7up এর বোতল

7up এর বোতল

বিয়ে করেছি ৬ মাস হলো ৷ বউকে নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি ৷ সমস্যা যত শ্বশুরকে নিয়ে ৷ শ্বশুর বাড়িতে গেলেই উনি আমার সব জিনিসে ভাগ বসান! এই যেমনঃ সিগারেট,গায়ের শার্ট, পড়নের প্যান্ট, মাথার ক্যাপ, টুপি ইত্যাদি! আজকে বউকে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে গেলাম শ্বশুর বাড়িতে ৩কেজি মাপের একটিইলিশ মাছ নিয়ে! এতবড় মাপের মাছ দেখে শ্বশুর আব্বা অন্য কিছুতে নজর না দিয়ে মাছটা নিয়েগেলেন কিচেন রুমে! শ্বাশুরি আম্মা রাঁধলেন ৷ রাতে খাওয়ার সময় বউকে ও শ্বশুরকে নিয়েবসলাম খেতে!

শ্বাশুরি আম্মা খাবার দিচ্ছিলেন আমাদের! উনি তরকারি ঢেলে দিলেন আমার প্লেটে! শ্বশুর আব্বা ও আমার বউয়ের প্লেটেও দিলেন! ইলিশ মাছের মাথাটাও দিলেন আমার প্লেটে! উনি মাথাটা প্লেটে দেওয়া মাত্র শ্বশুর আব্বা একবার আমার চেহারার দিকে আরেকবার মাছের দিকে চোখ দুটো মরা গরুর মত বানিয়ে তাকাচ্ছিলেন! আমি তো এখনো মাছের মাথায় হাতই দিইনি! তরকারি দিয়েই চিকন চালের ভাত সাবাড় করে যাচ্ছি! বউ তার প্লেটের মাছের চাকা আমাকে দিয়ে বলল,

_ওগো, নাও; তুমিই খাও! নিলাম মাছের চাকা ৷ ওমা, শ্বশুর আব্বা দেখি তার মুখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে চাটছিলেন আর আমার দিকে কেমন লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলেন! কি যেন বলবেন মনে হচ্ছিল? উনি লজ্জার মাথা খেয়ে মুখ থেকে আঙ্গুল বের করে মিনমিন করে আদুরে গলায় বললেন,

_জামাই, দাও; মাছের মাথাটা আমার প্লেটে দাও ৷ তুমি বাচ্চা মানুষ ৷ ইলিশ মাছের কাটা সুবিধার না ৷ কাটা বিঁধলে আর কখনো মাছ খাওয়ার ইচ্ছা জাগবেনা ৷ তারচেয়ে আমাকে দাও, আমি বুড়া মানুষ; কতদিন আর বাঁচবো বলো? খেয়ে মরে যাই!

এটা বলেই উনি মাছের মাথাটা নিয়ে নিলেন ৷ কি শরম কি শরম! আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম এমন অবস্থা ৷ মুখ লুকাব কোথায় বুঝতেপারছিলাম না! মনে মনে বললাম, “খা ফকিন্নি শ্বশুর, কোনো জন্মে তো ইলিশ চোখে দেখেন নাই, যে মাপের কিপ্টার কিপ্টা আপনি, বড় মাছ এর আগে পেটে গেছিলো কিনা সন্দেহ!!” শ্বশুর আব্বা গাপুস গুপুস করে পুরো মাছের মাথাটা খেয়ে উদরপূর্তি করে ফেললেন! আর আমি শুধু করুণ দৃষ্টিতে বউয়ের দিকে চেয়ে রইলাম ৷ শ্বাশুরি আম্মা বিষয়টা বুঝতে পেরে একটা বড় দেখে মাছের চাকা প্লেটে দিলেন! এবারও শ্বশুর আব্বার নজর আমার এই বড় মাছের চাকার উপর! উনি এবারও লজ্জাকে গিলে খেয়ে উত্তেজিত গলায় বললেন,

_আরে মায়া, এটা কি করলা? মাছের এই চাকাটা আমি খাব সেটা তোমাকে মাছ কাটার সময় বললাম না? দিলে কাকে? জামাইকে! জামাই কি মাছ বাপের জন্মে খায়নি? তুমি না, কিচ্ছু বোঝনা! বাচ্চা মানুষ সে, জীবনে কত কিছু খেতে পারবে! দাও জামাই, দাও; মাছের চাকাটা আমাকে দাও! আমাকে কষ্ট করে মাছের চাকাটা দিতে হলোনা ৷ উনিই তুলে নিলেন! আমি কষ্ট করে প্লেটের বাকি ভাতগুলো খেয়ে উঠে গেলাম! সকালে ঘুম থেকে উটে ব্রাশ করছিলাম! হঠাৎ শ্বশুর আব্বা এসে আমার দিকে উঁকিঝুঁকি মারছিলেন ৷ উনি কৌতূহলের স্বরে বললেন,

_জামাই, দামী পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজতেছো? তো আমাকে পেস্টটা দিবানা? কই রাখছো বলো? আমি সহজভঙ্গিতে বলে দিলাম,
_আপনার মেয়ের রুমে গিয়ে দেখেন!

উনি দেখি শ্যাম্পুর বোতল থেকে শ্যাম্পু ব্রাশে লাগিয়ে নিয়ে ব্রাশ করা শুরু করে দিয়েছেন! আমার বউ তানজিলা এমন দৃশ্য দেখে হাসছিল সাথে আমিও! ব্যাটা শ্বশুর কিছুই টের পায়নি বলে মনে হলো! রাতে ক্রিম মেখে ড্রয়িং-রুমে টিভির সামনে বসে মুভি দেখছিলাম ৷ শ্বশুর আব্বা আমার মুখ থেকে আসা ক্রিমের সুগন্ধ পেয়ে গম্ভির গলায় বললেন,

_জামাই স্নো মাখছো তাইনা? বাহ কত ফর্সা লাগছে ৷ স্নো কই রাখছো বলো? আমার সরল সোজা জবাব
___আপনার মেয়ের রুমে দেখেন আছে! উনি ক্রিমের বদলে শেভিং-ক্রিম মেখে এসে হাস্যজ্জ্বল মুখে আমাকে ও তানজিলাকে বললেন,

_কেমন লাগছে জামাই? তানজিলা তুইও বল কেমন লাগছে?

আমি মুখ চেপে হাসছি ৷ আর আমার বউ খিলখিল করে হাসতে হাসতে দম ফাঁটার মত অবস্থা! দুদিন পর শ্বশুর বাড়ি থেকে নিজের বাসায় ফিরে গেলাম! দীর্ঘ ৬ মাস বাসায় ও অফিসে কাজের মাধ্যমে কাটিয়ে দিলাম ৷ হঠাৎ কোথা থেকে যেন আমার রোগের উদয় হলো! শ্বশুর বাড়িতে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম ৷ কারণ সেখানে পাশেই সদর হাসপাতাল! গেলাম শ্বশুর বাড়ি ৷ বউ বলল তোমার যত প্রকার পরীক্ষা লাগে সব করাবো ৷ বাসা থেকে প্রস্তুতি নাও! আমি প্রস্তুতি নিয়ে চললাম হাসপাতালের দিকে বউকে সাথে নিয়ে! শ্বশুর আব্বা কই যেন গেছেন তাই ঝামেলা হলোনা! কিন্তু সর্বনাশ! রাস্তায় শ্বশুর আব্বার সাথে দেখা হলো! উনি আমাদের দেখে রিকশা থেকে নামিয়ে দিলেন ৷ আমার হাতে সেভেন আপের বোতল ছিল! উনি ওটা দেখে খুশির ঠ্যালায় বললেন,

_জামাই, সেভেন আপ একা একা খেয়ে প্রায় শেষ করে ফেলছো, তাইনা? দাও তো ওটা! আমার বউ তার বাপের কথা শুনে চেতে উঠলো এবং কিছু একটা বলতে গেল! কিন্তু শ্বশুর আব্বা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

_তুই চুপ থাক! জামাইয়ের যেকোনো জিনিস নিতে গেলে তুই তো না করিসই সবসময়, আজও তার ব্যতিক্রম করবিনা ভাল করে জানি! তোর কথা শুনবনা! দাও জামাই, সেভেন আপ দাও! আমি কি দিবো? উনিই থাবড়ি দিয়ে সেভেন আপের বোতল নিয়ে নিলেন! তারপর বোতলের মুখ খুলে ওনার মুখে পুড়ে নিয়ে এক ঢোকে পুরোটা গিলে ফেললেন! আমার বউ বমি করা শুরু করে দিলো! আর আমি হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝছিলাম না ৷ তখন শ্বশুর আব্বা কেমন এক অভিব্যক্তি নিয়ে বললেন,

_জামাই, খেলাম; মাগার লবন লবন লাগে কেন? আমি হাসিটা গলায় আটকে রেখে অনেক কষ্টে থেমে থেমে বললাম,
_আব্বা, ভূয়া ফ্রিজে রাখা ছিল তো, ফ্রিজ মনে হয় গ্যাস্ট্রিকের রোগী তাই নোনতা নোনতা লাগছে! আমার বউ বেহুশ!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত