সকাল সকাল দেখলাম বরটা কোন কারণে রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে আছে।কথায় কথায় ঘ্যানঘ্যান করছে।পাশে বসতে চাইলে নানান বাহানায় দূরে সরে বসছে। কালকে রাতের ব্যাপারটার জন্য নয়তো? ওনার তো আবার রাগের হরেক রকম কারণ থাকে।কখন যে কিসের জন্য রেগে থাকে বুঝা মুশকিল।আমি কোন সাড়াশব্দ না করে রান্নাঘরে চলে গেলাম। রান্না করতে করতে ভাবতে লাগলাম, কি এমন কারণ থাকতে পারে যার কারণে সে এতো রেগে আছে?
নাস্তা রেডি করে আমি কুন্ঠিত হয়ে মৃদু স্বরে বললাম।
— আপনার নাস্তা রেডি।খেতে আসুন। বলেই আমি রিফাতের চোখের পানে চেয়ে থাকলাম কিছুক্ষন।নির্দয় চোখ দুটো আমার দিকে ফিরেও তাকালো না।যদি পাপ হয় সেই ভয়ে! সে খবরের কগজে চোখ বুলাচ্ছিল ভাবলেশহীনভাবে ওঠে দাঁড়িয়ে ডাইনিং এর দিকে পা বাড়ালো। ব্যপারটা আমি কিছুতেই হৃদয়ঙ্গম করতে পারলাম না।সে কি আমাকে ইনডিরেক্টলি এড়িয়ে চলছে? উত্তরটা তার কাছেই পাওয়া যাবে। তাই দেরি না করে তাঁর সামনে গিয়ে একপ্রকার চেঁচিয়ে বললাম,
— আপনার কি হয়েছে বলবেন? এভাবে আমাকে এড়িয়ে চলার মানেটা কি?
রিফাত খাওয়া থেকে চোখ তুলে তাকালো। কিছুক্ষন স্তব্ধ থেকে সে পূনরায় খাবারে মনোযোগ দিল। আমার কথা যেন সে শুনেও শুনতে পাইন আমি দ্বিতীয়বার একি প্রশ্ন করলাম। প্রত্যুত্তরে সে বললো,
— কালকে তুমি সাজিদের সাথে কথা বলেছো তাইনা? সাজিদের কথা বলতেই আমি চমকে উঠলাম।যেটা সন্দেহ করেছিলাম সেটাই। আমতা আমতা করে বললাম।
— হ্যাঁ বলেছিলাম,ও ফোন দিয়েছিল।
– তুমি নাম্বার চেঞ্জ করার পরও সে তোমার নাম্বার কি করে পেলো? কি করে?
বিকট চিৎকারের আস্ফালন ভেসে আসলো আমার কানে। সে চিৎকারে কিসের যেন হাহাকার। বহুদিনের ক্রোধ।
রিফাতের এমন গোয়ার্ত রূপ আমি আগে কখনো দেখিনি।ভয়ে আমার সর্বাঙ্গ অসাড় হয়ে আসলো।তবুও আমার একটু স্বস্তি হচ্ছে এটা ভেবে যে,আমি অকপটে সব স্বীকার করে নিয়েছি। আমি আড়ষ্ট কন্ঠে জবাব দিলাম,
– আমি কি করে জানবো? অন্যকারো কাছ থেকেও তো পেতে পারে।
– হ্যাঁ পেতে পারে,যখন তুমি বুঝতে পারলে যে সেটা সাজিদের নাম্বার ছিল সেই মুহুর্তে কেটে না দিয়ে রসের আলাপ পাতার তো কোন দরকার ছিল না!
– আমি কোন রসের আলাপ পাতিনি,সে’ই আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য বেশি জোর করেছিল।
– জোর করেছে বলে বলতে হবে? নাকি পুরাতন প্রেম জেগে উঠেছে মনে?
– মাইন্ড ইউর লেঙ্গুয়েজ, কি বলতে চাইছেন আপনি? একি কথা বার বলে আমাকে আক্রমন করবেন? চুন থেকে পান খসে পড়লেই কেনো পুরাতন প্রেমের কথা আসবে?
– হুম,সত্যি কথা বললে সবারই আঁতে ঘা লাগে।
– লাগার মতো কথা বললে তো লাগবেই তাইনা?
রিফাত প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে আমার সমুখে একটা ফুলদানি ছুড়ে মারলো।সাথে সাথে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে হয়ে একটা অংশ আমার হাতের উপরিভাগে লাগলো।ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে পুরোহাত মুহুর্তেই রক্তে রক্তিম হয়ে উঠলো। স্বভাবতই রক্ত দেখলে আমি ভয় পাই।কিন্তু আজ কিসে যেন বাঁধ সাধছে।আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুল না। অল্পক্ষণেই অসাড় হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লাম।এরপর আমার কিছু মনে নেই।শুধু রিফাতের ক্ষুব্ধ চেহারাটা কেমন বিবর্ণ হয়ে অপরাধীর মতো হয়ে ছিল সেটাই বারবার চোখের সামনে হামাগুড়ি দিচ্ছে।
চোখ মেলতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। ওঠে বসার চেষ্টা করলাম।ক্লান্তিতে শরীরটা অবশ হয়ে আছে। রাত নেমেছে। জানালাটা দিয়ে বাইরে তাকালাম।আকাশে চাঁদ উঠেছে, হেমন্তের শিশির সিক্ত মন্দ- জ্যোৎস্নায় অদূরে একটি বাড়ির শ্বেতমর্মর মায়াপুরীর ন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে।হাতের কাটা জায়গায় ভারি ব্যান্ডেজে মুড়ানো। একটু পরপর ব্যাথায় টনটন করছে। অন্ধকার রুমে জ্যোৎস্নার মৃদু আলোতে মেঝেতে সেই ভাঙ্গা টুকরো গুলো দেখা যাচ্ছে।একটা দীর্ঘশ্বাস মোচন করে আধশোয়া হয়ে বসলাম।ওমনি কটাস করে দরজা খুলে গেল। রিফাত রুমে প্রবেশ করে লাইট জ্বালালো।ধীরে পায়ে পাশে এসে বসতেই আমি একটু সরে বসলাম। আচমকা আমার হাত দুটো নিজের হাতে আবদ্ধ করে বললো,
— খুব লেগেছে তাইনা নিধি? আমি একপলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে কিছুক্ষন মৌন হয়ে থাকলাম।তারপর মৃদু কণ্ঠে বললাম,
— হাত ছাড়ুন, ব্যাথা পাচ্ছি। সে কিছুটা অভিমানে কিংবা অপরাধবোধ থেকে আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললো,
— দেখো নিধি,আমি এটা ইচ্ছে করে করিনি।সম্পূর্ণ ঘটনাটাই কাকতালীয় ভাবে ঘটেছে।আমাদের বাকবিতন্ডার শেষটা এমন জঘন্য হবে কে জানতো? আমি নির্লিপ্তভাবে জবাব দিলাম,
— আপনার সঙ্গে কথা বলার কোন অভিরুচি আমার নেই।আর,আমার মতো একটা ‘নিধি’ গেলে আপনার হাজারো নিধি আসবে।আমাকে আপনার কি দরকার? কথাটি শেষহতেই মনে হলো,আচ্ছা কথাগুলো কি ঝাঁঝালো কণ্ঠে শুনালো? নাকি একরাশ অভিমানে টইটম্বুর হয়ে শুনালো? সে খানিকটা গম্ভীর হয়ে বিড়বিড় করে বললো,
— আমি হাজারো নিধিকে চাইনা।শুধু তুমি নিধিকেই চাই। আমি বেশ কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে বসে থেকে বললাম।
— কিছু নিয়ে আসুন।খিদে পেয়েছে।
— রুটি আর ডাল খাবে?
— যেটা খুশি নিয়ে আসুন।তাড়াতাড়ি, সকাল থেকে কিছু পেটে পড়েনি এখনো।
রিফাত কিছুএকটা বলতে গিয়েও থেমে গেল।হাত বাড়িয়ে একটা বালিশ আমার পিঠের নিচে ঠেসে দিয়ে ধীরপায়ে বেরিয়ে গেল।ওর চলে যাওয়ার পানে বেশ কিছুক্ষন নির্নিমেষে তাকিয়ে থেকে আমি একটু চোখ বুজলাম। কিন্তু বেশিক্ষন এভাবে থাকতে পারলাম না।মনটা অজানা ব্যথায় টনটন করে উঠছে বার-বার। সকালে এতো অযাচিত বাকবিতন্ডার শেষটা এভাবেই যেন ভালো ছিল। এখন নাহয় একটু সহানুভূতি পাওয়া যাবে।দক্ষিণের জালানা দিয়ে স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না কার্পেটের উপর পড়ার দরুন চূর্ণবিচূর্ণ ফুলদানির টুকরাগুলো এক অদ্ভুত দৃশ্যপট তৈরি করেছে।
ঘড়িতে রাত ১২ টা। এই মাত্র পশ্চিমে দেয়ালে ঝুলানো দেয়াল ঘড়িটা থেকে গুনে-গুনে বারোটা টা ঘন্টা বেজে উঠলো। যতই সময় বাড়ছে ততই বুকের মধ্যকার ধকধকানিটা বেড়েই চলেছে।এক ঘন্টা হয়ে গেলো অথচ কোন খোঁজ নেই? এদিকে খিদেয় পেটের পোকাগুলা পেটের ভিতর খাবারের জন্য আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। পেটে খাবার চালান করার আন্দোলন। পাশে থাকা বোতল থেকে পুরো আধাবোতল পানি পেটে চালান করে দিলাম।যদি পোকাগুলোর আন্দোলন একটু থামতো আরকি! বেশকিছুক্ষন পরে কপাট ঠেলে রিফাত প্রবেশ করলো। রাগে আমার গা জ্বলে উঠলো। মুখে কিঞ্চিত বিরক্তি নিয়ে বললাম,
– খাবার কি তৈরি করে আনতে গিয়েছিলে নাকি? এতো দেরি হলো কেন?
– কি করবো? সব দোকান-পাঠ বন্ধ! একটা অগম্য জায়গায় গিয়ে কোনমতে রিস্ক নিয়ে জোগাড় করে এনেছি।
আমি কিছু না বলে নিরবে মাথা নাড়লাম। , এতো রাতে যে খাবার পাওয়া যাবেনা সেটা অজানা ছিল না।বরং ওর উপর আমার অগাধ বিশ্বাস ছিল যে, ও যে কোন উপায়ে খাবার নিয়ে আমার সামনে হাজির হবে। সকালের মাত্রাতিরিক্ত রাগের শাস্তিস্বরূপ এই কাজটা ওর কাছে কিছুই নয়।এমন অকুতোভয় ছেলের সাথে চলতে আমারো সংশয় হয়! কিজানি কখন কি করে বসে!
সাজিদ ছিল আমার এককালীন বয়ফ্রেন্ড। ৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টেনে বাবা মা যখন তাদের পছন্দ মতে রিফাতের সাথে আমাকে বিয়ের পিড়িতে বসায়;তখনো আমার সাজিদের প্রতি টান টা রয়েই যায়। দীর্ঘ একটা বছর আমি সাজিদকে ভুলতে পারিনি। কিন্তু বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আমি এই সংসারে মনোনিবেশ করতে বাধ্য হই। বিয়ে যখন হয়েই গেছে তখন স্বামীকে ছেড়ে যাবার মতো চরিত্রহীনাও আমি নয়। তাই নিজের মন প্রাণ রিফাতকেই সঁপে দিয়েছি। কাল যখন সাজিদ ফোন দিয়েছিল তখন আর নিজেকে সামলাতে পারিনি। দুর্ভাগ্য বসত ব্যাপারটা রিফাতের নজর এড়াইনি।
— কি হলো খাচ্ছো না যে? খুব পরিচিত কণ্ঠে ঘোর কাটলো আমার। চকিত হয়ে আমতা আমতা করে বললাম,
— খা,খাচ্ছি খাচ্ছি।
বলেই রুটি দিয়ে মুগডাল মুড়িয়ে চুপি চুপি খেতে লাগলাম।এতক্ষনে পেটের পোকাগুলো একটু শান্ত হয়েছে। আমি খেয়েই যাচ্ছি।আশেপাশের অবস্থা দেখার কিংবা বুঝার অবকাশ নেই।খাবার পেয়ে আমার আঘাতের কথা যেন বেমালুম ভুলে গেলাম। রিফাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বুঝাতে চাইলাম,
— কি?
সে মাথা নাড়লো।আমি আবারো খেতে লাগলাম। পরোক্ষনে মনে হলো ও কি খেয়েছে? নাকি না খেয়েই আমাকে যত্ন করে খাওয়াচ্ছে? মনের কথা মনে রাখার প্রয়োজন মনে না করে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,
— আপনি কি খেয়েছেন? সে ডানে বায়ে মাথা নেড়ে অস্ফুটে শব্দে বললো,
— না,
— না মানে? না খেয়ে আমাকে এতো ঢং করে খাওয়ানোর কি দরকার ছিল? খাননি কেনো?
— তুমি খাওনি তাই।
— এক্সকিউজ মি! এতো সহানুভূতি আমি চাইনা। আমি খাইনি বলে আপনি খাননি। এখন আমি খাচ্ছি, কই আপনি তো খাচ্ছেন না? এতো আলগা পিরিত দেখাতে আসবেন না দয়া করে।নিজে কষ্ট পাবেন।
— আমার নিজের কষ্টকে আমি ভয় পাইনা। সেই ভয় আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই। আর সহানুভূতি বলছো কেনো?
এ কথার কোন জবাব দিলাম না আমি।বুঝলাম একটু অতিরঞ্জিত করে ফেলেছি।আর বাড়িয়ে বললেই লুচির মতো ফুলবে শুধু।তবে ওকে মেন্টালি জ্বালানোর সুক্ষ্ম প্রচেষ্টাও আমার আছে।এতো সহজে ওকে ছাড়ছিনা! বাঁ হাতে খাবার কিছু খাবার ঠেলে দিয়ে বললাম।
— কিছু খেয়ে নিন।তারপর আরকদফা ঝগড়া করবো। নিন নিন।নাহয় ঝগড়া করার সময় শক্তির অভাব পরবে যে!
আমার এমন উপলক্ষহীন কথাবার্তার কোন হেতু খুঁজে না পেয়ে সে একপ্রকার অপ্রসন্ন মুখে রুটি চিবুতে লাগলো। তাঁর ভাবভঙ্গিতে মনে হচ্ছে কেউ তাকে জোর করে রুটি চিবোতে দিয়েছে। আর সে আত্মভোলা হয়ে আপনমনে রুটি নিয়ে জাবর কাটছে। এরপর দু-জনেই বেশ কিছুক্ষন নিরব। নিরবতার রেশ কাটিয়ে সে বললো,
— তোমার জন্য ঔষধ এনেছি। খেয়ে নাও।
বলেই কয়েকটা ঔষধ আমার হাতে গুজে দিতে চাইলো।আমি সেই অধোমুখে বসে হাত দুটো শক্ত করে ফেললাম।
— কি হলো নাও,পরে শরীর খারাপ করবে তো।
— করলে করবে, তাতে আপনার কি?
— আঘাতটা তো আমার জন্যই পেয়েছো! তাই ঔষধ খাইয়ে সুস্থ করার দায়িত্বটাও আমার।নাও হা করো। কথা শেষ হতে না হতেই দুইটা ঔষধ সমেত একগ্লাস পানি আমার পেটে চালান করে দিল।
আমি বিড়বিড় করে বললাম,
– এখন কত দরদ!
— দরদ? আমি দরদ দেখাতে পারিনা। দরদ দেখায় তোমার ঐ সাজিদ।
সাজিদের কথা কানে আসতেই আমার সর্বাঙ্গে কেউ যেন সযত্নে শূল বিঁধে দিলো।তৎক্ষনাৎ রাগে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বলে ফেললাম,
— আমি থাকবোনা আপনার সাথে, আমি কালই বাপের বাড়ি চলে যাবো। কথাটা যেন সে গ্রাহ্যই করলো না।শার্টের বোতাম খুলে শার্টটা আলনায় রাখতে রাখতে বললো,
— যাওনা,না করেছে কে? আমাকে বলো,আমি দিয়ে আসি সাজিদের কাছে।বাপের বাড়ি গিয়ে কাজ কি?
— দেখুন,আপনি কিন্তু আমাকে রাগাচ্ছেন বারবার।মানে কি এসবের?
আমার কথার জবাব না দিয়ে সে ঈষৎ হেসে। ওয়াসরুমে ঢুকে গেল।এভাবে অগ্রাহ্য করাটা আমার সবচেয়ে অপছন্দনীয়। মানুষটা আমার অপছন্দের কাজগুলোই বেছে বেছে করে আমাকে রাগানোর জন্য। অহর্নিশি আমাকে খোঁচা দিয়ে না উত্যেক্ত না করলে বোধহয় তাঁর পেটের ভাত হজম হয়না। মনে মনে আর কোন কথা না বলার সংকল্প নিয়ে শুয়ে পড়লাম।একটু পর ও এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো। উপস্থিতি টের পেয়েও আমি চোখ বুজে শুয়ে থাকলাম। বেশি বাড়াবাড়ি করে নিজের রণচণ্ডী ভাবটা প্রকাশ করতে চাইনা।
খুব সকালে পাখির কিঁচিমিচির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। জানালা দিকে ভোরের স্নিগ্ধ আলো বিছানার জুড়ে টিকরে পড়েছে। গতকাল এমন জিদ করে ঘুমানোর পরে রিফাতের কোন ভাবান্তর না ঘটার ব্যাপারটা আমাকে চরমভাবে মুগ্ধ ও মনের দিকে কিঞ্চিত ক্ষুব্ধ ও করেছে। সচরাচর আমার রাগ কিংবা অভিমানে তার চিত্তে যেনো অশান্তির ঝড় শুরু হয়ে যায়। তবে আজ কেনো তার ব্যতিক্রম সেটা ভাবতেই আমার গায়ে ছোট্ট একটা অস্বস্তি কাঁটা দিয়ে উঠছে। আর ওর এই অকস্মাৎ পরিবর্তনে আমার যেন বিষ্ময়ের সীমা রইলো না।
পাশ ফিরে দেখলাম রিফাত নেই।রুমের দরজা খোলা। সকাল সকাল কোথায় গেলো? অফিসে? নাহ অফিসের সময় এখনো হয়নি। কান পেতে শুনলাম রান্নাঘর থেকে হাড়িপাতিলের টুংটাং শব্দ আসছে।ব্যাপারটা বুঝতে বেগ পেতে হলো না। রাগ ভাঙ্গানোর জন্য যে ও এতো কিছু করছে সেটা আমার ঢের বুঝা হয়েছে। তবুও ওকে একটা শাস্তি দেয়া দরকার। ওর অপরাধ অমার্জনীয়। অনেকদিন ধরে বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করছে।কিন্ত কিছুতেই যাওয়া হচ্ছেনা।আজ রিফাতকে একটু নাঁচানোর জন্য হলেও যাওয়া দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ।কোন অায়োজন ছাড়াই বেগ গুছানো শুরু করলাম।
— কি ব্যাপার নিধি? ব্যাগ গুছাচ্ছো যে? সকাল সকাল যাচ্ছো কোথায়? হঠাৎ রিফাতের উপস্থিতিতে আঁৎকে উঠলাম আমি। তাড়াতাড়ি বুকে থুথু ছিটিয়ে ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললাম,
— বাপের বাড়ি যাচ্ছি।এভাবে কেউ ডাকে? আপনি জানেন না আমি ভয় পাই? স্মৃতিশক্তি দিন দিন লোপ পাচ্ছে নাকি?
শুনেই রিফাতের মুখ বিবর্ণ হয়ে গেলো। যেন কেউ এই মাত্র তার মুখে কালি লেপ্টে দিয়েছে। হাসি চাপাতে আমি আবার ঘাঁড় ফিরিয়ে ব্যাগ গুঁছানোর কাজে মন দিলাম। ফাঁকে একটু আঁড়চোখে দৃষ্টিপাত করতেই দেখলাম, ও ওভাবেই অধোমুখে বসে আছে। দৃশ্যটা দেখেই আমার হৃদকোণে ছোট্ট একটা ধাক্কা লাগলো বটে;পরোক্ষনে সামলিয়ে নিয়ে বললাম,
— আজকে তোমার অফিস নেই? নাকি ঐ রাজনীতির চামচাদের কাজে দৌড়াদৌড়ি করবে?
— হু আজ একটা মিটিং আছে, তুমি কি করে জানলে?
— আন্দাজ করেছি।
— ওহহ, এরপর বেশকিছু নিরব থেকে ধীরপায়ে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো সে। ফিসফিসিয়ে বললো,
— না গেলে হয়না? আমি নিজের দু’হাত তাঁর কাঁধে রেখে মৃদুস্বরে বললাম,
— একেবারে তো ছেড়ে যাচ্ছি না। আবার ফিরে আসবো। না আসলেই বা কি? আপনার তো হাজারো নিধি আসবে।
প্রত্যুত্তরে সে কোনরূপ মন্তব্য না করেই আচমকা আমার দুই হতের পেশি টেনে ধরে আরো বন্ধনটা দৃঢ় করে মত্তকণ্ঠে বললো উঠলো,
— ছেড়ে যেতে দিলে তবেই তো? জানোনা ছেড়ে যাওয়া বারণ?
আমি তাঁর কথার জবাবে নিরুত্তর চাহনিতে বেশকিছুক্ষন প্রেমে মাতাল হওয়া রমণীর ন্যায় তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে মাথা নীচু করে ফেললাম। সে পরিস্থিতি লিখে প্রকাশ করার মতো না! কবি সাহিত্যিক হলে নিঃস্বন্দেহে উক্ত মুহুর্তের প্রেক্ষাপটে কিছু একটা রচনা করে ফেলতাম।
সেদিন বিকাল হতেই প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ভরা বিকেলে কালো মেঘের সামিয়ানার নিচে পড়ে অন্ধকার পুরো পৃথিবী।কি কালো!পাতিলের তলা মতো! একপাল দলছুট মেঘ গুড়ুম-গুড়ুম আওয়াজে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো আকাশ জুড়ে।বৃষ্টি হচ্ছে। বর্শার মতো মাটির শরীরে বিঁধছে জল। রিফাত আমাকে একা ছাড়েনি।নিজে এসে আমাকে বাবার বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। তারপর আর এক মিনিটও দাঁড়ালো না। কাজের দোহাই দিয়ে সেই যে বেড়িয়ে গেলো আর কোন খবর নেই। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হবার নয়। হঠাৎ ফোনে রিংটোনের শব্দে আমার ভাবনার দুয়ারে ছেঁদ পড়লো। সাথে সাথে রিসিভ করলাম।
— দরজাটা খুল।আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি আমি একরাশ অভিমানে ভরা কণ্ঠে বললাম,
— খুলবোনা!আপনি বাইরেই থাকেন।শ্বশুর বাড়িতে কেউ এতো রাতে আসে?
— এই তুমি না আমার ওপর রেগে আছো? তাহলে এতো অভিমান আসে কোত্থেকে হু? আমি এ কথার কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না। ক্ষণকাল নিরব থেকে আড়ষ্ট কণ্ঠে জবাব দিলাম,
— একমিনিট দাঁড়ান। আমি আসছি। বলেই ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম।
দরজা খুলতেই রিফাত ভিজে জবুথবু হয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। আমার সমস্ত রাগ-অভিমান যেন নিমিষেই ধুলিসাৎ হয়ে গেলো। তড়িঘড়ি করে একটা তোয়ালে দিতে দিতে বললাম,
— যান ফ্রেস হয়ে সব কিছু চেঞ্জ করে আসুন। একটা ছাতা নিয়ে গেলে পারতেন! তাহলে আর এভাবে কাক ভেজা হতে হতো না। একে তো সময়- জ্ঞান বলতে কিছু নাই আবার কাক ভেজা হয়ে বাড়িতে এসেছে।। এভাবে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো যান।
— আচ্ছা আমাকে দেখে কোন দিক থেকে কাক মনে হয় তোমার?
— মানে?
— মানে তুমি বললে না? কাক ভেজা হয়ে বাড়ি এসেছি? কাজ ভেজা না বলে মানুষ ভেজা বললেই তো হয়।এভাবে কাকের সাথে তুলনা করে মুখে চুনকালি মেখে অপমান করার তো কোন দরকার ছিল না।
এমন লাগামহীন কথাবার্তা শুনে ভিষণ হাসি পেল আমার। তৎক্ষনাৎ কোনক্রমে হাসি চেপে রেখে ঝাঁঝালো স্বরে বললাম,
— আপনাকে আমি লেকচার দিতে বলিনি। যেটা করতে বলেছি করুন।নাহয় ভাত নেই আজকে।
সে আর কোন কথা না বলে চুপিচুপি ওয়াসরুমে প্রবেশ করলো।আমি অতি দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলাম।
খাবার-দাবার খেয়ে বিছানার সঙ্গে গা এলাতে এলাতেই প্রায় রাত্রের এক প্রহর শেষ হয়ে গেল। মাঝারি সাইজের রুম।দক্ষিনের জানালাটা রিফাতের ইচ্ছাতেই খোলা রয়েছে। সেখান দিয়ে মৃদু-মন্দ বাতাস এসে আমার শরীরে শীতে কাঁটা দিয়ে উঠছে। বাইরের থমথমে আবহাওয়াটা আবারো নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ঝড়ের পায়তারা করছে। ডীম লাইটের আবছা আলোতো লক্ষ্য করলাম, রিফাত এখনো জেগে আছে।স্থির চোখে স্তব্ধ সিলিং ফ্যানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
— কি ব্যাপার! ঘুমোওনি এখনো? বোধহয় সে আমার কথার অপেক্ষাই ছিল।একটা দীর্ঘশ্বাস ফোস করে বাতাসের সাথে মিলিয়ে দিয়ে বললো।
— ঘুম আসছেনা নিধি! কিসে যেন বাঁধা সাধছে।
— কিসে বাঁধ সাধছে শুনি? ভুতে? বলেই আমি খিলখিল করে হাসতে লাগলাম। কিন্তু ওর চেহারায় ভাবান্তরের লেশমাত্র নেই। হাসি থামিয়ে বললাম,
— কি হয়েছে? মন খারাপ নাকি? আমার কথার জবাবে সে মৃদু হাসলো। আমার কোমড়ে আলতো করে হাত রেখে বললো,
— জানো তো? নারীর মন আর প্রকৃতির
গতিবিধি বোঝা বড় দায়।ঘটনাক্রমে যদি আমি চলে যাই;তাহলে কি আমায় ভুলে যাবে? ডীম লাইটের আবছা আলোয় আমি তার চেহারায় স্পষ্ট বিষন্নতা লক্ষ্য করলাম। আমি বললাম,
— ভুলে যাওয়া কি এতই সহজ? আর এতো সহজে ছেড়ে যেতে দিচ্ছিনা।
— হু ছেড়ে যাওয়া যে বারণ! বলেই সে হাসার চেষ্টা করলো।
কিন্তু এই হাসি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোনটা কৃত্তিম হাসি আর কোনটা অকৃত্তিম সেটা বুঝার ক্ষমতা আমার বেশ আছে। তবুও আমি তাঁর মন খারাপের কারণ টা জানার বৃথা চেষ্টা করলাম না। থাকুক না সে নিজের মতো! সকাল ন’টার দিকে রিফাত বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। আমাকে কিছু বলতে চেয়েও বোধহয় পারছে না।ভয়ার্ত চোখে বারবার উশখুশ করছে। শেষমেশ জিজ্ঞেস করলাম,
– কিছু বলবে? এমন করছো কেনো?
আমার কথায় সে কিছুটা সাহস পেলো বলে মনে হলো। আমার দুইহাত একত্রে মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের হাতে নিয়ে নির্লিপ্তভাবে বললো,
— আমার উপর ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। দেখলেই ক্রসফায়ার! হালিশহর এলাকায় দুটো খুন আর অস্ত্রের ব্যবসার জন্য পুলিশ আমাকে সহ কয়েকজনকে সন্দেহ করছে। ট্রাস্ট মি নিধি, আমি এসবের কিছুই জানিনা।আজকেই নিউজটা শুনলাম। রাজনীতি করি বলে বিপক্ষদলের নেতাকর্মীরা আমাকে ফাঁসানের চেষ্টা করছে। রিফাতের কথাগুলো শুনে আমি কোন জবাব দিতে পারলাম না। নির্বাক হয়ে নিরুত্তর চাহনীতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বললাম,
— কি বলছেন আপনি! আপনাকে আমি বারবার নিষেধ করেছিলাম,এসব রাজনীতির দরকার নেই আমার। কেন আপনি আমার কথা শুনেননি! কেনো! বলতে বলতে আমি অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে ওর বুকে আছড়ে পরছিলাম। জাবাবে রিফাত ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,
— ভেঙে পড়ো না নিধি! কিচ্ছু হবেনা। আমার এখন যেতে হবে।না হয় ওরা এখানে চলে আসবে। আর, আমার ফোন বন্ধ থাকবে। আমিই তোমাকে কল দিয়ে যোগাযোগ করবো। আমি ওকে আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বললাম,
— প্লিজ আপনি কোথাও যাবেন না।
— পাগলামি করো না নিধি।আমাকে যেতে হবে। হাতটা ছাড়িয়ে সে আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে দ্রুতপদে প্রস্থান করলো। ভালোবাসায় মোড়ানো শেষ চুমু যে সেটাই হবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। পুরো দিনটাই উৎকন্ঠায় কাটানোর পর সন্ধ্যা নেমে এলো। তবুও রিফাতের কোন খোঁজ নেই।ফোনটাও অন করেনি।প্রতিটা মুহুর্ত যেন একেকটা দিন মন হচ্ছে আমার কাছে। ঘন্টার পর ঘন্টা কোন এভাবে নিখোঁজ! রাত ১২ টার দিকে হঠাৎ মায়ের চিৎকারে আমি পাগল প্রায় হয়ে মায়ের রুমে গেলাম। টিভির স্ক্রিনে ব্রেকিং নিউজের হেডলাইনে বড় বড় করে লেখা।
চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় অস্ত্র ব্যবসায়ী সন্দেহের তালিকাভুক্ত রিফাত শেখ কে র্যাবের ক্রসফায়ার! বিস্তারিত আসছে। নিউজটি দেখেই আমি মুহুর্তেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম।বুকের মধ্যে যেন কাল বৈশাখী ঝড় আচমকা স্বজোরে ধাক্কা দিয়ে গেলো। শুধু চোখ দিয়ে জল বেরুচ্ছে না। নড়তে পারছিনা,নড়ার শক্তি যেন কোন অশুভশক্তি কেড়ে নিয়েছে। মাথাটা ঝিমঝিম করে অচেতন হয়ে ফ্লোরে ঢলে পড়ে গেলাম যখন জ্ঞান ফিরে তখন চারিদিকে মানুষের সমাগম। আমার পাশে কয়েকজন অপরিচিত মেয়ে আমার হুশ ফিরানোর চেষ্টা করছিল। তাড়াতাড়ি ওঠে বসলাম। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বললাম,
— তোমরা কারা? দুই-তিন জন মেয়ে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। তারপর একজন আমতা আমতা করে বললো,
— নিধি,তুই আমাদের চিনতে পারছিস না?
আমি তাদের কথার কোন জবাব দিলাম না। হঠাৎ টিভির নিউজের কথা মনে হতেই আমি কেঁদে পাগলের মতো বাইরে ছুটে গেলাম। বাড়ির উঠানের এক কোণে একটা খাটিয়াতে অঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন আমার রিফাত!পাশে তার কয়েকজন বন্ধু আর বাবা দাঁড়িয়ে চোখের জ্বলের সাথে লুকোচুরি খেলছে। আমি দৌড়ে গিয়ে বাবার হাত ধরে বললাম,
— বাবা! আমার রিফাত কই? ওর কিচ্ছু হয়নি বাবা। তোমরা ওকে ডাক্তার কাছে নিয়ে যাওনা বাবা। কয়টাই তে গুলি লেগেছে,ঠিক হয়ে যাবে বলোনা বাবা! কেন জানিনা বাবা আমার বুকের ভেতর ঝড় চালানো আর্তনাদ টা হৃদয়ঙ্গম করতে পারলোনা। আমার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে ভঙ্গুর কণ্ঠে বললো,
— ও আর ফিরে আসবেনা মা! ফিরে আসবেনা।দেহটাই আছে। ভেতরের প্রাণ পাখিটা যে খোদার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছে মা!
বাবার সেই কথা আমার কানে ভয়ংকর নিষ্ঠুর শুনালো। চিৎকার করে বাবাকে দূরে ঠেলে দিয়ে আমি খাটিয়ার পাশে হাঁটু গেড়ে বসলাম। রিফাতের কপালের ঠিক মাঝখানে একটা ফুটো!গুলির চিহ্ন! ও যাতে ব্যাথা না পাই সেভাবে মুখে হাত দিলাম। কেউ বাঁধা দিল না। তারপর আস্তে আস্তে নেড়ে নেড়ে বললাম,
— আপনি না বলেছিলেন “ছেড়ে যাওয়া বারণ ” তাহলে? তাহলে কেন ছেড়ে গেলেন? আপনাকে ওঁরা ডাক্তার দেখাইনি না? আমি ওদের কাউকে ছাড়বোনা। কাউকে না! আপনি উঠুন প্লিজ!একবারের জন্য! আবার শুয়ে পড়বেন! কি হলো উঠুন না।আমি অভিমান করলে ভাঙ্গাবে কে?
ভেতর থেকে কয়েকজন মহিলা এসে আমাকে একপ্রকার টেনে হিঁচড়ে সেখান থেকে নিয়ে গেল। তবুও ঘুম ভাঙলোনা রিফাতের। রিফাতের পেন্টের পকেটে পাওয়া একটা ছোট চিরকুট মা আমাকে দিল। সেখানে রিফাতের কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা, মৃত্যুকে সামনে রেখে আমি মিথ্যা কথা বলবোনা নিধি, তোমার স্বামী কখনো অস্ত্র ব্যাবসায়ী এবং খুনি ছিল না। অন্তত নিজেকে কখনো ছোট মনে করোনা এই কারণে যে, তোমার স্বামী খারাপ কাজের জন্য মারা গেছেন। তোমার স্বামী সবসময় নিষ্ঠাবান ছিল।আমি জানতাম তোমার গর্ভে আমার সন্তান রয়েছে।এনিভার্সারিতে সারপ্রাইজ দিবে বলে বলোনি। কিন্তু আমি জানতাম।তোমার খুশিটা আমি নষ্ট করতে চাইনি।আমার অনাগত সন্তানের সব দায়িত্ব তোমার।আমার আদর্শে তাকে বড় করবে। কখনো মন খারাপ হলে এই চিঠিখানা বুকে নিও একটু। আমার আত্মা শান্তি পাবে।ভালো থেকো।
ইতি
তোমার রিফাত
চিঠিটা পড়ে আমি মুষড়ে পড়ে মাকে জড়িয়ে ধরে স্বজোরে চিৎকার করে উঠলাম,
— তাহলে কি ও সত্যি সত্যি মারা গেছে মা? এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হলো!
আমার আর্তনাদে সেদিন কাঁদেনি এমন কেউ ছিলোনা।উপস্থিত সকলে নিরবে চোখের জ্বল মুছেছিলো।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে আকাশটাও বোধহয় কাঁদতে ভুলেনি।আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে শুধু এক অদ্ভুত বার্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। আমার শুধু একটাই অভিযোগ! ছন্নছাড়া এই আমি’কে সামলাবে কে? ছেড়ে যাওয়া বারণ বলার পরও কেন ছেড়ে চলে গেলো? আমিতো কোন অপরাধ করিনি! তবে কেনো?
(সমাপ্ত)