সুন্নতে খৎনা

সুন্নতে খৎনা

খৎনা করাতে যাচ্ছি। বাসাটা সামান্য দুরে, আমার এক ফ্রেন্ডের চাচার বাসা। নিয়ে আসতে বলেছিলাম, ছেলে বদমাইশ কিসিমের, আসতে চাচ্ছেনা। তাই আমায় ই যেতে হচ্ছে।

বাসায় পৌঁছে কলিংবেল টিপার পর দরজা যে পিচ্চিটা খুলে দিলো, তারই বোধহয় নুনু কাটা হবে। কারণ সে আমায় এবং আমার ব্যাগ দেখামাত্রই একটা চিৎকার দিয়ে এক দৌঁড়ে গিয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে রইলো। চুপচাপ বসে নেই, মাঝে মাঝে ভেতর থেকে অশ্লীল সব গালি উপহার দিচ্ছিলো আমায় উদ্দেশ্য করে। চাচা বারবার বিব্রত হচ্ছেন, আমি ঠোঁটে হাসি লটকে রেখে বলছি, না ঠিকাছে। সত্য বলতে কি, কিছুই ঠিক নাই। কয়েকটা গালি ডাইরেক্ট গিয়ে শরীরের কোষে কোষে গাঁথছিলো। এতোটুকুন বাচ্চা, এতো বাজে বাজে গালি কার থেকে শিখেছে কে জানে!

আমায় নাস্তা দেয়া হয়েছে, সিঙ্গাড়া- সমুচা। আমি মুখে সিঙ্গাড়া এক টুকরো পুরে তাড়া দিলাম চাচা কে,
— কই চাচা, ছেলেকে আনেন।
চাচা বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আদুরে স্বরে ছেলেকে ডাকলেন,
— অন্তু। বের হয়ে আসো আব্বু। ডাক্তার নেই। চলে গেছেন।
ভেতর থেকে আওয়াজ আসলো,
— তুমি মিথ্যে বলছো না তো?
— না আব্বু। বের হয়ে আসো তুমি।
— বের হয়ে যদি ডাক্তারকে দেখি, খোদার কসম, ডাক্তারের নুনু আমি আস্ত রাখবোনা বলে দিলাম… কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলবো আমি বিষম খেলাম। গলায় সিঙ্গাড়া একটুকরো আটকেছে বোধহয়। ঢকঢক করে পানি খেলাম। কি বলে ছেলে!

ছেলে বের হওয়ামাত্র চাচা জেমস বন্ডের মতো খপ করে দরজার আড়াল থেকে ছেলের দু’হাত ধরে ফেললেন শক্ত করে। তারপর পাশের বাসা থেকে ‘খৎনা’ দেখতে আসা আংকেল দু’টাকে চোখের ইশারায় ডাকলেন। আংকেল দুইটা এসে শক্ত করে ছেলের দুই পা চেপে ধরে কোরবানির গরুর মতো বিছানায় শোয়ায়ে ফেললেন। আমি আৎকে উঠে বললাম,

— আরে কি করছেন? বাচ্চা ছেলে, এমন করছেন কেন? একজনে ধরেন…
চাচা হাত দু’টো আরো শক্ত করে চেপে ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন,
— আপনি ওরে চিনেন না। নাচায়ে ছাড়বে সবাইরে। এর আগেও চার বার নাচায়ে ছাড়ছিলো…
বাচ্চা ভয়ংকর! এর আগেও চারবার নুনু কাটাতে ব্যর্থ হয়েছে, তারমানে আমার এটা পঞ্চম চেষ্টা। আল্লাহ’র নাম নিয়ে ব্যাগ খুলতেই চিৎকার শুনলাম ছেলের,

— ঐ ডাক্তার, ব্যাগ খুলবিনা, কেঁচি যদি বাইর করিস তোর খবর আছে।
চাচা ছেলেকে ধমক দিলেন,

— ছিঃ অন্তু। তুই করে বলেনা। ভয় পেওনা। একটুও ব্যথা লাগবেনা। অল্প একটু সময়ের ব্যাপার। তুমি শুধু চোখ বন্ধ করে থাকো। টুক করে কেটে নিবে…
ছেলে এবার আরো জোরে চিৎকার করলো,

— নাহহহহ। টুক করে কাটবার দরকার নাই। ঐ ডাক্তার, নুনুতে হাত দিবিনা আমার। বাইর হ তুই বাসা থেকে…
আমি ইনজেকশন টা নিয়ে চেপে ধরে রাখা ক্রোধে উন্মত্ত ছেলের দিকে পা টিপে টিপে এগোই। দরজার ওদিক থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনি। ছেলের মা কাঁদছে। কি কান্ড! নিজেকে কসাই মনে হচ্ছে। মা কাঁদছে কেন? ছেলের নুনু কাটতে যাচ্ছি, গলা কাটতে নয়।
চাচা বিব্রত হয়ে বললেন,

— ওর আম্মু… ছেলেরে কোনোদিন ফুলের টোকা ও দেয়নাই… অল্পতেই কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে যায় ইনজেকশন পুশ করার সময় ছেলের ভয়ংকর রাগে লাল ছোট ছোট চক্ষু দুইটার সাথে আমার জাস্ট একবার চোখাচুখি হয়। ঐ একবারেই চোখ দুইটা আমায় আস্ত খেয়ে নেয়। আমি আর তাকাইনা ওদিকে। ছেলে চিৎকার দিয়ে বলে,

— তোরে আমি ছাড়মুনা ডাক্তার। তোর নুনু কেটে টুকরা টুকরা…
চাচা ছেলের কপালে হাত বুলিয়ে বলে,

— এইতো হয়ে গেছে। এখন আর ব্যথা পাবানা। গালাগাল দেয়না ছিঃ অন্তু… এই যে সেলাই দিচ্ছে এখন, ব্যথা পাচ্ছো? ডাক্তার কতো ভালো দেখছো…

— কচুর ভালো। নুনু কেটে ফেলছে, আমি এখন হিসু কেমনে করবো?
আধাঘন্টা পর।

ছেলে কে নতুন লুঙ্গি পরানো হয়েছে। কিছুদিন শুয়ে থাকবে। ছেলে এখনো ডানপাশে কাত হয়ে আমার দিকে গোল গোল চোখ করে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করা অব্যাহত রেখেছে। ছেলের মাথার পাশে মা বসে আছে। মায়ের চোখে জল। মা অশ্রুভরা চোখে শান্তনা দিচ্ছে ছেলেকে,

— আর না বাবু, কান্না করেনা আর। ডাক্তার পঁচা। খুুউব ব্যথা দিছে আমার বাবুরে। ডাক্তার খুউব পঁচা…
ছেলে বললো,

— আম্মু, পঁচা ডাক্টার রে আমার হিসু আসা পর্যন্ত বেঁধে রাখো। আমি যদি হিসু করতে না পারি…

মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। ছেলেরে কোনোদিন ফুলের টোকা ও দেন নি। ছেলের নুনু কেটেছি আমি। মহা অন্যায়! তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লাম সোফা ছেড়ে। ছেলের মা ও কেমন কেমন করে যেন তাকাচ্ছেন আমার দিকে…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত