আলমারীতে উপরের তাকে বই সাজাচ্ছিলাম,তখন দাদী রুমে এসে বলল, “আমার ফোনে বিউটিক্যাম ইনস্টল করে দে তো।” দাদির কথা শুনে হাত থেকে দুটো বই পড়ে গিয়ে সোজা আমার চোখে এসে পড়ল।কিছুক্ষণ চোখে অন্ধকার দেখছিলাম। চোখ খুলে দেখি দাদি আমার সামনে তার স্মার্টফোন টা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলামবিউটিক্যাম? সেটা আবার কি? দাদি দুপাটি দাত বের করে কিছুক্ষণ হেসে উত্তর দিলো আরে,বিউটিক্যাম চিনোস না? যেইটা দিয়ে ফটো তুললে ছোট শিশুদের মত লাগে।
~তুমি বিউটিক্যাম দিয়ে কি করবা?
~ক্যান?লোকে যা করে, ছবি তুলব।
~তুমি কি নতুন করে ভোটার হচ্ছো নাকি? নরমাল ক্যামেরা দিয়ে ওরাই তুলে দেয়।
দাদি আমার মাথায় টোকা দিয়ে বলল গাধা নতুন আইডি খুলেছি। তোর আসলে আমার যুগে জন্মানো উচিত ছিল। আর আমি এই যুগে যে ক্যান জন্মালাম না.!
~মানে কি দাদি? তুমি আবার ফেসবুক আইডি খুলেছ?
~কি আর করব? তুই যে বললি আমার “নীলপরি আইডি টা নষ্ট। তাই পাশের বাসার ভাবিকে দিয়ে “অবুঝবালিকা”নামে একটা আইডি খুলেছি। এটাতে এখন সাত হাজার ফলোয়ার।
~দাদি, তোমার ছয় ছেলে আর দুই মেয়ে।এরপরেও তুমি যদি অবুঝ বালিকা হও,তবে আমি তো নেই বালিকা।
~তুই আমাকে এত খোটা দিস না তো।আগে
বিউটিক্যাম টা ইনস্টল করে দে। প্রায় দেড় ঘণ্টা জুরাজুরির পর দাদিকে বিউটিক্যাম এপ্সটা ইন্সটল করে দিলাম। বিউটিক্যাম পেয়ে দাদি খুশিমনে চলে যাচ্ছিল। কি মনে করে ফিরে এসে আমাকে একটা ফ্লাইং কিস দিয়ে চলে গেল।
আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। যতদিন যাচ্ছে, দাদি কেমন জানি অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেই তার কাছে আনস্মার্ট তো বটেই, আমার মা এত শিক্ষিতা হয়েও তাকে স্মার্টফোন চালানো শিখাতে পারিনি।সেখানে দাদী চালায় ফেসবুক,ছবি তোলে বিউটিক্যামে। রাতের বেলা একটা গল্প পোস্ট করতে গিয়ে দেখি দাদি নিজেই আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। সাথে একটা টেক্সটও করে রেখেছে “শোন, মাঝে মাঝে আমি তোকে ট্যাগ করে দেব।দেখিস,তোরও ফলোয়ার বাড়বে।” প্রোফাইলটা যথেস্ট সুন্দর করে সাজানো। বায়োতে লেখা “একদিন বয়স শেষ হয়ে যাবে,ভালবাসা ফুরাবে না কোনোদিন।” আইডির বার্থ ডেট হাইড করা। স্টাডিং এট ভিকারুন্নিসা স্কুল এন্ড কলেজ।তেরো মিনিট আগে একটা পোস্ট করেছে “সিঙ্গেল লাইফ ইজ দ্যা বেস্ট লাইফ।কে কে সিঙ্গেল আছো? ”
তাতে সম্ভবত দাদির ফ্রেন্ডলিস্টের চেয়েও অধিক ছেলে ~মেয়ে কমেন্ট করেছে যে তারা সিঙ্গেল। একটা পিচ্চি ছেলে কমেন্ট করেছে.. “তুমি চাইলেই কিন্তু আমরা মিঙ্গেল হতে পারি।” ওর আইডি চেক করে দেখলাম ক্লাস নাইনে পড়ে। মেজাজটা চারশো চল্লিশ পার হয়ে গেল।ফেসবুক অফ করে দাদির রুমে গিয়ে দেখি সে ফোন হাতে মিটিমিটি হাসছে। দাদী,তুমি আর মোবাইল ইউজ করবা না।তুমি যা শুরু করেছ, দুদিন পর তো মানুষ তোমাকে বিয়ে করার জন্য লাইনে দাড়াবে। প্লিজ এইবার থামো। তোর মনে এত হিংসা কেন রে সুহাসিনী?আমার ফ্যান ফলোয়ার তুই মোটেও সহ্য করতে পারিস না। তাকে বুঝাতে গিয়ে উলটা আমিই দোষী হয়ে ফিরে এলাম।
প্রতিদিন সকালে উঠে আমার অভ্যাস ফেসবুকে একটু ডু মারা। ঘুম ঘুম চোখেই লগিন করে হোমপেইজ স্ক্রল করছি। তখন দাদির আইডিতে একটা সুন্দরী মেয়ের ছবিতে চোখ আটকে গেল। মেয়েটা যথেস্ট সুন্দরী। যে কেউ ক্রাশ খাওয়ার মত। ক্যাপশনে লিখা” শুভ রাত্রি গায়েজ। নো এডিট পিকচার।” না জানি দাদি কার ছবি ডাওনলোড করে তাকে ভাইরাল করে দিয়েছে। টেনশনে হাত পা কাঁপছে।সেই মেয়েটা যদি দাদির নামে মামলা করে,তবে কেলেঙ্কারি নিশ্চিত। ছুটে দাদির রুমে গেলাম। সে আরামে নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে।
ওই দাদি, ওঠো। কার ছবি ভাইরাল করেছো তুমি? মানুষের ছবি ডাওনলোড করে ফেইক পরিচয় দিতে লজ্জা করে না?তোমার স্বামী পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে চাকরী করত,আর সেই তুমিই ফেইক পরিচয় দিয়ে বেড়াও? দাদি চোখ ডলতে ডলতে জিজ্ঞেস করল “আমি অন্যের ছবি কেন দিতে যাব? আমার নিজেরই তো গ্যালারীতে কত্ত সুন্দর সুন্দর ছবি।” মানে কি? গতকাল রাতে তুমি তাইলে কোন মেয়ের পিক আপলোড করেছো? আরে, ওটা তো আমিই। গতকাল বিউটিক্যাম দিয়ে তুলেছিলাম।রাতে পাশের বাসার ভাবিকে দিয়ে আরেকটু এডিট করে আপ্লোড করেছি। কেন রে সুহাসিনী? কতগুলা লাইক পড়েছে রে?
দাদিকে কিছু বলতে যাব,তখন গেইটের ওপাশে কিছু মানুষের চিৎকার শুনে জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখি ১০~১২টা ছেলে দারোয়ানের সাথে তর্ক করছে। একজন মোবাইল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করছে “সত্যি বলুন, এই বাসায় এই ছবির মেয়েটা কি সত্যিই থাকে না?” দারোয়ান বারবার মাথা ঝাকিয়ে উত্তর দিচ্ছে, “না রে ভাই। এই বাসায় এইরকম মেয়ে নেই।আমাদের একমাত্র মেয়ে সুহাসিনী,যে একদম বাচ্চা।” ওরা দারোয়ানকে ধাক্কাচ্ছে আর বলছে “তাকেই ডাকুন।আমি নিশ্চিত না হয়ে যাব না।” ভয়ে জানালার পর্দা টেনে দিলাম। দাদির দিকে চেয়ে দেখি সে ভয় ভয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দাদি, ওরা কারা? আর বাসার ঠিকানা জানলো কি করে?
আসলে সুহা,কাল রাতে ওই ফটোটা দেওয়ার পর অনেকেই ইনবক্সে আমার ঠিকানা চেয়েছিল। আর আমি ভাল মনে দিয়ে ফেলেছি। কিন্তু, ওরা এতদূর চলে আসতে পারে,তা তো ভাবি নি!! দাদিকে আর কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে না।বাবার জন্য কেমন মায়া লাগছে। গত বছর প্রচুর টাকা খরচ করে বাবা বাসাটা বাানিয়েছে। ওই মেয়েকে না পেলে নিশ্চয় বাসার উপর হামলা করবে.!” কখন জানি অনুভব করলাম, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। জানালা দিয়ে উকি দিয়ে মনে মনে একটা কথায় আসছে “বিউটিক্যামে দেখিয়া ছবি ফেলো এক নিশ্বাস, রিয়েলি মেয়েটা আরো অধিক সুন্দরী এ তোমার বিশ্বাস।”