রাতের প্রজাপতি

রাতের প্রজাপতি

শিউলি আমার কাছে আবদার করেছিলো তাকে যেনো একটিবারের জন্য তার বাবা মাকে দেখিয়ে নিয়ে আসি। তার গ্রামের বাড়ি ভোলা’তে। আমি এর আগে কখনো ভোলায় যাইনি। ভাবছিলাম যাওয়াই যায়, যাকে আজকাল সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি তার এতটুকু আবদার মানা যায়।

মাঝে মাঝে আমার মনে হয় সবকিছুই যেন স্বার্থের জন্য। স্বার্থ যেখানে শূন্য সেখানে আপনি হলেন নগন্য। আমার জীবনের সবকিছু’ই হারিয়েছি স্বার্থ পূরণ অপূরণের হিসেব মিলাতে মিলাতে। তিন বছরের সম্পর্ক ছিলো প্রীয়ন্তির সাথে, পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাচ্ছিলাম না বলে সে দ্বিতীয় সুযোগ না দিয়েই বিসিএস টপকানো ছেলেকে বিয়ে করে ফেলে। তাও আমি জানতে পারি বিয়ের একুশদিন পর। যাক, নিয়তিকে মেনে নিয়ে আবার এগোতে লাগলাম।

শেষমেশ একটা ভালো চাকরি পেয়ে যাই নামিদামি একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। ভালোই চলছিলো, সততা এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছিলাম। পরে দেখলাম আমার ঠিক ওয়ান স্টেপ আপ পজিশনের বস সেটার ভালোই সুযোগ নিচ্ছেন। আপনি এই সেক্টরে যত’ই বিনয়ী হোন না কেন কোম্পানি খুঁজবে প্রফিট ইনক্রিজ করতে আপনাকে আর কোন কোন উপায়ে লোড দেয়া যায়। এতে আপনার মাজা থাকুক আর ভাঙুক এটা দেখার সময় নাই। ছেড়ে দিলাম চাকরি। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। সারাদিন ইনভেস্ট, প্রফিট, ইন্টারেস্ট, মার্কেটিং, প্রোডাক্ট সাপ্লাই, প্রোডাক্ট ডেভেলপ, স্টক, স্কোপ সার্চিং, প্ল্যানিং উফফ!!!! এসবে আমি মেশিন হয়ে গেছিলাম। এভাবে বাঁচা যায়? শেষে ঐ দিন বসের সাথে ইচ্ছেমতো কথা কাটাকাটি হলো। উনি বলেছিলেন আমার মতো কর্মী নাকি কোটি কোটি আছে সো দিলাম ছেড়ে। এখন যতটুকু জানি আমার বসের চাকরি যায় যায়। সিমকার্ড খুলে ছুড়ে ফেলে দিছি উনার ফোনের যন্ত্রণায়।

ওহ্ আমরা ছিলাম শিউলি’তে। হ্যাঁ, শিউলির সাথে আমার পরিচয় হয় বেইলি রোডে। তখন রাত বারোটা বেজে একত্রিশ মিনিট। চাকরি ছেড়ে দেয়ার পর ভাবলাম আজ চিল করবো। ইচ্ছে মতো একটা রেস্তোরাঁতে ঢুকে খেয়ে নিলাম। তারপর ভাবলাম সারা শহর আজ হাঁটবো, বাসায় যাবোনা। আমি এমনটাই করতাম। মাঝে মাঝে একদম ভোরে উঠে শহর দেখতে বের হতাম। গভীর রাতেও বের হতাম। ফুটপাথে ঘুমন্ত মানুষ দেখতাম। ব্যাস্ত শহরের ঘুমন্ত রুপ দেখতাম। গভীর রাতের শহরের রুপ আর ভোরের জেগে উঠার দৃশ্য দেখার কপাল সবার নাই। হ্যাঁ, তারপর হঠাৎ দেখা পেলাম শিউলির। চোখে চোখ পড়তেই বাঁকা একটা হাসি দিয়ে বলছিলো, -“লাগবে নাকি?”

এই হাসিটা কৃত্রিম হাসি, আমি জানি। আমি বললাম;- “কী লাগবে নাকি, কে আপনি? আর এতো রাতে এখানে একা মেয়েমানুষ?” শিউলি মিনমিন করে বললো;- “শালা বকচ*।” এটা বলে চলে যাচ্ছিলো এমন সময় পেছন থেকে বললাম, -“আমার লাগবে।” সে ফিরে এসে আরেকটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল;- “রোমান্টিক আছেন আপনি, আসেন যাই।”  আমি বললাম;- কোথায় যাবো?

সে কিছু একটা বকা দিতে গিয়ে থেমে গেলো। তারপর বললো;- “রাস্তায় করবেন নাকি?” আমি বললাম;- কী নাম আপনার? সে বললো “শিউলি।” আমি বললাম;- আসেন আজকে কিছু না করি। আজকে হাঁটবো, আড্ডা দিবো। শিউলি কথাটা শোনার পর আবার চলে যাচ্ছিলো আর বলছিলো হাঁইটা পেট ভরবে না আমার, ঢং মারে আসছে। আমি আবার ডাক দিয়ে বললাম; – “যত টাকা লাগবে আমি দিচ্ছি তো।” শিউলি আবার আসলো, তারপর কপাল কুঁচকে রেগে বললো;- “আগে টাকা দেন। বা* আজকে কপালটাই খারাপ, একটাও জোটে নাই তারউপর আপনার মতো এক হাঁধা জোটলো মধ্য রাইতে।”

ওকে মানিব্যাগে যা ছিলো দিয়ে দিলাম। এটলিস্ট ওর মনে যা মুখে তা, এ জিনিসটা ভাল্লাগছে। শিউলি অবাক হয়ে গেলো। গুনে বললো;- “এখানে নয় হাজার টাকা! এটা দিয়ে আমি কি করমু? এতো টাকা আমার লাগবেনা।” আমি বললাম;- “আরে নেন তো। আপনি আমাকে সময় দিবেন, টাকা আরো লাগলে দিবো। আমি অনেক একা, আশে পাশে কেউ নাই সঙ্গ দেয়ার।”

সেদিন সারারাত হাঁটলাম কথা বললাম। একটা টং দোকানে বসে চা খেলাম। তারপর ভোর রাত্রিতে আবার ব্যাক করে তার কলোনীর কাছে এগিয়ে দিয়ে বাসায় গেলাম। শিউলি আমাকে গান শুনিয়ে ছিলো সেদিন। কন্ঠটা মিষ্টি কিন্তু অনেকদিন না গাওয়ায় সুর বসে গেছে, বুঝা যাচ্ছে। আমি তাকে বললাম:- “প্রতিদিন আমাকে গান শোনাবেন। আবার আগামীকাল দেখা করবো। আপনি আসবেন তো?” ও বললো;- “কি আর করার টাকা এডভান্স নিছি যখন আসা তো লাগবোই।” পরের দিন শিউলির জন্য আবার অপেক্ষা করছি আগের যায়গাটায় এসে। শীত চলে গেছে, হালকা বসন্তের আবাস। মৃদু বাতাসে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে। শিউলি হঠাৎ হুড়মুড় করে এসে বললো;- লেইট হইয়া গেছে সরি সরি। রাস্তায় কয়েকটা কুত্তা পেছন নিয়েছিল।”  আমি ভড়কে গিয়ে বললাম;- কামড় টামড় দেয় নাই তো!

শিউলি হালকা বিরক্তি নিয়ে বললো;- “এই ফাজলামি করেন? বুঝেন না কোন কুত্তাদের কথা বলি! শালারা মাগনা ***র পাগল।” আমি বলেছিলাম;- “ওহ্ ওই কুত্তা, রাতে এমনটা স্বাভাবিক, তারউপর একা মেয়ে মানুষ আপনি।”  ও বললো;- শিউলি এতো তোয়াক্কা করেনা, করলে এ পথে থাকতে পারতো না আর হ্যাঁ আপনি আমায় আপনি করে বইলেন না। আমি রাস্তার মেয়ে আমার এতো সম্মানের দরকার নাই। বদহজম লাগে।”

এটা বলেই সে খিলখিল করে হাসতে লাগলো। মেয়েটা আজকে সেজে এসেছে। সোডিয়ামের আলোতে দেখা যাচ্ছে নীল জামা, গলায় কালো ওড়না। ঠোঁটে কমদামি লিপস্টিক। শ্যাম বর্ণের গড়ন। গালে টোল পরে। নিঃসন্দেহে সভ্য সমাজে ভালো দাম পেতো। আমি ওকে বললাম;- “তোমাকে কাল একটা পার্লারে নিয়ে যাবো, যাবে?” শিউলি কিচ্ছু বললো না। হাঁটতে হাঁটতে অনেক্ষণ পর আমাকে বললো;- “আচ্ছা আপনার উদ্দেশ্যটা কি বলেন তো?” আমি বললাম;- “আমি উদ্দেশ্য খুঁজি না শিউলি।” উদ্দেশ্য ঠিক করে উদ্দেশ্য পূরন করা যায়না। শিউলি বলে;- “আপনার কথামথা আমার মাথায় ঢুকে না তবে শুনতে অনেক ভালো লাগে। শিক্ষিত মানুষ। আমারো পড়াশোনার মেলা শখ ছিলো। ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পাইছিলাম।”

তারপর আর কিছু বললো না। শিউলিকে বললাম;- “আচ্ছা তুমি এখানে কেন? এসব ক্যান করো? ভালো কাজ করা যায়না?” সে বললো;- “থাক এসব কথা। ভালো কাজ আর খারাপ কাজ! দিন শেষে এসে একটা মেয়েকে পুরুষের ভোগ্যপন্য হিসেবেই নিজেকে আবিস্কার করতে হয়। জানেন আমি আমার অতীত মনে করতে পারি না। ভাল্লাগে না।” আমি বললাম;- “তুমি আমাকে বলো আমি শুনবো।” একটা ব্রিজের ফুটপাথে বসে একটা সিগারেট ধরালাম। শিউলি খানিক বাদে বলতে শুরু করলো;-

আমার গ্রাম ভোলার চরগাঁও। বাবা মায়ের বড় সন্তান আমি। তখন হাই স্কুলে পড়ি। একটা ছেলেকে অনেক ভালোবাসতাম। আবেগের বশে তার পাগলামীকে সায় দিয়েছিলাম। তার বাবা অনেক বড়লোক। শহরে বাসা। প্রতিদিন আমার জন্য শহর থেকে সাইকেল চালিয়ে এসে আমার স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমি অনেক লাজুক একটা মেয়ে ছিলাম। ও ছিলো খুব স্মার্ট। মাঝে মাঝে আমার অনেক গর্ব হতো ওকে নিয়ে। একদিন হঠাৎ করে ও আমাকে একটা বন্ধুর বাসায় নিয়ে যেতে চাচ্ছিলো। আমি বুঝতে পারছিলাম ওর উদ্দেশ্য কি, তাও বলছিলাম আমি তোমাকে ভালোবাসি আর আমরা বিয়ের পর সব করবো। আমাকে এর আগে তুমি এসব কিছু করতে বইলোনা। ও অনেক কষ্ট পেয়েছিলো। অনেকদিন পর আবার হঠাৎ এসে আমাকে বলতেছিলো, শিউলি চলো আজ পালিয়ে বিয়ে করবো আমরা।

আমি আর পারছি না তোমায় ছাড়া থাকতে। খুব মায়া হয়েছিলো জানেন! আমার কি হইছিলো জানিনা। অজানা উদ্দেশ্যেই ওর হাত ধরে পালিয়ে আসা। তারপর এই কলোনীর একটা রুমে আমরা থাকছিলাম পাঁচদিন। পাঁচদিন পর সে আমাকে ফেলে একা আবার পালিয়ে যায়। হাহাহা আসলে এভাবে সে আরো কয়েকটা মেয়েকে এখানে এনে দিয়েছে। পরে জানতে পারি। কি আর করার, যাওয়ার মতো রাস্তা ছিলোনা। আমি বিক্রি হয়ে গিয়েছিলাম। পাঁচদিন থেকে আজ পাঁচ বছর। অনেক সময় লেগেছিলো এই শহরের আগা মাথা বুঝতে। কতদিন গলায় ওড়না পেঁচিয়েছি মরবো বলে। কিন্তু পারিনি। এই মুখ নিয়ে আর গ্রামেও যাইনি। কি দরকার আর বদনামী করার। আবেগের ভুলটা থেকে আজ এই পর্যন্ত। মাঝে মাঝে ঘৃণা লাগে নিজের উপর।

তারপর শিউলি কাকতির দৃষ্টিতে আমাকে বলছিলো;- “আপনি আমায় নিয়ে যাবেন একবার ভোলায়? আপনার দেয়া টাকাগুলো আমি জমিয়েছি। ওগুলোতে হয়ে যাবে।” আমি বললাম;- ঠিক আছে পরশু যাবো চলো। সে অনেক খুশি হয়েছিলো। তারপরদিন শিউলিকে পার্লারে নিয়ে গেলাম। পার্লারের ইনস্ট্রাক্টর লেডিকে বললাম ওর যা যা ঠিক নাই ঠিক করে দেন। হ্যাঁ, কাজ হয়েছে অনেক সুন্দর করে শিউলিকে ঠিকঠাক করে দিয়েছিলো। এতো মায়াবী লাগছিলো যে আমি চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। শিউলি লজ্জায় তাকাচ্ছিলোনা আমার দিকে। সেদিন অনেক কেনাকাটা, ঘোরাফেরা, খাওয়াদাওয়া করলাম। ওরে কলোনিতে এগিয়ে দিয়ে আসলাম। তারপরদিন আমরা ভোলায় গিয়েছিলাম। রাতের বাসে করে গেছিলাম। ভোর হয়ে যায় পৌছাতে, নেমে অনেক বছর পর খেজুরের রস কিনে খেলাম। শিউলি বোরকা পরা ছিলো।

বোরকা পরেই লাফাচ্ছিলো আর বলতেছিলো দেখেন দেখেন এইটা আমার স্কুল। এইটা এই ওইটা সেই। এইযে পুকুরপাড়! এই পুকুরপাড়ে আমি কত আড্ডা দিয়েছি জানেন? এই যে দেখেন মাঠ এখানে কতো খেলছি আমি। এই যে দেখেন দেখেন এটা আমাদের জমি। আব্বার খাবার নিয়া প্রতিদিন দুপুরবেলা আসতাম। আব্বা আমাকে তুলে খাইয়ে দিতো। গামছা দিয়ে আমার ঘাম মুছে দিতো জানেন? ভারি হয়ে আসছিলো শিউলির কন্ঠ। শিউলি একটা বাচ্চা মেয়ে হয়ে গেছে। আদতেই সে একটা বাচ্চা মেয়ে, বয়স বেশি হলে বিশ কিংবা একুশ। ওর চেহারায় সেই কৃত্রিম হাসি আর নাই। এখন যে হাসছে এই হাসিটা পবিত্র। এর চাইতে আর পবিত্র হাসি হতে পারে না। আর দেহের ব্যাপার! দেহ আমাদের কার পবিত্র বলেন! বুকে হাত দিয়ে বলেন? সেদিন শিউলি ওর বাড়ির কাছে গিয়েও ক্যান জানি ফুঁপিয়ে কান্না করে চলে এসে আবার বলছিলো;- “যামুনা আমি, আমায় নিয়ে চলেন আপনি ঢাকায়।”

মেয়েরা অদ্ভুত হয়। তারা কি বুঝে আর কি বুঝেনা কি চায় কি চায়না আমি জানিনা। আমি সেদিন বলছিলাম;- “আসো আমি সবার সাথে কথা বলে ঠিক করে দিবো। তুমি গ্রামে থাকবা।” ও শুধু কেঁদেছিলো সারাপথ, কিছুই বলেনি। আমি তারপর কতরাত কতদিন কাটিয়েছি শিউলির সাথে। ছুঁয়ে দেখার একটুও মন চায়নি। পরুষতা জাগে নি এমনটা না। আমি বাধা ছিলাম বিবেকের দড়িতে। পাশাপাশি বসতাম আমরা ফুটপাথে, রিকশায় আর মাঝে মাঝে লোকাল বাসে। আমি নুডলস পছন্দ করতাম না। একদিন শিউলি আমার জন্য নুডলস বানিয়ে নিয়ে এসেছিলো। তারপর থেকে নুডলস আমার প্রিয় খাবার। অনেকদিন পর আমি আবার চাকরিতে জয়েন করি। কোম্পানির নতুন বস নিয়োগ হয়েছে। আমার পারফর্ম ভালো থাকায় তারা আবার আমাকে ইমেইল করলো। যাক কি মনে করে আবার জয়েন করলাম।

শিউলি সেদিন প্রথম আমার হাত চেপে ধরে বলছিলো;- “আপনি আর আসবেন না তাইনা?” সেটা বলে আর উত্তর না শুনেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো। এই মেয়েটা কতটা পবিত্র তা আমার অন্তর দিয়ে আমি উপলব্ধি করতে পারতাম। আমি বলেছিলাম আমি আসবো শিউলি। তুমি এই কাজ আর করবা না, কথা দাও। শিউলি কথা দিয়েছিলো আমায়, সে আর এই কাজ করবে না। আরেকটা কথা বলতে গিয়ে থেমে গেছিলো আর বলছিলো; আগে কালকে আসেন তারপর বলবো।

শিউলি কথা রেখেছিলো কিন্তু আমি রাখি নি। কোম্পানির কাজে আমাকে তারা বিদেশে পাঠিয়ে ছিলো, সুইডেন। এতোটাই বিজি হইছিলাম যে একটা ফোন অবধি দিতে পারিনি। ওকে একটা এসএমএস সেন্ড করেছিলাম। পরে দেখলাম আনফরচুনেটলি সেটা শিউলিকে সেন্ড না করে আমার লিস্টে সেভ করা শ্যামলীকে ভুলে সেন্ড করেছিলাম। আমার জীবনের এই ছোটখাটো ভুলভাল ব্যাপারগুলাই আমার ট্রাজেডির অন্যতম স্বাক্ষী। দেশের বাইরে গিয়ে হঠাৎ ওয়েদার স্যুট না করায় অসুস্থ হয়ে পরি, হসপিটিলাইজ্ড থাকতে হয় কয়েকদিন। সব মিলিয়ে নয়দিন পর শিউলিকে কল দিয়ে নাম্বার বন্ধ পাই। দেশে ফিরে খুঁজতে গিয়ে জানতে পারি শিউলি আত্মহত্যা করছে। শিউলির লাশ পুলিশে নিয়ে যায়। কোথায় কিভাবে আমি জানতাম না। সেবার আমি পাগলের মতো হয়ে গেছিলাম। চিল্লায়া রাস্তায় বসে কেঁদেছিলাম। শিউলি এটা ক্যান করলো? মেয়েরা এমন ক্যান?

আমি’ই শিউলির আত্মহত্যার জন্য দায়ী ছিলাম। দ্বিতীয় বার বিশ্বাসের উপর আঘাতটা আর নিতে পারেনি হয়তো। চাকরি বাকরি সব ছেড়ে ছুড়ে ফেলে চলে এসেছিলাম। আমারো মরে যেতে ইচ্ছে হতো। মরতে পারিনি। ওর লাশ’টা পুলিশি কেস হওয়ায় আর খুঁজতে পারিনি। ওর কবরের পাশে গিয়ে বলতে পারিনি; আমাকে তুমি কোনদিন ক্ষমা কইরোনা শিউলি। আমি এতোটাই হতভাগা ছিলাম। শিউলি আর কোন সুযোগ দেই নাই।

ফুট নোট;- দিনশেষে পতিতারা আর সভ্য সমাজে উঠে আসতে পারে না। আমাদের স্বার্থ আদায়ের পর আমরা তাদের ছুঁড়ে ফেলে দেই। শিউলিরা’ও যে মানুষ তা আমরা মুখোশধারি সভ্যরা মানতে পারিনা। আমাদের মতোই মুখোশধারিদের কারনে শিউলিরা আজ এই পথে আসে। ভেবেছেন কখনো দায়ী কারা? নাক সিটকানো আর কতো? আমরাই তামাশা করি। কবি, লেখক আর সাহিত্যিকরা শিউলিদেরকে সাময়িক সময়ের জন্য তাদের লেখায় জায়গা করে দেন। পাঠকরা সামান্য সহানুভূতিতে আহত হয়। আচ্ছা এমনটা’কি হয়েছে একটা সময় পতিতা আবার সভ্য সমাজে তার জায়গাটা করে নিয়েছে? কিংবা তাকে কেউ ভালোবেসে সুখি করেছে? হয়নি তো? হলে শেষমেশ টিকেছিল তো? আমি দেখেনি এখনো হইতে। হবেও না, এখানে সভ্য সমাজটা আরো বেশি অসভ্য! টিকতে দিবেনা।

এই শহরে শিউলিরা তাদের অব্যক্ত গল্পগুলোকে কবর দিয়ে সোডিয়ামের আলোতে রাতের প্রজাপতি হয়ে উড়বে। অশান্ত বখাটে যুবকদের প্রান শীতল করে দিবে। কিছুক্ষণের জন্য তারাও হয়তো নিজেকে প্রেমিকা ভাবতে শুরু করবে, মোহের দায়। সব শেষে তারা পতিতাই থেকে যাবে। শিউলির একটা কথা অত্যন্ত বাস্তব ছিলো, “দিন শেষে এসে একটা মেয়েকে পুরুষের ভোগের বস্তু বানায়”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত