একটা মানুষের ভালো থাকার জন্য যে অর্থ প্রয়োজন তা আমার আছে বরং কিছুটা বেশিই আছে তবুও আমি ভালো নেই। কারণ আমি নিঃসঙ্গ। এই একাকিত্বের জাল ছেড়ে বেরোতেই অনেকগুলো রিলেশন করেছি কিন্তু সবগুলো মেয়েই আমার টাকাকে ভালোবেসেছে আমাকে নয়। তারা আমার টাকার জন্য আমার বিছানায় আসতেও দ্বিধাবোধ করেনি। ওদের সাথে রাত কাটালে মনে হতো আমি কোনো পতিতার সাথে রাত কাটাচ্ছি। ভালোবাসার অভাবটা খুব অনুভব করতাম তখন। সত্যি বলতে অনেক চেষ্টা করেও ওদের সত্যিকারে আমিও ভালোবাসতে পারিনি। কোথায় যেনো একটা কমতি বরাবরই থেকে যেতো। হয়তো মনের সাথে মনের মিল করতে পারতাম না তাই। এরপর থেকে রিলেশন করা ছেড়ে দিলাম।
রাতের চাহিদা মেটাতে পতিতার অভাব নেই। টাকা যখন খরচ হবে ওদের পিছনেই করি। কারণ ওরা অনেকটা বাধ্য হয়েই এই রাস্তা বেছে নেয়। ওদের একটা জিনিস আমার খুবই অদ্ভুত লাগে। আমরা যাদের ঘৃণা করি তাদের সাথে এক বেড সেয়ার করা দুর মুখও দর্শন করতে ঘৃণাবোধ জাগে কিন্তু ওরা মনে একরাশ ঘৃণা নিয়েই আমাদের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য ওদের নিজেদের উপরেও প্রচন্ড ঘৃণাবোধ জন্ম নেয় আমি সেটা বুঝতে পারি। আমারও কেন জানি ওদের উপর ঘৃণাবোধ জন্মে। এভাবেই প্রতিরাতে ভালোবাসা খুজতে বের হই কিন্তু নিয়ে আসি অনেকখানি ঘৃণা। কিন্তু সেদিনের পর একদিনের জন্যও আমি সেই ঘৃণা আমার ঘরে আনিনি। তার কারণ সেই মেয়েটি যাকে একবার দেখাতেই মনে হয়েছিল যার সন্ধানে আমি আছি এ সেই।
অফিস শেষ করে কেন জানি গাড়ি নিয়ে শহরটা ঘুরতে মন চাইল। ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিয়ে তাই আমি গাড়ি নিয়ে বের হলাম। এলোমেলো যাচ্ছি নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য নেই। হঠাৎই দেখলাম ওকে গলির মোড়ের ছোট মুদি দোকান থেকে কিছু একটা কিনছে। থামিয়ে দিলাম গাড়ি। নেমে দাড়ালাম এক পলকের জন্য চোখাচোখিও হলো আমাদের। এরপর থেকে প্রতিদিন যাই। ওর সাথে দেখা হয় চোখাচোখিও হয় ওর চোখে আমার জন্য কিছু একটার দেখা পাই যেটা আমাকে শান্তি দেয়।
কিন্তু কথা বলতে গেলেই কেন যেন ও ছুটে পালিয়ে যায়। হয়তো লজ্জার কারণে। ওর দেখা পাওয়ার পরথেকে তাই রাতের সেই ঘৃণার লেনদেনের আর প্রয়োজন হয়না। কিন্তু প্রায় চারদিন হয় ওর দেখা পাচ্ছি না। মনটা বড্ড অস্থির লাগছে। তাই গাড়ি নিয়ে বের হলাম। কিছুক্ষন ঘুরলাম তারপর কেন যেন এক অন্ধকার সড়কে চলে এলাম। কিন্তু একি এই অন্ধকার সড়কে আমার চাদঁ দাড়িয়ে আছে কেন? এক মূহুর্তের জন্য সবকিছু কেমন ওলটপালট হয়ে গেল। বারকয়েক ওর দিকে তাকালাম স্বাভাবিক পতিতা ভঙ্গিমায় দাড়িয়ে আছে। রাস্তার নিয়ন আলোয় অপরুপ সুন্দর লাগছে। মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব। যাকে ভালোবেসে ফেলেছিল তার প্রতি প্রচন্ড ঘৃণার সৃষ্টি হচ্ছে। আজ এই ঘৃণার লেনদেন আমি করবই।
ভেবেই গাড়িটা ওর সামনে থামিয়ে দিলাম। অভিজ্ঞ পতিতার মতই আমার গাড়ির জানালার সামনে ঝুকে পরল ও। নিয়ন আলোয় আমার মুখ দেখে চমকে দুকদম পিছিয়ে দাড়ালো ও। আমি ঠান্ডা গলায় বললাম গাড়িতে উঠতে। ও মাথা নীচু করে দাড়িয়ে রইল।আমি আবারও ওকে গাড়িতে উঠতে বললাম। ও একই ভাবে দাড়িয়ে আছে। এবার আমি একটু ধমকের সুরে কথাটা বললাম। ও খানিকটা কেপেঁ উঠল। মনে হচ্ছে এক্ষুনি ছুটে পালিয়ে যাবে। কিন্তু না কি যেনো ভেবে ও আমার গাড়িতে উঠে বসল। আমার মনটা ভেঙে গেল। কোথায় যেনো একটা সুপ্ত আশা ছিল আমার ধারণাটা ভুল। কিন্তু না ও গাড়িতে উঠে ব্যাপারটাকে সত্য বানিয়ে দিল। বললাম একরাতের রেট কত।
ও মাথা নীচু করে রেখেছিল। আমার কথায় মুখ তুলল। চোখ দুটি ছলছল করছে। এত মায়া যার চোখে সে কিভাবে এমন কাজ করতে পারে। আমাকে একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও মাথা আবার নীচু করে নিল। মনে হলো দুফোটা অশ্রু আমার থেকে গোপন করলো। আমার বুকের ভেতরটাও মুচরে উঠল। আর কিছু জিঙ্গেস না করে সোজা ওকে নিয়ে ফ্লাটে চলে আসলাম। ও রুমে ঢুকে বিছানার এক কোনায় জড়োসরো হয়ে বসে রইল। আমার খুব কান্না পাচ্ছে টাওয়ালটা নিয়ে অন্য রুমের বাথরুমে চলে গেলাম। যাওয়ার সময় ওকে বললাম হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নিতে। অনেক্ষণ কেদে হাতমুখ ধুয়ে বাইরে এলাম। রুমে গিয়ে দেখলাম ও হাতমুখ ধুয়ে আবারও আগের জায়গায় বসে আছে আমাকে দেখে ঠান্ডা গলায় বলল, তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করেন আমি বসায় যাবো আজ আর বেশিক্ষণ সার্ভিস দিতে পারবো না।
এই প্রথম ওর কন্ঠ শুনলাম তবে ভালোবাসার বদলে ঘৃণা এসে পুরো মনকে আছন্ন করে ফেলল। আর দেরী না করে মেতে উঠলাম ঘৃণার লেনদেনে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আর সেটা ঘৃণার লেনদেন মনে হলোনা বরং ঘৃণার আড়ালের ভালোবাসাটা বের হয়ে এল। আর মনে হলো ওর কাছ থেকেও আমি ভালোবাসাটাই পাচ্ছি। আশ্চর্যের হলেও সত্যি ওই প্রথম মেয়ে যার প্রতিটি ছোয়ায় আমার জন্য তীব্র ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছু খুজে পাইনি। এর আগে যত পতিতাদের সাথে রাত কাটিয়েছি তাদের পিছনের গল্পটা কখনো জানার চেষ্টা করিনি বা জানার আগ্রহও ছিলনা। আর তাদের প্রতি ভালোবাসাতো দূর বিন্দুমাত্র করুনাও কখনো হয়নি তাদের থেকেও কখোনো এগুলো আমি পাইনি। কিন্তু আজকের কাহিনী পুরো ভিন্ন। ওকে আমি সাধারণ মেয়ে হিসেবেই ভালোবেসেছি।
ও ও হয়তো সমস্তকিছু ভুলে মনে মনে আমাকে ভালোবেসেছে। আমি যে ভালোবাসার জন্য এতদিন কাঙালের মতো অপেক্ষা করেছি আজ তা আমার হাতেই ধরা দিয়েছে এখন সেটা চলে যেতে দেওয়াটা বোকামি আর আমি এত বোকা নই। ওকে আমি যেতে দেবোনা ওর পিছনের কাহিনীটা আমাকে জানতে হবে। আর সমাজ, তার তোয়াক্কা এত বছরে যখন করিনি সামনেও করবোনা। শুধু এটুকু জানি ঘৃণার লড়াইয়ে আমি ক্লান্ত। এখন এই ঘৃণার আড়ালের ভালোবাসাটুকুই আমার সবথেকে বেশি প্রয়োজন।