প্রত্যেকবার বয়ফ্রেন্ডের বার্থডে তে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে শেষমেস সব ঘেটে যায়।ছেলেটা এতোই চালাক সব বুঝে ফেলে। প্রত্যেকবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হাবিযাবি গল্প শুনিয়ে লাস্টে যেই না সারপ্রাইজ দিতে নিয়ে যাই আর বলে,এখানেই বুঝি আমার বার্থডে সেলিব্রেট হবে!! আহা এ কেমন মানুষ বুঝলে চুপ থাকো বলার কি দরকার।মনে মনে আল্হাদে গদোগদো হও কে না করছে বাট আমার এতো পরিশ্রম সব ঘেটে দিতে কে বলছে!! যাই হোক এবার একদম কড়া প্ল্যান করেছি।বার্থডের আগের দিন থেকেই তুমুল ঝগড়া শুরু করবো।যেনো কিছুতেই বুঝতে না পারে আমি ওকে নিয়ে এবার আর কিছু ভাবছি না। রাতে কোনো রকম কথা বলে উইশ না করেই ঘুমিয়ে পরলাম।আহারে বেচারা ভাবছে হয়তো জন্মদিনের কথা ভুলেই গেছি।
সকালে কল দিতেই অহেতুক ঝগড়া শুরু করে দিয়ে বললাম,তোমার আগের বারের প্রোফাইল পিকে যে তোমার বান্ধবী লাভ রিয়েক্ট দিলো ওইটারে যেনো আমার সামনে না দেখি।চুল একটা থাকবে না তাহলে সারাজীবন টাকলা হয়ে ঘুরতে হবে। সে ঘুমঘুম গলায় বলল,কি বলছো এসব! কবের পিক তা নিয়ে এখন ঝামেলা করতেছো!!কি হইছে তোমার? আমি কি ওরে বলছি লাভ রিয়েক্টট দিতে! আমার কি দোষ এখানে! আমি রাগটাকে আরেকটু বাড়িয়ে বললাম,কে জানে কিভাবে কথা বলছো ওর সাথে নয়তো লাভ রিয়েক্ট কেনো দিবে! লাস্ট ঝগড়ার পরে পাসওয়ার্ড চাইনি বলে ভেবো না আকাশে উঠে গেছো। সে নিচু স্বরে বলল, আজকের দিনে এমন করতেছো আমার সাথে! সকাল টাই ঝগড়া দিয়ে শুরু করলা। আমি আরো রাগি স্বরে বললাম,আজকের দিনে কি হইছে! কোন মহাভারত জয় করছো তুমি!!
সে মন খারাপ করে বলল,না কিছু না। আমি আরো গালাগালি করে বললাম, ফোন দিবা না আমাকে আর।বলে কিছুক্ষন ফোন অফ করে রাখলাম।এইবার বুঝবা কেমন সারপ্রাইজ দেই।সারপ্রাইজ না হয়ে যাবা কই! সারাদিন আর কল দেই নি।বেচারাও কল দেয় নি আর।রাগ করছে,ভীষন দুঃখ পেয়েছে আহারে।সন্ধ্যায় সারপ্রাইজ পেলে সব ভুলে যাবে।মনের আনন্দে ফ্রেন্ডসদের সাথে প্ল্যানিং করে ফেললাম। সব কিছু ঠিকঠাক করে ওর ফ্রেন্ডকে কল করে বললাম, যেভাবেই হোক ওকে যেনো সন্ধ্যা বেলা নদীর ধারে নিয়ে আসে।নৌকার মধ্যে দারুন একটা আয়োজন করেছি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে বেচারার তো খবর নেই।ওর ফ্রেন্ডকে কল করে বললাম,ভাইয়া কই আপনারা কতক্ষন লাগবে আসতে!
সে মনমরা হয়ে বলল,ওর ফোন সুইচটড অফ বলতেছে।বাসায় গিয়েছিলাম আন্টি বলল যে সকালে বের হইছে এখনো আসে নাই। হায়হায় এখন! আমার এতো প্ল্যানিং এতো পরিশ্রমের কি হবে!এবার তো আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম। প্রায় পঞ্চাশবার কল দেয়ার পরেও ওকে পেলাম না।গালে হাত দিয়ে নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে অসহায়ের মতো বসে বসে ভাবছি কি ভাবলাম আর কি হইলো এইটা! সকালে ঝগড়া করার শাস্তি পাচ্ছি হয়তো। হঠাৎ কে যেনো পেছন থেকে চোখ চেপে ধরলো।বান্ধবী ভেবে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললাম,এমনিই দেখছিস মন মেজাজ বিগড়ে আছে তার মধ্যে ঢং শুরু করে দিছিস তোরা!! সামনে তাকিয়ে দেখি বয়ফ্রেন্ড দাঁড়িয়ে আছে।দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।চোখ কপালে তুলে বললাম,তুমি একা কিভাবে আসলা এখানে!! মুচকি মুচকি আসছে কিন্তু কিছু বলছে না।
আমি রাগি ভাব নিয়ে বললাম,যাক আসছো যখন তখন বলো আগে কেমন লাগলো সারপ্রাইজ! সে একটা হাসি দিয়ে বলল,তুমি মনে হয় ভুলে গেছো তোমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড আমার কাছে আছে।বান্ধবীদের সাথে যে গ্রুপে আমার বার্থডে নিয়া প্ল্যান করলা সবই দেখে ফেলছি আমি।বন্ধুরা কেউ পারলো না এতো বছর যাবত সারপ্রাইজ দিতে।আগে থেকেই সব বুঝে ফেলতাম।আর এতো কাচা বুদ্ধি নিয়ে আসছে আমাকে সারপ্রাইজ দিতে। আমি বোকার মতো হা করে তাকিয়ে আছি।মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হচ্ছে না।নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম।
সে জোরে হাসতে হাসতে বলল,সরো এখন কেক কেটে খেয়ে নেই ভীষন ক্ষুধা লাগছে।