মায়ের হাতে রান্না করা সুস্বাদু বিরিয়ানি আয়েস করে খাচ্ছি। এমন সময় বিশ বছরের জীবনে আমার প্রথম প্রেম, আমার নতুন প্রেমিকের কল এলো। মা আশেপাশে না থাকায় কলটা রিসিভ করলাম…..
— হ্যালো.. (আমি)
— কী করো বাবু? (নতুন বয়ফ্রেন্ড)
— এইতো খাচ্ছি।
— কী খাও? সকালের খাবার। বিরিয়ানি। তুমি খেয়েছো?
— হ্যাঁ। আজ যে আমাদের দেখা করার কথা, সেটা কি তোমার খেয়াল আছে?
— সকাল থেকে বিরিয়ানির সুবাসে ভুলেই গেছিলাম যে আজ তোমার সঙ্গে দেখা করার কথা আছে। কল দিয়ে মনে করিয়ে দিয়ে ভালোই করেছো। বিরিয়ানিটা শেষ করে রেডি হয়ে বের হচ্ছি। তুমিও তাড়াতাড়িই বের হয়ে পড়ো।
— আচ্ছা। তাহলে এখন খাও। দেখা করার পর মন ভরে কথা বলব।
— আচ্ছা।
কলটা কেটে দিয়ে আমি আবার বিরিয়ানি খেতে শুরু করলাম। এত সুস্বাদু বিরিয়ানি কি আর দ্রুত খেয়ে শেষ করা যায়? তাই ধীরে ধীরে খেয়ে পুরো প্লেটের বিরিয়ানি শেষ করে তবেই রেডি হয়ে বের হলাম প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করার জন্য। আমাদের দেখা করার কথা ছিল সকাল ১০ টার দিকে। এখন সকাল ১১.৩০ মিনিট। অবশ্য এতটা লেট হওয়ার একমাত্র কারণ হলো বিরিয়ানি। আম্মু আজকে বিরিয়ানি রান্না না করলে এত দেরি হতো না। বিকেএসপির সামনে আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার কথা। আমাদের প্রেমের বয়স এই দশদিন হলো। এই দশদিনে আজই আমাদের প্রথম দেখা। আজ প্রথম দিন বলেই দেড় ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করার পরও আমার নতুন প্রেমিক আমার উপর রাগ না দেখিয়ে হাসিমুখে কথা বলছে আমার সঙ্গে। শুভদৃষ্টি পর্ব শেষ করে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করার পর সে বলল
— আমার না খুব খিধা পেয়েছে। চলো কোনো রেস্তোরাঁয় যাই।
আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে তার কথায় সম্মতি জানিয়ে মনে মনে বললাম, এইবার লাইনে আসো বাছা!
বিকেএসপির সামনে বিখ্যাত লাসানিয়া রেস্টুরেন্ট। আমরা সেখানে গিয়ে বসলাম। খাবারের মেনু কার্ডটা আমার হাতে দিতে দিতে সে বলল — তোমার পছন্দানুযায়ী খাবারের অর্ডার দাও। অন্যান্য মেয়েদের মতো লজ্জায় লাল হয়ে ন্যাকামি করে বফকে খাবার অর্ডার করার কথা ভুল করেও মুখে না এনে হুট করে মেনু কার্ডটা হাতে নিয়ে বললাম — আমার জন্য দুই প্লেট চিকেন বিরিয়ানি। তুমি কী খাবে?
আমার মুখে দুই প্লেট বিরিয়ানির কথা শুনে বফ আমার দিকে ডাগর ডাগর চোখ করে আড়চোখে তাকাল। তার কটাক্ষ নিক্ষেপের কারণ বুঝতে পেরে আমি আপনাআপনি বললাম — বন্ধুদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে গেলে আমি তিন প্লেট বিরিয়ানি একাই সাবাড় করি। তুমি নতুন মানুষ, তাই তোমার সামনে একটু কম খাচ্ছি। এবার তোমার খাবারের অর্ডার করো। প্রেমিক আমার কোনো কথা না বাড়িয়ে পুডিং আর স্যান্ডউইচ অর্ডার করল। আমি কোনো কথা না বলে চুপচাপ আয়েস করে চিকেন বিরিয়ানি খাচ্ছি। মাঝে মাঝে যে আমার বফ আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে, সেটা বেশ বুঝতে পারছি। অন্যান্য সময় হলে এভাবে আড়চোখে তাকানো দেখে তার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে দিতাম। কিন্তু এখন আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার বিরিয়ানি খাচ্ছি। তাই এখন নো ঝগড়াঝাটি, অনলি বিরিয়ানি খাওয়াখায়ি।
রাতে আম্মু গরুর মাংস রান্না করল। কিন্তু আমি সেটা না খেয়ে সকালে রান্না করা বিরিয়ানি খেয়ে অনলাইনে ঢুকলাম। অনলাইনে ঢুকে দেখি আমার প্রেমিক দশটা টেক্সট দিয়ে রাখছে। আমি একটা টেক্সট রিপ্লাই দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে বফ টেক্সট করা বাদ দিয়ে কল দিল। আমি কলটা পিক করলাম….
— কী করো বাবু? (প্রেমিক)
— এইতো, তোমার সঙ্গে কথা বলছি। (আমি)
— খেয়েছো?
— হ্যাঁ। তুমি খেয়েছো?
— হ্যাঁ, খেয়েছি। তা কী খেলে এখন?
— বিরিয়ানি।
— কী? বিরিয়ানি তো দুপুরে খেয়েছো।
— হ্যাঁ। আম্মুর রান্না করা বিরিয়ানি খেলাম এখন।
নতুন প্রেমিক। তবুও অনেকটা কৌতুহল আর একটু রাগ নিয়ে সংকোচ বোধ না করে প্রশ্ন ছুড়ল — তুমি কতটা বিরিয়ানি খেতে পারো? আমি হাসতে হাসতে উত্তর দিলাম — সারাদিন, সারাজীবন। বুঝতে পারলাম, বফ আমার উপর প্রচন্ড রকম বিরক্ত বোধ করল। তারপর টপিক পাল্টে বলল — আচ্ছা, তুমি প্রথম মেয়ে বাবু না ছেলে বাবু চাও?
— মেয়ে বাবু।
— আমিও মেয়ে চাই। তা মেয়ের নাম রাখবে কী?
— আনি।
— কী? আনি কোনো নাম হলো? এটা কেমন নাম?
— বিরিয়ানি শব্দের দ্বিতীয় অংশ আনি। আমার মেয়ের নাম আনি’ই রাখব।
এবার বফ বড়সড় ধরনের একটা ধাক্কা খেল। প্রায় মিনিটখানেক কোনো কথা বলল না। আমি কয়েকবার হ্যালো হ্যালো বলেও কোনো উত্তর পেলাম না। তখন বুঝতে পারলাম, সে আমার উপর রেগে বোমা হয়ে গেছে। বিস্ফোরণের আগে বোমার কোনো রিয়্যাকশন থাকে না। যত রিয়্যাকশন টাইম নিয়ে বিস্ফোরণ হওয়ার পর হয়। ওমা, বোম হওয়া নতুন বফ আমার বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে শান্ত গলায় বলল — আমাদের কোনোদিন কোনো মেয়ে হবে না। দশ বারোটা ছেলে হবে। তখন তুমি ওদের কী নাম রাখবে?
— আমাদের প্রথম ছেলের নাম রাখব বিরু। বিরিয়ানি শব্দের প্রথম অংশ বিরি। সরাসরি বিরি নাম রাখলে আমাদের সন্তানকে সবাই ব্যঙ্গ করে সিগারেট বলে ডাকবে। তাই ওর নাম রাখব বিরু। আর পরবর্তী ছেলের নাম রাখব আনিব, বিরুনী, আরব। এই মুহূর্তে আর নাম মাথায় আসছে না। ছেলে হলে বিরিয়ানি শব্দের চার অক্ষরের মধ্যেই মিলিয়ে মিলিয়ে নাম রাখব।
কল লাইনটা হুট করে কেটে গেল। আমি কয়েকবার কলব্যাক করলাম, কিন্তু সে রিসিভ করল না। অনলাইনে ঢুকে দেখি সে ডাটা অফ করে দিয়েছে। কিন্তু একটা টেক্সট করেছে এই লিখে যে, তুমি পেট ভরে বিরিয়ানি খেয়ে ঘুমাও। আমাকে তোমার আর ভালোবাসা লাগবে না। টেক্সটটা দেখে আমি হতচকিত হয়ে দ্রুত রিপ্লাই দিলাম, ওগো আমার বিরিয়ানির মতো ভালোবাসাটা, ওই বিরিয়ানির কসম, আমি তোমাকে বিরিয়ানির মতোই ভালোবাসি। বিরিয়ানি আমার যতটা প্রিয় তুমিও ততটাই প্রিয়। তুমি আমার টেক্সটটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে কল দিও। নইলে কিন্তু আমি দুই কেজি চালের বিরিয়ানি খেয়ে মারা যাব। এসএমএসটা দিয়ে আমি ডাটা অফ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভাঙতেই বফের কল এলো। ঘুমজড়ানো কন্ঠে কল রিসিভ করলাম।
— শুভ সকাল বাবু। (আমি)
— তোর শুভ সকালের মাইরে বাপ।
তুই বিরিয়ানি রে ভালোবাসিস না? ওই বিরিয়ানি নিয়েই থাক। বিরিয়ানিকেই আরো বেশি ভালোবাস। রাতে ঘুম পেয়েছিল বলে তোরে ব্লক দিতে পারিনি। তোর এসএমএস দেখার সঙ্গে সঙ্গে ব্লক দিয়েছি। এখন তোর নাম্বারটাও ব্লাকলিস্টে রাখব। তুই কান্দিস না বিরিয়ানি পাগলী, এবার মন ভরে বিরিয়ানি খা।
এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে কথাগুলো বলে সে কলটা কেটে দিল। আমি তড়িঘড়ি করে অনলাইনে গিয়ে দেখি সে সত্যিই আমার আইডি ব্লক দিয়েছে। কলব্যাক করে দেখলাম নাম্বার ব্লাকলিস্ট করেছে।
বফ চলে যাওয়ার দুঃখে একটু কাঁদতে যাব, অমনি বিরিয়ানির গন্ধ এলো নাকে। মা নিশ্চয়ই আজও বিরিয়ানি রান্না করছে। আমি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে গেলাম বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য। বফ ব্রেকআপ করে চলে গেছে তো কী হয়েছে? আমার বিরিয়ানি আছে না? বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য আমি শতশত বছর ধরে বাঁচতে পারি!!