভিজে আছে।চোখমুখ ফুলে গেছে এই অল্প সময়ের মধ্যে।আম্মু পিছন থেকে বার বার ডাক দিচ্ছিলো।কিন্তু পিছনে না থাকিয়েই রাস্তায় নেমে পড়ি আমি।নুসরাতে বাড়ি দৌড়ে যেতে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট লাগবে।প্রায় ১ কিলোর রাস্তা। ছুটতে লাগলাম আমি।চারপাশের কোনো হুশ আমার নেই।অবশেষে নুসরাতে বাড়ির গেটের সামনে এসে দাড়াই আমি।পুরো শরীর ভিজে একাকার।মেইন দরজা দিয়ে ঢুকলে কারো চোখে পড়ে যেতে পারি।তাই বাড়ির পিছনের গাছ বেয়ে নুসরাতের ব্যলকোনিতে গিয়ে নামলাম।গিয়ে দেখি নুসরাত আয়নার সামনে সেজেগুজে বসে আছে।আমি দৌড়ে গিয়েই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম নুসরাতকে।নুসরাত চমকে উঠেই পিছনে তাকায়।আমাকে দেখে বেশ অবাকও হয়েছিলো সে।এরপর বলল)

— তুমি এখানে? এই অবস্তা কেন তোমার..?
— নুসরাত,আমি বাচবোরে তোমাকে ছাড়া।চলো আমরা পালাই।
— তা সম্ভব না।চলে যাও তুমি এক্ষুনি।কেও দেখলে সমস্যা হবে..
— আরে কি বলছো তুমি এসব।চলে গেলে যে আমার বাকি জীবন শেষ হয়ে যাবে,তার কি হবে বলো..?
— ঠাসসসসসসসসসসস
— তুমি মারলে আমাকে..?
— কি আছে তোমার..? বাপের টাকার উপর কতোদিন চলবা।এক্ষুনি চলে যাও,নয়তো আমি চিৎকার করবো।

( অসহায় হয়ে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।ভাবনায় আসছে,আজকাল কি টাকা পয়সা মানুষকে ভালোবাসা দেয়? ভালোবাসার কি কোনো মূল্যায়ন নেই..?

হটাৎ নুসরাতের আব্বু দরজা খুলেই আমাকে দেখতে পায়।নুসরাত ওর আব্বুকে দেখেই ছুটে চলে যায় উনার কাছে।এরপর কান্না স্বরে বলতে লাগলো)

— আব্বু,,ছেলেটি আমাকে কিডন্যাপ করতে এসেছে।প্লিজ বাচাও।

( ওর কথা শুনে আমি থমকে যাই।মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা আমার। ওর আব্বু ডাক দিয়ে কয়েকজন ছেলেফেলে নিয়ে আসে।ওরা এসেই আমার গালে মুখে ঘুষি মারতে থাকে।আমি অসহায় চোখে শুধু নুসরাতের দিকেই তাকিয়ে আছি। ওরা মারতে মারতে আমাকে বাড়ির সবার সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আমি হারিয়ে গেছি কোনো অজানা এক কস্টের শহরে। ছেলেগুলো মারতে মারতে অবশেষে গেটের সামনে এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ওর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে শুধু ভাবছি,এইটা সেই নুসরাত, যে আমাকে হাজারো স্বপ্নে ভাসিয়েছিলো,এইটা কি সেই নুসরাত? যে বলেছে আমি নাকি গাচ তলায় থাকলেও সে আমার সাথে গাছ তলায় থাকবে। ভাবতেই এক গাড়ি পুলিশ এসে আমার কলার চেপে ধরে…

 

( পর্ব -০২)

ছেলেগুলো মারতে মারতে অবশেষে গেটের সামনে এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ওর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে শুধু ভাবছি,এইটা সেই নুসরাত, যে আমাকে হাজারো স্বপ্নে ভাসিয়েছিলো,এইটা কি সেই নুসরাত? যে বলেছে আমি নাকি গাচ তলায় থাকলেও সে আমার সাথে গাছ তলায় থাকবে। ভাবতেই এক গাড়ি পুলিশ এসে আমার কলার চেপে ধরে…

পুলিশ আমাকে ধরে জেলে নিয়ে যায়।জানতে পারলাম আমার সেখানে যাওয়ার কারণে বন্ধি করেছে আমাকে।বুঝতে পেরেছি একটা জিনিস।মেয়েরা ভালোবাসা টাকার ভিতর খুজে।ভালোবাসার প্রকাশ পায় ভালোবাসা দিয়ে, তারা সেই ভালোবাসাকে কেনো টাকার কাছে বিক্রি করে।সারা রাত আমাকে জেলখানায় বন্ধি করে রেখেছে।একজন পুলিশ এসে আমাকে অনেক মেরেছেও।আব্বু আম্মু কিছুই জানতে পারেনি।আমাকে নাকি সারা রাত খুজেছিলো।কিন্তু কোথায়ও পায়নি।হয়তো ভাবতেও পারেনি আমি জেলখানায় আছি।সকাল হতেই আব্বুকে ফোন দেয় পুলিশ অফিসার। ফোনের মধ্যে কি বলেছে সেটা তো বুঝিনি।তবে এইটুকু বুঝতে পেরেছি,নিশ্চয় আমাকে নিয়ে কোন খারাপ তথ্য বানিয়ে আব্বুর কানে তুলেছে।এখন নিশ্চুপ থাকাটাই আমার জন্য শ্রেয়।আব্বু জেলখানায় এসেই আমাকে দেখতে পায়।চোখ মুখ দেখে বুঝতে পেরেছি আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করেছিলো।তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসেই কান্না করতে লাগলো,আর বলল” আমি জানি তুই এমন কাজ কোনোদিন করতে পারিস না।দাড়া আমি এক্ষুনি তোকে ছাড়ার ব্যবস্তা করছি।””

পুলিশকে নগদ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আমাকে আব্বু ছাড়িয়ে নেয়। থানা থেকে বের হয়েই আব্বু একটা রিক্সা ডাক দেয়। এদিকে আমার হুশ থেকেও নেই।যাকে আমি নিজের থেকেও এতো বেশি ভালোবেসেছি,সে টাকার জন্য অন্যের ঘরে চলে যাবে?যার মন নেই,সত্যিই, সে কি বুঝবে মন পোড়ার যন্ত্রণা।  ভাবতেই নারীদের প্রতিবেক ঘৃণ্য জন্ম হয় আমার।আব্বু কখন আমাকে রিক্সায় তুলেছে,কখন রিক্সাওয়াকা রিক্সায় চাপ দিচ্ছে,সেদিকে আমার হুশটা যেনো একটুও নেই।নিজের ভিতর একটা জগত তৈরি হয়ে গেছে আমার।যে জগতে আমি বড্ড একা পড়ে গেছি।আব্বু অনেক কথা জিজ্ঞেস করছে আমাকে।সেদিকে কোনো জ্ঞ্যন নেই আমার,মনে হচ্ছে আব্বু হাবিজাবি কিছু বলছে,আর সে কথাগুলা আমার কান অব্দি এসেই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। বাড়ির সামনে রিক্সা থামতেই আম্মুর গলার কান্না স্বরে আমার ঘোড় ভাঙে। রিক্সা থেকে নামতেই আম্মু আমার গালে কপালে চুমু দিচ্ছে আর কান্না করা আরম্ভ করেছে।আমাকে না পেয়ে আমার আব্বু আম্মুর রিয়েক্ট দেখে বুঝতে পারছি, ওরা আমাকে আসলেই কতটা ভালোবাসে।

কারো সাথে কোনো কথা না বলে আমি সোজা দোর ( দরজা) দিয়ে বাসায় প্রবেশ করি।কোনোরকম হেলেঢুলে নিজের রুমের সামনে গিয়ে দাড়াই।রুমের ভিতরের অন্ধকারটা আমাকে খুব আপন করে নিতে যাচ্ছে।আমিও সায় দিয়ে দরজা ভিতর থেকে অফ করে দিলাম।

অন্ধকার রুমের মাঝে, ভাসছে সৃতি চোখের ভাজে,মনে পড়ে যাচ্ছে সেই পুরোনো দিনের কথা।ভাবতেও অবাক লাগছে, নুসরাত অন্য কারো হয়ে গেছে।এখন ওর সকল ইচ্ছা অনিচ্ছা ভাগাভাগি করবে সেই টাকা ওয়ালা ব্যক্তির কাছে।এখন থেকে নুসরাতের চোখের লজ্জা কাটবে সেই ধনী ব্যক্তির চোখের চাহনীতে।উফফ মেনে নিতে পারছিলাম না আমি।তবে কি আজ থেকে নুসরাত অন্যের খাটে থাকবে?

রুমের মধ্যে সব সময় সিগারেট এর প্যাকেট থাকতো।খুজতে গিয়ে দেখি খাটের পাশে এখনো ২ প্যাকেট আছে।অন্ধকারে কালো ধোয়ায় ভেসে চলছি আমি নুসরাতকে ভুলার জন্য। পারবো.?

এভাবে কেটে যায় ৩ মাস।নুসরাতকে ভূলে গিয়েছি তা নয়।তার কথা আমার মনে পড়লেই বুকের দিক শিহরন হয়ে উঠে।চারপাশ ঝাপসায় পরিণত হয় আমার।তবে এসব থেকেই  বাচার জন্য সময়টা অন্যদিকে বেশি ব্যয় করা শুরু করেছি।

আব্বুর বন্ধুর এক কোম্পানীতে চাকরি হয় আমার।আব্বুর কথামতো চাকরিটা শুরু করি আমি।নিজেকে কস্ট থেকে আড়াল রাখার এই একটি মাত্র উপায়'” আমাকে ব্যস্ত রাখতে হবে “।

প্রতিদিন নতুন প্রজেক্ট নিয়ে ভাবনা আমার, জানি অনেক ইম্পসিবল কাজ মানুষ হাত ছাড়া করে দেয়।আমি খুজে খুজে সেই কাজগুলোর দায়ীত্ব নিতে থাকি।এভাবে কিছুদিন কেটে যায়।নিজেকে যতো বেশি ব্যস্ত রাখতে পারবো,তত তাড়াতাড়ি আমি নুসরাতকে ভুলতে পারবো।)

— Your work is moving very fast, I really like it
— thank you so much sir…
— হুম,আর আমি আশাবাদী,  সামনে তুমি এই কোম্পানিকে সামলাবে। best off luck
— yea sir,আমি অবশ্যই চেস্টা করবো।

( রিয়াজের শুনাম পুরো অফিসে ছড়াছড়ি করছে।সবার মুখে রটে যাচ্ছে রিয়াজের গুনগান। ধীরে ধীরে কর্মচারী থেকে ম্যানেজারে চেয়ারে আসে রিয়াজ।অফিসের প্রতিটি মেয়ের ( ৮৯%) ক্রাশ রিয়াজ।তবে রিয়াজের একটাই রোগ।মেয়েদের দেখলেই এখন তার ভিতর আগুন জ্বলে। এইবার যাই,পরের দিন কি হলো দেখি।

রিয়াজের আব্বু সকাল সকাল বাড়িতে হাসাহাসি জুড়ে দিয়েছে। রিয়াজকে নাকি ম্যানেজার থেকে স্যারের চেয়ারে বসার অনুমতি দিয়েছে।কোম্পানি আজ থেকে রিয়াজের। তবে অর্ধেক শেয়ার সব সময় ওর আগের স্যারকে দিতে হবে।রিয়াজ নিজেও রজি।আর স্প্লল্পমযার হলেও,উনি রিয়াজের আব্বুর বন্ধু।অন্যদিকে পরিচিতি খুব ভালো। খবরটা রিয়াজের আব্বু শুনে নাজেহাল অবস্তা।)

— দেখেছো রজিনা? আমি বলেছিলাম না? যে ছেলেকে তুমি রোজ ছাগল বলে ডাকো, সে একদিন অনেক বড় হবে। এবার দেখেছো? রিয়াজ আজ কতো বড় হয়ে গেছে?
— হুম, সেটাই তো।আমার ছাগলটা ছাগল না থাকলে কি হয়েছে,এখন ছাগল থেকে গরু হয়েছে।এতে এতো খুশির কি আছে।

অফিসের সামনে আসতেই দারোয়ান স্যালুট করে গেটের দরজা খুলে দেয়। উনাকে কয়েকবার বলেছি আমাকে স্যালুট না করার জন্য।আমি অফিসের স্যার হলে হয়েছি,কিন্তু উনার মতোই তো মানুষ। কেন যে উনারা সবাইকে এক ভাবে। গাড়ি পার্কিং করেই অফিসে প্রবেশ করলাম।সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুভ সকালের সুপ্রভাত জানাচ্ছে।ওদের ভিতর দিয়েই আমি আমার রুমে প্রবেশ করলাম।এতো সম্মান দিয়ে মানুষ কি করে,সেটাই বুঝিনা।হটাৎ ফোন আসে)
— হ্যালো তানিম ভাই,বলুন।
— জ্বী স্যার, আজকে চাকরিতে জয়েন করার জন্য ৪ জন লোক এসেছে।ভিতরে পাঠাবো?
— তানিম ভাই,আপনি তো জানেন এখন ২ জন লোক বাড়তি কাজ করছে।তাও লোক নিয়োগ কিভাবে দিবো।আচ্ছা শুনুন, আমার ফাইল আনা-নেওয়ার জন্য একজনকে চাই।ওখানে যে একটু বেশি দক্ষতায় আছে,তাকে সিলেক্ট করে আমার রুমে পাঠিয়ে দিন।
— জ্বী স্যার,এক্ষুনি দেখছি।

( উফফ, যখন চাকরি দেওয়ার জন্য নিয়োগ দেই,তখন লোক পাওয়া যায়না,আর যখন লোক হয়ে যায়, তখন চাকরির জন্য অনেকে ভীড় জমায়।এই জ্বালা আর নিয়েই পারছি। যাইহোক, একটা রেস্টুরেন্ট এর প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ ছিলো, সেটার ফাইলটা চেক করছিলাম।তখনি কেও দরজায় নক করে বলল,)

— আসতে পারি..?

( দরজার দিকে না তাকিয়েই আমি নিছের দিকে ফাইলের উপর চোখ রেখেছিলাম।মুখ না তুলেই বললাম)

— yes coming plz….

( লোকটি মনে হয় আমার সামনের সিটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে,আমি বললাম)

— আরে বসুন,সমস্যা নেই।

— ওকে স্যার।

— হুম, তা নাম কি আপনার?

— নুসরাত

( নাম শুনতেই আমি চমকে যাই।ওর গলার আওয়াজের মতোই কন্ঠ ভেসে আসছিলো।প্রথমে ভেবেছি হয়তো সকাল থেকে তাকে চিন্তা করছিলাম,তাই এমন অনুভব হয়েছে।নাম শুনেই আরো ক্লিয়ার হলাম যে এইটা নুসরাত হবে।তাই কোনো ভাবে আড় চোখে আমি ওর দিকে তাকাই।সে নিজেও হয়তো এতক্ষন আমার দিকে তাকায়নি।হাত গুটিসুটি মেরে বসে আছে সিটে।আমি আবার নিছের দিকে তাকিয়ে বললাম।)

— বাসা কোথায়?

— এইতো, মিরপুর -১০ এ।

— ভালো, বিবাহিত..?

— জ্বী।

— তা স্বামী কি করে।

— জানিনা।

— বুঝলাম না।

— আসলে স্যার, ওর সাথে বিয়ে হওয়ার ১ মাস পর জানতে পারলাম ওর আরো একটা প্রেমিকা ছিলো।এই নিয়ে আমি কিছু বলতে গেলেই মারধর করতো আমাকে।তাই চুপ করেই থাকতাম। ( বলেই কান্না করতে থাকে নুসরাত)

— কান্না থামিয়ে বলতে থাকুন।

— একদিন সে মাতাল হয়ে বাসায় আসে।সাথে ছিলো ওর আগের প্রেমিকা।আমাকে অন্য রুমে রেখে তারা এক রুমে চলে যায়। সারারাত তারা রুমের ভিতর ছিলো,আর আমি কান্না করেছি দরজার সামনে।

— তারপর..?( শান্ত গলায় ধীর গতিতেই বলছিলাম)

— সকাল হতেই মেয়েটি চলে যায়। আমি আমার স্বামীকে এই নিয়ে বেশি চাপ দিয়েছি বলে আমাকে ডিপোর্স দিয়ে দেয়। বিয়ের ২ মাসের মাথায় আমি বাসায় চলে আসি।এরপর নিজের পরিবারও আমাকে মেনে নিচ্ছেনা।সবাই বলে আমার কপালে নাকি স্বামীর ভাত নেই। রাগ আর অভিমানে আমি এখন চাকরি খুজছি।প্লিজ স্যার,আমাকে চাকরি দিয়ে একটাবার সুযোগ দিন প্লিজ।

— হুম, ওকে, কাল থেকে সকাল ৮ টায় অফিসে চলে আসবে।মাসে ২৫ হাজার বেতন।আর হ্যাঁ, ১ মিনিট লেট হলে বেতন থেকে ৫০০ টাকা কেটে দেওয়া হবে।

— অনেক ধন্যবাদ স্যার,অনেক অনেক ধন্যাবাদ।আপনাকে যে কি বলে আমি খুশি করাবো আমার জানা নেই।

( এবার আমি মুখ তুলে ওর দিকে তাকাই।নুসরাত আমাকে দেখেই যেনো আটকে যায়,যেভাবে রিমোট সিস্টেম কোনো রোবটকে আটকানো হয়।)

— আমাকে খুশি করাতে হবেনা। তবে মনে রাখবেন? জীবনে প্রতিটি মানুষকে সুযোগ দেওয়া উচিৎ। কখনো কারো দুর্বলতাকে বড় করে না দেখে,তার ভিতরের দিক দেখবেন।বুঝতে পারবেন, সে কতোটা আপনার কাছে ঋনি।

( কথাটা বলেই আমি বের হয়ে যাই। আজ আর অফিস করবোনা।মন একেবারেই খারাপ হয়ে গেছে।নুসরাতকে দেখে আজ মায়া হলেও,ওর প্রতি ঘৃণাটা আমার এখনো আছে।টাকা পয়সা মানুষকে কতটা নিচে নামাতে পারে,তা নুসরাতকে দেখলেই বুঝা যায়।বাড়িতে আসার কারন আম্মু আব্বু কিছুই বুঝেনি।কিছু বলার আগেই আমি রুমে চলে আসি।ম্যানেজারকে দায়ীত্ব দিয়ে এসেছি,তাই আজ আর অফিসেও যাচ্ছিনা।সিগারেট একটার পর একটা আমি টেনেই যাচ্ছি।কেমন একটা অনুভূতি ফিল হচ্ছে।

পরের দিন সকাল ৮ টায় এসে দেখি নুসরাত অফিসের সামনেই দাড়িয়ে আছে।ওর হাতটি ধরে সোজা গাড়িতে তুললাম ওকে।)

— কি হচ্ছেটা কি,কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়।

( পর্ব -০৩ ও শেষ)

পরের দিন সকাল ৮ টায় এসে দেখি নুসরাত অফিসের সামনেই দাড়িয়ে আছে।ওর হাতটি ধরে সোজা গাড়িতে তুললাম ওকে।)

— কি হচ্ছেটা কি,কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়।

— গেলেই বুঝতে পারবেন।চুপ করে বসে থাকুন।

( নুসরাতকে নিয়ে সোজা চলে আসলাম নিউপার্কে। কি ভাবছেন,আমার জন্য এসব করছি। না,পার্কে নুসরাতের হাসব্যন্ড ছিলো। নুসরাত আমাকে কাল মিথ্যে বলেছিলো,শুধুমাত্র চাকরি পাবার জন্য।বিয়ের দিন আমি ছিলাম না, নাহলে জানতে পারতাম,নুসরাতের সাথে আমার স্কুল লাইফের এক বন্ধুর সাথে বিয়ে হয়েছিলো। কাল খোজ নিয়ে দেখি , ও আমার স্কুল ফ্রেন্ড।নাম সাব্বির।সাব্বির আমার কাছে কাল মাফ চেয়েছে।আর বলেছে যেভাবেই হোক,ওর নুসরাতকে আবার ফিরিয়ে দিতে তার কাছে।ওদের মিল করবো বলেই আজ নুসরাতকে এখানে এনেছি। সাব্বির নুসরাতে হাত মুঠ করে ধরে বলল)

— আমাকে মাফ করো নুসরাত।তুমি আমার সাথে রাগ করে আসার পর আমি তোমার অভাব বুঝতে পেরেছি।ওই মেয়ে আমার প্রেমিকা ছিলো ঠিকই,কিন্তু ওর লোভ ছিলো আমার টাকার উপর।বুঝতে পেরে আমি ওর সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। প্লিজ নুসরাত, আমাকে মাফ করে দাও।আর কোনোদিন হবেনা।

— তুমি আমার স্বামী, স্বামীকে দোষারোপ করার শক্তি আমার নেই।

( বলেই ওরা ২জন দুজনকে জড়িয়ে ধরেছে। ওদের মিল দেখে আমি ওখান থেকে হেটে গাড়ির দিকে চলে এসেছি। চোখের কোনে জমে থাকা কোন এক অজানা কারনে পানিগুলো টপ টপ করে ঝরছে।জানিনা এই পানির উদ্দেশ্য কি,কেনো এসময় আমার চোখে এসে উকি দিচ্ছে। এইটা কি নুসরাতকে হারানোর পানি? নাকি তার সুখ দেখে সেই সুখের পানি।

জানিনা আমি,তবুও চোখের পানি শার্টের কোনায় স্পর্শ করে মুছে ফেলি।এইটা আর নতুন কি, গত ৫ বছর থেকেই অভ্যস্ত। তবে আজ আমি অনেকটাই হালকা হয়েছি।ওর জন্য যত মায়া বুকে বিন্দু পরিমান হলেও জায়গা করেছিলো,তাও আজ হারিয়ে গেছে।থাক না সে,অন্যার ঘরে তো ভালোই আছে।

সারাদিন অফিসের কাজ করে বাসায় ফিরছিলাম।এমন সময় নুসরাতের ফোন।)

— হ্যালো?

— স্যার বলছেন?

— হুম বলুন।

— আসলে স্যার,আপনার সাথে একটু কথা ছিলো

— হুম ঠিক আছে, চাকরি করতে হবেনা।আপনি সংসার সামলান।

— আপনি কি ভাবে বুঝলেন যে আমি রিজাইন চাইবো?

— সব কথা মুখে না বললেও,বুঝে নেওয়ার শক্তি কয়জনের থাকে।

( টুট টুট টুট । ফোনটা কেটে দিয়েছি আমি। প্রতিশোধ আমিও নিয়েছি। ওয়েট ওয়েট,এইটাকে প্রতিশোধ বলে..? যাহহ কি সব ভবছি। সোজা বাসায় এসে রুমে শুয়ে পড়লাম।আম্মু খাবার খেতে ডেকেছিলো,বলেছি বাহিরে খেয়ে এসেছি। খুব ক্লান্ত লাগছে,তাই মিথ্যে কথাটা বলে শুয়ে পড়েছি।কখন ঘুমালাম টেরও পেলাম না।)

— এই ব্যটা,উঠ… এতো কিসের ঘুম।

( ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠেছি।এমা.. একি,চোখের সামনে এ কে..? মানুষ নাকি পরী।আমি হা করেই তাকিয়ে ছিলাম।মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে ঠোটের কোনায় একটা মৃদু হাসি হেসে আমার দিকে এগুচ্ছে।আমার কিছু বলার আগেই মেয়েটি আমার গেঞ্জি ধরে,গালে একটা চুম্বন একে দেয়।আমি হতভাগা হয়ে বিচানায় এখনো বসে আছি।মেয়েটি লজ্জা পেয়েছে মনে হয়,এক দৌড় দিয়ে সোজা রুম থেকে বের হয়ে যায়।আমিও পিছু পিছু যেই ছুটতে যাবো,তখনি খেয়াল করলাম, একি..! আমার পরনে তো শর্ট প্যান্ট।হায় খোদা,তারমানে কি এই মেয়ে আমাকে এই অবস্তায় দেখেছে?

কি লজ্জা কি লজ্জা।ইজ্জত ফালুদা হয়ে গেছে।আর আমিও কেমন বোকা,খেয়ালই করিনি।তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।এরপর ড্রইং রুমে এসে দেখি সেই মেয়েটি সহ আমার আব্বু আম্মু এবং আব্বুর বন্ধু সোফায় বসে আছে।আমি কিছু বলার আগেই আব্বু বলল)

— রিয়াজ,অনেক হয়েছে, আমি আমার বন্ধুর মেয়ের সাথে তোর বিয়ে দিতে চাই।আর উনি তোর একদিকে স্যার ছিলো।এখন তুই কি বলিস,তোর আপত্তি আছে?

— আমি আর কি বলবো, তোমরা যেটা ভালো বুঝো।

( আমার কথা শুনে আম্মু এসে আমার গাল ধরে টেনে টেনে বলল” এই নাহয় আমার ছেলে?”

সবাই হাসাহাসি করতে থাকে।অন্যদিকে মেয়েটি লজ্জায় পুরো গড়াগড়ি খাচ্ছে। কাজল কালো অখি ওর,মায়া ভরা মুখ, আর অন্যসবের কথা কি বলবো, বুঝেই নিন।আমাকে পাগল বানিয়েই দিলো মেয়েটি।কিছুক্ষন বাসায় থাকার পর ওরা চলে যায়।অফিসে আমার কাজ,তাই আগামী মাসের ৪ তারিখে বিয়ে ঠিক করেছে।মাঝখানে আমার ৩ দিন অবসর সময় ছিলো,কিন্তু প্রিয়ার কথা হচ্ছে,বিয়ে সে আগামী মাসেই করবে।ও হে,মেয়েটির নাম প্রিয়া।খুব সুন্দর নাম।যেমন নাম তেমন চেহারা।একেবারে খাই খাই একটা ভাব। অফিসে বসে কাজ করছিলাম।হটাৎ প্রিয়ার ফোন।)

— ওই ব্যটা, কই তুই

— হবু স্বামীকে কেও তুই করে বলে?

— এক্ষুনি আমার সাথে দেখা কর,নয়তো তোর মাথা পাঠাবো অফিসে এসে।

— কোথায় আসতে হবে বস

— ওই শালা,আমি তোর বস হইলাম কেমনে।বউ বল বউ।

— জ্বী বউ,কোথায় আসবো।

— জাহান্নামের চৌ-রাস্তায়।

— ঠিক আছে,গতকাল আসবো।😊

— ভালোই মজা নিতে পারিস দেখি। আচ্ছা শুন, সায়দাবাদ চলে আয়।২০ মিনিট সময় দিলাম।

( বলেই প্রিয়া কল কেটে দেয়। মেজাজ এভারেস্ট এর চূড়ায় আমার।এইটা কি মাইয়া আল্লাহ আল্লাহ। বাপ যেমন ছাগল,মেয়ে তেমন ভেড়া,আর আমাকে তো আম্মু নিজেই গরু বলে। যাইহোক, যাওয়া যাক।

২৬ মিনিট পর,,,)

— জ্বী বলো এবার,আর হ্যাঁ, ৬ মিনিট বেশি হয়েছে,তারজন্য সরি।

— হুম ওকে

— ইসস,ফোনে তো লাফাইছো অনেক।এখন এমন লজ্জামাখা মুখ কেন

— না মানে কিছুনা।

— হায়রে পোড়া কপাল।আচ্ছা একটা কথা বলো,তুমি আগামী মাসে বিয়ের তারিখ দিলা কেন? ২৬ তারিখে তো আমার অবসর সময় ছিলো।

— হুরর জানোনা, বিয়ের আগে একে অপরকে ভালো করে জানতে হয়।তাই এই কয়দিন প্রেম করবো ডিসিশন নিয়েছি।

– খাইছে রে,মাইয়া তো পাকা আমের চেয়েও পাকা।

— কি বললা?

— না মানে বলছিলাম যে চলো, বাদাম খেতে খেতে একটু হেটে আসি।

— হুম চলো।

( এভাবে শুরু হয় প্রিয়া আর আমার পথচলা।প্রিয়ার পাগলামি গুলো আমার খুব ভালো লাগে।আমি আর কি ওর চুল এলোমেলো করে রাগাবো,সে নিজেই সারাদিন আমার চুল নিয়ে খেলা করে।একবার এক বায়না করে বসে।কখনো ফুচকা খাবে,তাও রাত ১০ টায়,কখনো লং ড্রাইবে যাবে,কখনো নৌকায় চড়বে।ওর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্তকে আমি উপভোগ করি এক সুখের নীড়ে।যখন সে হাসে,মনে হয় মরা নদীর মধ্যস্থলে পদ্মা ফুল ফুটেছে।যখন সে অভিমান করে,মনে হয় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন নীল আকাশের মাঝে কালো মেঘের ছায়া নেমে এসেছে,।যখন সে কান্না করে, মনে হয় বিশাল সাগরের গর্জন ওর কান্নার কারনে হুংকার ছাড়ছে।যতই দেখি ততই ওর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। ও আমাকে বলে, বিয়ের পর নাকি আমারা এক বালিশে ঘুমাবো,আমি বালিশে,আর ও আমার বুকে মাথা রাখবে। আবার বলে, প্রতিদিন রাতে মেডামকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াতে হবে। আমার ফেসবুকের গল্প নাকি ওর ভালো লাগে,তারমানে  গল্প বলে বলে রাত কাটাবে,আচ্ছা আপনারাই বিচার করেন,বাবা ডাক কি শুনতে হবেনা আমার? 😊 অনেক পাগলী একটা। ও হ্যাঁ, ওর নাকি আরেকটা ইচ্ছে, বিয়ের পর আমি প্রতিদিন তাকে গোসল করাতে হবে।এমন বাচ্চা বাচ্চা ইচ্ছে ওর মাথায় কে ঢুকায় উপরওয়ালা ভালো জানেন। যাইহোক, এভাবে ঢলে যায় ১ মাস।

জ্বী,আজ আমাদের গায়ে হলুদ।আগামীকাল বিয়ে।আহা কি শান্তি। গায়ে হলুদে কতো মেয়েরা আসছে,নাচানাচি আর খুশিতে সবাই মেতে উঠেছি। মেহেদি লাগিয়ে আমার হাত রাঙিয়ে দিয়েছে কিছু যুবতি।পুরো বাড়ি নানান রঙের লাইটিং করা হয়েছে।তখনি প্রিয়ার ফোন।)

— কি গো চুনা,তর সইছেনা নাকি।আর মাত্র একটি রাত পার হবে।তারপর আমি তোমার,আর তুমি আমার।

— আরে রাখো তোমার রোমান্টিকতা।আচ্ছা শুনো,এখন দেখা করো।

— মানে..? মদ খাইছো নাকি।

— আরে নাহ,দেখা করতে বলেছি দেখা করো।

— আজব,কিছু হয়েছে নাকি।

— হুম

— কি

— ইচ্ছে

— কার

— আমার

— তোমার এই ইচ্ছের কারনে আমার জীবনডা বেদনার।তা কোথায় আসবো..?

— ফুচকার দোকানে।

— ফুচকাওয়ালা তোমার কাকা লাগে নাকি,যে এতো রাতে দোকান খোলা রাখবে..?

— আরে ধুরর,আমি উনাকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি।বলেছি আজ আমরা না আশা অব্দি  দোকান খোলা রাখতে,নাম্বার ও নিয়েছি, উনি এখনো আছে।

— হু,যত পারো পাগলামি করে নাও,কাল থেকে সোজা বানিয়ে ফেলবো।

— ইসস শখ কতো,দেখা যাবে,এখন জলদি আসো।

— ওকে

(আপনারা দেখলেন তো? এই মেয়েকে নিয়ে নাকি আমি সংসার করবো।এই রাত ১ টায় আমাকে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছে।তাও আজকে গায়ে হলুদ।যাইহোক,ওর পাগলামো আমার ভালোই লাগে।আর যাই হোক,আমার মনের রাজ্যের রানি সে।ওর কথামতো আমি ফুচকার দোকানে গিয়ে হাজির হলাম।কিন্তু একি! ওর কোনো খবরই নেই।রাগ হলো বেশ।এরপর কল দিয়ে বললাম)

— এই ছেমড়ি কোথায় তুই।

— হবু বউকে কেও তুই করে বলে?

— হুম,আজকে থেকে তুই তো তুইই

— ওকে,তাহলে এখানেও আমার আমার একটা ইচ্ছে আছে।

— আবার..?

— হুম।

— ঠিক আছে বল হারামজাদি,কি তোর ইচ্ছে।

— আজকে থেকে আমাকে তুই করেই বলবা। তাহলে বুঝবো,তুমি আমাকে ভালোবাসনা।

— এইটা তুই না বললেও আমি “তুইই” করেই বলতাম।

— আমার লক্ষী জামাই উম্মাহ।

— আচ্ছা,এখন কই তুই,আমি আর কতক্ষন অপেক্ষা করবো।

— এইজে,আমি তোমার সামনেই।

— কই?

— রাস্তার এপাশের সাইনবোর্ড এর নিছে তাকাও।

— কুত্তি, এখানে থেকে এতক্ষন ফাজলামি হচ্ছে,আয় আজকে,তোর ফাজলামি বের করছি।

— ধুরর শালা, আমিই তোর ১২ টা বাজাবো দাড়া

— আয় শালি আয়, দেখি কে কার ১২ টা বাজায়।

( ফোনটা কেটে আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।মনে মনে ভাবছি,আজ ওর পাগলামি ছুটাবো আমি।এই পাবলিকের সামনেই আজ কিস করবো।দেখি কতোটা লজ্জা নিতে পারে হিহিহি।

প্রিয়া রাস্তা পার হয়ে প্রায় চলেই আসছিলো,ঠিক তখনি একটা ট্রাক এসে প্রিয়ার উপর দিয়ে চলে যায়…….

ধুপ ধুপ,

ধুপ ধুপ,

ধুপ ধুপ

বুকের ভিতর এমন ভাবেই কেপে চলছে আমার।চারদিক নিস্তেজ হয়ে গেছে।প্রকৃতি হাহাকার করে ঢলে যাচ্ছে। প্রিয়ার উড়ন্ত দেহ এসে,রাস্তার মাঝে ছিটকে পড়ে।চোখের সামনে এমন দৃশ্য আমার নিশ্বাস বন্ধ করে দিচ্ছে।

ওর দেহ ফেটে বের হওয়া রক্ত চারদিকে ভেসে একাকার। আমি যেনো হারিয়ে গেলাম কোনো এক অজানা নিস্তব্ধতার শহরে।

চোখে অশ্রুঝরা টপ টপ করে বেয়ে পড়ছে।নিমিষেই সব স্বপ্ন যেনো মিশে যায় দুস্বপ্নের সারি বেয়ে।

প্রিয়া বলে জোরে এক চিৎকার মেরে আমি ছুটে যাই রাস্তার মাঝে।গিয়েই হাটু ফেলে বসে পড়ি ওর পাশে।রাত ২ টার কাছাকাছি। নিরবতা ছাড়া চারপাশে আর কিছুই নেই। বুক ফেটে যাচ্ছে আমার মুহুর্তেই।ওর মাথা আমার কোলে রেখে বলতে লাগলাম)

— এই উঠ… আরে এই… কথা বলছিস না কেন..? আরে এই দেখ,আমি তোর রিয়াজ.. ওই,তুই আমাকে ফেলে কোথায় যাচ্ছিস। এই শালি,আমাকে তোর ইচ্ছের কথা বলবিনা আর? আরে এই,তুই ছেড়ে গেলে আমাকে ভালোবাসবে কে হা..? কার পাগলামীতে আমি নিজেকে হারাবো বল? ওই কথা বল..?

তুই না বলেছিস? প্রতিদিন রাতে আমার বুকে মাথা রেখে নিদ্রায় যাবি? তাহলে এখন কেনো এভাবে ঘুমাচ্ছিস।এই তোর ভালোবাসা?

এই,তোর মনে নেই,আমার গল্প শুনে ঘুমাবি বলেছিস?,হ্যাঁ আমি গল্প বলবো,অনেক গল্প বলবো,তবুও এভাবে ছেড়ে যাসনা প্লিজ…

আচ্ছা, তুই না বলেছিস? বিয়ের পর তোকে প্রতিদিন স্নান করাতে হবে? তাহলে কেনো আমাকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছিস..

হে আল্লাহ.. তুমি কি আমার কপালে এইটাই রেখেছো..? কেনো এভাবে শাস্তি দিয়েছো আমাকে।আমি তো কোনোদিন কারো ক্ষতি করিনি,তবে কেনো হেরে গেলাম আমি, কেনো ছিনিয়ে নিলে আমার প্রিয়াকে তুমি, কেনো নিলে।

( কিন্তু এসব বলেও যে কোনো লাভ হয়নি আমার।ট্রাকের সাথে এক্সিডেন্ট করার সাথে সাথেই প্রিয়া ওপারে চলে যায়।তাকে কোলে রেখে আমার কান্নার শব্দটা আজও আমার কানে ভেসে উঠে।কিন্তু সব কিছু যে পূর্ণতা পাবে,তা তো নয়।আমার সব কিছু পূর্ণতা ফেলেও,পায়নি আমার ভালোবাসা।ডায়েরির ভাজেই আমার গল্পটাকে মানায়।ডায়েরিতে লিখার পর, দুই ফোটা চোখের পানি পাতায় ফেলি আমি,শেষে ছোট করে  মনে একটা কথা আসে,

জীবন কখনো পূর্নকামী হয়না,

মৃত্যুকালের আগ অব্দি সবই থেকে যায় অপূর্ণ,

কখনো সম্পদ, আবার কখনো “অপূর্ণতার ভালোবাসা”।

***********সমাপ্ত*******

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত