সবেমাত্র খুন করে বাসায় ফিরলাম।
এটা আমার ক্যারিয়ারের ১১ নাম্বার খুন। যাকে খুন করেছি সে আমার ভালোবাসা।যার সাথে আমার রিলেশন ছিল ৪ বছর। আমি জানতাম না যে এটাই আমার সেই প্রিয় তমা তানিশা।
গতকাল সন্ধায় একটি কল আসে,
– জুবায়ের ভাই একটা কাজ ছিল
– জ্বি বলুন, কাকে খুন করতে হবে, কখন এবং ঠিকানা দেন
– আমি আপনাকে মেসেজ করে পাঠিয়ে দিচ্ছি
– আচ্ছা ঠিক আছে
ঠিকানা অনুযায়ী চলে গেলাম ৮ তলা বিশিষ্ট একটা বিল্ডিং এর কাছে। বিল্ডিং টার তৃতীয় তলায় থাকেন তিনি। তিনি হলেন একটি মহিলা।শুনলাম মহিলাটির স্বামী আছে। মহিলাটির স্বামীই আমাকে অন্য একজনের মাধ্যমে সুপাড়ি দিয়েছে। তারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কি এক কারণে ঝগড়া হয়েছে।যার জন্য স্বামী, স্ত্রীকে খুন করতে চাই।আর সেটার বাহক হলাম আমি।
রাত এখন ১২টার ওপরে।
বিদ্যুৎ অফিসের লোকের পরিচয় দিয়ে দারোয়ান থেকে বিদায় নিয়ে সরাসরি চলে গেলাম বিশাল এই বিল্ডিং এর তিন তলাতে।কলিং বেল চাপ দিতেই দরজা খুলে গেল। মহিলাটি দরজা খুলে আমাকে সরাসরি অন্য রুমে নিয়ে গেল। আমি এখনো মহিলাটিকে এক নজর দেখি নাই।আমার মাথায় একটা ক্যাপ পড়া।যার ফলে মহিলাটিও আমাকে ভালো ভাবে দেখতে পারে নাই।
অন্য রুমে যাওয়ার সাথে সাথেই,
মহিলাটির পেটে চাকুটা প্রবেশ করে দিলাম। একের অধিকবার চাকুটাকে আনা নেওয়া করেছি।রক্তে লাল হয়ে গেছে ফ্লোর। যখন মহিলাটির নাক-মুখের কাছে হাত রাখতে যাব বেঁচে আছে কি না, তখনই সে সময় বড় ধরনের একটা শক খেলাম।
ধপাস করে দাঁড়ানো থেকে নিচে বসে পড়লাম।
মহিলাটির মুখ খানা আরেক বার দেখে নিলাম।
হ্যাঁ, আমি ঠিকিই চিনতে পেরেছি। এটা আমার সেই প্রিয় মানুষটি তানিশা। যাকে আমি অনেক ভালোবাসতাম। কলেজে থাকার সময় প্রায় দুই বছর ওর পিছনে পিছনে আমি ঘুরেছি। কলেজ লাইফ শেষ করে ভার্সিটিতে ওঠেই আমি আমার মনের কথা তানিশা কে বলে দেই। তানিশা দু’এক দিন সময় নিয়ে তার ভালোবাসার কথা আমাকে জানাই।
সে সময থেকে দীর্ঘ চার বছর তানিশার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল। তানিশা আমাকে কথা দিয়েছিল কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না। বাঁচতে হলে এক সাথে বাঁচবে, মরতে হলেও এক সাথে মরবে। পৃথিবীর কোনো বাধাই তানিশা মানবে না। আমার সাথে সারা জীবন এক সাথে থাকার বায়না ধরেছিল।
সারা রাত গল্প শুনার আবদার করেছিল। আমার লেখা গল্পের নায়িকা হতে চেয়েছিল। ভোর বেলা কোয়াশা ঢাকা চাদরে দুইজনে এক সাথে হাঁটার কথা দিয়েছিল। মাঝ দুপুরে কঁড়া রৌদ্রের মধ্য দিয়ে দুজনে হাতে হাত রেখে রেইল লাইনের হাঁটার কথা রেখে ছিল। আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর আবদার করেছিল। শেষ বিকেলে সূর্যাস্ত দেখার কথা দিয়েছিল।
কিন্তু তানিশার কোনো কিছুই হলো না।বরং তানিশাই আমাকে এসবের স্বপ্ন দেখিয়ে, মনের মাঝে আশার আলো জ্বালিয়ে, আমার ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে দূরে সরে দিয়ে তানিশার বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে নেই। সেদিন আমাকে নানা কটু কথা বলেছিল তানিশা। আমি নিরবে নিশ্চুপ থেকে সব কিছু শুনে ছিলাম। তার কোনো প্রতুত্তর আমার কাছে ছিল না।
আমি কি বলব তাও আমার অজানা ছিল। দীর্ঘ চার বছরের রিলেশন আমাদের। অনার্স কমপ্লিট হওয়ার দিকে। তারপরেও তানিশা আমার সাথে এমনটা করতে পেরেছিল। তানিশা ওর বাবার পছন্দ করা বড় লোকের ছেলেকে বিয়ে করে নেই।
আমি একা হয়ে গেলাম।
রুমের দরজা বন্ধ করে সেদিন কতটুকু কান্না করেছি সেটা কেবল আমিই জানি। শপথ নিলাম আগে নিজের আত্মাকে খুন করব।এবং সেই দিনেই নিজে নিজের আত্মাকে খুন করে ফেললাম।
প্রবেশ করি অপরাধ নামের এই খুনের জগতে। নিজের আত্মাকে প্রথমে খুন করে হয়ে গেলাম পেশাদার খুনি। টাকার জন্য খুন করি, কখনো মনের খুরাগ মেটানোর জন্য খুন করি, আবার কখনো ভালোবাসার নামে প্রতারণা করলে তখনও খুন করি।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস,
আজ আমার হাতে আমার প্রিয় তমা, আমার ভালোবাসা, আমার তানিশা খুন হলো। নিজের আত্মাকে নিজেই খুন করলাম, নিজের ভালোবাসাকে নিজেই খুন করলাম, নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজেই খুন করলাম।
এভাবে আর কত খুন করতে হবে, এটা আজও আমার অজানা।
তবে একটা চিরন্তন সত্য হলো,
এই মিথ্যে শহরে, মিথ্যে ভালোবাসাকে আমি বাঁচতে দিব না।