বিয়ের রাতে জামাই জিজ্ঞেস করল, “ও আমার মিষ্টি বউ ! বলো তো কি গিফট নিবা?” আমি উৎসাহী কন্ঠে বললাম,”আমাকে একটা ঝাঁটা এনে দিতে পারবে?” আমার কথা শুনে জামাই অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। “কি হলো? যাও আনো ! তোমার রুমটা এত্ত নোংরা ! আমার গা ম্যাজম্যাজ করছে এখানে বসে থাকতে…” অনেক কষ্টে রাগ সামলে সে রাত বিরেতে আমাকে একটা ঝাঁটা এনে দিল। সারা ঘর সুন্দর করে পরিষ্কার করে যখন ঘুমোতে যাব তখনই জামাই জড়িয়ে ধরে বলল, “ইশ কি সুন্দর তুমি !”
ওকে একটা ঝামটা মেরে সরিয়ে দিয়ে নাক কুচকে বললাম, “খবরদার আমার গায়ে হাত দেবে না বলে দিলাম ! গা থেকে ঘামের গন্ধ আসছে। কি নোংরা গো তুমি। যাও আগে পরিষ্কার কিছু পরে এসো !”আমার কথা শুনে সে পরপর কয়েকবার কাপড় বদলে আসলো। কিন্তু কোন কাপড়ই আমার কাছে পরিষ্কার লাগছে না। নোংরা অপরিচ্ছন্নতা দেখলে গা আমার ঘিনঘিন করে ! আমার স্বভাবে অতিষ্ঠ হয়ে সে বলল, “আনিকা তুমি কি পাগল?” আমি একটা ধমক দিয়ে বললাম, “পাগল কেন হব? আমি শুধু একটু বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আমার এই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্বভাব দেখেই তো তোমার মা আমাকে পছন্দ করেছিলো” ও কিছু না বলেই ঘুমিয়ে পড়ল।
বেশ কাটছিলো দিনগুলো দেখতে দেখতেই এক বছর পেরিয়ে গেল। জামাইকে প্রায়ই ব্যবসায়ের কাজে শহরের বাইরে যেতে হয়। বেশিরভাগ সময় ওখানেই থাকে… তাই বলতে গেলে বেশ শান্তিতেই আছি। সারাদিন ঘরদোর পরিষ্কার করে ঝকঝকে তকতকে করে রাখি। মাঝে মাঝে শাশুড়ি আসেন পরিদর্শনের জন্য। আমার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দেখে মুগ্ধ হন বরাবরই। তবে মাঝে মাঝে ননদ এলে খোঁটা দিয়ে কথা শুনায় “ভাবী তুমি দেখি ধুতে ধুতে প্লেটের ডিজাইনগুলোও তুলে ফেলেছ !”
তবে ওসবে আমি কান দেই না। ঘরদোর পরিষ্কার করে বেশ কাটছিলো আমার দিনগুলো। শুধু জামাই যখন থাকত তখন একটু সমস্যা হত। একটা মানুষ এতটা অপরিচ্ছন্ন কি করে হয় ! ও আসলে কাজের চাপ দ্বিগুণ বেড়ে যায় ! তার ওপর রোজ নোংরা শরীর নিয়ে কাছে আসতে চায়…জোরসে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেই আমি ! তখন বিরক্ত হয়ে বলে “তোমার মাথায় গুরুতর সমস্যা !” ওকে বার বার বুঝাই, আমি শুধু একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করি কিন্তু সে বুঝতেই চায় না ! তবে একদিন লাবণ্য আপুর কল এলো। তখন আমার স্বামী ব্যবসায়ের কাজে শহরের বাইরে। আপু কল করে বলল,
-কি রে, কি করছিস?
-এইতো আপু বাথরুম পরিষ্কার করি…ও যা নোংরা করে গেছে কি আর বলব !
-তুই ওই বাথরুমই পরিষ্কার কর ! এদিকে তোর স্বামীর মন যে নোংরা হয়ে আছে ! সেটা পরিষ্কার করবি না?
-কি বলছ এসব?
-ঠিকই বলছি। এইত একটু আগে দেখলাম সুন্দরমত একটা মেয়ের সাথে রিকশায় হাতধরাধরি করে যাচ্ছে…
-ও যা করে করুক ! বাসায় না আসলেই হলো ! ও আসলেই বাসা নোংরা হবে…
-(ধমকের সুরে) তুই কি পাগল !
-না আপু ! আমি শুধু একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। (ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল)
-শোন ! একটু ভেবে দেখ, একবার তোর স্বামী নতুন বউ আনলে তোর কাজ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে ! তোকে তোর, তোর জামাই আর ওই থার্ড পার্সনেরও ময়লা পরিষ্কার করতে হবে… থিংক !
আপুর কথা শুনে আমি রীতিমত আঁতকে উঠলাম। কাঁদতে কাঁদতে আব্বুকে কল দিলাম। জামাইকে নিয়ে মিটিং বসল। সেখানে আমার শ্বশুরবাড়ি বাপের বাড়ির সবাই উপস্থিত। সবাই মিলে ওকে চেপে ধরায় সে সত্যিটা বলতে বাধ্য হলো। আসলে মাস খানেক আগে ও ইমু নামের মেয়েটাকে বিয়ে করেছে। ব্যবসার কথা বলে ওর কাছে যেত । জামাইয়ের এই কথা শুনে আমি রেগে আগুন হয়ে ওর ওপর রীতিমত ঝাপিয়ে পড়লাম। কলার ধরে ধমক দিয়ে বললাম, “তোর এত্ত বড় সাহস ! তুই কি ভেবেছিস? তোর নোংরা ময়লা ঘর কাপড় পরিস্কার করি বলে তোর সেকেন্ড বউয়েরও করব? নেভার !” জামাই কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, “তুমি পাগল ! ইউ হ্যাভ গন ম্যাড !” সবাই আমাকে টেনে হিচরে সরিয়ে আনল। আর আমি এদিকে চিৎকার করে যাচ্ছি “তুই একটা নোংরা অপরিচ্ছন্ন কীট !”
প্রায় একমাস হতে চলল আমি এই পাগলাগারদে ভর্তি। আমাকে ডিভোর্স দিয়ে জামাই ইমুকে ঘরে তুলেছে। তবে এখন আমার অবস্থা কাহিল ! আগে তো শুধু জামাইয়ের ঘর পরিষ্কার করতে হত, এখন সব পেশেন্টদের রুম পরিষ্কার করতে হয় ! কি একটা অবস্থা ! নার্স আয়ারা কেন জানি বার বার বলে আমি নাকি পাগল ! আর আমি তাদের বার বার বলে যাই, “আমি পাগল না, আমি শুধু একটু বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।”