আমার বন্ধু মিজানের ফোনে আমার পছেন্দর গেমটা খেলতে ছিলাম ঠিক তখনেই ওর ফোনে একটা মেসেজ আসলো।আমি কিছু না ভেবেই মেসেজটা পড়ে ফেললাম।
মেসেজে লিখা ছিলো,,”আমি আজকে ময়মনসিংহে আমার মামার বাসায় আসছি।কাল তোমার সাথে প্রথম বার দেখা করতে চাই।কাল বিকেলে তুমি আমার সাথে নদীর পারে দেখা করবে।আর হ্যাঁ তুমি তো আমাকে আগে কখনো দেখনাই আর আমিও তোমাকে দেখিনাই তাই আমি কাল একটা নীল শাড়ি পরে পরে আসবো আর তুমিও একটা নীল পাঞ্জাবি পরে আসবে তাহলে দুজন দুজনকে সহজেই চিনতে পারবো” মেসেজটা পড়ে বুঝতে পারলাম এটা কোন রোজা নামের কেউ পাঠিয়েছে।আমার আর বুঝতে দেরি হল না মিজানের সাথে মেয়েটার সম্পর্কটা কি ধরনের।
মেয়েটার সাথে মিজানের সম্পর্ক আছে আর আমি এর কিছুই যানি না।এমনটা তো হতে পারে না।মিজান তো ওর সব কিছুই আমার সাথে শেয়ার করে। কিন্তু এই ব্যাপারে তো মিজান আমাকে কিছুই বলল না। এটা ভেবে আমি একটু অবাকই হলাম। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম কাল মেয়েটার সাথে আমি মিজান হয়ে দেখা করতে যাবো। আর এ জন্যই আমি মিজানের ফোন থেকে মেসেজটা ডিলিট করে দিলাম।আর ফোন খুলে ফোনের ব্যাটারি আর চার্জের পিনের মধ্যেবর্তী স্থানে একটা কাগজের টুকরা বসিয়ে দিলাম যাতে ফোনটা ব্যাটারির সংযোগ না পায়।ব্যাটারির সংযোগ না পেয়ে ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল।বন্ধ ফোনটা মিজানের বালিশের কাছে রেখে দিলাম।
কিছুক্ষণ পরেই মিজান আমার কাছে এসে বলল দেখতো আমার ফোনটার কি হয়েছে ফোন বন্ধ হয়ে আছে কিছুতেই অন হচ্ছে না। আমি কিছুটা সময় ফোনটা উলটা পালটা করে দেখলাম তারপর মিজানকে বললাম।এটা আমি ঠিক করতে পারবো না।তুই বরং ফোনটা আমার কাছে রেখে যা আমি কাল আমার এক বন্ধুর কাছে নিয়ে যাব ও ফোন ঠিক করতে পারে।
মিজান কিছু না ভেবেই আমার কাছে ফোনটা রেখে গেল। পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই চলে গেলাম স্যালুনে।ভাল করে চুল দাঁড়িগুলো কাটিং করলাম।তারপর বাসায় এসে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন বিকেল হবে। বিকাল হতেই মিজান চলে গেল টিউশনিতে আর আমি ওর নীল পাঞ্জাবিটা পরে নিলাম কারন আমার কোন নীল কালারের পাঞ্জাবি নেই।
নদীর পারে বসে প্রায় এক ঘন্টা অপেক্ষা করলাম কিন্তু যার সাথে দেখা করতে আসছি সে এখনো আসছে না।তাই পকেট থেকে মিজানের ফোন বের করে একটা টেক্সট করলাম,,, “এত দেরি হচ্ছে কেন” সাথে সাথেই ফিরতি মেসেজ আসলো। “আমি তোমাকে দেখতে পাছি তুমি ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকো আমি আসতেছি ” মেসেজটা পড়ে আমি সামনে-পেছনে,ডানে-বামে,সব দিকেই তাকালাম কিন্তু নীল শাড়ি পড়া কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না।এভাবেই চলে গেল আরও পাঁচ মিনিট।তারপর রোজাকে আমি দেখতে পেলাম।
মেয়েটা আমার যত কাছে আসছে আমার কেমন কেমন জানি লাগতেছে।বুকের ভেতরের ধুক ধুক করাটা যেন বেড়েই যাচ্ছে,,, অনেক কষ্টে ওটাকে কন্ট্রোল করলাম। কিছুটা সময় দুজনে নদীর পারে বসে রইলাম তারপর সে বলল,,,, “চল আমরা কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি” রোজার কথা শুনে পকেটে হাত দিয়ে দেখি মানি ব্যাগ নাই।তার মানে মানি ব্যাগ বাসায় রেখে এসেছি। আমার এই অবস্থা দেখে মেয়েটা বলল সমস্যা নেই আমার কাছে টাকা আছে। তারপর আমরা গিয়ে বসলাম রেস্টুরেন্টের একটা নির্জন জায়গায়।আমি রোজাকে বললাম আমরা ঐদিকে বসলেও পারতাম। “না আমরা আজকে এখানেই বসব” আর তুমি না আমার কাছে একটা জিনিস চাইছিলা,তো আজকে তোমাকে আমি ওটা দিব।
– কি চাইছিলাম ? এত তারাতারি ভুলে গেলে,,,
– আমার এখন মনে পরছে না।তুমি বলনা কি চাইছিলাম আমি,,,,
তারপর সে যা বলল ওটা শুনে আমি 420 ভোল্টের শকড খেলাম।বুকের ধুক ধুকানিটা আবার বেড়ে গেল।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমি বললাম আরে সে সব পরে হবে এখন বল কি অডার দিব। “তোমার পছন্দ অনুযায়ী কিছু একটা অডার দেও” আমি আমার পছন্দ মতোই অডার করলাম এর মধ্যেই রোজা বলল তুমি আমাকে নিজে হাতে খাইয়ে দাও,,,,
আমি যখন রোজার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছিলাম তখনেই হটাৎ চোখ চলে গেল আমার গালফ্রেন্ড অহনার দিকে।সেও আমাকে এই অবস্থায় দেখে ফেলল।সে এসেছিল তার বান্ধবীদের নিয়ে। তার পর যা হল পুরোটাই ইতিহাস,, ছেড়া পাঞ্জাবি দিয়ে কোন রকমে ইজ্জত বাঁচিয়ে বাসায় আসলাম। এখন মিজান আর আমার দুজনের মধ্যে কারোরেই গালফ্রেন্ড নেই।বেচারা মিজানের জন্য খুব কষ্ট হয় সে আজও তার রিলেশন ব্রেকাপের কারনটা পর্যন্ত জানতে পারলো না আর এটা নিয়ে সে খুব হতাশ।