২০ জন নাতি

২০ জন নাতি

রাত ৩ টায় অতিথি কে দেখলাম ঘুম থেকে উঠে নাতিদের কে খাওয়াতে লাগল। ১০ টা নাতি কান্না করছে। নাতি নয়তো এগুলা অতিথির সোনার টুকরা। আমাদের মোট ২০ জন নাতি আছে। নাতিদের নাম হলো মুরগি, হাঁস’ ছাগল, ভেঁড়া, পাখি, খরগোশ। আমাদের কোনো ছেলে মেয়ে নাই। তাই অতিথি ১০ বছর ধরে এগুলোকে নিজের নাতি মনে করে। ১০ বছরে ৩০ টা বাসা চেঞ্জ করলাম। ঢাকা শহর বাসা পাওয়া খুব কষ্ট। অতিথিকে বললাম “ঘুমাও না কেন?”

অতিথি মুরগির বাচ্চা কে কোলে তুলে বলে “কি যে বল না। আমার নাতি টা ঘুম থেকে উঠে কান্না করে। ঘুমাব কিভাবে? তুমি তো নানা হয়েও কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারলে না। সারাদিন শুধু অফিস আর অফিস। এই দেখো আমার নাতি টা আমার কোলে কিভাবে ঘুমিয়ে আছে।”

অতিথি কে নিয়ে আমি পারি না। মেয়ে টা এসব নিয়ে সারাদিন – রাত শুধু ভাবে। আমাকে নিয়ে ভাবার সময় নাই।
সকালে নাস্তা করে অফিসে যাব। অতিথি একটা ছাগলের বাচ্চা এনে বলে “আমার নাতি কে সাথে নেও। স্কুলে দিয়ে যাবে।” মানে মাঠে দিয়ে যাব।

আমি অভিনয়ের কান্না কান্না চোখ নিয়ে বললাম “আমাকে মেরে পেলো। তবুও এসব নিয়ে বাহিরে বের হতে পারব না।”
অতিথি ছাগল কে বলে “দেখছত। তোর নানা কত ফাজিল। একটা হাদারাম কোথাকার। তোদের কে একটুও মায়া করে না।”
এরপর অতিথি পনপন করে চলে যেতে লাগল। আমরা পাঁচ তলার উপর থাকি।

একজন ভাবি মুচকি মুচকি হেসে বললেন “কি তামিম ভাই নাতিদের নিয়ে খুব ভালো আছেন তো? নাতি টা দেখলাম খুব সুন্দর। সাদা। আমার পছন্দ হয়েছে। আমার মেয়ের জন্য কিনে নিব। দিবেন তো?”

আমি লজ্জা লজ্জা হাসি নিয়ে বললাম “ভাবি লজ্জা দিয়েন নাতো। মেয়েটা কেন যে এসব কে নাতি বলে বুঝতে পারি না।”
“দূর মিয়া নাতি গুলা কত সুন্দর।”

আমি আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকি নি। তাকলেই কত রকমের কথা শুনতে হবে আমাকে।
অফিসের বস এসে বললেন “তামিম তোমার নাতি গুলা কেমন আছে?”
সব কলিগ হাসতে তাকলেন। আমি মিনমিন করে বললাম “ভালো আছে।”
পাশের একজন মেয়ে কলিগ বলল “ছাগল কিন্তু খুব সুন্দর। আমাকে দিবেন? দেখতেই মায়ায় পড়ে গেলাম। দিবেন?”
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে তাকলাম। কলিগরা বলল ” আপনারও বউ না। হাহাহাহা।”

অফিস করে বাসায় আসতে যাব এমন সময় অতিথি বলল “আমার নাতিদের জন্য খাবার নিয়ে এসো।”
এরপর কল টা কেটে দিল। আমি কান্না করার সুযোগ টা পাই নি।

কি করব কাঁঠাল পাতা আনতে চলে গেলাম। একদিন কাঁঠাল পাতা বাসায় নিয়ে যাই নি। আমাকে রাতে দরজার বাহিরে ঘুমাতে হয়ে ছিল।

এখন দেখলাম দোকানদার মামা দোকান লাগিয়ে চলে গেছেন। কল দিলাম। উনি খাওয়াদাওয়া করে আসবেন। আমি বসে বসে মশার কামড় খেতে লাগলাম। মশা নয়তো একেক টা দজ্জাল মশা।

দোকানদার মামা আসলেন তারপর কাঁঠাল পাতা ব্যাগে ভরে বাসায় নিয়ে আসলাম। আবির ভাই বলেন ” কি রে তামিম ব্যাগের ভিতর কি আছে? ”

আমি দাঁড়িয়ে খুব সুন্দর করে বললাম ” আমার নাতিদের খাবার। ”

আবির ভাই নতুন বিয়ে করেছেন। বউ আমাকে চিনে না। বউ বড় করে হাসি দিল। ”
হাসতে হাসতে বলল ” লোক টা কি পাগল। ছাগল আবার নাতি হয় কিভাবে? ”

আবির ভাই বউ কে থমক দিয়ে সাথে করে নিয়ে চলে গেলেন। অতিথি কোনো দিন মা হতে পারবে না। সবাই বলছে আমি আরেক টা বিয়ে করি কিন্তু অতিথি আমার দিকে কান্না করে বলেছিল ” আমাকে তালাক দিয়ে দিবেন? ”

বাচ্চা ছেলে মেয়েদের মতো দুই হাত চোখে নিয়ে কান্না করতে তাকল। সেদিন অতিথি কে বলেছিলাম আমার বাচ্চার দরকার নেই। অতিথি খুব খুশি হয়েছিল।

বাসার ভিতর আসতেই অতিথি বলল ” আরেক টা কাজ করো না। তোমার খরগোশ নাতি টা কে পাশের বাসার আলু ভাবির কাছ থেকে নিয়ে আসো।”

আমি রাগে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে কিছু বলতে পারলাম না। ভাবি বললেন ” খরগোশ তোমার নানা এসেছেন। তোমার নানার কোলে যাও।”

বাসার সবাই হাসতে লাগলেন।
ভাবি অনেক গোল তাই অতিথি আলু বলে।

অতিথি আজ শপিং করতে যাবে। সাথে পাখি টা কে নিল। আমি তো লজ্জায় কিছু বলতে পারলাম না। এসব কেন? ধ্যাত ভালো লাগে না।

আমি অতিথি কে বললাম “এসব সাথে করে না নিলে হয় না। অতিথি রাগি চোখ নিয়ে বলল “তোমাকে সাথে করে নিব না।”
আমি হাত দিয়ে বললাম “না না না। ঠিক আছে। সাথে করে নেও। সব গুলারে নেও।”
মার্কেটের ভিতর ঢুকলাম। টিয়ে পাখি বলল ” নানু এটার মধ্যে ঢুকবে না। এইটা গতবার আমাদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা বেশি নিয়ে ছিল।”

আমি রাগের মাথায় বললাম “এ তুই চুপ করবি। এমনিতেই শালা রাগে মেজাজ টা গরম হয়ে আছে। ”
টিয়া পাখি উড়াল দিয়ে অতিথির কাছে গিয়ে বলল ” নানু নানা মারতে আসছেন।”

অতিথি আমার দিকে ব্রু চোখে তাকিয়ে বলল “কাজের বেলায় ঢেঁড়স। এখন পাকনামি করো। নাতি তো ঠিকি বলেছে। এখন এক কাজ করো পাশের মার্কেটে যাই চলো”

“আমি কি আর বলব? তোমরা তো ডিসিশন নিয়ে ঐ নিলে। আমাকে আবার প্রশ্ন করো কেন?”
এই কথা টা বলতে না বলতেই টিয়া পাখি বলল ” নানা অভিমান করেছে?”
আমি মারতে টিয়া পাখির কাছে গেলাম।
অতিথি হাত দিয়ে আমাকে সরিয়ে দিল।

মুরগির আজ আবার কি হলো? মনে হয় ডিম পারবে। ইশ! নাতি মনে হয় আর বেশি বৃদ্ধি পাবে। তাই রাতে উঠে উঠে একটা একটা করে ডিম চুরি করে খেয়ে ফেলি । অতিথি বুঝতে পারে না। একদিন রাতে উঠলাম ডিম চুরি করার জন্য কিন্তু ভেঁড়া টা চিৎকার দিয়ে উঠল। অতিথি এসে দেখে আমি ডিম খাই। ভ্যাএএএএএ করে কান্না করে দিল। আমার নাতির ডিম খেয়ে ফেলছ।
তোমাকে আজ বাসা থেকে বের করে দিব। আমি মশকারি করে বললাম ” ডিমের ভিতর বাচ্চা আছে নি আমি পরীক্ষা করলাম। মেয়েটা রাগ করে আছে। মেয়েটা তিন দিন কথা বলে নি। মহা ঝামেলায় পড়লাম।

পাঁচ টা মুরগির বাচ্চা এনে বললাম ” নেও। বাচ্চা নাতি কিনে আনলাম।
অতিথি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বাচ্চা গুলা কোলে তুলে চুমাতে লাগল।
ছিঃ ছিঃ কি বিশ্রী গন্ধ। আমি তো বুমি করে দিলাম।

দুপুরবেলা বাসায় আসলাম। বাসার ভিতর কান্না। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। বাসায় কলিংবেল কয়েকবার দিলাম। কিন্তু কেউ দরজা টা খুলে নি। একটু পর দেখলাম অতিথি কান্না করে করে দরজা টা খুলল। আমি বললাম ” কি হয়েছে কান্না করো কেন?”

অতিথি বলল “ও আমার স্বামী গো আমার সর্বনাশ হয়ে গেল গো। আমার পাচঁ টা নাতি মারা গেছে গো। এখন আমি কারে নাতি কইয়া ডাকমু গো। আমার ইতা কিতা সর্বনাশ হইল গো। “আমি তো পাগল হয়ে যাব। মুরগির বাচ্চার জন্য মানুষ এতো কান্না করে। আমি তো অতিথির কান্না দেখে দেখে আমিও কান্না করলাম।

অতিথি দুই বেলা ভাত খায় নি। ঘুমিয়ে আছে। আমি বললাম “ভাত খাও।”
“না। আমি ভাত খাব না। আমার গলা দিয়ে ভাত ঢুকবে না। আমার নাতি গুলা রে তো আমি দেখি না। আবার কান্না করতে তাকল।”

মন টায় কয় কিতা করতাম। তবুও চুপ থাকি। খরগোশ টা অতিথির কাছে এসে কোলে বসে তাকল। আমি তো রাগে ফুঁসতে তাকলাম। শালার এসবের জন্য আমার বউ টা আমাকে একটুও মায়া করে না। সব কিছু বিক্রি করে দিব। মনে মনে ভাবতে লাগলাম। যেই ভাবলাম সেই কাজ করলাম। রাতে সব কিছু চুরি করার জন্য ঢুকলাম। কিন্তু শালার টিয়া পাখি বলে “বাসায় চুর ঢুকেছে নানি চুর ঢুকেছে। “অতিথি এক লাফ দিয়ে খাট থেকে উঠে গিয়ে দেখে আমি দাঁড়িয়ে আছি। অতিথি আমাকে মারতে শুরু করল। আমি বললাম “আমি চুর না আমি তামিম তোমার স্বামী।”

কিন্তু অতিথি বলে “তোমাকে আমি ভাবছ চিনতে পারি নি। তোমাকে আমি চিনতে পারছি তাই তোমাকে মারতে শুরু করলাম। টিয়া পাখি বলে বেশি করে মারো।”

অফিসে অফিস করছি অতিথি কল দিয়ে বলে তাড়াতাড়ি বাসায় আসো। আমার নাতি বাচ্চা দিবে। আমি বড় মা হবো তুমি বড় বাবা হবে। আমি রাগে বললাম ” আসতে পারব না।”

সাথে সাথে মুখের উপর বলে দেয় ” তোমার জন্য বাসার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। যা বলছি তা করো ডাক্তার নিয়ে বাসায় আসো।”
কি আর করব অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। ডাক্তার নিয়ে বাসায় যেতেই অতিথি বলল ” ডাক্তার সাব আমি নাতি টা কষ্ট পাচ্ছে তাড়াতাড়ি বাচ্চা বের করেন।”

ডাক্তার সাব আমার মুখের দিকে চেয়ে বড় হাসি দেন। আমাকে মিনমিন করে বললেন ” এটা আপনার বউ হয়? ”
আমি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললাম “হ্যাঁ।”

ডাক্তার সাব আমার দিকে চেয়ে বলেন “ছাগলের বাচ্চা কোনদিন কি নাতি হয়?”
আমি ডাক্তার সাব কে বললাম “খবরদার। এ কথা টা যেন অতিথি না শুনে। নইলে আপনাকে বিশ টা গালি দিবে? ”
ডাক্তার সাব ভয় পেয়ে বললেন “বিশ টা গালি কেন দিবে একটা দিলেই ওত হয়।”
আমি হেসে হেসে বললাম ” আমাদের প্রথম বিশ টা নাতি ছিল তাই।”
অতিথি আমাদের কাছে এসে বলে মিনমিন করে তোমরা কি বলো দু’জন?”

আমি বললাম ” কিছু না। অপারেশন করাতে হবে। তুমি বাসা থেকে যাও। “। অতিথি বাসা থেকে বের হয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে তাকল। এক সময় বাচ্চা বের হলো একদম সাদা। অতিথি কে ডাক দিতেই অতিথি এসে কোলে তুলে বলে ” আমার দাদু ভাই হয়েছে। ডাক্তার সাব শুধু হাসতে তাকলেন।

অতিথি মাটিতে পড়ে আছে । আমি তো পুরাই ধাক্কা খেলাম। আমি কান্না কান্না চোখ নিয়ে অতিথি কে ডাক দিলাম। অতিথি শুনে নি। ডাক্তার আনলাম। ডাক্তার পরীক্ষা করে বলে ” মিষ্টি খান। আপনি বাবা হতে চলেছেন।”
অতিথি সুস্থ হয়ে লজ্জায় মাথা তুলে নি। আমি অতিথির কপালে চুমু দিলাম।

টিয়া পাখি ফ্ল্যাটের সকল কে বলতে লাগল। নানুর বাচ্চা হবে বাচ্চা হবে। ফ্ল্যাটের সকল এসে অতিথির কাছে বসে তাকলেন। আমি আজ টিয়া পাখি কে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। আমি আজ থেকে সব নাতিদের দেখাশুনা করব। অতিথি কে বিশরাম দিলাম। ইশ! ভেঁড়া টা কান্না করে খাওয়ার জন্য। কিছু কাঁঠাল পাতা দিলাম। ইশ! মনের মধ্যে অনেক ইচ্ছা হয়। মুরগির ডিম গুলো খেয়ে ফেলতে। সাহস করতে পারি না টিয়া পাখির জন্য। টিয়া পাখি একটা হারামি। সব কিছু অতিথির কাছে বলে দেয়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত