হঠাৎ করে সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলো পাশে আমার বউ মায়া ষাড়ের মতো ঘুমাচ্ছে। কেউ মারা গেলেও তার ঘুম ভাঙবেনা। ইচ্ছা করছিলো বউকে বলি “ওগো এক কাপ কফি দেওয়া যাবে কী??” শুনে বউ হয়ত ভেঙচি দিয়ে বলতো “পারলে বানিয়ে খাও এই রাত দুপুরে জামাইআদর করার ইচ্ছা নেই মেঘ” থাক বউ ঘুমিয়ে আছে ঘুমাক। বেচারা সারাদিন বাড়ির কাজ করে। এখন রেস্ট না নিলে আবার সকালে কাজ করতে পারবেনা। এমনি সারাদিন কাজ করে বলে আমাকে খুটা দেয় তারউপর এখন কাজ কফি দিতে বললে না জানি কী বাঁধিয়ে বসবে।
কফি টা বানিয়ে রকিং চেয়ারে বসে মোবাইল টিপছি! হঠাৎ ফেবুতে বেশ কিছু গ্রুপে চোখ মেলে দেখি শুধু আমার বউয়ের ছবি মাথাঘুড়ে গেলো, চোখ কোচলে নিলাম, এটা আমার বউ নাকি আমি ভুল দেখছি?? না এটা আমার বউ! মানুষগুলার কাজ নেই। আমার বউকে নিয়ে কত্ত সমালোচনা রে। ক্যাপশন যেন ক্যাপসুলের মতো গিলে খেতে পারলে রাগ মিটতো। পাশে বউ তখনো ঘুমাচ্ছে। ইচ্ছা করছে মায়ার কান টেনে ডেকে তুলে বলি “এসব কী হ্যা??” না রাগ মেটছে না মায়াকে জাগাতে হবে। নিশ্চিত কী যেন আকাম করছে এর খোজ আমাকে নিতেই হবে। মায়া তখনো শুয়ে, কাব্য কে একটা কল দিলাম। শালা মহিষ ১০বার কল না দিলে তুলবেনা জানি। টিপস পেয়েছি ওর গফ কে কল দিয়ে বলি কাব্য কে আমার কাছে কল দিতে।
আমি– হ্যালো ছায়া, কেমন আছো??
ছায়া– জ্বী ভাইয়া জস আর আপনি এখন আরও জস জানি। কারণ অনলাইন জুড়ে ভাবীর ছড়াছড়ি।
— হুম। কাব্য কে বলো আমার সিমে এক্ষুনি কল দিতে।
— ওকে। ৫মিনিট পর কাব্য– কিরে ঘুমাতে দিবি না এত সকালে কী??
— দোস্ত আমি শেষ!
— ক্যান আবার কী হইছে।
— মায়া আর আমার নেই রে দোস্ত সে এখন ভাইরালের হয়ে গেছে।
— মানে কী?? ক্লিয়ার কর….
— আরে এখুনি তুই আমার বাসায় আয়। দোস্ত আমি আর বাঁঁচবো না রে মনে হচ্ছে।
— আরে চুপ কর আমি আসছি।
কাব্য কে মিথ্যা না বললে শালা আসবেনা জানি। এজন্য এসব বললাম। এদিকে মায়া ঘুমাচ্ছে! সকালে না জানি মুখ দেখাবো কিভাবে। মানুষ জন আমাকে কী বলবে?? আমার বউ কে কী বলবে। আবার ভালো করে দেখে নিলাম পোষ্ট টা কী ছিলো।
>> এই সে মহান নারী যিনি বিড়ালের জীবন বাঁচিয়েছেন ট্রাকের হাত থেকে।
>> যুগে যুগে এমন ভালো মানুষ আজও আছে বলে দুনিয়াটা বেঁচে আছে।
>> দেখুন সেই বিপ্লবী নারীর জীবন বাঁচানো ভিডিও সহ।
তার মানে মায়া বিড়াল বাঁচিয়েছে তায় নিয়ে এতো লাফঝাঁপ?? ততক্ষণে কাব্য বাসায় এসে কলিং বেল চাপছে। আমি ওরে জড়াই ধরে “দোস্ত আমি মনেহয় মায়া কে হারাই ফেলেছি রে” কাব্য বলল “আরে থাম… ভাবী কারও সাথে ভেগে গেছে নাকি?? আরে তা কিভাবে হয় ভাবী তেমন মেয়েই নাহ” আমি– আরে ভেগে গেলে শান্তি পেতাম যা করছে আমি সবার সামনে মুখ দেখাতে পারবোনা” কাব্য “তুইই কী বলবি কী হয়েছে?? আর ভাবী এখন কই??” বন্ধুর হাত ধরে ছাদে নিয়ে গেলাম। তারপর সব খুলে বললাম।
কাব্য– দোস্ত বলিস কী?? ভাবী এখন ভাইরাল! ওয়েট আমি মিষ্টি নিয়ে আসি! আর আমার গফ কে নিয়ে আসি! আজকে সেলিব্রেট করবো।
— তুই আমার বাড়ির সিমানাতে আসবি না শালা।
— আহা রাগছিস কেন। ব্যাপার টা একবার বোঝেক ভাবী সেলিব্রেটি হয়ে যাবে রাতারাতি। আর আজ সারাদিন চলবে ভাবীকে নিয়ে মাতামাতি আহা, আহা দোস্ত কাব্য চলে গেলো মিষ্টি নিয়ে আসতে! এদিকে সকালে আমার সিমে বাসা থেকে কল দিচ্ছে।
আম্মা– কিরে বাবা এসব কী শুনি বউমা নাকি ফেইসবুকে ছবি দেয়?? তুই কিছু বলতে পারিস না তোর বউ কে?? এখন লোকের সামনে মুখ দেখাবো কিভাবে?? মানুষ কী বলবে?? পাশের বাসার রমিচের বউ দজ্জাল মহিলা যে আমাকে এখন সকাল-বিকাল খুঁচা দেবে রে বাপ।
আমি– আহা আম্মা থামো তো দেখছি আমি! রাখি। ছোটবোনের কল ভাইয়া আমি আসছো তোমার বাসায় ভাইরাল ভাবীর সাথে একটা পিক তুলবো। আহা আমার কত্তদিনের সখ কোন ভাইরালের সাথে পিক তুলবো। আসছি ভাইয়া টুট টুঁট!!
কাব্য ওর গফ কে এসে রেডি। তখনো আমার বউ ঘুমাচ্ছে। এখন আমার প্রধান কাজ মায়ার মোবাইল লুকিয়ে রাখা যেন ফেবুতে যেতে না পারে। বালিশের তলা থেকে মোবাইল টা নিয়ে ফ্রীজে রেখে দিলাম যেন খুঁজে না পায়।
এবার কাব্যকে রুমে নিয়ে এলাম। ছায়া এসে মায়াকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে চিল্লাপাল্লা “হ্যাপি ভাইরালস ডে ভাবী” বউ আমার ভূত দেখার মতো বলল “ও মা’গো কী হচ্ছে এসব?” কাব্য পার্টিস্প্রে আর বাজি ফুটাচ্ছে। ছায়া মায়ার হাত ধরে মিষ্টি মুখ করালো। তারপর সেল্ফি নিলো গোটা পাঁচেক। কাব্য বলল ক্যাপসন হবে “ঘু ভাঙ্গা সেই মহান নারীর সাথে একদিন” তারপর মায়া ভয় পেয়ে গেলো ওয়াশরুমে আমি কাব্য আর মায়া কে বললাম আজকে যা। অন্যদিন আসিস। আরেকটু থাকলে আমার বউ ব্রেণস্ট্রোক করবে। মায়া তখনো ফ্রেশ হচ্ছে। আমি দেখলাম সেই ছবিতে ১০ মিনিটে ৪হাজার লাইক আর ২৩৫টা কমেন্ট বাপরে বাপ! ভাবা যায়!!
মায়া — আচ্ছা কী হয়েছে বলবা আমাকে??
— তেমন কিছুনা। ওরা সকালে ডেট ওভার গাঞ্জা খেয়েছে এজন্য এমন বলছে। আর শোনো আজ তোমার কোন কাজ নেই। আমিই সব করব তুমি রুম থেকে আজ বের হবেনা। আর কেউ দরজাতে এলে আমি দেখবো তুমি ঘুমাও। তুমি কত্ত কাজ করো বলো। আজ তোমাকে আমি রেস্ট দিলাম।
মায়া– তোমার অফিস??
— আজকে ছুটি নিছি বলেছি তুমি অসুস্থ।
— ওগো চলোনা আজ আমরা শপিং এ যায়। কতদিন যায়না বলো…..
— উরে বাবা এই কথা আর মুখেও আনবা না। যা লাগবে বলো আমি কিনে দিচ্ছি। তুমি রুমে থাকবা।
— ধ্যাত তুমি একটা আনরোমান্টিক। বলেই রুমে গেলো। আমি কিচেনে রান্না বসিয়েছি। কিছুক্ষণ পর মায়ার চিল্লানি,
মায়া– আমার মোবাইল কই মেঘ??
আমি– বাবু ওইটা ঝামেলা করছিলো এজন্য মেকানিকস এর কাছে দিয়েছি। তুমি টিভি দেখো। না না ডিস লাইন তার ছিরে গেছে। তুমি বই পড়ো বাবু।
রান্না শেষ করে যখন খাবার খেতে বসেছি। ফ্রিজ থেকে যখুনি মাংসের বাটিতে পাড়তে গেছি ওমনি মায়া পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল “কি গো মোবাইল কেউ ফ্রিজে রাখে তুমি এতো আনরোমান্টিক কেন??”
আমি হেসে বললাম– জানো দেবো ঠিক করতে মনের ভুলে ফ্রিজে রেখেছি। সত্য কখনওই চাপা থাকেনা। মায়া কিছুক্ষণ পর আমাকে ডাকাডাকি শুরু করে দিলো,
>> ওরে আল্লাহ গো আমি তো ভাইরাল হয়ে গেছি।
>> ওগো কোনে গেলে দেখে যাও আমি আর আমি নেই। আমি এখন সেলিব্রেটি হয়ে গেছি। দেশবিদেশ থেকে এখন সিনেমার অফার আসবে। কোটিকোটি টাকার ব্যাপারস্যাপার গো।
>> শোনো সারা অনলাইন জুড়ে এখন আমাকে নিয়ে নিউজ। আমি আর তোমার ঘর করছিনা । অনেক কষ্ট করছি জীবনে। এবার মনেহয় আমার কপাল খুলে গেলো গো!
>> ওগো আজকেই আমাদের ডিভোর্স দেওয়া দরকার। তুমি একটু পাতি সেলিব্রেটি বলে আমাকে কত কথা শোনাইছো! দ্যাখো আজ আমি কত্ত বড় মাপের সেলিব্রেটি। ওগো আমি ভাইরাল গো ভাইরাল। বউ আমার অতি আনন্দে আনন্দমেলা শুরু করে দিয়েছে। কিছুক্ষনের মাঝে আমার বউ সবার কাছে কল দিতে শুরু করলো। আমাকে বলল,
বউ- আমার এক ক্রাশ ছিলো জীবনে আমাকে পাত্তা দেয়নি। আজ তাকে দেখিয়ে আমি কোটিপতি কে বিয়ে করবো।
আমি– তাহলে আমার কী হবে বউ??
— তোর আবার কী হবে! আর এখন থেকে বউ না মায়া ম্যাডাম ডাকবি। তা নাহলে এক্ষুনি বাপেরবাড়ি চলে যাবো।
— আমার এক বান্ধবি ছিলো আমাকে খুব বলতো আমি ভালো জামাই পাবো নাহ। আজ ওকে দেখিয়ে দেবো আমি কতবড় সেলিব্রেটি।
— ওহ
— জানো আমার কতদিনের সখ সালমান খানের সাথে একটা রোমান্টিক মুভি করব। এবার বুঝি পূরণ হয়েই যাবে সেই আশা।
— সত্যিই??
— ইশ ভাবতেই অবাক লাগছে আমি কত্তবড় সেলিব্রেটি। ওই যাও আমার গোসলের পানি রেডি করো আমি এখন বাইরে যাবো ফ্যানদের সাথে সেল্ফি নিতে।
শালার কোন শালা আমার বউয়ের পিক তুলে ভাইরাল করছিস। একবার পাই তোর গোসলের পিক ভাইরাল করে দেবো। বউকে কত্তবার বলছি “ওগো জান তুমি বোরখা পড়বা যেন কেউ চিনতে না পারে, কে শোনে কার কথা। কথা শুনলে কী আজ এই দুঃখ দেখতে হতো আমাকে??”
গোসল শেষ করে। বউ আমার সাজুগুজু করতে বসেছে, মিনিমাম ১:৪০মিনিট লেগে গেছে শালা তবুও মেকাপ শেষ হয়না। ফকিন্নি এতো সাজা জীবনে সাজেনি। বউ যে বাইরে যাবে আর ফিরবে তো?? সিফাত কাক্কু, হিরো মলম থুক্কু আলম, নাঈম, আর ভাত খাওয়া মাইয়ার মতো রাতারাতি ফেমাস হয়ে গেলো। কী তাজ্জব ব্যাপার।
আগে বউয়ের ফ্লোয়ার ছিলো ২৫৪ জন। আজ দেখি ৭,৯৪৯জন আর দুদিন যাক রিপোর্ট মেরে আই ডি গায়েব করে দেবো।
বউ বের হলো। আর আমিও বের হলাম। আজ একটা কুকুরের জীবন বাঁচাবো তবে যদি এই ইস্যু চাপা করে আমার বউ শান্ত হয়। ক্যামেরা আগেই সেট করে রাখছি! মাগার এমন মারাত্নক সিচুয়েশন আসছেই নাহ।
তাহসান- মিথিলা। সাকিব– অপু। অপূর্ব- প্রভা। এঁদের ডিভোর্সের মূল কারণ দুজন সেলিব্রেটি এক সাথে থাকতে পারেনা। আমার বউ আমাকে পাতি সেলিব্রেটি বলছে এই প্রতিশোধ নেবার জন্য প্রাণপণে একটা কুকুর আর একটা ট্রাক খুঁজছি। দরকার হয় নিজের জীবন দিয়ে দেবো তবুও বউকে ভাইরাল থেকে বাঁচাব।
কমেন্ট বক্সে একটায় নাম “ভাইরাল ভাবী” ওরে বউ আমাকে রেখে চলে যাস না। এই ভাইরাল দুদিনের বেশি থাকেনা। আর আমি সারাজীবন তোর সাথে থাকবো। যাস না রে বউ আমাকে একা রেখে ভাইরাল হস না।