গাজাখোড় বউ

গাজাখোড় বউ

বাইকে করে অফিস থেকে বাড়িতে ফিরছি। মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ।প্রেম করে ঐশিকে বিয়ে করেছি।ঐশি কলেজে আমার এক সেমিস্টার সিনিয়র ছিলো। তার উপর কলেজের মহিলা নেত্রী।দেখতেও ভালো, কিন্তু তার থেকেও বেশি রকম রাগি,কলেজে তার আরেক নাম “গাজা আপা ” বলে সবাই চেনে!  গাজা খায় কিনা। গাজা খেলে নাকি মানুষ সবসময় খুব রাগি থাকে।

এইতো কোন একটা ছেলে সেদিন মেয়েদের হোস্টেলে ঢিল ছুড়ছিলো। ছেলেটাকে সবার সামনে ধরে এনে কলেজের সামনে গাছের সাথে বেধে যে মারটা দিলো ছেলেটা প্যান্টে প্রস্রাব করে ফেলেছিল, চোখগুলো ঐশির লাল বর্ন।নিচ্চই সকাল সকাল গাজা খেয়েছে, তারপর পিটাইছিলো। তারপর থেকে ছেলেরা ঐশিকে যে পথে দেখতো সে পথে আর যেতনা ।

একটা কথা না বললেই নয়।আমি বন্ধুদের মাঝে খুব সাহসী হিসেবে নিজেকে প্রচার করি। বিভিন্ন সময় আমার সাহসীকতার(চাপা)গল্প বলতাম।বাস্তবে রাস্তায় কুকুর দাঁড়ানো দেখলেও দৌড় মারি। ঐশিকে নিয়েও অনেক চাপা পিটাইছি। ঐশিকে এটা করবো সেটা করবো, ও আমাকে চেনে??  মাঝখানে প্যাচটা বাধালো নয়ন।ও বললো, আচ্ছা তোর কিচ্ছু করা লাগবে না।তুই শুধু ঐশিকে বলবি,”আই লাভ ইউ ” তাইলেই বুঝবো তুই কত সাহসী! ! সব বন্ধুরা একসাথে বললো, ঠিক বলছিস!! এমন চাপা পিটাইছি এখন “না “ও বলতে পারছিনা।সিদ্ধান্ত নিলাম কাজটা করবো। যা আছে কপালে। কিন্তু আমার এতদিনের চাপাগুলো আমি মাটিতে মিশাতে পারবোনা।  যেই ভাবা সেই কাজ।রাস্তা থেকে ঐশিকে ডাক দিলাম!

– ঐশি আপু! একটা কথা বলবো।
– কী?
– আই লাভ ইউ! আপু আমার দিকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো।

চোখের দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে গাজার মাত্রা একটু বেশিই হয়েছে আজকে।আজ আর রক্ষা নেই, দৌড় দিবো কিনা ভাবছি। অনেক্ষণ কি চিন্তা করে বললো,

– বেশ, চলবে! ভুলেও আর কোনো মেয়ের সাথে যেন কথাতো দুরে থাক, তাকাতেও যেন না দেখি।নইলে আমাকেতো চিনই! মোবাইল নাম্বার বলো
– জী আপু।
– এখন থেকে আর আপু না। ঐশি!

আমিতো পুরা টাস্কি খাইলাম।মনে হচ্ছে কল্পনা তে আছি।চিমটি কেটে দেখলাম, না বাস্তবে । সে যাই হোক ভালোই হলো , চা চাইতে সরবত।একটা সিনিয়র গার্লফ্রেন্ড তাও গুন্ডি, সবাই ভয় পাবে আর ঐশির চেহারাও পুরাজেনো পরী।যদিও একটু গাজা খায়।  পরে এক সময় ছেড়ে দেবে।

কিন্তু তা হলো না।দিনে দিনে সে আরো গাজাখোড় হয়ে যাচ্ছে ।ভাবলাম, বিয়ের পরে ছেড়ে দিবে! না।  বিয়ের পরেও ঐশি লুকিয়ে লুকিয়ে গাজা খায়।কথা বার্তায়ও এখন পুরা গাজার সিন্ট্রম! আমি যদি বলি , এটা একটা আপেল। ও বলবে, এটা একটা কুমড়া!  এইতো সেদিন মা খাবার টেবিলে বললো, বৌ মা জগটা দাওতো! ঐশি বলছে, এটা খুব সুন্দর প্লাস্টিকের তৈ‌রি দেখতে একটা বদনা, যেটা আরএফএল কম্পানি তৈরী করেছে! এটাতে পানি থাকে! মা বিরক্তিকর মুখ নিয়ে উঠে গিয়ে জগ নিয়ে আসলো! সেদিন বাবা বলল, মা ঐশি! ইস্ত্রীটা খুজে পাচ্ছিনা। ওটা দেখেছ? ঐশি বলছে, আপনার স্ত্রী তো রান্না ঘরে!

– আরে বৌমা, কাপড় আয়রন করার ইস্ত্রি টা কই?
– জী বাবা দেখেছি। ওটা খুব ভালো মজবুত টেকসই এক‌টি ইস্ত্রি!খুবই ভালো।খুবই গরম হয়!
– বুঝলাম, কিন্তু কই।
-জী বাবা ওটা আছে, বাজারের ইলেকট্রনিক দোকানে!

বাবা রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।  বাড়ির সবাই ওর গাজাখুড়িতে বিরক্ত।  আমি সব দেখেও কিছু বলতে সাহস পাইনা।যে গুন্ডি বউ আমার, তার উপর সিনিয়র,চুপ থাকাই ভালো। কিন্তু কিছু একটা করতে হবে।কি করা যায়! হঠাৎ করে অন্যমনস্ক থেকে সামনে বাসটার দিকে চোখ পরে। এ এ এ এ এ আহ! চোখ খুলে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। পাশে আমার বউ বসে। ডাক্তার বললো, কি করে এতো খারাপ ভাবে এক্সিডেন্ট করলো? ঐশি বললো, আসলে পৃথিবী ঘুর্ণন শীল। সেই ঘোরার কারণে মোটরসাইকেল টাও হঠাৎ নড়ে গিয়ে সামনের বাসে গিয়ে লেগেছে! ডাক্তার আমার বউয়ের কথা শুনে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে।

– আচ্ছা ডাক্তার খুব বেশি কিছু হয়েছে?(বউ)
– ডান পাটা হাঁটুর নিচ থেকে ভেঙ্গে গেছে!
– বাচা গেলো ।ভাগ্য ভালো নখগুলো ভাঙ্গে নি।  বউর কথা শুনে আমি বেহুঁশ!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত