আমার বিয়ের দুদিন আগে থেকে পারার সব ভাবি আর আমার বিবাহিত বান্ধবীগুলা আমাকে নানান ভাবে স্বামি সম্পর্কে ধারনা দিতে লাগলো,,,,,,
যেমন,,,,
বিয়ে তো করছিসই স্বামিরা কখনো মনের মত হয় না। আর শশুর বাড়ি সে তো বিয়েটা হলেই বুঝবি। স্বামী বাসর রাতেই তোকে নাজেহাল করে ছারবে। তারওপর তো প্রতিদিন রাতে বাসাই দেড়ি করে ফেরা। সাথে নেশা করা, ২/৩ টা মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করা। বউয়ের সাথে হুদাই আজাইরা বিষয় নিয়ে ঝগড়া করা। প্রতিদিন গাদিগাদি কাপর কাচা। শাশুড়ীর চিল্লাচিল্লি। শশুরের কথাই কথাই দমক দেওয়া। আর স্বামী হারামিটা তো কখনো কোন বিষয়ে প্রতিবাদ করবে না। সব সময় ছোট খাটো বিষয় গুলো নিয়ে মারধর করা। কথা না শোনা। তোর পছন্দের চাওয়া পাওয়ার দাম না দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। হুম স্বামীরা আসলে এমনি হয়। আর শশুর বাড়ি সে আর কি বলবো।
ভাবি আর বান্ধবীদের মুখ থেকে এসব কথা শুনে বিয়ের প্রতি টানটা বেড়ে গেল। স্বামীরা তাহলে এমনি হয়। বাহ বাহ আলাদা রকম একটা পরিবেশ হবে তাইলে।
আজ আমার বিয়ে হয়েছে। বাসর ঘরে চুপচাপ বসে আছি। কিন্তু স্বামী শো পিচটার কোন খবরি নাই। তার ওপর এই ভারি ভারি গয়না আর শাড়িতে গরমে সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। অনেকটা বিরক্তি নিয়ে উঠে চেঞ্জ করতেছি, শাড়িটা খুলেছি মাত্র এর মধ্যেই আমার স্বামি দরজায় খট করে শব্দ করে ভিতরে এল।
অনেকটা তারাহুরো করে শাড়িটা কোন রকমে শরিরে জরিয়ে নিয়ে বললাম, কি ব্যাপার লজ্জা সরমের মাথা খাইছেন নাকি। আমার কথা শুনে স্বামী বলল, আচ্ছা তুমি চেন্জ করে নাও আমি পরে আসছি।
চেন্জ করে খাটে উঠে বসে আছি। একটু পরেই স্বামি এলো। এসে আমার সাথে মিষ্টি মিষ্টি গল্প করতে লাগলো অনেক আদরও করলো। কিন্তু নাজেহাল করলো না। তাহলে কি আমার বরটা স্বামী হয়ে উঠতে পারলো না। স্বামিকে নিয়ে খুব টেনশনে পরে গেলাম।
বিয়ের কয়েকদিন পর স্বামি আমার অফিসে গেল। আমি তো বেশ আয়েশ করে টিভি দেখছি কেননা স্বামি তো দেরি করে বাসাই ফিরবে।
কিন্তু একি স্বামি তো আমার রাত ৮ টাই ই বাড়ি ফিরে এলো। আমার টেনশন ও বেড়ে গেল না একে তো স্বামি স্বামি মনে হচ্ছে না। কই রাত ১২টা ১ টাই বাড়ি ফিরবে তানা।
আজ অনেক কয়দিন হয়ে গেল এখন অবদি স্বামীকে কখনো নেশা করতে দেখিনি। কিভাবে একে স্বামি বানানো যাই এটা নিয়ে মহা ঝামেলাই পরে গেলাম।
ফোন দিলাম আমার ট্যালেন্টেড স্বামি বিশেষজ্ঞ বান্ধবিকে।
হ্যালো, রিমা শোননা আমার স্বামিকে কিছুতেই স্বামি মনে হচ্ছে না। বাসাই ও তারাতারি ফেরে নেশা ও করে না। এখন কি করা যায় বলতো। বান্ধবি বলল,, নতুন নতুন তাই এমন করছে কিছুদিন যাক ঠিক স্বামী হয়ে উঠবে।
বান্ধবীর কথাই বুক ভরা আসা নিয়ে বসে আছি বর আমার কবে স্বামীতে পরিনত হয়।
আরো কিছুদিন চলে গেল। নাহ আমার স্বামী আমার সাথে রাগারাগি ও করে না মারধর তো দুরেই থাক। যখন যেটা চাই সেটাই এনে দেই। সব সময় আমার কেয়ার করে। স্বামীর ব্যাবহার দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে, আমাকে একটুও বকে না। কিভাবে যে একে স্বামি বানাই। টেনশনে রাতে ঘুম ও আসে না।
আর শাশুড়ী আম্মা ও চিল্লাচিল্লি করে না। নিজের মেয়ের মত ভালবাসে। শশুর আব্বা তো মা ছাড়া কথাই বলে না।
না ভাবিদের কথার সাথে স্বামী আর শশুর বাড়ির কোন মিল নাই। তাইলে কি আমি ঠিকঠাকমতো স্বামি আর শশুরবাড়ি পেলাম না।
নাহ এবার যা করার আমাকেই করতে হবে।
রাতে স্বামী বাসাই ফেরার সাথে সাথে বললাম, এখনি বাইরে গিয়ে দু বোতল হুইস্কি নিয়ে আসো।
আমার কথা শুনে বরটা ভ্রু কুচকিয়ে বলল,,তোমার শরির ঠিক আছে তো। যাও চুপচাপ শুয়ে পরো।
বরের কথা শুনে চুপচাপ শুয়ে ভাবছি একে কিভাবে স্বামি বানানো যাই।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে হুদাই চিল্লাতে লাগলাম যাতে বরটা আমার চুলের মুঠি ধরে ২টা কিল দেই।
কিন্তু ও তো কিছু করলোই না বরং মুখটা চেপে ধরে বলল,,এত জোরে কেউ চিল্লাই।
নাহ এভাবেও হল না স্বামী স্বামী মনেই হচ্ছে না। স্বামির কোন গুন ই নাই ওর মধ্যে। কি করে যে স্বামি বানাই।
আবারো রাতে বাড়ি ফিরলে বরকে বললাম, এত তারাতারি বাড়ি ফেরার কি দরকার। বান্ধবীদের সাথে ফুর্তি করে একটু দেরি করে বাড়ি ফিরবা।
কথাটা বলার সাথে সাথে গালের মধ্যে ঠাস করে একটা থাপ্পর মারলো। থাপ্পরটা খেয়ে এত্ত ভাললাগছে কি বলবো। ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে ভাবিকে ফোন দিয়ে বললাম।
ভাবি আজ আমার বরটাকে স্বামী স্বামী লাগছে। আমাকে কষে এক থাপ্পর দিছে, আমার যে কি ভাললাগছে না।
ভাবির সাথে কথা বলে রুমে এসে দেখি স্বামি আমার কার সাথে যেন রোমান্টিক ভাবে ভিডিও কলে কথা বলছে। যাকবাবা বরটা আমার শেষমেষ স্বামিতে পরিনত হইছে।
কিন্তু কথা বলার এক পর্যায়ে চুমাচুমিতে পৌছে গেছে। না এবার আর সয্য হচ্ছে না। আমার স্বামী স্বামী লাগবে না বর ই ভাল। বরের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে আছার দিয়ে, বরের কলার ধরে বললাম,,৷ আমি ছাড়া অন্যকোন মেয়ের দিকে তাকালে চোখ তুলে নেব।