আমার স্বামী আমাকে অনেক সন্দেহ করে! কখন কোথায় কি করি? কোথায় যাই? কার সাথে ঘুরাঘুরি করি? আমার স্বামী সবসময় ভাবতো আমি কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক করি! বিশেষ করে আমি যেখানে জব করি সেখানের সুপারভাইজার। আমি আর আমার স্বামী একিই অফিসে জব করি। সে ছিলো কোয়ালিটি ইনচার্জ আর আমি প্রোডাকশন সেকশনের সহকারী অপারেটর। আমাদের সেকশনের সুপারভাইজার আমাকে বোনের মত দেখতো। হঠাৎ অসুস্থ হলে বা,অন্য কোন দরকারে আমার ছুটি পাশ করিয়ে দিতো। অন্যদের চাইতে আমাকে একটু বেশিই কেয়ার করতো। কেনো করতো এগুলো আমি নিজেও জানতামনা। এগুলো করার জন্যেই আমার স্বামী সন্দেহ করতো।
আমার স্বামীর সন্দেহের মাত্রা এতোটাই বেড়ে গেলো যে, আমাকে দিয়ে চাকুরী রিজাইন করিয়ে সে বাসায় নিয়ে এসে চার দেয়ালে বন্দী করে রাখলো। প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম, “আমাকে হয়তো একটু বেশিই ভালোবাসে” তাই এতো সন্দেহ করে। কিন্তু না আমার ধারণা পরে ভুল প্রমাণিত হলো। এতো ভালো যদি বেসেই থাকে তাহলে ‘সন্দেহ’ করবে কেনো? কারণ ভালোবাসার মধ্যে সন্দেহ শব্দটা বড্ড বেমানান। ২ বছর প্রেম করার কর আমরা বিয়ে করি। আমাদের রিলেশন থাকাবস্থায় আমাকে না দেখেও এতোটাই ভালোবাসতো যে, যা আমি ওর কাছ থেকে কল্পনাতেও আশা করিনি।
আমাদের পরিচয়টা রং নাম্বার থেকে। ওর নাম্বার আর আমার নাম্বারের মধ্যে শুধু একটা সংখ্যা ছাড়া সবগুলো এক ছিলো। সে তার ফোনে একদিন লোড দিতে গিয়ে ভুল করে আমার নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে দেয়। পরে ফোন করে পূনরায় টাকা দিতে বলে। এভাবেই আমাদের পরিচয়। ওর বাড়ি আমাদের পাশের গ্রামেই ছিলো। মাঝে মাঝে আমাকে ফোন দিতো। প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও পরে ওর সাথে বন্ধুত্ব করি। ২ বছর প্রেম করে তারপর ডাইরেক্ট পালিয়ে বিয়ে করি। আমার বিয়ের কিছুদিন পর আমার বাবা মারা যান। ওই মূহুর্তে সবসময় আমার স্বামী আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে। এই কারণেই আমি ওর কাছে চির ঋণী। বিয়ের ৬ মাস পরেও ওর পরিবার আমাদের মেনে নেয়নি। যদিও আমার বাবা-মা ছোট হয়ে ওদের বাড়িতে গিয়েছে; কিন্তু অপমান করে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমাদেরকে জেলের ভাত খাওয়াবে বলে হুমকিও দিয়েছে।
তারপর আমরা আলাদা বাসা নিয়ে থাকতাম। আমার স্বামী বিয়ের আগে থেকেই ওদের গ্রামে একটা কোম্পানির এনজিওতে জব করতো। হঠাৎ চাকুরীটা চলে যায়। বিয়ের ৭ মাস পর ও ঢাকায় চলে আসে। ওর পরিচিত এক বড় ভাইকে ধরে নামকরা একটা কোম্পানিতে চাকুরী নেয়। আমাকে ছাড়া কাজে মন বসেনা, ভালো লাগেনা, কষ্ট হয় এধরণের কিছু কথা বলে দু’মাস পর আমাকে তার কাছে নিয়ে আসে।
সারাদিন একা একা রুমে বসে থাকতে ভালো-লাগতোনা। ও সকাল ৮ টায় যেতো ৫ টার সময় বাসায় ফিরতো। মাঝে মাঝে ওভারটাইম করলেতো রাত ৯-১০ পর্যন্ত বাসায় ফিরতো। একটা টিভিও ছিলোনা যে, বসে বসে টিভি দেখে সময় পার করবো। ও যে টাকা বেতন পেতো তা দিয়ে টানাহেঁচড়ার মধ্যে দিয়ে চলা লাগতো। ওকে অনেক বুঝিয়ে আমিও একিই অফিসে জব নেই। কোনোভাবে ১ বছর ভালো ছিলাম। তারপরেই দেখা দিলো সন্দেহের। সন্দেহ মান-অভিমান নিয়ে আরো ৬ মাস পার করি। কিন্তু ওর সন্দেহের কোনো শেষ ছিলোনা। প্রায়ই আমাদের ঝগড়া হতো। আমাকে মেরে রক্তাক্ত করতো। আবার নিজেই বাসায় ডাক্তার নিয়ে আসতো। ভাবতাম হয়তো ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু সে আর হয়নি। আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন মা ছিল।
সবকথা মায়ের সাথে শেয়ার করি। ওই মূহুর্তে মা ছাড়া আমার পাশে কেউই ছিলোনা। মা সবকথা শুনে ঢাকায় আসে। ওকে বুঝিয়ে বলে মা আবার দেশে চলে যায়। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। কিছুদিন পর আবার আগের মত। প্রায় সময়ই দরজা বন্ধ করে আমাকে মারতো পাশের রুমের কেউ এসে যে ওকে থামাবে সেই অপশনটুকুও রাখতোনা। শেষবার যেদিন আমায় মেরেছিলো সেদিন বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আমাকে অজ্ঞান অবস্থায় বাড়িওয়ালার মেয়ে রুম থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওইদিন রাতে আর বাসায় ফিরেনি। পরেরদিন অফিসেও যায়নি। আবারো মা-কে খবর দিয়ে ঢাকায় আসতে বলি। মা আসে। বেড়ানোর কথা বলে আমাকে তার সাথে বাড়িতে নিয়ে যায়। আমার স্বামীও ছেয়েছে আমি যেনো বাড়িতে চলে যাই।
বাড়িতে আসার ৩ মাসের মধ্যে ও কখনোই নিজে থেকে ফোন করে আমার খোঁজ-খবর নেয়নি। মাঝে মাঝে আমি ফোন দিলে ওর ফোন বন্ধ পেতাম। বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে যোগাযোগ করে শুনি আমি ঢাকা থেকে বাড়িতে আসার দুই মাস পর নাকি ওই বাসাটা ছেড়ে দিয়েছে। এই তিনমাসে ওর একটা ফোনের আসায় যে কত রাত জেগেছি তার কোনো হিসেব নেই। ওদের বাড়িতে যাই। ওর মা’তো আমাকে দু-চোখে দেখতেই পারেনা। ওর ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম! বললো; ওদের সাথে নাকি কোনো যোগাযোগ নেই।
চোখের কোনো কাজল শুকিয়ে গেলো। কালো দাগ পড়তে লাগলো, ক্ষুদার্থ কাকের মত শুধু ওর একটি ফোনের অপেক্ষায় থাকতাম প্রতিনিয়ত। ভাবলাম; হয়ত আমার ভালো থাকার দিনগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে কি এজীবন এভাবেই ভালোবাসাহীনতায় শেষ হয়ে যাবে? নাহ আর সহ্য হচ্ছেনা। আমাকে একটা কিছু করতেই হবে। আবার ঢাকা চলে আসি। খোঁজার জন্যে। ওর অফিসে যাই। সেখানে তার দেখা পাই। আমাকে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো;-
-তুমি এখানে?
-তোমার ফোন বন্ধ কেনো?
-সিম নষ্ট হয়ে গেছে!
-ফোনটাতো আর নষ্ট হয়নি? আমার সাথে যোগাযোগ করোনা কেনো?
-এটা অফিস। কৈফিয়ত দেয়ার জায়গা না। তুমি বাহিরে দাঁড়াও আমি কাজ শেষ করে আসছি।
বাহিরে অপেক্ষা করতে থাকি। ভাবলাম একটা মানুষ এতোটা পরিবর্তন হয় কিভাবে? আমার স্বামী ৫ টার সময় বাহির হয়। আমার সাথে যোগাযোগ করোনা কেনো? আমি কি পুরান হয়ে গেছি? আমাকে ভালো লাগেনা? এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতে থাকি! বুঝতে কষ্ট হয়নি আমার সামনে সে নিজেকে ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারতেছেনা।
তারপর সে মুখের উপর বলেই দিলো,”আমার মাকে আমি কষ্ট দিতে পারবোনা। তুমি আমার সাথে আর কোনোদিন যোগাযোগ করবানা তোমাকে আমার সহ্য হয়না।”
কথাটি বলার সাথে সাথেই আমাদের সেকশনে কাজ করতো নিপা নামের একটা মেয়ে ওর হাত ধরে জোরপূর্বক আমার সামনে থেকে ওকে নিয়ে লোকাল বাসে উঠে যায়। গাড়ির পিছনে পিছনে অনেক দূর দৌঁড়ে গিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। আমিতো ওর বাসা চিনিনা। ওইদিন রাতেই বাড়িতে চলে আসি। পরেরদিন আমাদের সেকশনের আরেকটা মেয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বলে,”আমার স্বামী নাকি নিপার মত আরো অনেক মেয়ের সাথে ঘুরে, অবাধে মিলামেশা করে, বেডেও যায়। আমার স্বামী আমাকে কখনোই ফিরিয়ে নিবেনা। ডিভোর্স লেটারে সাক্ষর করে পাঠিয়ে দিয়ে যেনো মুক্ত হয়ে যাই। এটিই আমার জন্য মঙ্গল হবে।”মাকে সবকথা খুলে বলি। মা আমাকে নিয়ে শশুর বাড়িতে যায়। সেই বাড়িতে কেউ নেই। ওর ছোট ভাইটাও নেই। আমার শাশুড়ী নাকি ঢাকা চলে গেছে।
এভাবে আরো ৬ মাস পার হয়ে যায়। আমাদের অফিসে (আগের কর্মস্থল) যার সাথেই কথা বলি সেই বলে আমার স্বামী আমাকে কখনোই ফিরিয়ে নিবেনা। আমি যেনো তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেই। আমার মা এলাকার মেম্বারকে সবকথা খুলে বলে। মেম্বার বললো;-“যেহেতু আমার স্বামী আমার কোনো খোঁজ-খবর নেয়না৷ যোগাযোগ করেনা। যোগাযোগ করার মত মানুষ তাদের বাড়িতেও কেউ নেই। এমতাবস্থায় আমার তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয়াটাই উত্তম।”কথাটি শুনে বুকের বামপাশে ব্যাথা অনুভব করলাম। সেদিন রাতে অনেক কান্না করেছি। মা, মাথায় হাত দিয়ে সান্ত্বনা দিলো। মাকে ধরে অনেক কেঁদেছি।
আমার হাসিখুশি থাকা জীবনটা হয়তো এভাবেই শেষ হয়ে যাবে? ভাবতে পারতামনা। অনায়াসে সেও ভুলে গেছে স্মৃতি-প্রতিশ্রুতি। সপ্ন গুলো অসুখে ভুগছে। আল্লাহ যা করেন বান্দার ভালোর জন্যই করেন।”ডিভোর্স লেটারে সাক্ষর করে ও যেখানে জব করে সেই ঠিকানায় পাঠিয়ে দেই।”ডিভোর্স লেটার পাঠানোর দু’দিন পর আমায় আনমন একটা নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে বলে,”এটা তুমি কি করলে? তোমার জন্যে আমি এতো কিছু করলাম! করতেছি! আর তুমিই আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিলে?” ওর এই কথাটার মানে আমি বুঝিনি। বললাম;-
-তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছো?
-আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা। তুমি ফিরে এসো। নয়তো আমি সুইসাইড করবো।
-নাটক করতেছো আমার সাথে নাটক। তুমি একটা অভিনেতা। সালমান খান, শাহরুখ খানের মত বিশ্বসেরা অভিনেতাদের প্রতিভার অ্যাওয়ার্ড তোমাকে দিতে হবে। আর কখনো ফোন দিবানা।
কথাটি বলেই লাইন কেটে দেই। ইদানীং মায়ের শরীরটাও খুব ভালো যাচ্ছেনা। ডাক্তার দেখিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। ডাক্তার বলেছে, ভালো চিকিৎসার জন্যে গ্রামে নয় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে হবে। ডাক্তারের কথামত নিয়ে আসি।
ঢাকায় আসার দু’দিন পর আমার আগের সুপারভাইজার আমাকে ফোন করে। মায়ের অসুস্থতার কথা খুলে বলি। ওনি মাকে দেখার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করে। আমিও না করিনি। ওনি আসে। মায়ের সাথে কথা বলে। ইমার্জেন্সি কি কথা বলবে বলে আমাকে একটা সাইটে নিয়ে যায়। বলতে শুরু করলো;-
-দেখো ছোঁয়া আমি তোমাকে সবসময় বোনের চোখে দেখতাম। আমি এটা কখনো চাইনি যে, আমার কারণে তোমার কোনোভাবে অমঙ্গল হয়; তোমার স্বামী আমার উপরের পোস্টের। কারণ তার পড়ালেখার যোগ্যতা আছে। কিন্তু তোমার সাথে যা যা ঘটেছে সবকিছুই একটা সাজানো ফাঁদ ছিলো। তোমার স্বামীকে তোমার জীবন থেকে আলাদা করার জন্যে এমন কোনো কাজ ছিলোনা যা আমাদের প্রোডাকশন ম্যানেজারসহ সবাই করেছে। অফিসে যখনই আমি তোমার সাথে কাজের ব্যাপারে কথা বলতাম ঠিক তখনই নিপা নামের ওই মেয়েটা তোমার স্বামী থাকলে স্বামীকে না থাকলে প্রোডাকশন ম্যানেজারকে ডাক দিয়ে দূর থেকে দেখাতো। আর বাসায় গিয়ে তোমার স্বামী তোমার উপর চালাতো অমানবিক অত্যাচার।
যখন তুমি চাকুরী রিজাইন দিয়ে চলে যাও তখন ম্যানেজার তোমার শাশুড়ির নাম্বারে ফোন দিয়ে বলে তার ছেলে যেনো তোমার উপরে অত্যাচার করে, তুমি তার ছেলের জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছো এগুলো বলে তোমার শাশুড়ীকে ম্যানেজ করতো আর তোমার শাশুড়ি তোমার স্বামীকে ফোন করে তোমার উপর নির্যাতন করতে তার ছেলেকে বাধ্য করতো। এখানে ম্যানেজারের স্বার্থ ছিলো নিপা তার শরীর ম্যানেজারকে সঁপিয়েছে শুধু তোমার জায়গায় ও আসার জন্য। তুমি বাড়িতে চলে যাওয়ার পর তোমার শাশুড়ী ঢাকায় এসে তার ছেলেকে মাথা ছুঁইয়ে কসম দিয়েছে শুধু তোমার সাথে যেনো কোনো যোগাযোগ না করে। তারপর থেকেই তোমার স্বামী যেনো ক্যামন ক্যামন হয়ে গেলো। আগের মত কারো সাথে কথা বলেনা। কাজের প্রতিও মনোযোগ নেই। শুনলাম দুই-তিনদিন আগে তুমি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছো! এটা ছিলো তোমার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল।
অতঃপর তিনি;- “ভালো থেকো” কথাটি বলে হাসপাতাল থেকে চলে যান। আমি ভাসতে থাকি অকূল স্রোতের অম্লান ঢেউয়ে। বিধাতাকে বার বার প্রশ্ন করি আমার সাথে কেনো এমনটা হলো? কি অপরাধ ছিলো আমার? যার শাস্তি হিসেবে এসব আজাব আমাকে ভোগ করতে হচ্ছে। নাহ! কোনো উত্তর আসেনি। কিছুদিন পর মা মারা যান। বাড়িতে চলে আসি। হারনোর তালিকাটা সল্প সময়ে এতোটা দীর্ঘয়ীত হবে ভাবতে পারিনি। প্রেম ভালোবাসা স্নেহ মমতায় ঘেরা যৌবন দেখতে দেখতে এভাবেই হারিয়ে গেলো।
১০ দিন পর সেই সুপারভাইজার আমাকে ফোন দিয়ে ইমার্জেন্সি ভাবে ঢাকা যেতে বলে। কেনো সেটা আর বলেনি। ওনাকে বিশ্বাস করেই আমি ঢাকা চলে যাই। মাঝপথে রং নাম্বার থেকে ফোন আসলো। রিসিভ করে দেখি আমার শাশুড়ীর। সাথে সাথে কেটে দিলাম। আরো কয়েককবার ফোন দিয়েছে রিসিভ করিনি। সুপারভাইজার বাসস্ট্যান্ডে এসে আমাকে রিসিভ করে। অচেনা এক ৫ তলা বাড়িতে নিয়ে যায় আমাকে। মনে খুব ভয় হচ্ছিল কি না কি করে বসে আবার। ৩ তলায় উঠে দেখি এই ফ্ল্যাটটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো। সাথে আমার শাশুড়ী আর অফিসের কিছু কলিগরা উপস্থিত ছিলো। রুমের ভিতরে চেচামেচির শব্দ। গিয়ে দেখি আমার স্বামী পায়চারি করতেছে। কিন্তু কেনো? আমাকে দেখে আমার কাছে এমন ভাবে ছুটে এসেছে মনে হচ্ছিল ১০ হাজার বছর পর আমাদের দেখা হয়েছে। আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো;-
-“ছোঁয়া তুমি এদেরকে কিছু বলো। এরা আমাকে মারে। আমাকে এতোদিন তোমার থেকে দূরে রেখেছে। রুম বন্ধ করে আমায় মেরেছে। দেখো ছোঁয়া আমার পিঠে এখনো মারের চাপ লেগে আছে। এরা জোর করে ওই মেয়েটার (নিপার) সাথে আমাকে বিয়ে দিচ্ছে। আমি বলে দিয়েছি আমি এই বিয়ে করবোনা। আমার ছোঁয়া আছে। আমি ছোঁয়াকে অনেক ভালোবাসি। ছোঁয়াও আমাকে অনেক ভালোবাসে। ছোঁয়া ফিরে আসবে। চলো আমরা অন্য কোথাও চলে যাই এখানে এরা আমাদের ভালো থাকতে দিবেনা। তুমি আমার সাথে যাবেনা ছোঁয়া? তুমি কেঁদোনা ছোঁয়া আমি কোনো অপরাধ করিনি। সব অপরাধ এদের। এরা আমাদের সুখের সাজানো সংসারটাকে ভেঙ্গে দিয়েছে। আর তুমিও এদের কথা বিশ্বাস করে আমাকে ডিভোর্স দিয়েছো। আরে আমি আবার ওই ডিভোর্স মিভোর্স এইগুলা মানিনা। এটাই জানি তুমি শুধু আমার। আমার তুমিকে আমি কখনোই অন্য কারো হতে দেবোনা। আমাকে ক্ষমা করে দিও ছোঁয়া” কথাগুলো বলেই আমাকে ছেড়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লো। পাগলের মত হয়ে ওকে ডাক্তার কাছে নিয়ে আসি। ডাক্তার ৭ দিন রেখে পাবনা মানুষিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। ওর মাথার ব্রেনের সমস্যা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে আমি নিজেও বেরিয়ে গেছি, আমার অক্ষত সত্তাকে নিয়ে।
-এই ছোঁয়া কাঁদছো কেনো? তারপর কি হয়েছে বলো!
-না আমি বলতে পারবোনা!
-না বললে আমি খুব কষ্ট পাবো প্লিজ ছোঁয়া বলো..!
তারপর কেউ আমাকে ওর কাছে নিয়ে যেতোনা। ওই সুপারভাইজার আগের কোম্পানিতে চাকুরী করার জন্যে বলে। কিন্তু আমি করিনি। যেই চাকুরী আমার সংসারকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে সেই কোম্পানির সামনে যাওয়ার বা কাজ করার কোনো প্রশ্নই আসেনা।
একদিন আপনার আব্বুর সাথে একটা টং চায়ের দোকানে দেখা হয়। ওনার বন্ধুদের সাথে চা খাচ্ছে। কথার বাজে বুঝলাম গাড়িটা যে আপনার আব্বুরই। দামী গাড়ি দেখে ওনার কাছেই ১০০০ টাকা চেয়ে বসি। প্রশ্ন করলেন,;-
সুন্দর চেহারা, আমাকে কোনো ফকিরের মতও দেখা যায়না, কি করি, কোথায় থাকি? একহাজার টাকা দিয়ে কি করবো? এমন অনেক কথা জিজ্ঞেস করেন।
আমার স্বামী অসুস্থ, আমার কোনো বাসস্থান নেই আমি সারাদিন ভিক্ষা করি এবং আগের কিছু কথা ওনাকে খুলে বলি। ওনি সহ খুব মনোযোগ দিয়ে সবাই আমার কথা শুনে। আপনার আব্বু বললো;- “আমার বাসায় আমার একটা মেয়ে আছে। তার সাথে তুমি থাকবে। সে খুব ভালো। শুধু তার কথামতো দেখানো কাজগুলো করে দিবে। তার বিনিময়ে তোমাকে খাবার খাওয়াবো, টাকা দেবো প্রতিমাসে একবার তোমার স্বামীর সাথে দেখা করিয়ে আনবো। কি যাবে আমাদের বাসায়?”
হুমমম যাবো বলে উত্তর দিলাম। আপু শুধু আপনার আব্বু না; অন্য কেউই যদি বলতো তুমি সারা মাস আমার বাসায় কাজ করবে বিনিময়ে শুধু তোমার স্বামীর সাথে একবার দেখা করিয়ে আনবো! তার কথাতেই আমি রাজি হয়ে যেতাম। এরপর থেকে প্রতিমাসে আপনার আব্বু আমাকে টাকা দ্যায়। আমি গিয়ে দেখা করে আসি। টেনশন করোনা। ইনশাআল্লাহ এই মাসের ২০ তারিখে তোমার স্বামীকে দেখতে আমিও তোমার সাথে যাবো। এবার আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
-তুমি কেঁদোনা দেখবে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। ছোঁয়া অনেকরাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো।
ছোঁয়াকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিয়ে রুমে এসে আমিও কাঁদতে লাগলাম তার জীবনের গল্পটা শুনে। আমি তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে ঠিক থাকতে পারিনি। আর গল্পটাতো ওর নিজেরই। লেখার মধ্যে অনেক কিছুই অপ্রকাশিত ছিলো। কারণ এটা সাজানো বা বানানো কোনো লেখা নয়। এটা একটা বাস্তব চিত্র।