স্বামী নির্যাতন

স্বামী নির্যাতন

অফিস থেকে ফোন করে বউকে বিরিয়ানি রান্না করতে বললাম। বাসায় এসে দেখি বউ বিরিয়ানি ঠিক-ই রান্না করেছে কিন্তু বিরিয়ানির প্লেটে কাগজে লিখে রাখছে…’বিরিয়ানির প্লেটে পুরুষ মানুষের হাত দেওয়া নিষেধ।’ বউয়ের এমন কাজে আহাম্মক হয়ে গেলাম। বললাম….

–হোয়াট দা কাহিনী?
-কিসের কাহিনী?
–প্লেটে কাগজে কি লিখে রাখছো?
-‘বিরিয়ানির প্লেটে পুরুষ মানুষের হাত দেওয়া নিষেধ’
–কিন্তু কেনো?
-কেনো মানে? তুমি হাত দিবানা ঐ প্লেটে।
–আমি কি করলাম?
-কিচ্ছু করোনাই।
–তাহলে?
-তোমার কপালে বিরিয়ানি নাই।
–আরে আজিব আমি কি করলাম?
-ঐ রাগো কেন হু? এত প্যানপ্যান করবানা যাও…রুমে তোমার জন্য আলাদা করে ভাত রাখা আছে খাও।

কিছু বলতে যাব বউ কটমট করে তাকালো। ঘুরান্টি দিয়ে রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে আরো অবাক হয়ে গেলাম। দেখি মেয়ে বিছানার উপর বসে বসে বিরিয়ানি খাচ্ছে। আবার মাঝেমাঝে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিরিয়ানি পুরো বিছানায় ছিটিয়ে দিচ্ছে। মনে মনে বললাম মেয়ে কি পাগল হলো নাকি? নাহ মেয়ে কেনো পাগল হবে। বললাম….

–মামুনি কি করছো?
-বিরিয়ানি খাচ্ছি আর ছিটাচ্ছি।
–কেনো?
-আম্মু বলছে বিরিয়ানি ছিটাতে।
–কেনো?
-আম্মু জানে…
–আরে তোমার আম্মুতো একটা কুটনি।
-তাইলে তুমি কুটনির জামাই

লও ঠ্যালা…মেয়ে দেখি মায়ের মতই হয়েছে। বুঝছি এদের সাথে কথায় পারা যাবেনা। বউয়ের কাছে গেলাম দেখি গপাগপ বিরিয়ানি খাচ্ছে। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে আরো বেশি খাচ্ছে। মনে মনে বললাম হারামজাদি ঠাডা পরবে জামাইকে রেখে বিরিয়ানি খেলে। বউ বলল….

–কি সমস্যা এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
-আমাকে অনুগ্রহ করে বিরিয়ানি দেওয়া যাবে কি?
–সরি স্যার, অফারটি পুরুষদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
-কিউ?
–এত কৈফিয়ত দিতে পারবনা।
-টুম্পা কেনো বিছানায় বিরিয়ানি খাচ্ছে আর ছিটাচ্ছে?
–আমি শিখিয়েছি।
-তোমার মতন কুটনি বানাতে চাও মেয়েকে?
–কিইইইই আমি কুটনি?
-সরি মিস্টেক।
–সরির গুষ্ঠি খিলাই, আজকে বিরিয়ানিতো দুরের কথা ভাত নাই তোর।
-সরি বউ, কানে ধরলাম।
–লাভ হবেনা।

বউকে অনেক বুঝালাম। কোন কাজ হলোনা। ইমোশনাল কথা বলে বিভিন্ন ভাবে ব্লাকমেইল করলাম। উল্টা হাসতে হাসতে গরাগরি খায়। মনডায় চায় পানিতে চুবাই। কি আর করার রুমে এসে বসে পরলাম। ভাবতে লাগলাম বউ এত রাগলো কেন। কিছুই বুজলাম না। বউ দেখি রুমে চলে আসলো। সাথে এক প্লেট বিরিয়ানি। বলল…..

-এগুলো খাও…
–মন থেকে বলছো?
-হুমম খাও…
–ঘুমের ঔষধ মেশানো নাতো আবার?
-তুই খাবি নাকি ফেলে দিব।
–আচ্ছা দাও খাচ্ছি।

বিরিয়ানি সব খেয়ে ফেললাম। ১০/১২ প্লেট বিরিয়ানি না খেলে কি আর পেট ভরে। তবুও আমি সন্তুষ্ট এই ভেবে যে বিরিয়ানি পেলাম। কিন্তু হুট করে বউ আমার এমন ভালো হবেনা। ডালমে কুচ কালা হে…বউ আমার হাতে মোবাইল দিয়ে বলল….

–এই মেয়েটা কে?
-কোন মেয়েটা?
–মোবাইলে তাকা..কমেন্টে যে মেয়েটা তোকে জানু বলেছে আর তুই বেবি বলে রিপ্লে করছিস।
-ও তুমি ফারিয়ার কথা বলছো? ওতো আমার ফ্রেন্ড। মজা করছে।
–তুই কেন করলি…? যাইহোক এই মেয়েটা আবার কে? যার পোস্টে কমেন্ট করেছিস আমি চিরকাল তোমারই রবো।
-আরে মেয়েটা আমার পাঠক। ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেছে। তাই মন ভালো করার জন্য একটু বলছি।
–হুম বুঝলাম, কিন্তু আনিকা নামের মেয়ের প্রোফাইল পিকে যে কমেন্ট করছোস ‘বাহহহ আপনি অনেক কিউট, আমার বউ যদি আপনার মতন কিউট হতো।’
-এ মনা বিশ্বাস কর এটা মজা করে বলছি।
–হুমম আচ্ছা, তাহলে আজকে অফিসের মেয়ে কলিগের সাথে যে কফি খেলে আমাকে কেন বললি না।
-এটাও বলতে হবে?
–আচ্ছা বলতে হবেনা।

বউ রেগে আগুন। অনেক বুঝালাম বিনিময়ে খুন্তির বারি খেলাম। বউ রুমে ব্যাগ গুছাচ্ছে। উদ্দেশ্য বাপের বাড়ি। আমি কিছু বলতেও পারছিনা ভয়ে। বললাম….

-সরি আর ভুল হবেনা।
–চুপ কর হারামি, আমার সাথে কথা বলবিনা।
-আম্মুর সাথে কথা বইলোনা আব্বু। (মেয়ে)
–কিউ?
-কুপাবে হুউউউ….(মেয়ে)

আমি আহাম্মক। এমন মেয়ে আমার তাও মায়ের পক্ষে। অনেক বুঝানোর পর বউকে কোন রকম আটকালাম। শর্ত বাসার সব কাপড় আমাকে ধুতে হবে। নাহলে বুঝতেই পারছেন। কি আর করার এখন আমি সব কাপড় নিয়ে ধুতে যাচ্ছি। এদিকে মা মেয়ে টিভিতে কার্টুক দেখছে আর হাসছে। কাপড় ধুচ্ছি পাশের রুম থেকে মেয়ে বলল….

–আব্বু আলসেমি করোনা নইলে নানু বাসায় যাব।

আমি কাপড় ধোয়া বাদ দিয়ে বালতির পানিতে বসে পরলাম। নিজের গরম মেজাজ ঠান্ডা করার চেষ্টা করছি। ঠাণ্ডা হলে আবার কাপড় ধোয়ায় মনোযোগ দিতে হবে। জয় বউ বেডির জয়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত