ক্লাসের সবচাইতে অমনোযোগী আর ফাজিল ছেলে হল নীল। মাথাই লম্বা লম্বা চুল গুলা স্টাইল করে কাটা। হাতে স্টাইলিস ঘরি, সারাদিন গিটার হাতে টুংটাং কি সব গান গাই। কলেজের যত্তসব ন্যাকা মেয়েগুলা যেন নীল বলতেই গলে গলে পরে। সারাদিন নীলের গুনগান গাওয়া আর ওর পিছনে ঘুর ঘুর করাই যেন ওদের স্বভাব।
প্রথম যেদিন কলেজে আসি, ক্লাসে ঢুকেই দেখি নীল মাঝখানে বসে আছে আর ন্যাকা মেয়েগুলা ওর চার পাশে বসে গল্প করছে। আবার কি সব হিজিবিজি গান ও হচ্ছে। আমাকে দেখেই ওদের মধ্যে থেকে একজন বলল বর্ষা এখানে এসে বসো(পাশের ব্রেন্চের দিকে ইশারা করে)
ওর কথাই কান না দিয়ে আমি গিয়ে একা অন্য ব্রেন্চে বসাতে সবাই কিছুটা অবাক হয়েই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রতিদিন কলেজে এসে নীল আর ন্যাকা মেয়েগুলো থেকে এড়িয়ে চলি। সব গুলা ফালতু, লেখা পড়ার তো নাম গন্ধ নাই ই। সারাদিন খালি আড্ডা দেওয়া। এভাবেই কয়েকদিন চলে গেল।
পরদিন কলেজের গেটে পা দিতেই দেখি নীল গিটার হাতে সামনে দাড়িয়ে আছে, আর আমার দিকে হাবলার মত তাকিয়ে আছে। আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে। মেয়ে মানুষ কোনদিন দেখেনি নাকি? সারাদিনি তো মেয়ে পিছনে লেগেই আছে তাহলে?
ওর এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে কিছু বলতে যাব ঠিক তখনি নীল সামনে থেকে চলে গেল। এর পর থেকে প্রতিদিনি দেখতাম নীল আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে নিত। ক্লাসে, কলেজ মাঠে, লাইব্রেরিতে যেখানেই যাব দেখতাম তাকিয়ে আছে। আমি যেখানেই যায় সেখানেই ও কেমনে আসে এটাই বুঝিনা। আর ওকে দেখলেই কেন যানি আমার গা জ্বলতো। ফাজিল ছেলে একটা, ওর মত বাজে ছেলে আমি দুটো দেখিনি।
এভাবে দিনগুলো চলতে থাকলো। নীল শুধু প্রতিদিন একই ভাবে তাকিয়েই থাকতো, কখনো কিছু বলতো না। সবার সাথে দুষ্টুমি করত, মজা করতো,কলেজে যেন ওর বাবু, জানু, সোনা, ময়নার কোন অভাবি ছিল না।।
প্রাই ছ মাস এভাবে চলার পর, একদিন আমি হেঁটে হেঁটে কলেজে যাচ্ছিলাম। হটাৎ পিছন থেকে নীল,,,,,
-হাই আমি নীল।
-জানি।
-ওহ জানেন তাহলে তো ভালই। তা কেমন আছেন।
-ভাল।
-শুধু ভাল,আমি কেমন আছি জানবেন না?
-দেখতেই তো পাচ্ছি আশে পাশে গোটা দশেক মেয়ে নিয়ে ভালই আছেন। আর যার চারপাশে এত বাবু জানু সে খারাপ থাকবে কোন দুঃখে।
-ওহ আপনি এগুলো ও জানেন।
-না জানার কি আছে। আমরা তো মনে হয় একই কলেজে পরি তাইনা?
-হুম তা ঠিক, কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম যে আপনি লেখাপড়া ছাড়া কিছুই দেখতে পান না।
-আপনি আমাকে কতটা চেনেন?
-চিনিনা বলেই তো চিনতে চাচ্ছি।
-মানে?
-না কিছুনা,আপনি কি প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়েই কলেজে আসেন।
-জ্বি।
-শুধু জ্বি?
খুব রাগ হচ্ছিল। ওকে আমি দেখতেই পারিনা। তারপর ও কেন আমার সাথে কথা বলতে আসছে।
-এই যে শুনুন আপনার সাথে আমার কথা বলার কোন ইচ্ছাই নাই। সো আর কখনো আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না।
-আসবো।
-মানেটা কি?
-মানে কথা বলতে আসবো।
-এতদিন তো ভেবেছিলাম আপনি ফাজিল, এখন তো দেখছি বেহাইয়্যা ও।
-সে আপনি যেটাই ভাবুন, আমি প্রতিদিন কথা বলতে আসবো এটাই ফাইনাল।
– আপনার লাজ লজ্জা নেয়?
-ছিল, এখন নেই।
– এখন নাই কেন?
-আপনাকে আমার অনেক ভাললাগে, তাই লাজ লজ্জার মাথা চিবাইয়া খাইয়া ফেলছি। (৩২টা দাঁত বার করে হাসতে হাসতে)
মনে হচ্ছিল থাবরাইয়্যা ওর কয়েকটা দাঁত ফালাইয়া দেই। বেয়াদব ছেলে প্রথম দিন কথা বলতে এসেই বলে কিনা ভাল লাগে। ওর কথার আর কোন উত্তর না দিয়ে সোজা কলেজে চলে আসলাম।
পরের দিন কলেজে আসার সময় আবারও,,,,,নীল,,,
-বর্ষা শোন।
-আপনার সাহস তো কম না নাম ধরে ডাকছেন আবার তুমি ও বলছেন।
-কেন এসব বলতে সাহস লাগে নাকি।
-লজ্জা করে না আপনার এভাবে একটা মেয়েকে বিরক্ত করতে।
-ভালবাসি।
-মানে কি?
-মানে ভালবাসি তো তাই। লজ্জা সরম নাই।
এর পর থেকে যতবার নীলের সাথে যেখানে দেখা হয়েছে বার বার শুধু একটা কথাই বলেছে ভালবাসি।
কিন্তু এভাবে কি ভালবাসা হয়। ও তো আমায় চিনে না জানে না হুট করে ভালবাসি বললেই হল নাকি। আর ওর মত ছেলে ভালবাসতে জানে নাকি। ফাজিল একটা, নিজেকে যে নিজে কি ভাবে। দেখতে তো সেই হনুমান চক্রবর্তির মত।
ওর এই প্রতিদিন করা পাগলামি টা খুব ই বিরক্ত লাগছিল আমার কাছে। কিভাবে যে এর হাত থেকে বাঁচবো। ওর বিরক্তর জন্যে কলেজে আসাও কমিয়ে দিলাম।
এভাবে মাস দুয়েক চলার পর একদিন কলেজে আসছি, রাস্তাই পিছন থেকে আবার ও সেই একই কথা,,,
-বর্ষা ভালবাসি।
কথাটা শুনে দাড়িয়ে গেলাম, খুব রাগ হচ্ছিল ওর উপর। আজ কিছু একটা করতেই হবে, প্রতিদিন এসব বিরক্ত আর নেওয়া যাচ্ছে না।
-আমি ভালবাসি না। আর কখনো বাসবো ও না। আপনার কি মনে হয় আপনি কারো ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যা। নিজেকে আয়নায় দেখেছেন কখনো। আপনাকে আমার কখনো ভাল লাগেনি, আর কখনো লাগবে ও না। বরং আপনাকে দেখলেই আমার রাগ হয়। আর কখনো কোনদিন ও রাস্তার মাঝে যেখানে সেখানে আমাকে বিরক্ত করতে আসবেন না। ভালবাসি না আপনাকে শুনেছেন কথাটা।
সেইদিন আমার কথাগুলো শুনে নীল শুধু মুখের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে ছিল। একটা কথাও বলেনি। ওকে কথা গুলো বলে সোজা বাসাই চলে এসেছিলাম।
সেই দিন এর পর থেকে নীল আর কখনো আমার রাস্তা আটকে দাড়াইনি। কখনো ভালবাসি বলেনি। কলেজে গেলে এড়িয়ে চলেছে,এমন কি আমার দিকে তাকইনি পর্যন্ত।
ভালইছিলাম তারপর থেকে, বিরক্ত করার মত কেউ ছিল না। কলেজ যাওয়ার পথে কেউ রাস্তা আটকাতো না। ক্লাসে বসে চুপি চুপি কেউ দেখতো না।
কিছুদিন পর থেকে কেন যেন নীলের পাগলামো গুলো খুব মিস করছিলাম। সব সময় ওর কথা মনে হত। কলেজে যাওয়ার সময় মনে হত, এখনি হয়তো পিছন থেকে নীল বলবে ভালবাসি তোমায়। ক্লাসে বসে মনে হত নীল আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু নীলের দিকে তাকিয়ে দেখতাম ও অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। সবসময় ওকে আর ওর বিরক্ত গুলো মিস করছিলাম।
তাহলে কি আমি নীলকে ভালবেসে ফেলেছি। না তা কি করে হয়। ওকে তো আমার ভালই লাগে না, সয্যই করতে পারিনা ফাজিলটাকে। ওকে কি ভারবাসা যায় নাকি।
কয়েকদিন কলেজ যাওয়া ও বন্ধ করে দিলাম। মনে মনে ভাবলাম হয়তো ওকে চোখের সামনে না দেখলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না কলেজে না গিয়ে ওকে আরো বেশি মিস করছিলাম। সব সময় ওকে দেখতে ইচ্ছা হচ্ছিল। ওর তাকানো ওর ভালবাসি বলা, প্রতিটা মুহুর্তে মনে হচ্ছিল।
কয়েকদিন পর যখন কলেজে গেলাম। কলেজের গেটে পা দিয়েই দেখি মাঠের মাঝখানে বসে নীল রীয়াকে গিটার বাজিয়ে শুনাচ্ছে। এত্ত রাগ হচ্ছিল যে রিয়াকে গিয়ে একটা আছার মারি। ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে নীলের পাশ থেকে রিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলাম। রিয়া,,
-কি রে তোর আবার কি হল আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে আসলি ক্যান।
– ওই ছেলেটা ভালনা, তুই আর ওর আশে পাশে যাবি না।
-ও ভাল না তাতে তোর কি?
ঠিকি তো আমি ওকে ক্যান টেনে নিয়ে আসলাম, আর নীল ভাল না খারাপ, ও কাকে গিটার বাজিয়ে শুনাবে তাতে আমার কি। আর নীলের পাশে ওকে দেখে আমার কেন হিংসা হচ্ছে? আমি তো ওকে দেখতেই পারিনা।
তাহলে কি আমি সত্যি সত্যি নীলকে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু নীল কি এখনো আমায় ভালবাসে।
হয়তো ভুলে গেছে আমায়। সেদিন তো আর কম অপমান করিনি। এত অপমানের পরও ও কেনই বা আমাকে মনে রাখবে। কিন্তু এখন তো আমি ওকে ভালবাসি।
তার পর থেকে নীলের সাথে অনেক বার কথা বলার চেস্টা করছি। কিন্তু নীল আমাকে দেখলেই দুরে দুরে থাকতো। কথা বলতে গেলে এড়িয়ে যেত। রাস্তাই দেখা হলে রাস্তার অন্যা পাশ দিয়ে হাঁটতো। নীল কি বুজতে পারছে না যে আমি ওকে ভালবেসে ফেলেছি।
তারপর থেকে নীল কোন মেয়ের সাথে কথা বললে আমার হিংসা হত। কাওকে বাবু জানু বললে হিংসা হত। একদিন ক্লাস রুমে ঢুকে দেখি নীল আর তিন্নি পাশাপাশি গা ঘেসে বসে কি সব গল্প করছিল। সেদিন সেটা দেখে রাগে আর হিংসাই নীলের কলার ধরে বলেই দিয়েছিলাম,,
>তুই শুধু আমার। নেকষ্ট টাইম যেন না দেখি আমি ছাড়া কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে। কোন মেয়ের দিকে তাকাতে। কাউকে বাবু জানু বলতে, কাওকে গিটার বাজিয়ে শুনাতে।
তার পর থেকে নীল আর কখনো কোন মেয়ের পাশে বসে নি বা কথাও বলেনি। বরং সব মেয়েদের এড়িয়ে চলতো, কারো সাথেই মিষতো না। কিন্তু আমার সাথেও কথা বলতো না। আমি কথা বলতে গেলেও সেখান থেকে চলে যেত।
তার কয়েকদিন পর কলেজের পিছনের পুকুর পারে বসে ভাবছিলাম। নীলকি আমায় আর ভালবাসে না। হয়তো ভুলে গেছে আমায়। নয়তো নতুন কাওকে পেয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো ওকে ভালবাসি খুব ভালবাসি।
হটাৎ পিছন থেকে কেউ বল্ল,,
– ভালবাসি আমিও ভালবাসি। আগের মত হয়তো না, তবে আগের চাইতে একটু বেশিই ভালবাসি।
পিছনে তাকিয়ে দেখি নীল। কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। হার্টবিট বেরে যাচ্ছিল। লজ্জাই ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না। এই ফাজিল বেহাইয়্যা পাগল ছেলেটাকে কিনা আমি ভালবাসি
নীল- কি আমাই ভাল না বেসে থাকতে পারলে না তো?
-কে বলেছে আমি তোমাই ভালবাসি, আমি তোমায় ভালবাসি না।
-সত্যি তো?
-হুম
-ওকে তাহলে আমি রিয়া আর তিন্নির কাছেই যাই।
-কুত্তা সাহস থাকলে গিয়ে দেখ।তুই শুধু আমার।
ভালবাসি পাগল খুব ভালবাসি।