প্রচন্ড গরম, সময়টা বিকাল ৩টার কাছাকাছি, দাড়িয়ে আছি সিলেটের কোনো একটা মার্কেটের একটা জুয়েলারি দোকানের ফ্যানের নিচে। দোকানের মালিকের সাথে টুকটাক কথা বলতেছি আর সেই সাথে ফ্যানের বাতাসটা ঘায়ে মেখে শরীরটা কিছুটা শীতল করার চেষ্টা করতেছি। ঠিক তখনি এক ভদ্র মহিলা প্রবেশ করলেন দোকানে। দেখতে বেশ ভালোই, কোনো মধ্যবিত্ত পরিবারের স্ত্রী না তা ওনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। দোকানে প্রবেশ করেই, মহিলা কি যেন খুজতেছেন এদিক সেদিক, মনে হচ্ছে ওনার কাঙ্ক্ষিত জিনিটা খুজে পাচ্ছেন না। হ্যা তাই, জিনিসটা খুজে না পেয়ে বাধ্য হয়ে দোকানদারকে বললেন চুড়ি দেখান ত,
☞দোকানদার:- কেমন চুড়ি দেখাব একটু বলেন, আর এইযে আমার সামনেই অনেক চুড়ি আছে।
☞ভদ্র মহিলা:- হুম এগুলো ত দেখছিই, এগুলোর দাম মোটামুটি ভালোই হবে, এগুলো না।
☞দোকানদার:- তাহলে কেমন চুড়ি দেখাব বলেন?
☞ভদ্র মহিলা:- বাসার কাজের বোয়াদের চুড়ি দেখান, কাজের বোয়াকে দিব। এতটুকু শুনার পর যা হল, যা শুনলাম তার জন্য আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না।
☞দোকানদার:- আমার সামনে যে চুড়ি গুলো দেখতেছেন সেগুলো কি কাজের বোয়ারা ব্যবহার করতে পারবে না?
☞ভদ্র মহিলা:- আরে এত দামের চুড়ি কাজের বোয়াদের দিব নাকি, কাজের বোয়াদের চুড়ি দেখান আপনি।
☞দোকানদার:- এগুলো কি তাহলে আপাার ব্যবহারের মত, মানে আপনি এরকম চুড়ি ব্যবহার করতে পারবেন?
☞ভদ্র মহিলা:- হুম অবশ্যই, চুড়ি গুলো অনেক ভালো আর সুন্দরও…..
☞দোকানদার:- জানেন কাল সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর যে পরিচ্ছন্নকারি শ্রমিক আছে, যারা শহরের ড্রেন গুলো সহ সব ধরনের আবর্জনা পরিস্কার করে, সেই ব্যক্তিদের মধ্যে একজন এসে তার স্ত্রীর জন্য আপনার সামনে রাখা, আপনার ব্যবহারের উপযোগী চুড়ি গুলো থেকে বাছাই করে সব থেকে সুন্দর চুড়িগুলো নিছে।
☞ভদ্র মহিলাম:- (রেগে গিয়ে) আপনি এত কথা বলতেছেন কেন? আপনাকে বলছি বোয়াদের চুড়ি দেখাতে আপনি বোয়াদের চুড়ি দেখান।
☞দোকানদার:- আমার এখানে মহিলাদের চুড়ি আছে, কোনো চুড়িতে বোয়া লেখা নাই। আপনার হাতে যেগুলো ডুকবে সেগুলো বোয়ার হাতেও ডুকবে, দিবেন যেহেতু একটু ভালো দেখেই দেন, আপনি এখান থেকেই নেন।।।।
মহিলাটি ভালো করেই বুঝতে পারলেন তাকে অপমান করে কথা বলতেছে দোকানদার,
☞ভদ্র মহিলা:- ঐ মিয়া তুমি জান মাসে কত টাকা দেই বোয়ারে? ঈদে বোয়ার মা সহ সবাইরেই কাপড় জুতা সব দিতাছি। তুমি কি মনে করছ আমারে? ( কথা গুলো রেগেই বললেন তিনি)
☞দোকানদার:- তারা সারা বছর আপনার বাসার সব কাজ করে, এগুলো তাদের প্রাপ্য, তাই দিতেছেন, তা না হলে দিতেন না। আর আপনি যে কেমন জুতা কাপড় দিছেন তা ত এখনি বুঝলাম। মনটারে বড় করেন, বোয়ারাও আপনার মত মানুষ, সারা বছরে ত এই একবারই দিতেছেন।
☞ভদ্র মহিলা:- তর দোকানে আসাই ভুল হইছে, বেয়াদব একট আরো অনেক কিছু বলতে বলতে দোকান থেকে বের হয়ে গেল। দোকানদারও অনেক কিছু শুনিয়ে দিল। মহিলা চলে যাওয়ার পর,
☞দোকানদার:- ভাই বোয়ারা কি আমাদের মত মানুষ না?
☞আমি:- হ্যা, কিন্তু আপনি যে এখন বাজে ব্যবহার করে কাস্টমার হারালেন,
☞দোকানদার:- আমার মাথাটাই নষ্ট করে দিছে, এমন কাস্টমার না হলে আমার ব্যবসা চলবে ভাই।
মানলাম এত দাম দিয়ে চুড়ি দিবে না, আমাকে ভালো করে বললেই হত যে ভাই একটু কম দামের মধ্যে চুড়ি দেখান বোয়াকে দিব। অনেক কিছু দিচ্ছি ত তাই দামি জিনিস দিতে পারতেছি না। আমি কম দামের মধ্যে দেখাতাম, তা না ওনি আমাকে বলে বোয়াদের চুড়ি দেখাতে, মেজাজটাই খারাপ করে দিল। বলেন ত ভাই আমার শার্টে বা আপনার টি-শার্টে কি লেখা আছে এটা রাস্তার লোকের জন্য নাকি দোকানদারের জন্য?
☞আমি:- কিছুই লেখা নাই, যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে।।।।।
☞দোকানদার:- জানেন এদের মত মন মানসিকতার মানুষের জন্য আমাদের দেশের উন্নতি হয় না।
আমার খালা লন্ডন থাকে, সেখানে একজন ডাক্তারের বাসায় কাজ করে, ভালো টাকা বেতন দেয়, আর সেই মানুষ গুলোর ব্যবহার এত ভালো যে মাঝে মাঝে আমাদের সাথেও কথা বলে। আমাদের দেশে ত ফোন দিয়ে কথা বলা ত দূরের কথা, বোয়ার বাড়ির মানুষ কেমন আছে তা ই কখনো জানতে চাইবে না।
☞আমি:- সব সময় মজা করি, এবারও মজা করে বললাম আপনি কি তাদের কথা বুঝেন বা আপনার কথা তারা বুঝে?
☞দোকানদার:- না, তারা কি বলে সেটা খালা আমাকে বুঝিয়ে বলে, আর আমি যেটা বলি খালা তাদের বলে। তারা সেটা শুনে মোবাইলের সামনে বসে হেসে হেসে কথা বলে আমাদের সাথে এটাতেই আমাদের কতটা ভালো লাগে বলে বুঝাতে পারব না ভাই।।।।।
এবার আমি নিরব হয়ে গেলাম, কারন এতক্ষন দোকানদার যা যা বলল সব সত্য, তার চোখ বলতেছে সে একটা কথাও মিথ্যা বলেনি প্রতিটা কথা তার ভিতর থেকে বের করে আনছে। হ্যা কথা গুলো সত্য, আমাদের দেশের মানুষের মত ভিন্ন দেখের মানষু গুলো এত টাকা বা ধন-সম্পদের অহংকার করে না, ধনী- গরিবের মধ্যে এত পার্থক্য করে না, আমাদের মত এত হিংসা, এত অহংকার নাই তাদের মনে। আর সে জন্যই তারা আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে দোকানদারের প্রতিটা কথা আমার কাছে ভালো লাগছে, ধন্যবাদ দেওয়ার মত ভাষা খুজে পেলাম না আমি। আমি আমার কাজ শেষ করে বের হয়ে আসার সময় হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে আসলাম ভালো থাকবেন। দোয়া করি আপাার ব্যবসার অনেক উন্নতি হোক।।।।
“সমাপ্ত”