১ মাস হয়েছে আমাদের বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া পরিবার এসেছে৷ এর মধ্যেই সেই পরিবারের বড় মেয়ে নিশির সাথে আমার দারুণ রোমাঞ্চকর প্রেম চলছে! আম্মাজান আমার প্রেমের ব্যাপারটা বোধহয় জেনে গেছে! তাকে প্রায় সময় দেখি নিশির আম্মুর সাথে গল্প করতে! হয়তো আমার প্রশংসা করে আন্টির কাছে ৷ তার মেয়ের হবু জামাই হতে যাচ্ছি, এজন্য আমার আম্মাজান তার হবু বেয়াইনের নিকট ছেলের প্রশংসা বাণী শুনিয়ে দিচ্ছে ৷ যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিশিকে আমার হাতে তুলে দেয় ! আমি বেজায় খুশি আম্মুর এমন মহৎ কাজ দেখে! এতদিন আম্মাজান শুধু আমার পড়া নিয়ে টেনশন করতো ৷ এখন সেটা বন্ধ ৷ সে তার ছেলের মনের মানুষকে আপন করে পাবার কাজে হেল্প করে যাচ্ছে!
সন্ধ্যায় গেছি ছাদে! নিশির সাথে কথা বলছিলাম তার ফর্সা নরম হাতটা ধরে! আম্মাজান যে চিলেকোঠার পাশে লুকিয়ে আমাদের প্রেমালাপ দেখছিল সেটা খেয়ালই করিনি! আম্মুকে যখন দেখলাম তখন সে অপ্রস্তুত হয়ে কাশি দিয়ে লাজুক কন্ঠে বলল,
___সোহান, নিশির সাথে একটু দরকার ছিল, তুই যা তো!
আমি বিরক্ত হলাম ৷ মনে মনে বললাম, “আম্মা একটু পর আসতে পারলে না, দিলে তো মজাটা নষ্ট করে!”
উচ্চস্বরে আম্মুকে বললাম,
__কি দরকার আম্মা?
__তোকে যেতে বলছি যা!
আমি ছাদ থেকে চলে যাবার জন্য পা বাড়ালাম ৷ পরে ভাবলাম দেখি নিশিকে আম্মা কি কথা বলে? এজন্য চিলেকোঠার পাশে লুকিয়ে থেকে দুজনের কথা শুনতে লাগলাম ৷ কিন্তু দেখলাম আম্মু নিশির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ধীর শব্দে কি যেন বলছিল? এরপর নিশিকে সাথে নিয়ে ছাদ থেকে চলে যাবার জন্য পা বাড়ালো ৷ আমি দ্রুত চিলেকোঠা থেকে প্রস্থান নিয়ে নিজের রুমে গেলাম! রাত ৯টার দিকে নিশি আমাকে ফোন দিলো ৷ সে ক্ষ্যাপা বাঘিনীর মত হিংস্র কন্ঠ বানিয়ে বলতে লাগল,
___তোমাকে আমি বিয়ে করতে পারবনা ৷ বিয়ে করলে তোমার আম্মা তার মাথার উঁকুন খুঁজতে বলবেন!
আমি হকচকিয়ে উঠলাম তার কথা শুনে ৷ অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চুপ রইলাম ৷ এরপর প্রচুর হাসি আসতে লাগল ৷ হাসিটা পেটে চেপে নিশিকে চাপা কন্ঠে বললাম,
___কি বলছো? আম্মু কি তোমাকে দিয়ে উঁকুন মেরেছে? নিশি আরো উচ্চস্বরে ক্ষিপ্ত আওয়াজে বলল,
___উঁকুন মারতে তার মাথা সার্চ করেছি হারিকেন দিয়ে কিন্তু একটাও পাইনি ৷ উনি ঘন্টাখানেক সময় আমাকে দিয়ে মাথার উঁকুন খুঁজে নিয়েছে ৷ আমি বারবার বলি পরিষ্কার মাথা ৷ আর উনি বলেন ভাল করে খুঁজে দেখ! এবার তুমি বলো এমন শ্বাশুরি কপালে জুটলে আমার কি অবস্থা হবে? নিশির কথায় মনে হলো বেচারি প্রচন্ড রকমের অলস ৷ না হলে এমনটা তো বলতো না! আমি তাকে নরম আওয়াজে বললাম,
__আরে ভেবোনা, আম্মা বিয়ের পর এমন কিছু করবেনা!
পরেরদিন দেখি আম্মুর সাথে রান্না করায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নিশি ৷ কিছুক্ষণ আম্মু রান্না করার পর তার রুমে চলে গেল ৷ আর নিশি রান্না করতেই লাগল ৷ রান্না শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কিচেন রুমে একা একা রান্না করতে হলো!
এটার জন্যও নিশি আমাকে নানান কথা শুনালো ৷ তবে আমিও বললাম রান্নার কাজটা বিয়ের পর করতে হবে, এতে বিরক্ত হলে চলবেনা! এর সাতদিন পর নিশি আম্মুর পা টিপে দিচ্ছিল ৷ ভাবলাম, “আম্মাজান পরীক্ষা করে দেখছে যে ছেলের বউ হিসেবে নিশি কতটা পারফেক্ট?”
এক মাস পর আম্মাজান আমাকে নানা বাড়িতে পাঠালো দরকারি কাজে! সাতটা দিন থাকতে হলো ৷ অজোপাড়া গ্রাম জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি নানা রা! এজন্য ফোনে যতটুকু চার্জ বাসা থেকে দিয়ে আনছিলাম সেটুকু চার্জ দুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে গেল! নানা বাড়িতে এসে ফেসে গেলাম ৷ নানার সব দরকারী কাজগুলো করতে হলো ৷ ওদিকে নিশির সাথে যোগাযোগ বন্ধ!
বাসায় ফিরে খবর পাই কালই নিশির বিয়ে! এই খবরটা পেয়ে নিজেকে জীবন্ত লাশ মনে হলো! কষ্টে বাচ্চা ছেলেদের মত করে কাঁদতে হলো ৷ কান্না আরো বেড়ে গেল যখন শুনলাম নিশির বিয়ের ঘটক আমার আম্মা! মনে মনে আম্মাকে বললাম, “এটা করতে পারলে তুমি, মা?” বুঝতে পারলাম যে এতদিন আম্মা নিশির মায়ের সাথে আলাপ করেছিল নিশির বিয়ে দেওয়া নিয়ে! এটার জন্য আম্মার উপর খুব রাগ হলো! কিন্তু নিরুপায় আমি ৷ মায়ের উপর কথা বললেই মারা পড়তে হবে আমাকে! তাই চুপ রইলাম! রাতে শুধু আম্মুকে বললাম,
___নিশিকে দিয়ে পা টিপে নিতা, কাপড় কেচে নিতা, রান্না করে নিতা, উঁকুন পরিষ্কার করিয়ে নিতা ৷ সেই মেয়েকে নিজের ছেলের বউ না করে অন্যজনের হাতে তুলে দিলা এটা কি ঠিক হলো? নিশির সাথে অবিচার করা হলো না, বলো? আম্মা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
__মেয়েটা কতবড় ছ্যাচড়ার ছ্যাচড়া! তাকে দিয়ে এত এত কাজ করিয়ে নিই তবুও সে হাসি মুখে কাজ শেষ করে বলে আম্মা আরো দরকার পড়লে বলবেন ৷ আরে, আমি তো কাজগুলো করতে বলতাম যাতে কাজ থেকে বাঁচতে তোকে ভুলে যায় ৷ কিন্তু অবাক করা ব্যাপার সে নাছোরবান্দী! তার মনে সত্যিকারের প্রেম জেগেছে ৷ সোহানকেই তার লাগবে! তাই আমার সব কিছু মেনে নিয়ে হাসি মুখে সব কাজ করে দেয়! কিন্তু আমি কি ফকিন্নি ঘরের মেয়ে যে নিজের ছেলেকে ভাড়ায় থাকা পরিবারের মেয়ের হাতে তুলে দিব? কখনো না ৷ তোর মাস্টার্সটা শেষ হলেই শিল্পপতির মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিব!
আম্মার কথা শুনে পাখির মত এদিক সেদিক পাখা নাড়িয়ে অনন্ত আকাশ জুড়ে উড়ছিলাম! কথা শুনতে শুনতে মাথা ঘুরে ঠাস খেয়ে আকাশ থেকে পড়লাম ৷ আর ভাবলাম, “এত চালাকি আম্মাজানের ভেতর? অথচ আমি কিছুই জানিনা?” নিশ্চয় সে গ্রামে এজন্যই আমাকে পাঠিয়েছিল ৷ যে কাজের জন্য গেছিলাম সেগুলো না করে নানার জমি চাষে সহযোগিতা করতে হয়েছিল ৷ ইশ কি কষ্ট করেছিলাম!
এদিকে রাতেই নিশির সাথে দেখা করতে তাকে ছাদে ডাকলাম ৷ সে ছাদে এসে বেশি কিছু করলোনা ৷ শুধু দু গালে দুটা কষে থাপ্পর দিয়ে থমথমে পায়ে কোমড় দুলিয়ে ছাদ থেকে চলে গেল! আমি গালে হাত দিয়ে শুধু হাহাকার কন্ঠে বিড়বিড় করে বললাম, “আমার প্রেমটাকে নরকে পাঠিয়ে দিল কে? মোর জননী, মোর জননী, মোর অপরাধী জননী!”
পরের দিন রাত্রে আমাদের বাসার নিচে নিশির বিয়ের জন্য ডেকোরেশন করা সামিয়ানার নিচ দিয়ে দেবদাসের মত এক আকাশ কষ্ট বুকে নিয়ে হাঁটছিলাম ৷ বরপক্ষ চলে আসছে ৷ বর টোপর মাথায় দিয়ে সাজানো গুছানো আসনে বসে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিল আর মাধেমধ্যে টোপরটা মাথা থেকে খুলছিল! আর আমি ভাবছিলাম, “এরকম টাকওয়ালার সাথে নিশির বিয়ে হবে? আম্মু শেষপর্যন্ত এমন একজনের হাতে আমার প্রেমিকাকে তুলে দিলো? কি দূঃখ কি দুঃখ!”
রাত তখন ১০টা! নিশিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা! হঠাৎ নিশি আমাকে ফোন দিয়ে বলে, “তোমার বাসার ছাদে চলে আসো!” গেলাম! গিয়ে দেখি তার পাশে তিনটা মেয়ে আর একজন টুপিওয়ালা দাঁড়িওয়ালা লোক দাঁড়িয়ে আছেন ৷ আমি তার নিকট গেলাম ৷ দাঁড়িওয়ালা লোকটি বসে পড়লেন ৷ আমাদেরও বসতে বললেন ৷ এরপর উনি সুন্দর করে খুতবা ও দোয়া পাঠ করলেন ৷ তারপর বিয়ে পড়াতে লাগলেন ৷ এবং নিশিকে বললেন,
___বলো মা, কবুল? নিশি মিষ্টি হেসে সহজেই বলে দিল
___কবুল!
এভাবে তিনবার বলল সে! তারপর আমিও কবুল বলে দিলাম! তখনই আমার আম্মা ছাদে এসে হাজির! আম্মাকে দেখে নিশি আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে উচ্চস্বরে বলল,
___বাবু, আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরো তো! আম্মা আমাদের দিকে সাপের মত করে তাকিয়ে হিংস্র বাঘিনীর রুপ নিয়ে ক্ষ্যাপা স্বরে নিশিকে বলল,
___ফাজিল মেয়ে, আমার ছেলেকে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করলি ই ? তোর বাবা মায়ের মুখে চুনকালী মেখে? নিশি মিটমিট করে হেসে বলল,
__কি করব বলুন আম্মা?
আপনার মত মহিলাকে শ্বাশুরি হিসেবে পাব এই লোভ শামলাতে পারিনি! আপনাকে ভুলতে পারছিলাম না! আপনার ভালবাসা পেতে আপনার ছেলেকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতেই হলো ৷ আর আমার ছোট বোনটা বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল তাই ওরেই পাত্রীর আসনে বসিয়ে আসলাম! সত্যি বলতে কি পাত্র আমাকে পছন্দ করলেও , আমার ছোট বোনকে আলাদা ভাবে দেখিয়ে এবং বোনটার কন্টাক্ট নাম্বার ওনাকে দিয়ে ওর প্রতি আকর্ষণ তৈরি করিয়ে দিই!
পাত্র নম্র ভদ্র ও বড়লোক হওয়ায় ছোট বোন রাজি হয়ে যায় ৷ আর পাত্রও শেষপর্যন্ত আমার বোনকে পছন্দ করে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় ৷ বিয়ের ৪দিন আগে আম্মু ও আব্বুর সাথে তারা সেটা নিয়ে কথা বলে ৷ এবং আমার সাথে বিয়ে ঠিকঠাক করার বদলে ছোট বোনের সাথেই বিয়েটা পাকাপাকি করে ৷ আপনাকে কিছু জানাতে আমিই নিষেধ করেছিলাম ৷ কেউ বলেওনি আপনাকে এই ব্যাপারে, তাই জানতেও পারেননি! আমার বুদ্ধিটা কেমন আম্মা? নিশির কথা শুনে আম্মা বেহুশ! ওদিকে কাজী সাহেব আম্মার বেহুশ মার্কা চেহারার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “সত্যিই, চিল্লাফাল্লা করে মার্কেট পাওন যায়না!”