পরিচয়

পরিচয়

নামাজ পড়ে বাসায় আসলাম। মা আমার মাথা হাতিয়ে বললেন ” বাবা তামিম তোর বাবার ব্যবসা টা খুলে একটু ব্যবসা কর। বাসার মধ্যে টাকা – পয়সা নাই। বাজার কি দিয়ে খাব?”

আমি মায়ের কথা শুনে মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম ” মা বাবা অসুস্থ থেকে সুস্থ হবেন তো? ”
মা কাপড় দিয়ে মুখের মধ্যে নিয়ে কান্না করলেন। মা আমার হাত ধরে বললেন ” চিন্তা করিস না। তুই এক কাজ কর। তোর মামার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে তোর আবির ভাই কে দিয়ে আসিস।”

আমি হ্যাঁ বলে চলে গেলাম। রাস্তার কাছে দেখলাম একজন বৃদ্ধা কে একটা মেয়ে বকাবকি করতে শুরু করল। আমি কাছে যেতেই বৃদ্ধা বললেন ” দেখো বাবা মেয়েটা আমাকে দিয়ে মেয়েটার পা পরিষ্কার করেছে। মেয়েটার পায়ে ধুলাবালি ছিল। আমাকে বলেছিল পরিষ্কার করে দিলে টাকা দিবে। আমি তো গরীব মানুষ। তাই রাজী হয়ে গেয়েছিলাম।”

আমি বৃদ্ধার দিকে তাকিয়ে বললাম ” আপনার বাসা কোথায়? ”
” আমার বাসা নেই বাবা। ” এই কথা বলে কেঁদে দিলেন। আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম ” আমাদের এলাকার রহিম মাস্তান কে চিনতেন? উনার আজ এক পা নেই। এক হাত নেই। অথছ তিনি সেই হাত – পা দিয়ে মানুষ কে অনেক অত্যাচার করতেন। আজ তিনি মশা কেও মারতে পারেন না। উনার অনেক টাকা ছিল কিন্ত আজ ছেলেদের হাতে ভিক্ষা চান। ছেলেরা মাঝে মাঝে দেয় আর মাঝে বকা দেয়। খুব কষ্টের জীবন এখন। তাই আমি বলছি আপনার অনেক টাকা আছে। বিশ্বাস করেন এই টাকা বেশি দিন তাকবে না। অহংকার পতনের মূল। আপনি কি ভাবছেন। আপনার ক্ষমতা দেখিয়ে এখান থেকে চলে যাবেন। এক ইঞ্চি পা সরাতে পারবেন না। উনার সাথে আপনার যা যুক্তি হয়েছিল তা ফিরিয়ে দেন। নইলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এলাকা থেকে বের করে দিব।”

মেয়েটা বৃদ্ধা কে ধরে বলে ” অন্যায় হয়েছে মাফ করে দেন। ”
বৃদ্ধা আমার দিকে চেয়ে হাসলেন।

মামার কাছে আসতেই মামা টাকা দিয়ে বললেন “তোর বাবা আমাকে অনেক সাহায্য করতেন। তোদের বিপদের দিন আমি যদি হাত টা না বাড়াই তাইলে আল্লাহ্ অখুশি হবেন।”

আমি মুচকি একটা হাসি দিলাম। মামা কে বললাম ” মামা খিদা লাগছে ফ্রিজে কি কিছু আছে? ”
মামা ফ্রিজের দিকে গিয়ে একটা আপেল। এক বাটি ধুই আনলেন। আমি পেট ভরে খাইলাম।
একটা টমটমে উঠতে যাব। চোখ টা উপরে উঠে গেল। খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। টমটমে উঠব কি?
আমি যেই বলতে যাব ” ভাই চলে যান। ”
অতিথি বলল ” ইশ! উঠো তো।”

আমি মনে মনে বললাম ” তোমার মুখে অনেক তেজ আছে আবার মায়াও আছে। ”
তোমাকে বিশ্বাস করা যাবে না। আমি বললাম ” ভাই আপনি চলে যান। আমি যাব না। ”
খুব অভিমানী কন্ঠে বলল ” একটু তো জানার চেষ্টা করো। আমি তো খারাপ মেয়ে না। আমি তো তোমার অতিথি ছিলাম। ”
আমি হেঁটে হেঁটে চলে গেলাম। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে তাকল।
আবির ভাইয়ের দোকানে গিয়ে বললাম ” ভাই মা এই টাকা দিয়েছেন। ”
আবির ভাই টাকা নিতে নিতে বললেন ” চাচা কি সুস্থ হয়েছেন? ”
আমি বললাম ” না ভাই।”

আবির ভাই চেয়ার থেকে উঠে আমার কাছে এসে বললেন ” এই টাকা দিয়ে চাচার জন্য কিছু ফল কিনে নিয়ে যাইস। আমাকে পরে দিলেও হবে। চাচা কে আমার কথা বলিস আমি জিজ্ঞাস করছি। ”
আমি কি বলে আবির ভাই কে ধন্যবাদ দিব। বুঝতে পারি নি। চোখ দিয়ে কষ্ট টা শেয়ার করলাম।

বাবার ব্যবসা আজ খুললাম। অনেক দিন ধরে ব্যবসা টা অযথা পড়ে আছে। খুলতেই অনেক মানুষ আসলেন। বাবার কথা জিজ্ঞাস করলেন বাবা কেমন আছেন? অনেক কিছু। আমি শুধু বললাম বাবা আগের থেকে অনেক সুস্থ আছেন। অতিথি রাস্তা দিয়ে রিক্সা করে যাচ্ছিল। একটা স্কুলে পড়ায় নতুন চাকরি হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আমাকে দেখে দাঁড় করিয়ে আমার কাছে এসে বলে ” দোকানে এখন তো মালপত্র কম আছে। এখন কাজ করো আমি কিছু টাকা দেই তুমি নতুন করে ব্যবসা টা খুলো।”
আমি পান পরিষ্কার করতে করতে বললাম ” আমাদের কে কেউ করুণা করতে হবে না। আমাদের জন্য আল্লাহ্ আছেন। আল্লাহ্ আমাদের কে সাহায্য করবেন। আমাদের কথা কেউ না ভাবলেও চলবে।”
অতিথি খুব অবাক হয়ে চলে গেল। কিছু টা লজ্জা পেয়েছে।

বাজারে অনেক মানুষ। আমি সেখানে গেলাম। সেখানে যাওয়ার পর দেখলাম একটা ছেলে চুরি করেছে। তাকে মারার জন্য মানুষ প্রস্তুত। আমি সকল কে বললাম ” থামেন সবাই। আমার কয়েক টা কথা শুনেন। ছেলেটা চুরি করেছে তার শাস্তি হবে। কিন্তু আমরা একটা কাজ করলে কি হয় সে যত টাকা চুরি করেছে সব টাকা তাকে দিয়ে দেই।”

সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ছেলে টা কে বললাম ” তুই সব টাকা নে। তুই এই টাকা নিয়ে সিএনজি গাড়ির ড্রাইভারি শিখ। ড্রাইভার কে এই টাকা দিয়ে বলবি আমাকে সিএনজি গাডির ড্রাইভারি শিখাও। তারপর তুই প্রতিদিন হাজার টাকা রুজি করতে পারবি। ”
ছেলে টা আমাকে জড়িয়ে ধরল।

সকালবেলা দোকান টা খুললাম। একজন চাচা এসে বললেন ” আমাকে এক কেজি চিনি এক কেজি পেয়াজ এক কেজি আলু দেও। সব কিছু দিলাম।

চাচা বললেন ” বাবা তামিম আজ টাকা দিতে পারব না। খাতায় লিখে রাখো।”
মনে মনে বলতে লাগলাম। এভাবে তো পরিবার চলবে না। খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। অসহায় ভাবে আসমানের দিকে চেয়ে রইলাম।

সকালবেলা ব্রাশ করতে যাব। তখন মামা বললেন ভাগনা একটা জব করবি ১২ হাজার টাকা দিব। আমি রাজি হয়ে গেলাম। প্রতিদিন অফিসে যাই। দুপুরের খাবার খেতে একদিন হোটেলে গেলাম। হোটেলে বসতে যাব ঠিক তখন ২ দু’জন মেয়ে দেখলাম। আমি চিনতে পারছি। অতিথি ছিল। হয়তো অতিথির কোনো বন্ধু হবে। আমাকে দেখেই বলল “বসো।”
আমি বসলাম। আমার দিকে চেয়ে বলে ” এতো অভিমান কেন আমার উপর? আমার কথা টা শুনো।”
আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম ” লাগবে না আমার কারো কথা শুনা।”

অতিথির বন্ধু বলল ” ভাইয়া অতিথি আমার বন্ধু। সব কথা আমাকে শেয়ার করে আপনার কথাও আমাকে শেয়ার করছে। ” আমি উঠে চলে আসলাম।

রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। অতিথি আমাকে খুব পছন্দ করত। কিন্তু একদিন কথা বলা টা একদম বন্ধ করে দেয়। আমি অনেক চেষ্টা করি কিন্তু কোনো কারণ জানতে পারি নি। অতিথি মেয়েদের মেসে চলে আসে। কোনো যোগাযোগ করে নি।
এরপর অনেক বেশি অভিমান করে বসলাম। এখনও অভিমান আছে।

মা কল দিয়ে বললেন ” অতিথি এসেছে কিছু কিনে আনিস। বাসায় বিস্কুট নেই। ”
আমার অনেক রাগ হলো মেয়েটার উপর। আমার পিছনে লেগে আছে কেন। আমাকে কি আর বেশি কষ্ট দিতে চায়। বাসায় যেতেই অতিথি বলল ” চাচিম্মা আমি এখন যাই। অনেক বিকাল হয়ে গেছে মা চিন্তা করবেন।
আমি মনে মনে বললাম ” যাও যাও। তোমাকে কেউ কি ডাকছে। অযথা আমাদের বাসায় এসেছ। ”
মা বললেন ” চুপ করে বসে থাক। চা খেয়ে যা।”
অতিথি নিজে চা বানাল। আমার রুমে এসে বলে ” চা খাও। ”
আমি চায়ের দিকে চেয়ে বললাম ” চা আমার পছন্দ না। আমি খাব না। ”
অতিথি চশমা টা ঠিক করতে করতে বলল ” চা পছন্দ না আমি পছন্দ না। তো কি পছন্দ? ”
আমি বললাম ” যাও তো যাও। এখন একটু ঘুমাব। ”

আজ পরিবেশ টা খুব সুন্দর। স্কুলে মাঠে যেতেই অতিথি স্কুল থেকে এসে বলে ” তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকো। সত্য কথা কি তুমি জানো না । তুমি আমার উপর ভুল করে রাগ করে আছো সত্য কথা টা কি তা জানার চেষ্টা করো। মা বলেছিলেন তোমার সাথে আমি যেন কথা না বলি তাই তোমার সাথে কথা বলি নি। কিন্তু আমি তোমার সাথে কথা না বলে তাকতে পারছি না। আমার খুব কষ্ট হয়।”

আমিও অতিথির চোখের দিকে চেয়ে বললাম “আমারও হয়েছিল।”
চলে আসতে লাগলাম। অতিথি বলল ” অভিমান করে তুমি শান্তি পাবে কিন্তু অন্য মানুষ টা অনেক কষ্ট পাবে। ”
আম কিছু শুনলাম না। হাঁটতে লাগলাম।

বাসে উঠে বসে তাকলাম। একজন বৃদ্ধা লোক কে দেখলাম বাসে উঠে দাঁড়িয়ে তাকল। অন্য একজনের পাশে। কেউ উঠে বৃদ্ধা কে সীট দেয় নি। অতিথিও আসল। অতিথি আসতেই একজন বলে ” আপনি এই সীটে বসেন। আমি বরং দাঁড়িয়ে থাকি। ”
কিন্তু এই বৃদ্ধা লোক অনেকক্ষণ সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম ” আপনি এই সীটে বসেন। ”
লোক টা বসতে চায় নি। আমি আবার বললাম ” বসেন।”

লোকটা বসল। আমি দাঁড়িয়ে তাকলাম। অতিথি আমাকে দেখে খুব অবাক হলো। আমার দিকে কয়েকবার তাকাল। আমি নেমে গেলাম। অতিথিও আমার সাথে সাথে নামল। আমার পিছন পিছন আসতে লাগল। আমি ভাবতে লাগলাম অতিথি আমার পিছন পিছন আসছে কেন?
কিছু সময় পর হাত দিয়ে বললাম ” সমস্যা কি? ”
মেয়েটা চুপ করে আছে।
আবার হাঁটছে। আবার পিছন পিছন আসল। খুব বিরক্ত হয়ে বললাম ” বিরক্ত করো নাতো। যাও বাসায় যাও। মেয়েটা মুখ টা ভেংচি দিয়ে চলে গেল।

খেতে বসলাম। হঠাৎ দেখি অতিথি আমাদের বাসায় এসে ” বাবার সাথে হাসতে লাগল। আমি তো হিংসায় একদম লাল মরিচ হয়ে গেলাম। মেয়েটার মতলব কি?

বাবা আমাকে ডাক দিয়ে বললেন ” তামিম আমার রুমে আসিস তো। ”
আমি খেতে খেতে বললাম ” বাবা একটু পর আসব। ”
অতিথি আমার কাছে এসে বলে ” কাল আমাকে বর পক্ষ দেখতে আসবে। তুমি কাল সেখানে যাবে? ”
আমি পানির গ্লাস টা হাতে নিয়ে বললাম ” যাওয়ার দরকার নেই। ”
অতিথি লজ্জাবোধ করল।

রাতের বেলা বালিশের মধ্যে মাথা রেখে শুয়ে আছি। মা আমার হাত টা ধরে বললেন ” অতিথি দেখতে শুনতে মেয়ে টা অনেক ভালো। আমাদের কাছে মেয়েটা খুব পছন্দের। তুই এক কাজ কর মেয়েটা কে বিয়ে করে পেল। ”
আমি সব কথা শুধু শুনছি। কোনো কথা বলছি না। মা যাওয়ার পর ভাবলাম। সত্যি মেয়ে টাকে আমি খুব পছন্দ করতাম। কিন্তু এখন কেন ভালো লাগে না। ভালো না লাগার কারণ টা বের করলাম। হ্যাঁ। বুঝতে পারছি। থাক মেয়ে টা কে আর কষ্ট দেওয়া যাবে না।

রাতের বেলা অতিথিদের উঠানে গেলাম। অতিথি আসল। মেয়েটার হাতে একটা চিরকুট দিলাম। লেখা ছিল ভালবাসি।
হাঁটতে লাগলাম। পিছনের দিক থেকে অতিথি ডাক দিয়ে বলে ” আমিও ভালবাসি। ”

অনেক বৃষ্টি। বৃষ্টির জন্য হাঁটতে পারছি না। একটা ছেলে পিছনের দিক থেকে ডাক দিয়ে বলে ” ভাইয়া গাড়িতে উঠেন। আমি এখন এই গাড়ির ড্রাইভার। আমি চিনতে পারছি ছেলে টা সেই ছেলে।
ছেলেটা বলে ” ভাইয়া আপনার কথায় সেদিন ড্রাইভার কে টাকা দেই। সে আমাকে ড্রাইভারি শিখিয়ে দিয়েছে।
আমি একটু পর নেমে যেতে যেতে টাকা দিলাম। কিন্তু ছেলে টাকা নেয় নি। আমাকে একটা হাসি দেখিয়ে চলে গেল।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত