বিসিএস ক্যাডার

বিসিএস ক্যাডার

ঐশির সাথে আমার সম্পর্কটা অনেক বছরের। প্রচন্ড ভালোবাসি একে অপরকে। সবকিছু ভালোই চলছিলো, কিন্তু হঠাৎ কয়েকদিন আগে থেকে তার মা-বাবা তার জন্য পাত্র খোঁজা শুরু করে। আমার ঐশি এতই সুন্দর যে পাত্র খোঁজা শুরু করার কয়েকদিনের মধ্যেই তার জন্য ছয় থেকে সাতজন বিসিএস ক্যাডারের প্রস্তাব এসে যায়।

আর এদিকে এসব ঘটনা শুনে আমার অবস্থা বারোটা। একে তো চেহারা আমার বাংলা পাঁচ। তার উপর লেখালেখি ছাড়া কিছু পারিনা। ভালো জবও নেই। পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিয়ে ঐশি তার বাবাকে আমার কথা বলে দিলো।
তার বাবা আমার সাথে দেখা করতে চাইলেন। কোন মুখ নিয়ে যাবো আমি নিজেই জানিনা। কোথায় আমি বেকার, আর কোথায় একজন বিসিএস ক্যাডার! তারপরও কোনোভাবে সাহস যুগিয়ে গেলাম ঐশির বাবার সামনে। ঐশির বাবাকে সালাম দিয়ে চুপচাপ নববধূর ন্যায় ঐশির বাবার সামনে বসে পড়লাম। ঐশির বাবা বাকের ভাইয়ের মতো গলায় আমাকে বললেন,

~ আচ্ছা, তো তুমি সেই ছেলে যে আমার মেয়ের সাথে প্রেম করেছে। তো, জব করো?
— না, আংকেল, স্টুডেন্ট আমি।
~ বিএমডব্লিউ, ল্যাম্বারগিনি কিছু আছে? গাড়ি কি ইউজ করো?
— ওয়ালটন বাইক আছে। আমার পণ্য আমার দেশ, গড়বো বাংলাদেশ।

~ চুপপ! আমার মেয়েকে বিসিএস ক্যাডারের সাথে বিয়ে দিচ্ছি। তার গাড়ি, বাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স সবকিছু আছে। আর তুমি! জবও করোনা। কোন মুখে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে আসছো? তোমার মধ্যে হাজার ফল্ট আছে। কিন্তু একটা বিসিএস ক্যাডারের কোনো ফল্ট নেই। তুমি যদি আমাকে কোনো বিসিএস ক্যাডারের একটা ফল্ট দেখাও, তাহলে আমি এক্ষুনি আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিবো। আমি চুপ করে রইলাম। আমার বলার কিছু নেই। কারন বিসিএস ক্যাডার সম্পর্কে আমি কিইবা বলবো?

~ দেখেছো তোমার নিস্তব্ধতা বলে দিচ্ছে যে বিসিএস ক্যাডারই আমার মেয়ের জন্য পারফেক্ট।

আমি এখনো চুপ হয়ে বসে আছি। হঠাৎ আমার মোবাইলে আমার বন্ধু জামালের কল আসলো। আমি কেটে দিলাম। কিন্তু মোবাইল স্ক্রিনে ‘জামাল’ নামটা দেখার পরই আমার সাথে সাথে মনে পড়লো আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় প্রাণপ্রিয় জামালপুরের ডিসির কথা। আমি তাৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালাম। আর দাঁত বত্রিশটা বের করে ঐশির বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,

— আংকেললল! ইউ রিমেম্বার জামালপুরের ডিসি? হুস চরিত্র ইজ ফুলের মতো পবিত্র? হি ইজ অলসো এ বিসিএস ক্যাডার। হা হা হা হা।

আমার কথা শুনে আংকেল আর স্থির থাকতে পারলেন না। যে গর্তে আমাকে ফেলতে চেয়েছিলেন, সে গর্তে সে নিজেই পড়ে গেলেন। অতপর আমার আর ঐশির বিয়ে হয়ে গেলো। খুব সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলাম আমরা। আমাদের ফুটফুটে একটা ছেলে সন্তানও হলো। আজ প্রায় ৩০ বছর পর। আমার বত্রিশটা দাঁতের মধ্যে প্রায় ষোলটা পড়ে গিয়েছে। ঐশিও এখন ঠাকুমার ঝুলি’র ঠাকুমার মতো হয়ে গিয়েছে। আর এদিকে আমাদের সেই ফুটফুটে সন্তানটা পড়াশোনা করে সদ্য বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। তার বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছে। আজ আমার আর ঐশির একমাত্র ছেলের বিয়ে। আমার ছেলে আর তার হবু স্ত্রী স্টেজে ছবি তুলছে। হঠাৎ সেই সময় এন্ট্রি হলো এক ছেলের। যে এসে বললো, ‘না! এ বিয়ে আমি হতে দিবো না।’ আমার ছেলের হবু শশুর এসে ছেলেটাকে এক থাপ্পড় দিয়ে বললেন,

~ তুই আমার মেয়ের পিছু ছাড়বিনা?

— না, আমি আপনার মেয়েকে খুব ভালোবাসি।

~ চুপ! আমার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে একজন বিসিএস ক্যাডারের সাথে, তোর কি আছে? তোর যোগ্যতা আছে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার? এদিকে আমি আর ঐশি দূর থেকে বসে বসে দেখছি সবকিছু। এই সিচুয়েশনটা আমাদের কেমনজানি চেনা চেনা লাগছে। যায় হোক, সেই ছেলেটি আমার ছেলের হবু শশুড়কে বললো,

— আমি বিসিএস ক্যাডার না, কিন্তু আমার মধ্যে কি ফল্ট আছে? আমার ছেলের হবু শশুড় বললেন,

— তোর ফল্ট বাদ দে। তুই বিসিএস ক্যাডারের ‘বি’ও হতে পারবিনা। তুই বিসিএস ক্যাডারের একটা ফল্ট দেখা। যদি দেখাতে পারোস তাহলে আমি এক্ষুনি এই বিয়ে ভেঙে তোর হাতে তুলে দিবো আমার মেয়েকে। ছেলেটি কিছুক্ষণ চুপ ছিলো। একটু পর ছেলেটার একটা কল আসলো। সে কলটা রিসিভ করলো না। কিন্তু কল টা কেটে দেয়ার পর তার মুখে এক অদ্ভুদ খুশির ছাপ দেখতে পেলাম আমি আর ঐশি। আর হঠাৎ সেই ছেলেটা বলে উঠলো,

— আংকেললল! লং টাইম এগো, দেয়ার উয়াজ এ ম্যান হু ওয়াজ দ্যা ডিসি অফ জামালপুর। এন্ড হিস চরিত্র ওয়াজ ফুলের মতো পবিত্র। হি হি হি হি। অতপর আমার ছেলের হবু শশুড় তার মেয়েকে ঐ ছেলের হাতে তুলে দিলেন। আর এদিকে আমার আর ঐশির একমাত্র বিসিএস ক্যাডার ছেলেটার বিয়ে হতে হতেও হলোনা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত