খুব আরাম করে ঘুমাচ্ছিলাম, তাও নাক ডেকে ডেকে। ভোরের ঘুম এতো আরাম যে ঘুম থেকে উঠতেই ইচ্ছে করে না। ঠিক তখনই টের পেলাম। কেউ বা কারা আমাকে বিছানা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তখন চোখটা খুলতেই দেখি একদল অদ্ভুত প্রাণী। আমার হাত পা ধরে ঝুলাতে ঝুলাতে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে। ইয়া বড় বড় চোখ, নাক, কান, গলা, দাঁত এদের। এরা কারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। তাই অনেকটা ভিতুস্বরে জিজ্ঞেস করলাম;
— এই তোমরা কারা? আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ তোমরা । আর তোমরা দেখতে এমন অদ্ভুত কেন ভায়া , এতো বড় বড় চোখ, ইয়া বড় বড় দাঁত। দাঁত গুলোও তো দেখতে কয়লার মতো।
— আমরা ভূত রাজার চ্যালাপ্যালা , তোকে ভূতের রাজ্যে নিয়ে যাচ্ছি ভায়া। ভূত কথাটা শুনে আমার তো পিলেটা চমকে উঠল । হায় খোদা এই ভূত গুলা আমারে ভূতের রাজ্যে কেন নিয়ে যাচ্ছে।
— বড় ভাই থুক্কু শ্রদ্ধেয় ভূতদাদারা আমরে কিউ ভূত রাজ্যে পাকারকে লে যা রা হা হো। (আমি) আমার কথাটা শুনে তখন ভূত গুলোর মধ্যে একটা ভূত, খুব রাগি ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বলল;
— ওই মিয়া হিন্দি বলো কেন, যা বলবা বাংলায় বলো, আমরা বাঙালি ভূত হিন্দি বুঝি না। আর তাছাড়া তুমি একজন বাঙালি হয়ে হিন্দি বলছ। তোমারে তো এখনি ঘাড়টা মটকায় দেওয়া উচিত। তুমি বাংলা ভাষার অমর্যাদা করছো।
— গা গা গা গালতি হো গায়া, থুরি ভুল হয়ে গেছে। আমার ঘাড় মটকাই দিয়েন না, মু মু মুই আর কো কো কোনোদিন হিন্দি বলবো না।
— ওই মিয়া থুতলাও কেন, শুদ্ধ ভাবে কথা বলো। (ভূত)
— আচ্ছা ভূত দাদা আমি শুদ্ধ খাটি বাংলা ভাষায় জিজ্ঞেস করতেছি, আমারে আপনারা কেন ভূতের রাজ্যে নিয়ে যাচ্ছেন? মুই কিতা করছি কথাটা বলেই ভ্যাএ করে কেঁদে দিলাম।
তখন ওদের মধ্যে সবচেয়ে বেঁটে ভূতটা বলে উঠল;
— ওই ব্যাটা মানুষের বাচ্চা একদম কান্না করবি না, আর তোরে ভূত রাজ্যে এমনি এমনি নিয়ে যাচ্ছি না। ভূত রাজার আদেশেই তোকে ধরে নিয়ে যাচ্ছি।
আমি এখন কি করবো, ভূত রাজা কেন আমারে ধরে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিয়েছে, আমি তো কিছু করি নাই। শুনছি ভূতে নাকি মানুষের ঘাড় মটকে খেয়ে ফেলে। তার মানে কি আমারেও ঘাড় মটকায় দিবে। ও মা ও বাবা তোমরা কোথায় আমারে বাচাও।
— ও দাদা তোমাগো হাতে পায়ে ধরি আমারে দাও ছাইড়া। (আমি)
তখন ওই বেঁটে বজ্জাত ভূতটা আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলল;
— হালা মানুষের বাচ্চা চুপ থাকবি, বেশি বক বক করলে কিন্তু এখানেই তোর ঘাড় মটকায় দিব।
ভূতের চর খেয়ে যেন আমার কানে ধাপা লেগে গেল, উউউউ মাগো ভূতের চরে কি ব্যাথা, এমন চর আমার বাপেও কোন দিন দেয় নাই। আর সালা বজ্জাত বেঁটে ভূত তুই আমারে এতো জরে চর মারলি। ইচ্ছে করছে তোরে মাইরা আলু ভর্তা বানায় ফেলি।
— কি রে বির বির করে কি বলিস। (বেঁটে ভূত)
— না মানে কিছু না ভূত দাদা, আমি মনে মনে বলছিলাম তোমরা কতো ভালো, কতো কিউট। কথাটা শুনে আমার ডান পাশে গলা লম্বা ভূতটা একটু আবেগে আপ্লুত হয়ে বলল;
— দেখছো সরদার এই প্রথম কেউ আমাগো কিউট বলল। তখন ভূতের সরদার ওই বজ্জাত বেঁটে ভূতটা ধমক স্বরে বলল;
— লম্বু চুপ থাক, এই মানুষের বাচ্চার কথায় একদম কান দিবিনা। ও আমাদের ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে। আর তাছাড়া মুই তো জানি আমি এমনিতেই কতো কিউট। তুই জানোস পেত্নি রাজকুমারী আমার উপর ক্রাসিত।
বেঁটে ভূতের কথা শুনে তো আমার তখন দশতলা বিল্ডিং থেকে লাফ দিতে ইচ্ছে করছিল। হালা বেঁটে বলে কি হেতি না কি কিউট। যাইগগা এখন চুপ করে সবকিছু শোনা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। কিছুক্ষণ পর ভূত গুলা আমারে একটা জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে থামল। তখন ওই ভূত সরদার মানে বেঁটে ভূত বলে উঠল;
— এই থাম তোরা, আমরা চলে এসেছি, এখন এইটার ব্যবস্থা করতে হবে। ট্যাগরা আর হ্যাংলা যা তো এটাকে নিয়ে শ্যাওড়া গাছের নিচে। মনে মনে ভাবলাম এরা আমার কি ব্যাবস্থা করবে। এমন নয় তো এখন আমার ঘাড় মাটকাবে।
— ঠিক আছে সরদার আমরা একে শ্যাওড়া গাছের নিচে নিয়ে যাচ্ছি ।(ট্যাগরা ভূত)
এর পর আমাকে ট্যাগড়া ভূত আর হ্যাংলা ভূত দুজনে উল্টো করে ধরে শ্যাওড়া গাছের নিচে নিয়ে গেল;
— এই হ্যাংলা এটাকে এখন এই গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে দে। (ট্যাগরা ভূত)
কথাটা শুনে আমার তো ইচ্ছে করছিল এগুলোরে ঘুষি মেরে এদের দাঁত গুলো ভেঙে ফেলি। সালা ভূত তোদের আমি দেখে নিব মনে মনে বললাম। আমি তখন ট্যাগরা ভূতকে উদ্দেশ্য করে বললাম;
— দাদা ভূত আমাকে কেন উল্টো করে ঝুলিয়ে দেবে। সিধা করেই বেঁধে রাখো না। এই নিরীহ মানুষটারে কেন এতো কষ্ট দিচ্ছো।
— ওই মিয়া চুপ থাকো আর এইডা আমাগো রাজ্যের নিয়ম। এখানে কাউকে ধরে আনলে তাকে এভাবেই ঝুলিয়ে রাখা হয়। (হ্যাংলা ভূত)
আমাকে শ্যাওড়া গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে দিয়ে ভূত দুইটা অদৃশ্য হয়ে গেল। আর আমি তো শ্যাওড়া গাছে উল্টা হয়ে ঝুলতাছি। হায় খোদা এই ছিল আমার কপালে। শেষে কি না ভূতের রাজ্যে আমাকে বন্দি হতে হলো। আর অকালে আমারে পটল তুলতে হবে। কথাটা ভাবতেই আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছিল। বিয়াডাও করতে পারলাম না। আমার মতো দুখি নয় তো কারো জীবন। ভ্যাএএএএএএএএএএএএএএএএএএএ। এর কিছুক্ষণ পর ভূত দুইটা আবার আমার কাছে আসল। এসেই বলল;
— এই হ্যাংলা ওরে গাছ থেকে নামা, ওরে এখন নিয়ে যেতে হবে। (ট্যাগরা ভূত)
— কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে? (আমি)
— ভূত রাজার দরবারে, এই ছ্যাবলা তাড়াতাড়ি কর। (ট্যাগরা ভূত)
— ওকে বস, এই চল আমাদের সাথে।
— আমি কিছু করিনি আমারে ছাইড়া দেন ভাই ভূতেরা।
কিন্তু ওরা আমার কোন কথাই শুনলো না। আমাকে এর পর শ্যাওড়া গাছ থেকে নামিয়ে। একটা বট গাছের নিচে নিয়ে যাওয়া হল। ওখানে যেয়ে দেখি অদ্ভুত সব ভূতের রঙ্গশালা। কতো রকম ভূত। কারো হাত আছে, কারো নাই পা , কারো চোখ আছে, আবার কারো বা কান নাই। আবার কোন কোন ভূতের নেই মাথা। আমি তখন বট গাছের উপরে চেয়ে দেখি। গাছের সবচেয়ে মোটা ডালটায় একটা টাকলু বুইড়া কান বড় বড় ভূত বইসা বইসা ঠ্যাং ঝুলাচ্ছে। তখন ভূত সরদার বেঁটে ভূত ওই ঠ্যাং লম্বা ভূতটাকে উদ্দেশ্য করে বলল;
— মহারাজ এই হলো সেই মানুষের বাচ্চা , যাকে আপনি ধরে আনার হুকুম দিয়ে ছিলেন।
— হুম জানি, তা তুমিই হলে পল্টু, তোমার বাবার নাম ছল্টু। (ভূত রাজা)
— জ্বি রাজামশাই আমিই পল্টু, আমার বাবার নাম ছল্টু। কিন্তু আমাকে এখানে ধরে এনেছেন কেন।
— বলছি আমি সব, মন দিয়ে শুনো আমার কথা। আমি হলাম ভূত রাজা,
আমার মেয়ে পেত্নির সাথে তোমায় দিব বিয়া। মা মা মানে একি বলছে ভূত রাজা। তার মেয়ে পেত্নিকে করতে হবে বিয়া। কথাটা শুনে আমার তো বেহাল দশা। শেষ পর্যন্ত কি না আমার কপালে এই ছিল লেখা।
— একি বলছেন ভূত রাজা, আমি তো মানুষের বাচ্চা। কেন আমি পেত্নি কে করবো বিয়া। আর তাছাড়া আমার বাবা বলে, বিয়ের বয়স এখনো হয়নি কো আমার, কারণ আমি না কি এখনো বাচ্চা। ছেড়ে দেন আমায়। আমি জীবনে করবো না কো বিয়া।
— কি আমার মুখের উপর এতো বড় কথা।
এই কে আছিস ব্যাপারটার এখনি ঘাড় মটকা। (ভূত রাজা) এ কোন মছিবতে আমায় ফেলে খোদা, এই নাবালক ছেলেটারে রক্ষা করো খোদা। আমার কিছু হলে আমার বাবা মা হবে সন্তানহারা।
— কি হলো আছো কেন চুপ করে, কথা বলো আমার সাথে। মনে মনে কি ভাবছ, বিয়েতে কি রাজি আছো। যদি থাকো হ্যাঁ বলো। আর যদি রাজি না থাকো তাহলে তোমার প্রাণটাই গেল।
— না না আমি রাজি আছি ভূত রাজা। বিয়ে ছাড়া নেই কো উপায়, অকালে আমি চাইনা হারাতে এই প্রাণটা। আমার কথা শুনে ভূত রাজা তখন খুশি হয়ে বললেন আমায়;
— এই তো ভালো ছেলের মত কথা। কতো বড় ভাগ্য তোমার বাছা। তুমিই প্রথম যে কি না হবে ভূত রাজার জামাতা।
— হ নিকুচি করি এই ভাগ্যের, সালা ভূতের রাজা। তোর মাথায় ভাঙবো ভিমরুলের বাসা।দাঁতে দাত চেপে মনে মনে বললাম কথাটা।
— আচ্ছা তাহলে তো আর নেই চিন্তা।
সন্ধ্যার লগ্নে তাহলে হবে বিয়া। তাই সবাই এখন গিয়ে বিয়ের আয়োজন করো মন দিয়ে। দরবারের কাজ আজকের মতো এখানেই শেষ। তখন ভূতের সরদার বেঁটে ভূত আমার কাছে এসে বলল;
— এই চল তাহলে আমাদের সাথে আবার ওই শ্যাওড়া গাছের নিচে।
— আমি আবার কেন যাবো শ্যাওড়া গাছের নিচে ভায়া। শোননি তুমি ভূত রাজা কি বলল সেথা। সন্ধ্যা লগ্নে হবে বিয়া তাই এই জায়গা হতে আমি কোথাও যাচ্ছি না, এই আমার শেষ কথা।
— উফফফ এই তোর প্রাণের নেই মায়া।
যদি থাকতে চাস বেচে। তাহলে এখনি চল আমাদের সাথে। কি আর করা নিরুপায় আমি। এদের কথা শোনা ছাড়া নাই কোন উপায়। যাই হোক এখন তাহলে ছন্দ ছাড়াই বলি কথা।
— আচ্ছা চলো তাহলে, আজ আমি একটা নিরীহ মানুষ বলে। আমার উপর এতো জুলুম নির্যাতন করছো। কিন্তু এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো।
আমাকে তখন আবার নিয়ে আগের নেয় শ্যাওড়া গাছে উল্টো করে ওরা ঝুলিয়ে দিয়ে। ভূত গুলো অদৃশ্য হয়ে গেল। আমার খুব চিত্কার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছিল তখন। জীবনে এমন দিন আসবে কখনো ভাবতে পারিনি। স্বপ্ন ছিল একটা পরীর মত সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করবো। আর আজ কি না পেত্নিকে বিয়ে করতে হবে। মানুষ যাহা চায় তাহা কখনোই পায় না। আর যাহা পায় তাহা সে কখনোই চায় না। কথাটা আসলেই ঠিক। কি চাইলাম আর কি পেলাম। আর আমি তো শ্যাওড়া গাছে উল্টো হয়ে ঝুলছি তো ঝুলছি। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার । এই ভূতেরা আসলেই খুব পাজি। এদের মনে নেই দয়া মায়া। কিছুক্ষণ পর ভূত গুলো আবার সদৃশ্য হলো।
— এই ক্যাবলা ওরে গাছ থেকে নামা।
সন্ধ্যা লগ্ন উপস্থিত নিয়ে যেতে হবে এখন বিয়ের আসরে। (বেঁটে ভূত) আমি তখন মনে মনে বললাম সালা বজ্জাতের দল। আমি কিছুতেই তোদের সাথে যাব না। মাম্মি আমি বিয়ে করবো না। ভ্যাএএএএএএএএএএএএএএএএএএএএএএএএ। তখন বেঁটে ভূত আমাকে ধমক দিয়ে বলল;
— ওই মানুষের বাচ্চা তুই আবার কান্না করতেছোস। কান্না থামা বলছি, এই সময় কম ওরে নিয়ে চল।
এর পর আমাকে ভূত গুলা বিয়ের আসরে নিয়ে উপস্থিত হলো। বিয়ের আসরে গিয়ে দেখি এ তো এলাহি অবস্থা। মনে হচ্ছে যেন কোন রাজকীয় বিয়ে। চারদিকে সোনা দানা হীরা ছড়িয়ে। সুগন্ধিতে চারদিক সুবাসিত। ভূত রাজা দেখি রাজকীয় পোশাক পরিধান করে আছেন। ভূত রাজা তখন বললেন;
— উপস্থিত অতিথি ভূতেরা সকলে, আমি ভূত রাজা টিংকর রামুদে। সুস্বাগতম আপনাদের বিবাহ এই আসরে। আমার জীবনটাই তেজপাতা হয়ে গেল, এই পেত্নি দেখতে না জানি কতটাই বিশ্রী হবে। লোকসমাজে আমি আর মুখ দেখতে পারবো না। আমি ফাইসা গেছি, আমি ফাইসা গেছি মাইনকা চিপায়। ভূত রাজা তখন বেঁটে ভূতকে উদ্দেশ্য করে বললেন;
— এই বেঁটে যা তো বাছা, পল্টুকে বর বেসে নিয়ে আয় সাজিয়ে। বিবাহ উত্সব শুরু হবে তবে।
— যোহুকুম মহারাজ।
এর পর আমাকে বর বেসে সাজানো হলো। আমাকে সব রাজকীয় পোশাক পরিধান করানো হচ্ছিল। নিজেকে তখন রাজপুত্র মনে হচ্ছিল, কিন্তু মনে হয়ে কি লাভ। বিয়ে তো সেই পেত্নিকেই করতে হবে। আমাকে সাজিয়ে বিয়ের আসরে নিয়ে বসানো হলো। আর বিবাহ আসরটাও একদম রাজকীয়। বাপের জন্মে যা কোন দিন দেখি নাই আমি।
— বাহ খুব দারুণ লাগছেতো পল্টুকে, আমার মেয়ে নীলাম্বরীর সাথে বেশ মানাবে।( ভূত রাজা) ভূত রাজার কথা শুনে আমি তখন মনে মনে বললাম; পেত্নি ও পেত্নিরে তুই অপরাধী রে। তোর জন্যেই আজ আমি পড়েছি এই বিপদে। কিন্তু এখন যদি বলি করবো না আমি বিয়ে, তাহলে ঘাড়টা আমার দেবে মটকে।
— এই কে আছিস যা নিয়ে আয় আমার মেয়ে নীলাম্বরীকে। বিবাহ কার্য যে শুরু করতে হবে।
এর পর কিছু ভূত, কন্যাকে আনতে গেল। আর কিছুক্ষণ পরের আমি হবো পেত্নির জমাই। সবাই আমার দিকে আঙুল দিয়ে বলবে ওই দেখ পেত্নির জামাই। ভাবতেই আমার বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর একদল ভূত, পেত্নি রাজকুমারীকে আমার পাশে এনে বসাল। তখন ভূতেদের মধ্যে যে বিবাহ পড়ায় ভূতুম আমাকে বলল;
— বাছা, কন্যার মুখখানা একবার দর্শন করিয়া লও। নিকুচি করি দর্শনের আমি কিছুতেই পেত্নি রাজকুমারীর মুখ দর্শন করবো না।
— কি বাছা কন্যার মুখ দর্শন করো। (ভূতুম)
— আচ্ছা দর্শন না করেই বিবাহ করি, দর্শন করার কি দরকার। (আমি)
— না বাছা দর্শন করিতেই হইবে, ইহাই ভূত রাজ্যের নিয়ম।
আমি তখন বিরক্তি ভাব নিয়ে কন্যার দিকে তাকালাম। আর তাকানো মাত্রই চোখ আমার ছানাবড়া। এ কি দেখছি আমি! ভেবেছিলাম পেত্নি রাজকুমারী দেখতে হবে কালো কয়লার থেকেও কালা। কিন্তু এ তো দেখি কোন এক রূপকথার রাজ্যের সুন্দরী রাজকন্যা। এ যেন এক ডানাকাটা পরী। নাহ পরী বললে ভুল হবে পরীর থেকেও সুন্দর। এতো সুন্দরী মেয়ে আমি জীবনেও দেখি নাই। নীলাম্বরী যেন আকাশ থেকে নেমে আসা এক রাজকন্যা। আমি তখন অবাক হয়ে ভূত রাজার দিকে তাকাতেই। তিনি একটা হাঁসি দিয়ে বললেন;
— কি বাছা পছন্দ হয়েছে আমার কন্যা নীলাম্বরীকে।
আমি আর কিছু বললাম না। শুধু একটা মুচকি হাসি দিলাম। মূহুর্তের মধ্যেই আমি আমার সব কষ্ট ভুলে গেলাম। সপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি যে এতো রূপসী একটা রাজকুমারীকে। আমি আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে চলেছি। আমি তখন আবার রাজকুমারীর দিকে তাকালাম, আহা কি সুন্দর দুটি চোখ, কি মায়াবী রূপ। তখন ভূতুম, ভূত রাজাকে উদ্দেশ্য করে বলল;
— মহারাজ বিবাহ কার্য তাহলে শুরু করি,
— হুম অবশ্যই শুরু করো, (ভূত রাজা)।
শুরু হলো বিবাহ কার্য, আর এদিকে আমি রাজকুমারীর থেকে চোখটা সরাতেই পারছি না। ভূতম তখন বলল;
— বাছা পল্টু এ দিকে তাকাও,
ভূতুমের কথায় আমার ঘোরটা কাটে, আমি একটু মুচকি হেসে ভূতুমের দিকে তাকালাম। একটু লজ্জা লজ্জা লাগছিল আমার। আর তখন আর একটা বিষয় দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। কারণ পুরো পরিবেশটা পাল্টে গেছে। এতো সুন্দর একটা পরিবেশ চারদিকে সব রাজপুত্র রাজারা উপস্থিত। এক নিমেষেই সব পাল্টে গেল। যাই হোক আমার ভাবনা জুরে তখন শুধুই নীলাম্বরী। ভূতুম তখন বিয়ের কার্য শুরু করল।
বিয়ের কার্য নির্বাহ করতে থাকল ভূতুম। একটু পর ভূতুম একটা হীরার মালা আমার হাতে দিয়ে। রাজকুমারীর গলায় পড়িয়ে দিতে বললো। আমি ভূতুমের হাত থেকে মালাটা নিয়ে যেইনা রাজকুমারীর গলায় পড়িয়ে দিতে যাবো ঠিক তখনই। গায়ে কিছু পড়ায় লাফিয়ে উঠে দেখি, মা আমার গায়ে পানি ঢেলে দিয়ে, রাগীভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তখন ভয়ার্তকন্ঠে বললাম;
— এটা কি হলো মা!
— যেটা হবার সেটাই হলো বাছা, আর কতো পড়ে পড়ে নাক ডেকে ঘুমাবা। এদিকে যে বেলা বাজে বারোটা। তার কি কোন খেয়াল তোমার আছে বাছা। এবার ঘুম থেকে উঠে আমায় উদ্ধার করো। (মা)
কথাটা বলেই মা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুম থেকে বের হয়ে গেল। আর আমি তো অবাক হয়ে ভেজা শরীর নিয়ে বিছানার উপর বসে আছি। এটা কি হলো আমার সাথে। আমি তখন পুরো ঘটনাটি বুঝতে পেরে একটা মুচকি হাসি দিয়ে। মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবতে থাকলাম। কি অদ্ভুত একটা সপ্ন ছিল। পেত্নি রাজকুমারী যে দেখতে এতো সুন্দর হয় সপ্নটা না দেখলে বুঝতেই পারতাম না।
ইসসস সপ্নটা যদি সত্যি হতো। মালাখানি যদি বদল হতো। তাহলে সুন্দরী পেত্নি রাজকুমারী নীলাম্বরী আমার বউ হতো।