আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে প্রায় ৯৯.৯৮% ফ্রেন্ডই বাংলাভাষী, আমার ফ্রেন্ড লিস্টে বেদেশী বন্ধু তেমন একটা নেই বললেই চলে। অপেক্ষমান বন্ধু তালিকায় সবার উপরের নামটি ছিলো “ডানা ব্রোকেন”। ডানা ব্রোকেনের রিকুয়েস্ট একসেপ্ট না করা সত্ত্বেও, সে আমার জি-মেইল এড্রেস চেয়ে আমাকে নিয়মিত ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ করছে।
বারবার জি-মেইল এড্রেস চাওয়াতে আমি কৌতুহুলি হয়ে তার রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করলাম, এবং তাকে আমার জি-মেইল এড্রেস দিলাম। তাকে জি-মেইল এড্রেস দেয়ার পর সে ম্যাসেজ করলো, চেক ইউর জি-মেইল ইনবক্স। দ্রুত জি-মেইল আইডি ওপেন করলাম, ওপেন করে দেখি তার দুটি ছবি সহ বিশাল বড় ম্যাসেজ!
ম্যাসেজের বিস্তারিত হলো, সে একজন ইতালিয়ান, সিরিয়া বেড়াতে গিয়ে যুদ্ধের কবলে পড়ে, তার বাবা মা সহ পরিবারের সবাই নিহত হয়েছেন। বর্তমানে সে একা, আমার প্রোফাইল চেক করে আমাকে নাকি তার খুব বিশ্বস্ত মনে হযেছে। ইতালিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকে তার বাবার একাউন্টে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা রয়েছে।
উক্ত একাউন্টের একমাত্র নমিনী সে নিজে, এখন এ টাকার জন্য তার জীবন সম্পূর্ণ অনিরাপদ, তার চাচা ও কাজিনরা এ টাকার লোভে তাকে হত্যা করে পুরো টাকাটা আত্মসাৎ করার ধান্ধায় লিপ্ত রয়েছে। এখন সে এ টাকাগুলো আমার একাউন্টে ট্রান্সফার করতে চায়। টাকাগুলো আমার একাউন্টে ট্রান্সফার করে যদি আমি তার উপকার করি তাহলে সে আমাকে উক্ত টাকার ৪৮% ভাগ দিবে, তার ৫০% এবং বাংলাদেশ সরকারের কর বাবদ ২% অতিরিক্ত থাকবে।
আমি তার প্রথম ম্যাসেজের কোন রিপ্লে দিলাম না, রিপ্লে না দেয়ার কারনে সে আমাকে বারবার নক করতে থাকে। অবশেষে বিরক্ত হয়ে তাকে আমার একাউন্ট নাম্বার দিলাম। একাউন্ট নাম্বার দেয়ার পর সে আমাকে ইতালিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের এড্রেস দিলো, এবং আমাকে বললো ইতালিয়ান সেন্ট্র্রাল ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য। আমি বললাম তাদের সাথে যোগাযোগ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, সে আমাকে ইতালিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের জি-মেইল এড্রেস দিয়ে বললো এই এড্রেসে ম্যাসেজ করার জন্য।
পরে আমি অপারগতা প্রকাশ করলে সে আমাকে বললো আমার কিছুই করতে হবে না, শুধু ইতালিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে আমাকে যেই মেইল পাঠাবে, আমি যেনো সেটা তাকে ফরোয়ার্ড করে দেই, এর পরিবর্তে যা লিখতে হবে সেটা সে আমাকে লিখে পাঠাবে।
পরে আমি সেটা ফরোয়ার্ড করে ইতালিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকে পাঠিয়ে দেবো। তার শর্তে রাজী হলাম, এবং সেভাবেই সব কাজ চলছিলো, আমি ইতালিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকে মেইল করি, তারা আমার মেইলের রিপ্লে দেয়, ১৪০০ কোটি টাকা আমার একাউন্টে ট্রান্সফার করার কার্যক্রম ধাপে ধাপে এগুচ্ছে। এক পর্যায়ে ব্যাংক বলছে, সামান্য একটু আইনী জটিলতা রয়েছে, সে জন্য এডভোকেট মাইকেল পলের সাথে যোগাযোগ করতে হবে, তার সাথে যোগাযোগ করলে সমস্যাটা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
ডানা ব্রোকেন আমাকে এডভোকেট মাইকেল পলের মেইল এড্রেস দিলেন, মাইকেল পলের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বললেন তিনি জরুরী কাজে ১ মাসের জন্য ফিলিপাইন গেছেন, আমার কাজটা জরুরী মনে করলে আমি যেনো ফিলিপাইন গিয়ে তার সাথে দেখা করি। ব্যাপারটা ডানা ব্রোকেনকে জানালে, ডানা আমাকে ফিলিপাইন যাওয়ার জন্য বললেন, আমি বললাম ফিলিপাইন যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না, আমাকে দিয়ে এ কাজ হবে না, তুমি অন্য চেষ্টা করো।
ডানা আমাকে ছাড়লো না, ফিলিপাইন না গিয়ে মেইলের মাধ্যমেই এডভোকেটের সাথে সমাধানের কিছু কৌশল শিখিয়ে দিলেন। কৌশল কাজে লাগলো, এডভোকেটের ঝামেলা মেইলের মাধ্যমেই সেরে নিলাম। এবার আমাকে অনেকগুলো ফরম দেয়া হলো, যেগুলো পুরন করা অনেক কঠিন ছিলো। ফরমগুলোকে ইডিট করে, সেগুলোতে আর্ট করে লিখতে হতো, কোন টাইপ করা যায় না, বিশাল ঝামেলা।
আবার আমার ব্যাংকের সুইফট কোড দিতে হয়েছে, সুইফট কোড সংগ্রহ করাটা ছিলো অনেক কষ্টদায়ক। যাক তারপরও সবকিছু যথাযথ ভাবে পাঠালাম। ৯০% কাজ শেষ করলাম। অবশেষে ওয়েস্টার্ন ইউনিওনের প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষরিত ১৪০০ কোটি টাকা স্থানান্তরের কনফার্মেশন লেটার পেলাম।
কিন্তু টাকাগুলো আমার একাউন্টে স্থানান্তর করতে হলে, স্থানান্তর ফি বাবদ আমাকে ২৮০০ ডলার প্রদান করতে হবে, বিষয়টা ডানাকে জানালাম। সে আমাকে ২৮০০ ডলার পরিশোধ করে টাকাগুলো আমার একাউন্টে স্থানান্তর করে নিয়ে আসার অনুরোধ করতে লাগলো। আমি কিছু রহস্যের গন্ধ খুঁজে পেলাম। আমি বললাম দেখো, আমি গরীব মানুষ, এত টাকা পরিশোধ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আমি এটা পারবোনা, তুমি অন্য কাউকে দিয়ে চেষ্টা করো। সে বলল না এখন আর অন্য কাউকে দিয়ে সম্ভব না, সব কিছু তোমার নামে হয়ে গেছে। আমি বললাম দেখো, আমি জাস্ট তোমাকে হেল্প করতে চেয়েছি, কিন্তু টাকা পয়সা দিয়ে কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তুমি বরং তাদেরকে বলে দাও তাদের ফি টা কেটে রেখে বাকী টাকাগুলো ট্রান্সফার করে দিতে।
ডানা বললো এটা কখনো দিবেনা, আমি বললাম ২৮০০ ডলার দেয়াও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ডানা বলল তুমি কিছু হলেও দিয়ে টাকাগুলো নাওনা, আমি বললাম ২৮০০ ডলার না দিতে পারলে কিছু দিলেও যদি হয়, তাহলে তাদের ফুল খরচটা কেটে রেখে বাকী টাকাটা পাঠাতে সমস্যা কোথায়??? ডানা বললো এভাবে দিবেনা, তুমি কিছু হলেও দিয়ে পাঠাও….. তখন আমি পুরোপুরি বুঝে গেলাম, ধান্ধাবাজের ফাঁদে পড়েছি, যা নিতে পারে তাই লাভ।