ছেলেটি আমাকে অফিসের পেছন দিকে নিয়ে গেল। সারি সারি বেশ কয়েকটা ঘর। সব কটা ঘরের দরজা বন্ধ। সেই ঘর গুলোর একটা দরজার দিকে দেখিয়ে বলল,’ যান, ওই ঘরে আপনার জন্য প্রিয়দর্শিনী ম্যাডাম ওয়েট করছেন। খেয়াল পড়ল দরজার ওপরেই একটা স্টিকার আর তার ওপর লেখা প্রিয়দর্শিনী।
দরজায় নক করতেই প্রীতি দরজা খুলে আমার সামনে দাঁড়ালো। সে বলল,’ অনিমেষ! হোয়াট এ সারপ্রাইজ!’ এই কথা বলে প্রীতি আমাকে জড়িয়ে ধরল। তার পর ভেতরে নিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসাল। নিজেও একটা চেয়ারে বসল। আমি বুঝলাম এটা প্রীতির মেকআপ রুম। সে মেকআপ তুলে, ড্রেস চেঞ্জ করে আমাকে ডেকেছে।
আমি প্রীতির দিকে তাকাতেই সে বলল,’ তুই কি কিছু এখন খাবি? এটলিস্ট চা বা কফি?’ আমি বললাম,’ চা আমি একটু আগেই খেয়েছি। আর এখন ঠিক খেতে ইচ্ছে করছে না।’ পরমুহূর্তেই প্রীতি বলল,’ তারপর বল, তোর কি খবর, মুম্বাই কি কাজে এসেছিলি?’ প্রীতির কথায় আমি একটু অবাক হলাম। তাহলে কি প্রীতিকে তার পুরো কথাটা এরা বলে নি। প্রীতির ঘনিষ্ট বন্ধু, হসপিটালে মৃত্যু শয্যায় কথাটা বলে নি? শুধুই বলেছে অনিমেষ বসু দেখা করতে এসেছে?’ প্রীতি বলল,’ কি হলো? তুই কি ভাবছিস বলতো?’ আমি নিজেকে সামলে নিয়ে তাকে বললাম,’ না, কোনো কাজে আসিনি। তোর সাথে দেখা করতেই এসেছি। কাল থেকে চেষ্টা করে, আজ তোর দেখা পেলাম।
প্রীতি বলল,’ ভাট বকিস না। শুধু মাত্র আমার সাথে দেখা করতে তুই মুম্বাই এসেছিস? আর লোক পেলি না?’ প্রীতির কথা শুনে আমার অবাক লাগলো। আমি সরাসরি প্রীতিকে জিজ্ঞেস করলাম,’ পারিজাতের খবর কি? ফোনে কথা হয় তোর সাথে আজকাল?’ আমার কথা শুনে প্রীতি হটাৎ গম্ভীর হয়ে গেল। তারপর আবার হেসে বলল,’ ওর কথা ছাড়। তুই বল তুই কেমন আছিস? চাকরি পেয়েছিস, সে খবরটা তো আগেই জানি। তারপর? আর কোনো নতুন খবর?’ আমি মুহূর্তে বুঝতে পারলাম, প্রীতি, পারিজাতের সম্পর্কে কোনো আলোচনা করতে চাইছে না। তাই আমি স্পষ্ট করেই আসল কথাটা বললাম,’ পারিজাত একটা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি আছে। আর হয়তো বেশিদিন বাঁচবে না। ডাক্তার আশা ছেড়ে দিয়েছে। তবে ডাক্তার বলেছেন যে তুই যদি একবার হসপিটালে আসিস, তো ডাক্তার পারিজাতের কেসটা নতুন করে একবার চেষ্টা করে দেখবেন।’
আমার কথা শুনে হটাৎ প্রীতি চিৎকার করে বলল,’ জানি। আমাকে মা সব বলেছে। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। তুই কি বলতে চাস, আমার ওপর ভরসা করে যে প্রোডিউসাররা কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করে বসে আছেন, আর আমি তাদের সেই আশা, ভরসায় জল ঢেলে পারিজাতের সাথে হসপিটালে পড়ে থাকবো? আর তাতে যে আমার কেরিয়ারটাও শেষ হয়ে যাবে। তাছাড়া আমি ইতিমধ্যেই নির্দেশক বিবেক কাপুরকে ভালোবাসতে শুরু করে ফেলেছি।’ শেষ কথাটা বলেই প্রীতি হটাৎ থেমে গেল। তার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো, সে উত্তেজনার বশে, আসল কথাটা ভুল করে বলে ফেলেছে।
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ চাপ ছিলাম। হটাৎ দরজায় কেউ নক করল। প্রীতি দরজা খুলতেই ভেতরে এলেন এক বছর চল্লিশের ভদ্রলোক। চেনা চেনা মনে হলো। পরক্ষণেই চিনতে পারলাম বিবেক কাপুরকে। সেই বিবেক কাপুর আমার সামনেই প্রীতিকে জড়িয়ে ধরে বললেন,’ ডার্লিং! লেটস গো। লাঞ্চ ইজ রেডি।’ আমি আর দাঁড়ালাম না। প্রীতির মেক আপ রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম।না প্রীতি আমাকে পেছন থেকে আর ডাকে নি।
সেদিন আর ফেরা হলো না। প্লেনের টিকিট পেলাম না। সেদিনটা হোটেলে কাটিয়ে পরদিন খুব সকালের ফ্লাইটে কলকাতা ফিরে এলাম। এয়ার পোর্ট থেকে বাড়ি নয়, সোজা গেলাম হসপিটালে। হসপিটালের লবিতেই পারিজাতের দাদার সাথে দেখা হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন,’ প্রীতি কি বলল? সে কি আসবে?’ আমি উত্তর না দিয়ে শুধু ঘাড় নেড়ে জানিয়ে দিলাম যে প্রীতি আসছে না। পারিজাতের দাদা বললেন,’ গত দুদিন পারিজাত শুধু এদিক-ওদিক চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিল। বোধ হয় তোমাকেই খুঁজছিল।
আমি পারিজাতের দাদার সাথে কথা বলতে বলতেই পৌঁছে গেলাম সেই কেবিনে, যেখানে পারিজাত একটা বেডের ওপর শুয়ে আছে। পারিজাতের বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই, সে আমাকে দেখে নড়ে চড়ে উঠল। বোধ হয় উঠে বসতে চেয়েছিল, কিন্তু পারলো না। শেষে আমার দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে একটু মাথাটা দুপাশে ঘোরালো। আর ঠিক তারপরই তার দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। কেন জানি না আমার যেন মনে হলো পারিজাত দুপাশে তার মাথাটা নেড়ে বলতে চাইলো,’ আমি জানতাম, সে আসবে না।’ ততক্ষণে আমিও নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। পারিজাতের দাদা আমাকে জড়িয়ে ধরে স্বান্তনা দিয়ে বললেন,’ তুমি আর কি করতে পারো। তুমি তো তোমার বন্ধুর জন্য যথা সাধ্য করেছো।’ এই কথা বলতে বলতে তিনিও কেঁদে ফেললেন। অনেক ক্ষণ আমি আর পারিজাতের দাদা, পারিজাতের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
সকাল থেকে চা, সিগারেট কিছুই খাওয়া হয় নি। ফ্লাইটে চা খাওয়ার সুযোগ ছিল, কিন্তু চা খেলেই আরও বেশি সিগারেট খেতে ইচ্ছে করবে, এই চিন্তা করে চা বা অন্য কিছুই ফ্লাইটে খাইনি। কারণ ফ্লাইটে সিগারেট খাওয়া যাবে না। পারিজাতের দাদাকে পারিজাতের পাশে রেখে বাইরে এসে রাস্তার ধারের একটা দোকানে এসে চায়ের অর্ডার দিয়েছিলাম। মাথায় তখনও সেই একই চিন্তা। প্রীতি কি করে এমন বদলে গেল? মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা কি ভালোবাসাকে অতিক্রম করতে পারে? নাকি প্রীতি কোনোদিন পরিজাতকে ভালোবাসেনি? সে শুধু পারিজাতকে সিঁড়ি হিসাবেই ব্যবহার করেছে? কিন্তু তা কি করে হয়? প্রীতিই তো একসময় পরিজাতকে বলেছিল,’আমাকে এ সব স্বপ্ন দেখিও না। তার চেয়ে চাকরি বাকরির পরীক্ষায় বসতে শুরু করো।
একটা চাকরি পেলে, আমাদের কথাটা বাবাকে বলতে পারি। কতদিন এমন লুকিয়ে লুকিয়ে মেলামেশা করা যায়, বলোতো?’ তাহলে? তাহলে কি বিবেক কাপুরকে তার পারিজাতের চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে? কিন্তু বিবেক কাপুরের বয়েস, তার মুখশ্রী, তার চেহারা, কোনো কিছুই তো প্রীতির সাথে মানানসই নয়। আর পারিজাতকে সত্যিই নায়কের মতো দেখতে। সে চাইলে সে নিজেও সেলিব্রিটি হতে পারতো। তাছাড়া ভালোবাসা কি জীবনে বার বার আসে, বিশেষ করে একজন যখন বর্তমান? নাকি সেটা ভালোবাসা নয়, অন্য কিছু? এই সব চিন্তা করতে করতে আমার চা খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। চায়ের পয়সা দিয়ে, এক প্যাকেট সিগারেট কিনলাম। একটা সিগারেট ধরিয়ে এগোলাম সেই মানসিক হসপিটালের দিকে।
পারিজাতের বেডের কাছে এসে আমি চমকে উঠলাম। পারিজাতের পুরো শরীরটা এমনকি মাথা সাদা কাপড়ে ঢাকা। তার বেডের ওপর মাথা রেখে তার দাদা কাঁদছেন। মুহূর্তে কেঁদে উঠলাম এই বুঝে যে পারিজাত আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। ধীরে ধীরে পারিজাতের বেডের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখেই পারিজাতের দাদা উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।
একটু পরেই একজন সিস্টার আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলল,’আপনার বাড়ির লোকদের খবর দিন। বডিটা বেসমেন্টে থাকবে, সবাই এলে ওখান থেকে নিয়ে নেবেন আর ডেথ সার্টিফিকেটটা অফিস থেকে নিয়ে নেবেন।’ সিস্টারের কথা শেষ হতে না হতেই কয়েকজন হসপিটালের স্টাফ এসে পারিজাতের বডিটা নিয়ে চলে গেল।
আমি খালি বেডটার দিকে তাকালাম। একটা ব্যাগ পড়ে আছে। ব্যাগটা আমি হাতে নিতেই পারিজাতের দাদা বললেন,’ ওটা নিয়ে আর কি হবে? ওই ব্যাগটা অনেক বছর আগে, পারিজাতের জন্মদিনে প্রীতি গিফট করেছিল। হসপিটালে আসার সময় মা, ওর ওই প্রিয় ব্যাগের মধ্যেই দুটো শার্ট প্যান্ট ভরে দিয়েছিল এই ভেবে যে যদি দরকার পড়ে।’
কিন্তু আমি পারিজাতের দাদার কথা শুনতে শুনতে ব্যাগটা খুলে ফেলেছিলাম। দেখলাম, পারিজাতের দাদার কথাই ঠিক। ওর মধ্যে দুটো প্যান্ট, শার্ট ছাড়া আর কিছু নেই। হটাৎ খেয়াল পড়ল ব্যাগটার একটা সাইড পকেট আছে। চেনটা খুলতেই দেখি তার মধ্যে একটা খাম। খামটা হাতে নিয়ে দেখলাম ওপরে প্রিয়দর্শিনী লেখা আর ঠিক তার নিচে এম কে স্টুডিওর ঠিকানা। বুঝলাম পারিজাত প্রীতির জন্য কোনো চিঠি লিখে রেখেছিল কিন্তু সেটা আর পোস্ট করা হয় নি। খামটার মুখটা খোলা। তাও আমি খামটা পারিজাতের দাদার দিকে এগিয়ে দিলাম। তিনি হাতে না নিয়ে আমায় বললেন,’ খুলে দেখো, সে কি লিখেছিল?’ আমি ইতস্তত করতে করতে খুলেই ফেললাম। হ্যাঁ, আমার ধারণা ঠিক ছিল। পারিজাত, প্রীতির উদ্যেশ্যে চিঠিটা লিখেছিল। চিঠির ওপরে তারিখ দেখে চমকে গেলাম। প্রায় সাত মাস আগের তারিখ। ভেবে পেলাম না, সাত মাস আগে লিখলেও, সে পোস্ট কেন করে নি। আমি চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম-
প্রীতি,
আশা করি ভালোই আছো। তোমাকে কোনোদিন চিঠি লিখতে হবে ভাবি নি। তাও লিখছি। এটাই আমার তোমাকে লেখা প্রথম ও শেষ চিঠি।
ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম খুব বড় অভিনেতা হবো, এক ডাকে আমাকে দেশের লোক চিনবে। এই স্বপ্নের কথা মাথায় রেখেই নিজেকে তৈরি করছিলাম। অপেক্ষায় ছিলাম গ্রাজুয়েশনটা শেষ করার জন্য। কিন্তু তার আগেই সব গোলমাল হয়ে গেল। থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় আমরা রক্তকরবী নাটকটা করলাম। তোমাকে প্রায় জোর করে আমি নন্দিনীর চরিত্রে অভিনয় করালাম। তোমার অভিনয় দেখে মনে হলো, তুমিও চেষ্টা করলে অনেক বড় অভিনেত্রী হতে পারো। নিজের স্বপ্ন ভুলে গিয়ে তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। কেন জানো? ততদিনে আমি নিজের থেকেও তোমাকে বেশি ভালোবাসতে শুরু করে দিয়েছিলাম। আমার মনে হতো তুমি যদি সফল হও, তাতে আমি বেশি খুশি হবো।
আমার স্বপ্ন সফল হয়েছে। তুমি এখন অনেক বড় অভিনেত্রী। দেশের ব্যস্ততম নায়িকা। ভাবলেই আমার মনটা খুশিতে নেচে ওঠে। তুমি বহুদিন হয়ে গেল আমার সাথে যোগাযোগ করো না, তাতেও আমি খুশি ছিলাম। কারণ আমি জানি তুমি ব্যস্ত, তোমার কাছে সময় নেই। আর আমি তোমাকে এরকম ব্যস্ত নায়িকা হতেই দেখতে চেয়ে ছিলাম।
কিন্তু গত পনের দিন আগে আমার মনে একটা অন্য আশঙ্কা জেগে উঠেছিল। তুমি আমার ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দিলে। না, পরে সময় মতো ফোনও করো না। গত পরশুদিন বুঝলাম তোমার পুরোনো নম্বরটা তুমি আর ব্যবহার করো না। তুমি নতুন নম্বর নিয়েছো। সেই নতুন নম্বরটা তুমি তোমার বাড়িতে দিলেও, আমাকে দাও নি। মাঝে একটা ফিল্ম ম্যাগাজিনে দেখেছিলাম তোমার সাথে নির্দেশক, বিবেক কাপুরের অন্তরঙ্গতার কথা। বিশ্বাস হয় নি। ধরেই নিয়েছিলাম গসিপ। কিন্তু আজ একটি পত্রিকায় বিবেক কাপুরের স্বাক্ষাৎকার পরে জানলাম যে, না ব্যাপারটা সত্যি। তিনি স্বীকার করেছেন সে কথা। যদিও তিনি বলেছেন,’ তবে বিয়ের কথা এই মুহূর্তে আমরা কেউই ভাবছি না।’
এত সবের পরও আমি কষ্ট পাচ্ছি না। নিজের মনকে বুঝিয়েছি, আমি প্রীতিকে ভালোবাসলেই, যে প্রীতি আমাকে ভালোবাসবে, তার তো কোনো যুক্তি নেই। কিন্তু মনকে বোঝালেও, মন বুঝতে চাইছে না। সে আমাকে প্রশ্ন করছে, ‘কিন্তু প্রীতি যে তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল? সেটা কি মিথ্যে?’ তাই আমার মাথা আজকাল আর খুব বেশি কাজ করছে না। নাটকের রিহার্সালও বন্ধ করে দিয়েছি।
তুমি আজ না হয় কাল বিবেক কাপুরকে বিয়ে করবে। পরে হয়তো তাকে ডিভোর্স দিয়ে আর কাউকে বিয়ে করবে। করতেই পারো? এটা কোনো অন্যায় নয়। এটলিস্ট দেশের আইন অনুযায়ী অন্যায় নয়। তুমি যখন এইরকম ঘটনা গুলো ঘটাবে, তখন বসন্তপুরের লোকেরা আমাকে রাস্তা ঘাটে টোন টিটকারি মারবে। কিন্তু তাতেও আমার তখন খুব বেশি খারাপ লাগবে না।
কিন্তু আমার ভয় অন্য জায়গায়। সেই ভয়টা থেকে বাঁচতেই হয়তো আমাকে মরে যেতে হবে। আমি মরে যাওয়ার পর, তুমি যদি বিবেক কাপুরকে বিয়ে করো, লোকে বিশেষ করে বসন্তপুরের লোকেরা, আমার বন্ধুরা হয়তো তোমাকে খুব একটা দোষ দিতে পারবে না। আর আমি যদি বেঁচে থাকি আর তুমি বিবেক কাপুরকে বিয়ে করো, লোকে বিশেষ করে বসন্তপুরের ছেলে মেয়েরা ভবিষ্যতে ভালোবাসতে হয়তো ভয় পাবে। কারণ আমাদের ভালোবাসার গল্প বসন্তপুরের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের ভালোবাসা অনেক ছেলে মেয়েদের প্রেরণা জুগিয়েছে। কিন্তু তারা হয়তো ভালোবাসাকে ভুল বুঝবে।
কেউ কেউ না বুঝে বলবে,’ প্রীতি মেয়েটা নেমকহারাম, ওর ভালোবাসা, ভালোবাসার নামে একটা কলঙ্ক, আরও কত কি?’ আর এই কথা গুলো হয়তো আমি সহ্য করতে পারবো না। আমি যে তোমার নিন্দা কোনোদিন সহ্য করতে পারবো না। তাই আমার মরা ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। কিন্তু মরতে ইচ্ছে করছে না, একবারের জন্য হলেও তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। তোমাকে শেষ বারের মতো দেখার ইচ্ছে নিয়ে হয়তো আরও কিছুদিন বেঁচে থাকবো। জানি না আমার শেষ ইচ্ছে পূরণ হবে কি না? দেখা হলে তোমায় জিজ্ঞেস করবো,’ আমার ভালোবাসায় কি খাদ ছিল? নাকি তুমি এত দিন ভালোবাসার নামে অভিনয় করে গেছো? নাকি তোমার প্রতি ওই বিবেক কাপুরের ভালোবাসায় এমন কি ছিল, যা আমার ভালোবাসায় ছিল না?’
তুমি ভালো থেকো। পারিজাত আমি চোখের জল মুছে চিঠিটা পারিজাতের দাদার হাতে দিলাম। উনি চিঠির ডেটটা দেখেই চমকে উঠে বললেন,’ সম্ভবত, এর পরদিন থেকেই ভাই কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল।’ এই কথা বলে তিনি চিঠিটা পড়তে লাগলেন।