গরীবের সুন্দরী বউয়ের গায়ে চড়ে চিটাগং থেকে ঢাকা যাবো। কি ভাবলেন? একটা মেয়ের গায়ের উপর চড়ে এতদূর কেমনে যাবো? আরো বউ টাও গরিবের! এত কিছু ভাবার কোন কারণ নেই প্রয়াত মন্ত্রী সুরঞ্জিত বাবু রেল কে গরিবের সুন্দরী বউ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন তাই আমিও সেটা বললাম আর কি। টিকিট টা অনলাইনে নিয়েছিলাম। এটা ছিলো আমার প্রথম ট্রেন যাত্রা।
ট্রেন নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি অনেক গল্প পড়েছি। অনেকে ট্রেনে প্রেমিক /প্রেমিকা খুঁজে পাই,অনেকে হারিয়ে যাওয়া এক্স কে খুঁজে পাই অনেকে তো একদম ডিভোর্স হয়ে যাওয়া বউকে পেয়ে আবার বিয়ে করার সুযোগও হাতছাড়া করেননি।
জীবনে অনেক কিছু করলাম যেটা করতে পারলামনা সেটা হলো প্রেম! গল্প শুনে, গল্প পড়ে একটা আশা জাগে হয়তো আমার প্রেমিকা টা ট্রেনেই আছে। মনে অনেক আমেজ নিয়ে রেলস্টেশনে গেলাম ডাইনে বায়ে শুধু দেখতেছি পাশের সীটে কোন মেয়ে আসতেছে কিনা। দুইজন আসলো দুজনেই পুরুষ। আরেকজন বাকি। প্রায় আশাহত অবস্তায় মাথা নিচু করে থাকলাম। ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগ মূহুর্তে! কে যেনো পাশে এসে বললো ভাইয়া একটু চাপেন! মাথা উঁচু করে দেখলাম অপরুপ সুন্দরী একটা মেয়ে! আস্তে করে সরে উনাকে বসার জায়গা করে দিলাম। আহ্ ইনিই যদি হন আমার কাঙ্খিত সেই মানুষ তাহলে আর কি চাই!
কিছুদূর যাওয়ার পর একটা ইস্যু খুঁজতে লাগলাম তার সাথে কথা বলার জন্য। যে টপিক নিয়ে আগালে অনেক বেশী কথা বলা যাবে। আগে সরাসরি কোন মেয়ের সাথে তেমন কথা বলা হয়নি তাই কিভাবে কোথা থেকে শুরু করতে হবে জানা নেই। মেসেঞ্জারে মাঝে মাঝে মেয়েদের সাথে চ্যাট করা হয় সেখানের চ্যাট টা এই রকম!
Hi! (আমি)
Hello (মেয়ে)
Kemon achen?
Valo! Apni?
Valo!
এরপর বলার জন্য আর কোনা কথা খুঁজে পায়না! এটাই আমার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা। কথা বলার টপিক খুঁজে পাইনা। ভাবতে ভাবতে দেখলাম মেয়েটাকে কাশতে। তাকে কাশতে দেখে আমার হাতে থাকা পানির বোতলটা এগিয়ে দিলাম! সে হাত দুইটা নাড়িয়ে বললো থাক ভাইয়া লাগবেনা। ইশ্ এই উপকারটা যদি করতে পারতাম অন্তত একটা ধন্যবাদ পেতাম! ধন্যবাদ পেলে হয়তো একটা টপিক বের হতো কিন্তু সেটাও হলো না। মন মরা হয়ে বাইরের দিকে চেয়ে থাকলাম ভাবতেছি কিভাবে কথা বলা যায়। ভাবতেছি হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে আমার নাম বলে উনার নাম জিজ্ঞেস করবো। যেই বলতে যাবো দেখলাম সামনে বসা দুইজনকে আমার দিকে অষ্টমআচ্যর্য দেখার মত তাকিয়ে থাকতে। ভয় পেয়ে গেলাম আজকাল গুজবের যেই প্রভাব ইভটিজার বলে ধুলায় দিয়ে দিলে আমার প্রেম করার ইচ্ছার বারোটা বেজে যাবে তাই একটু চেপে গেলাম। আমার বিরবির করা দেখে মেয়েটা বললো ভাইয়া আপনার বসতে কোন সমস্যা হচ্ছে? এইবার মনে হয় কথা বলার একটা সুযোগ আসলো।না সমস্যা হচ্ছেনা! ধন্যবাদ।
আরে ভাইয়া ধন্যবাদ দেওয়ার কি আছে? মনে হয় কথাটা বেশ বেমানান হয়ে গেলো। যাক মুখটা যে খোলতে পারলাম এটাই অনেক। আপনি কোথায় নামবেন? ট্রেন টা কি ঢাকার বাইরেও যাবে? এটাও একদম বেমানান প্রশ্ন করে বসলাম। ট্রেন টা ডাইরেক্ট ঢাকা যাবে আর ঢাকা থেকেতো বাইরে যাবেনা! আমি এটা কি বললাম? এখন নিজের উপরই রাগ হচ্ছে। কথা বানিয়ে বললাম, আমি বলতে চাইছি আপনি ঢাকার কোথায় যাবেন? অও! আচ্ছা আমার টা না হয় পরে বলবো, আগে আপনারটা বলেন আপনি ঢাকার কোথায় যাবেন? সুযোগ মনেহয় পাওয়া গেলো! আমি যাচ্ছি একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। কিসের চাকরি? এইতো একটা বেসরকারি কোম্পানিতে।
আচ্ছা আপনার নামটাই এখনো জানা হলোনা, নাম কি আপনার? আমিতো মনে মনে মহা খুশি এত কথা যখন বলতেছে নিশ্চিত মেয়েটা সিঙ্গেল। আখতারুজ্জামান চৌধুরী নিয়াজউদ্দীন মোহাম্মদ সুমন। বাহ্ ঢাকা টু চট্টগ্রাম রেললাইনের মতো লম্বা আপনার নাম, আমি সুমন বলে ডাকবো কেমন? হ্যাঁ নিশ্চয়, আপনার নাম কি? নার্গিস সুলতানা। অনেক সুন্দর নাম তো, কে রাখছে আপনার নামটা? এত সুইট নাম। কি বলেন নাম সুইট!! আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষ্যাত হচ্ছে আমার নাম। আমিতো এই নাম রাখার জন্য বাবাকে প্রতিনিয়ত গালমন্দ করি। আমার যে বন্ধুরা প্রেম করে তাদের থেকে শুনলাম মেয়েদের প্রসংশা করলে নাকি তারা অনেক বেশি খুশি হয়। তাইতো নাম সুন্দর না হলেও সুন্দর বললাম।
অন্য কেউ কি বলতছে সেটা আমি দেখবোনা, আমার কাছে কেমন লাগতেছে সেটাই মেইন কথা,আপনার নাম আমার অনেক ভালো লেগেছে। অহ আচ্ছা,অনেক ধন্যবাদ,আপনি বিয়ে-শাদী করছেন? দেখেতো বিয়ে-শাদী করছেন বলে মনে হচ্ছেনা,প্রেম করেন? মেয়েটার চেহারায় দেখতে পাচ্ছি আমাকে জানার বেশ আগ্রহ রয়েছে তার। তাই আমিও আমার গুনগান গাইতে শুরু করলাম।
বিয়ে-শাদী করিনি আর প্রেম ‘হা হা হা’ মা ছাড়া কোন মেয়ের সঙ্গ পাইনি জীবনে ।প্রেম ত্রেম জীবনেও করিনি আর আমার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে যাকে বিয়ে করবো থাকেই মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসবো, তার জন্যই আমার সব ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি। হ্যাঁ আমারও সেরকম ছেলেই পছন্দ! আমি যে কি খুশিইইইই বলে বুঝাতে পারবোনা! আমার কথা গুলো মনে হয় ওর ভালো লেগেছে। আমার কথা ভাল লাগা মানেই তো আমাকে ভালো লাগা তাহলে আমার অজন্মা সিঙ্গেল নামটা কি গোছাতে যাচ্ছি? আহ ওর মুখ থেকে যদি মুখ পশকে হলেও বেরিয়ে যায় যে, আমি তোমাকে ভালবাসি তাহলেই তো খেলা শেষ।
হুম! সেটা অবশ্য অনেকে বলে। কিন্তু আমাকে ভালবাসে এমন আজ পর্যন্ত কাউকে পাইলাম না! আপনি কি চান? কোন মেয়ে এসে আপনাকে প্রপোজ করবে? হ্যাঁ, সেরকম কিছুতো চাই। আপনি কেমন পুরুষ হ্যাঁ! কখনো শুনছেন কোন মেয়ে গিয়ে কোন ছেলেকে প্রপোজ করতে? তা অবশ্য ঠিক, শুনিনি কখনো। আপনি যাকে ভালবাসেন মনে কোন ভয় না রেখে তাকে সরাসরি বলে দিবেন “আমি তোমাকে ভালবাসি” তাহলেই তো হয়ে যায়। সরাসরি বললে যদি কিছু মনে করে? আগে বলে তো দেখবেন। বলবো? যদি কিছু মনে করে? বলেন! এই একই কথাটা দশ বারোবার বলতে বলতে কমলাপুর রেলস্টেশনে চলে আসলাম। তবুও বলতে পারলাম না কিছুই! সমস্যা নাই ওর মোবাইল নাম্বার নিয়ে রেখেছি ঢাকাই যখন দুজনে আছি কোন একদিন দেখা করে বলে ফেলবো।
ট্রেন থেকে নেমে দেখলাম ওকে দুইটা ছেলে নিতে এসেছে ও আমাকে তাদের সামনে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। এটা হচ্ছে সুমন, দুজনে একসাথে আসছি আর অনেক গল্প করে করে আসলাম। আর সুমন এটা হচ্ছে আরে বলতে হবেনা এটা আপনার ভাই আমি দেখেই বুঝতে পরেছি, দুজনের চেহারায় কত মিল। দূর বোকা এটা আমার স্বামী ফাহিম,আর ওর সাথে এটা আমাদের একমাত্র ছেলে ফাহিদ।