সদ্য ফুটে উঠা ফুলটার দিকে তাকিয়ে আছে তিথি। নয়নতারা গাছটা হেসে উঠেছে। হলুদাভ ভাবটা শুভ্রতার ছোঁয়া ছুঁয়েছে। নিজের মিনি বাগানের সবচেয়ে সুন্দর গাছটি হচ্ছে নয়নতারা। তিথি মনে করে প্রকৃতি নিজে তাকে বাড়তি উপমা দিয়েছে। ” ইস গাছের ও যদি বাক্-শক্তি থাকতো তাহলে সারাদিন বসে থাকতাম এর কাছে।” তিথির অর্ধেক সময় পার হয় বাগানে বসে। গাছের মাঝে ক্ষণিকের শান্তি খুঁজে পায় সে। বাকি সময় টা একলা কাটানো হয়, দোকলা জিনিস টা আর ভালো লাগছে না আজকাল। কারোর সাথে বনে না মেয়েটির।
-তিথি,এদিকে আসো
উঠে পড়তে হলো তিথিকে, মনে ক্ষীণ একটা ইচ্ছা নয়নতারা গাছটা পিছুডাক দিবে। ধুর এমন কী হয় নাকি ভেবেই নিজের উপর হতাশ ভাব আসলো তার।মনে হতে লাগলো, “আমাকে দিয়ে কী আর হবে,কীভাবে আশা করতে পারি গাছ কথা বলবে। আমি আসলেই বোকা।” এসব ভাবতে ভাবতে চলে গেল সে ঘরে।
-জ্বী, আম্মু ডেকেছো?
-এতক্ষণ লাগে?
চুপ করে আছে তিথি। গাছের কথা বলা এইসব ভাবতে ভাবতে যে দেরি হয়েছে তা বললে ভাগ্যে ধমক ছাড়া কিছু নেই। মিসেস হক কড়া গলায় বললেন-
– উত্তর দিচ্ছ না কেন?
-গাছে পানি দিচ্ছিলাম।
-সারাদিন গাছের পাশে বসে থাকলে রেজাল্ট নিজে নিজে ভালো হবে?
জড়বস্তুর মতন দাড়িয়ে আছে তিথি। বলার মতন কিছু নেই তার। এখন আর পড়াশোনায় মন বসেনা তা মা-কে বুঝিয়ে সে পারবে না। চুপ করে দাড়িয়ে আছে সে।
-কথা বলছো না কেন? তোমার বন্ধু জুনাইরাহ কে দেখ সিঙ্গেল সাবজেক্ট নেই যেখানে সে এ+ পায় না।
-জুনাইরাহ আমার বন্ধু না আম্মু।
-হ্যাঁ তা হতে যাবে কেন?
তোমার তো কথা বলতেই সমস্যা হয়। আরেকজনের থেকে শিখার আগ্রহ কখনো ছিল না তোমার মধ্যে।সমাজচোরের উপাধি বাদে কিছু ডিজার্ব করো না তুমি। এর উত্তরে কিছু বলার দরকার নেই। হ্যাঁ সত্যিই তিথি সমাজচোর। আড়ালে থাকতে পছন্দ করে সে। এদিকে মেয়ের উত্তর না পেয়ে মিসেস হক অসম্ভব রেগে গেছেন। চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি
-তুই আমার সামনে থেকে দূর হ। যা বলছি।
স্বাভাবিকভাবেই তিথি নিজের রুমে চলে এলো।মায়ের সাথে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক ছিলো না তার কখনো। মাথা গরম করা বাদে তিনি কিছু করেন নি অতীতে। আর যদি করেও থাকে তা তিথির মনে নেই, কারণ মানুষ ভুল নামক জিনিস টা মনে টুকে রাখে। ভালো জিনিস টাকে পাত্তাও দেয়না, মনে রাখার প্রয়োজন বোধও করে না। তিথি মনে করার চেষ্টা করলো তার মা কবে দু-দন্ড ভালো করে নরম গলায় কথা বলেছে তার সাথে, মনে পড়ছে না কিছুই। এবার তার ভাবনা মোড় নিলো নিজের দিকে, ভাবা শুরু করলো -কবে সে তার মা কে শেষবারের মতন বলেছে আম্মু আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-যখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম তখনই শেষবারের মতন বলেছিলাম।আম্মু একটুও মিস করে না ছোট্ট তিথিকে?
সামনের আলমারিটাকে জিজ্ঞাসা করলো তিথি
-আচ্ছা আমি গভীর রাতে যখন ঘুমিয়ে পড়ি তখন কখনও আম্মুকে আমার ঘরে ঢুকতে দেখেছো? কখনও কপালে চুমু এঁকে গায়ে চাদর টেনে দিয়েছে?
-যখন ছোট ছিলে তখন দিয়েছেন
-বড় হয়ে দোষ করে ফেললাম আমি
-ছোটকাল টা সবার জন্য স্বর্ণকাল
-তোমরা আছো বলে এখনও আমি টিকে আছি
-সবার সাথে কথা বললেই পারো, তাহলে আর একঘেয়েমি লাগবে না তোমার
-কার সাথে? কার সময় আছে বসে বসে আমার কথা গুলো শুনার? তোমাদের জীবন নেই তাই আমার কথা শুনো, জীবিত থাকলে তোমরাও আমার কথা তুচ্ছ করে দেখতে, বুঝার চেষ্টা করতে না আমায়
-আমরা কী আসলেই তোমার কথা শুনি?
প্রশ্ন শুনে চমকে উঠল তিথি। ঠিকই তো। কল্পনার রাজ্যে গমন করতে করতে ইলুশনের দরজায় মাথা ঠুকেছে সে। ভিতর টা ভারী হয়ে গেলে মস্তিষ্ক ইলুশন এর সাহায্যে সখী-সখা পাঠায় তার জন্যে, যাদের আসলে কোনো অস্তিত্ব নেই।
বায়োলজি বইটা দেখতে ভালো লাগছে না তার। একটু কল্পনা করতে হবে, অন্য রাজ্যে যেতে হবে। খুব ভালো কল্পনা আমি করতে পারি। কল্পনার জগতে ভেনিসে চলে যাব আজ। তার দৃশ্যে মুগ্ধ হবো।ভেবেই রুমের লাইট অফ করে দিল,পর্দা লাগিয়ে দিল।ফ্যানের স্পীড বাড়িয়ে দিল যেন বাইরে থেকে কেউ ডাকলেও শুনতে না পায়। তিথি এখন কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাবে। চোখ বন্ধ করে ইমাজিনেশন করলে তার স্বাদই আলাদা ভেবে আহ্লাদ সহকারে তিথি চোখ বন্ধ করতে নিলো এবং নিমিষেই সকল ইচ্ছা দুমড়ে গেল। বলে উঠল কাঁপা গলায়
-কেন?
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, আর অন্যদিকে তিথির মনে ঝড় বইছে। আবার ইলুশন হচ্ছে।আর কে-ই বা আছে তিথির জগতে। ক্ষণিকের শান্তি ইলুশন নামক বন্ধু গুলো দেয়।
-তিথি!
-কে?
-দেয়াল
-তুমিও এখন কথা বলো।হায়রে,ডুবে গেলাম আমি
-তুমি এখন তাই-ই দেখছো। তোমার মস্তিষ্ক যখন যুক্তি দিয়ে ভাববে এসকল বিভ্রম তখন হয়ত আমি কথা বলব না
-আমি জানি তুমি সত্যি না। তুমি একগুচ্ছ অবাস্তব ধারণা যা আমায় রেহায় দেওয়ার জন্য তৈরি হয়।জানো আমি আজ কয়েকদিন যাবৎ হাসি নি
-ওমা!কেন?
-কারণ খুঁজে পেলাম না
-আমি তোমাকে হাসাই?
-আচ্ছা
-ইং চুং চাং চু, তোমার নাক চ্যাপ্টা বসু।
-উহু আমার নাক চ্যাপ্টা না। আর নামও এইটা না।
– হাসি আসে নি?
-না।
-আক্কুম বাক্কুম বাজ পাখি,
রান্না করতে পারে না।বরের জন্য লিপস্টিক দিয়ে সাজতে সে জানেনা। তাই সে করলো কী জানো?আনুশকার মতন লিপ সার্জারি। এখন কাউয়া রানীও তাকে দেখে হিংসে করে কিন্তু একসময় কাউয়া রানী ছিলো সবচেয়ে সুন্দর ঠোঁটের অধিকারী। তার ঠোঁটের কালো রঙে তাকে জাগ্রত নারী মনে হতো।দুঃখের বিষয় হচ্ছে সবাই বাজ পাখি কে নিয়ে মেতে উঠল কাউয়া রানী কে ভুলে গেল।ওদিকে বাজ পাখিকে নায়িকা হওয়ার সুযোগ দেওয়া হল। করলো সে চু চু ডায়পার্স এর এড।কাউয়া..
-কীহ!!!! তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে
-আমার মাথা নাই
-হাহা। আমি আসলেই পাগল। আমার মাথাই এইসব বের করছে।
-আরো একটা শুনো।
একদিন পিপড়া গেলো মাছ খেতে তো সে গেল বাজারে। সেখানে গিয়ে দেখল, মাই গড পছন্দের নায়ক হাংকু মামা বাজারে।পিঁপড়া বাবাজী তো মহাখুশি সে ঠিক করেছে হাংকু মামার বাজে হাতে লেখার অটোগ্রাফ সে নিবেই নিবে।তাই সে নাচতে নাচতে হাংকু মামার পায়ের কাছে গেল।বলল,”ইয়ে হাংকু মামা আমি আপনার অনেক বড় ছোট সাইজের প্যান্ট ও না থুঃকু ফ্যান,তো একটা অটোগ্রাফ প্লীজ। ” বিশাল সাইজের হাংকু মামা ছোট পিঁপড়া কে দেখলোই না। এতে পিঁপড়ার হলো ভীষণ রাগ। উঠে গেল সে হাংকু মামার গালে। দিল কুটুস করে কামড়।সেই কামড়ের দাগ আজ ও হাংকু মামার গালে ফোঁড়া হিসেবে বসে আছে
-হাহা।আমিও পারি। শুনবে?
-শুনাও
-একদিন এক টিকটিকি তার রুমে ঘুমাচ্ছিল।
হঠাৎ একটা তেলাপোকা রুমে এসে উড়তে লাগল।প্যা প্যা করে গান গাইতে লাগল।বিরক্ত হয়ে টিকটিকি বলল,”এই ত্যাঁদড়ের মতন নাচছিস কেন? বিড়ালে কামড়েছে নাকি মানুষ জুতাপেটা করেছে?” নাচতে নাচতে তেলাপোকা বলল,”আমার বিয়ে হবে তোমার মেয়ের সাথে। সে আমাকে পারপোজ করেছে। এই দেখো পারপোজ করার ভিডিও।” শাওমি রেডমি তেলাপোকা ভার্সন মোবাইলে নিজের মেয়ের কান্ডকারখানা দেখে টিকটিকির চক্ষু চড়াকগাছ।সে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,”তোর বাসায় কী কী মোবাইল আছে?”উত্তরে টিকটিকি বলে উঠল,”বালতি বালতি, এটার ক্যামেরা অনেক ভালো। তেলাপোকা জবস এটা নিউ লঞ্চ করেছে।এরপর গরুতে খাওয়া আপেল ১০ এটা তো অনেক দামী।আমি কিডনি বিক্রি করে কিনেছি।তারপর আছে হুয়াইতে হুয়াইতে দিন যায়।একটার দাম ২০ পাউন্ড টিকটিকির ডিম।”এত কথা শুনে টিকটিকি আবেগে কেঁদে বললেন,’থাম বাবা! তুই ই আমার যোগ্য পাত্র।বিয়েতে যৌতুকে আমায় গরুতে না খাওয়া আপেল ১০ মোবাইল দিস।তুই বল বুড়ো হয়ে গেছি এখন কী কারো খাওয়া মোবাইল ব্যবহার করতে ভালো লাগবে?’
-হুম
-হাহা আমি আসলেই পাগল
-মন ভালো হয়ে গেছে তোমার?
-হুম।ধন্যবাদ
-ঘুমানোর আয়োজন?
-আর ঘুম…
পর্দা মেলে বাইরে তাকিয়ে রইল তিথি। দেয়ালের প্রশ্নের সম্পূর্ণ জবাব আর দিলো না।আজও যুদ্ধ করতে করতে ঘুমাতে হবে তার, হাঁপিয়ে উঠেছে সে। রক্তের ভয় এভাবে তাকে কুড়ে কুড়ে শেষ করবে সে ভাবতে পারেনি। কে এই মহিলা সে জানে না। মাস খানেক আগ থেকে এক মহিলা তাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। কল্পনাশক্তি ভালো বলে তিথি সেদিন একাকীত্ব কাটানোর জন্য কল্পনা করতে বসেছিলো।সব ই ঠিকঠাক চলছিল। কল্পনার শেষে খানিক বাদে ঘুমানোর উদ্দেশ্যে চোখ বন্ধ করলো তিথি আর তখনই তার চোখের সামনে ভেসে উঠল এক সাদা চামড়ার মহিলা।তাকে কেউ মাটিতে ফেলে রেখেছে। একটি লোক মহিলার গলার নিচে ধারালো কিছু দিয়ে পোঁচ দিচ্ছে, রক্ত ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে।মহিলার চোখ বেরিয়ে আসছে। বীভৎস হয়ে যাচ্ছে তার চেহারা। শেষে মহিলার গলার মাঝখানে লোকটি পেরেক বসিয়ে দিল।
এই দেখে তিথি লাফিয়ে উঠল। এমন কিছু হবে জানলে সে কখনো চোখ বন্ধ করে রাখতো না। সে জানেনা কেনই বা সে রক্ত দেখেও চোখ খুলে নি, জানেনা কেন সে এইসব দেখলো কিন্তু সেই দিন থেকে তিথি যখনই চোখ বন্ধ করে তখনই এই দৃশ্য দেখে। এই দৃশ্যে তার হাত নেই, চাইলেও সে এটার মোড় ঘুরাতে পারে না। কল্পনাশক্তি এখানে কোনে ভূমিকা রাখে না। তিথির অসহায়ের মতন রক্তমাখা মহিলাকেই দেখতে হয়। সে সামলাতে পারে না। চোখ খুলে ফেলে চোখ বন্ধ করলেই অজানা এই মহিলা ঘিরে ধরে। ঘুমাতে পারে না সে ঠিকমতন।রক্ত ভয় পায় সে, আর এই মহিলা ঠিক তা নিয়েই তার চোখের সামনে ঘুরঘুর করে। যতক্ষন পর্যন্ত মস্তুিষ্ক সচল থাকে, বোঝার ক্ষমতা রাখে ততক্ষন তিথি ঘুমাতে পারে না। মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে যখন ভাব-বুদ্ধি সাময়িকভাবে বিলীন করে দেয় তখন তিথি ঘুমুতে যায়।কারণ তখন মহিলা কে দেখলেও সে বুঝে না কি হচ্ছে। ক্লান্তি তাকে অন্য রাজ্যে নিয়ে যায়। কী করবে জানেনা সে।
মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে তিথির। ঠিক মধ্যিখানে। বুকের মাঝখানেও ব্যাথা। আম্মুকে বলবে কী না ভাবছে সে? ভেবেই কেঁদে দিল তিথি।সে জানে আম্মু বলবে এইসব কিছুনা ঠিক হয়ে যাবে। বাবা কে বলেছিলো আর বাবা বলেছিলো,”ঢং করিস না।” সেদিনের পর থেকে তিথি কিছু বলেনা বাবাকে৷ তার কষ্ট বাবা ঢং বলে চালিয়ে দিয়েছে। যার উপর যায় কেবল মাত্র সেই বুঝে কথাটা পরম সত্য, তিথি উপলব্ধি করতে লাগল। অসহায় লাগছে মেয়েটির। বাবাকে বলেছিলো সে তার মরে যেতে ইচ্ছে করে, খুব খারাপ লাগে, নিজেকে অপ্রয়োজননীয় মনে হয়, কাঁদতে মন চায় সারাদিন, কাউকে ভালো লাগে না।কিন্তু বাবা তো কথা গুলোর দামই দিলো না। থাকুক সবাই। আমি একদিন চলে যাব ছেড়ে আর সবাই মুক্তি পাবে।
সকালে ঘুম ভাঙ্গাল আম্মু। স্কুল বন্ধ আজকে। কী করবে বুঝতে পারছে না তিথি।ঘুমের প্রয়োজন তার। মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা।খাওয়া দাওয়ার রুচি নেই। খেতে মন চাচ্ছে না। আবার ঘুমাতে গেলে মা বলবে জমিদারের বাচ্চা। একদিন বলেছিলো।তা এখনও মনে আছে তিথির। খোঁটা শুনতে সে পছন্দ করে না। মানুষের সমস্যা থাকতেই পারে তা না বুঝে বলে দেওয়া টা খুবই খারাপ মনে করে সে। বাগানে যাবো বলে চলে গেল সে। সবগুলো গাছ রোদের উঁকিঝুঁকি দেখছে। তিথি সবগুলো গাছে পানি দিল। নয়নতারা আজও তারা ফুটিয়েছে। তিথি বসেছে নয়নতারা গাছের পাশে। চশমার ফাঁকে দিয়ে আকাশ দেখছিলো তিথি হঠাৎ করে
-এই যে মেয়ে কী করো? নয়নতারা কথা বলছে।অবশ্য এটা তিথির বিভ্রম তা সে জানে। উত্তরে বলল
-আমাকে এভাবে ডাকবে না। আমার নাম আছে।
-বাবা!তোমার এত মেজাজ কেন?
-হু আমি মানুষ ভালো না।
-কেন কয়টা খুন করেছো?
-প্রতিদিন করি
-কয়টা?
-সেটা তোমার জানা ঠিক হবে না,হাহা।বাদ দাও
-এমন কেন তুমি,খুন করেছো এই কথা কেউ এমন স্বাভাবিকভাবে বলে?
-তোমার বুঝার সাধ্যি না গো,বাদ দাও।তো কাল্পনিক ইলুশনারী গাছ কেমন হাল তোমার?
-তোমার কল্পনা আমি।আমার বুঝার সাধ্যি না বলছো?হ্যাঁ আমি ভালো আছি
-যেহেতু তুৃমি আমার কল্পনা বা গাছরূপী ইলুশন তাই তোমার জানার কথা না। ইলুশনে মানুষ অবাস্তব জিনিস দেখে।
যেমন আমি দেখছি আমার নয়নতারা গাছ আমার সামনে কথা বলছে। তুমি অসীম অবাস্তবিক চিত্র। আশা করি আমার যুক্তি বুঝেছো।
-ইলুশনে থাকা মানুষ যুক্তি দেয়, এটা তোমার কাছে হাস্যকর মনে হয় না?
-কিছুক্ষেত্রে হতে পারে। মিসির আলী নিশীথিনী তে দেবি কে ইলুশনে দেখেছিল ও যুক্তি দিয়েছিল। আমি এবং আমরায় মাস্টার মশাই কে যুক্তি দিয়েছিল।
-সেটা গল্পে আর তোমার টা সত্যি।
-আমি জানিনা তুমি চাচ্ছ টা কী?
-মন খারাপ?
-মন নামক বস্তুর অস্তিত্ব আপাতত অনুভব করতে পারছি না।
-আকাশ দেখছো?
-হুম। দেখো আকাশ টা অসম্ভব সুন্দর
-তুমি আযব
-হাহা বলা যায়।শব্দ শুনতে পাও?
-কীসের?
-পৈশাচিক হাসির?
-তুমি শুনছো?
-হুম, প্রায় শুনি। তুমি এখন কিছু শুনতে পাচ্ছো না?
-না তো। তুমি কী জানো তোমার কী হয়েছে?
-কী আর হবে! বয়স বাড়ছে
-একাকীত্ব?
-কেন এই যে তুমি!
-তুমি কী এটাই চাইতে?
-তোমার কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারছি আমি মানসিকভাবে দূর্বল। হাহা। ইমোশনাল পার্ট হিসেবে কথা বলছো তুমি।
-উত্তর দাও
-না চাইতাম না। তবে যা চাই তা পাবো না
-তোমার আল্লাহর উপর বিশ্বাস নেই?
-অবশ্যই আছে। তবে আমার সমস্যা থেকে কেটে উঠার জন্য আল্লাহ কে বাদে কাউকে সাথে পাবো না
– মানুষের মধ্যে কেউই নেই?
-না,আমি মনে করি না। তাইতো তুমি আমার সাথে কথা বলছো। আমি জানি আমি পাগল। তবে উন্মাদ নই কিন্তু হয়ে যাবো।তুমি তো আমার মধ্যেই আছো দেখতে পাবে।
-কারো সাথে কথা বলে হালকা হতে পারো না?
– হাহা
-তুমি কী জানো তোমার হ্যালুসিনেশন হয়?
-জ্বী জানি। আমার সাউন্ড হ্যালুসিনেশন হয়।
-তোমার স্কিতসোফ্রনিয়া হয়ে গেছে
-হুম তা আমি অনেক আগে থেকে জানি। কিন্তু তুমি কী জানো আমি খুব শিগগির মৃত্যু আশা করছি?
-এভাবে থাকলে মারাই যাবে স্ট্রেস বা প্যানিক অ্যাটাকে
-তাই যেন হয়।হাহা।দেখো আমি কত হাসি
-তুমি আযব
-সবাই বানিয়ে দিয়েছে।দেখবে যখন মারা যাবো সবাই বলবে,’মরে গেল কীভাবে”,কিন্তু এখন কেউ জিজ্ঞাসাই করে না বেঁচে আছি কীভাবে।
-কেঁদে দিবে তো
–নাহ,আমি কারো সামনে কাঁদি না
-তুমি কাঁদছো।
-তুমি যাও এখন
-আমার সাথে কথা বলো, হালকা লাগবে।
-প্লীজ যাও
-উহু,তোমার পৈশাচিক হাসি আমায় খুলে বলো
-তুমি আমায় স্ট্রেস দিচ্ছ।মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে যাও তুমি
-কথা বলবে না?
-যাও যাও যাও। দোহাই লাগে যাও, আমি কথা বলবো না। একা ছাড়ো আমায়। মাফ করো আমায়। আমি পারছি না।
দৌড়ে ছুটে গেল তিথি নিজের রুমে। মাথায় চাপা যন্ত্রণা সহ্য হচ্ছে না তার যন্ত্রণার চোটে চোখ বন্ধ করেছে সে,এবং সেই সুযোগেই সাদা চামড়ার মহিলার আগমন। চাপা স্বরে বলে উঠল তিথি
-আল্লাহ, আমি কী সত্যি পাগল হয়ে যাবো? আমার কষ্ট হচ্ছে অনেক।
সারাটা দিন এক চাপা বিষাদে কেটে গেল তিথির।সন্ধ্যায় ডাইরি লিখতে বসলো সে। আজ গাছের সাথে কী কী কথা হয়েছে সব লিখে রেখেছে সে। আম্মু আজকে একবারো ডাকেনি। খোঁজ নেওয়া দরকার। তিথি তার আম্মুর ঘরে গেল, দেখলো মিসেস হক ফোনে কার সাথে কথা বলছেন। তিথি আবার নিজের ঘরে চলে আসলো।ঘুম না হওয়ার কারণে তিথির চেহারা ভাঙতে শুরু করেছে। তিথির মাথা ঘুরঘুর করছে সে ঠিক করল, ঘুমের ঔষধ খাবে। লিব্রিয়াম সবচেয়ে কার্যকরী তাই ঔষধের বক্স থেকে ঔষধ খেয়ে তিথি অপেক্ষা করছে ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়ার জন্য।৫ মিনিট বাদে তিথির হাত পা ছেড়ে দেওয়া শুরু করলো, চোখের পাতা ভারী হয়ে আসলো, চিন্তা শক্তি লোপ পাচ্ছে তিথির। মস্তিষ্ক ইনেক্টিভ হওয়া শুরু করে দিয়েছে। ঘুমিয়ে পড়লো মেয়েটি।ওইদিকে মিসেস হক তিথি তিথি বলে চেঁচাতে লাগলেন। সাড়া শব্দ না পেয়ে দেখতে এলেন তিথির রুমে। এসে দেখলেন মেয়ে অবেলায় ঘুমুচ্ছে। ভীষণ রাগ হলো তার।রেগে বলে উঠলেন।
-তিথি এই তিথি কোন সময় ঘুমাচ্ছো? উঠো।কোনো কান্ডজ্ঞান নেই।
তিথি এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।তার মায়ের কথা কানে পৌছায়নি।যদি মেয়েটা রোজ এভাবে ঘুমাতে পারতো একটু শান্তিতে থাকতো।
শেষ রাতে তিথি তার আব্বুকে দেখে আসলো।দেখল সে ঠিক আছে কীনা। মনে তার অসংখ্য প্রশ্ন।কী হলো আমার সাথে এটা,ভেবে উঠতে পারছে না।পৈশাচিক কন্ঠে কে বলল কথা?অনেক গুলো প্রশ্ন জড়ো হয়েছে। আসলে ঘটনা হচ্ছে ঘুমের মধ্যে তিথি হঠাৎ করে উপলব্ধি করছিলো তার পেছন থেকে কোনো একটা পিশাচ ধরনের কন্ঠ ভেসে আসছে।সে বলছে, “তিথি ধরে ফেলেছি তোর বাবাকে, কী করবি তুই?” এরপর বিকট এক অট্টহাসি। আশ্চর্যের বিষয় হলো তিথি এই শব্দ শুনছে কিন্তু কিছু দেখছে না৷ আবার সে ঘুমুচ্ছে তবে বুঝতেও পারছে তার পেছন থেকে শব্দ আসছে। তিথি বুঝে গেলো তার মস্তিষ্ক এখন সম্পূর্ণ সজাগ নয় আবার সম্পূর্ণ ঘুমন্ত অবস্থায় নেই। সে বুঝতে পারছিলো সে কিছু সময় উপলব্ধি করতে পারছে আর কিছু সময় পারছে না। তিথি এখন সজাগ ও ঘুমন্ত এই দুই অবস্থার মাঝমাঝি তে আছে।
পেছন থেকে শব্দটি কাছে আসলো বলে মনে হচ্ছে। তিথি বুঝার চেষ্টা করছে কী হচ্ছ এইসব৷ তার চোখ বন্ধ,সে মেলতে পারছেনা চোখ দুটোকে। বিকট হাসি টা আরো জোরালো হলো। তিথির এবার ভয় হতে শুরু করলো। মনে হচ্ছে আওয়াজ টা কাছে এসে তিথিকে জাপটে ধরবে এবং সে উধাও হয়ে যাবে।তিথির চিন্তাশক্তি লোপ পেতে শুরু করেছে। সে চোখ মেলতে চেষ্টা করছে যে করেই হোক এই আওয়াজ কে কাছে আসতে দেওয়া যাবে না। তিথি পারছে না। বহু চেষ্টা করেও পারছে না।চিৎকার করার শক্তি ও নেই।হঠাৎ তার মনে পড়ল বিপদে পড়লে আল্লাহ কে স্মরণ করতে হয়।প্রাণপণে তিথি আল্লাহর নাম নেওয়ার চেষ্টা করছে। পাঁচ সেকেন্ড পর তিথির বাকশক্তি ফিরল।
কিন্তু এই পাঁচ সেকেন্ড তিথির জন্য কয়েক ঘন্টা সমান ছিলো। চোখ মেলে সে চারপাশ দেখলো। কিছু ছিলো না। একটু পর আযান দিবে। তিথি বসে বসে ভাবছে কী হলো তার সাথে। এটা কী স্বপ্ন? যদি স্বপ্নই হয় তাহলে সে কিছু দেখলো না কেন? এটা স্বপ্ন হলে লুসিড ড্রিম হবে। এটি হলো এমন এক প্রকার স্বপ্ন যেখানে ব্যক্তি জানে সে স্বপ্ন দেখছে, সে বুঝতে পারে সে স্বপ্ন দেখছে।স্বপ্নের চরিত্রগুলোর উপর তার টুকটাক নিয়ন্ত্রণ থাকে।না এটা লুসিড ড্রিম না । আওয়াজের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। তার মস্তিষ্ক সচল ও ছিলো অচল ও ছিলো তার মানে হিপনোগেজিয়া হয়েছিল তার। হিপনোগোজিয়া এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যক্তির মস্তিষ্ক ঘুমন্ত অবস্থায় ও জেগে থাকে।আর হিগনোগেজিয়াক রা লুসিড ড্রিম দেখতে পারে। তাহলে এখন কী দাড়ায়?
-আমি কী তাহলে দুটো অবস্থাতেই ছিলাম?আমি কিছু দেখলাম না কেন স্বপ্নে? হয়ত এমন স্বপ্ন ও আছে যেখানে শুধু শব্দ কাজ করে। কিন্তু কেন এমন কিছু শুনলাম আমি? তিথি বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। কী হচ্ছে তার সাথে এইসব? আযান দিচ্ছে বাইরে।তিথি আযানের শব্দ শুনছে।এক অজানা শান্তি তিথিকে আঁকড়ে ধরেছে। সকালে তিথি তার মা কে সব খুলে বলল।উত্তরে মিসেস হক বললেন
-কী সব আবোল তাবোল বলছো? ছাইপাঁশ ভূতের গল্প পড়ে পড়ে এই হাল তোমার। স্বপ্ন তো স্বপ্নই
-তিথি বিষাদ মাখা হাসি দিয়ে চলে এলো নিজের রুমে।
ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেল স্কুলে। স্কুলে কেমিস্ট্রি হোম-ওয়ার্ক করেনি বলে ক্লাসে দাড়িয়ে থাকলো সে। তাকে ডিটেনশন দেওয়া হল। ডিটেনশন শেষে সে স্কুল গেটের বাইরে তাদের গাড়ি খুঁজছিল। হঠাৎ দেখল মিসেস হক গাড়ি থেকে হন্তদন্ত করে বের হচ্ছে। তিথি অবাক হলো অনেক।যেই আম্মু গত ৪ বছরে নিতে আসেনি সে কীভাবে কীভাবে আজ স্কুলে এসে হাজির!মিসেস হক কাছে এসে তিথিকে কড়া গলায় বলল
-গাড়িতে উঠ
তিথি চুপচাপ তাই করলো।মিসেস হক গাড়িতে এসে বসেছেন।তিথি বাইরে তাকিয়ে আছে।মিসেস হক ড্রাইভার কে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলল।
-তুমি নাকি আজকে ডিটেনশন এ ছিলে?
-জ্বী
-কেন জানতে পারি?
-হোম-ওয়ার্ক করি নি তাই
– কেন?
-আমি… মনে ছিলো না।
-কী মনে থাকে তোমার? অদ্ভূত অদ্ভূত চিন্তা ভাবনা, বানিয়ে বানিয়ে কথা বলা ছাড়া কী মনে থাকে তোমার?
-আমি বানিয়ে বানিয়ে…
বলতে গিয়ে থেমে গেল তিথি। বলে কী লাভ? তুমি তো বুঝবে না।টপটপ করে পানি পড়ছে তিথির চোখ থেকে।ধরা গলায় বলল সে
-আর বলবো না কিছু
-কুমিরের কান্না কাঁদবে না আমার সামনে
-জ্বী।
তিথি চোখ মুছে নিল।বাসায় গিয়ে চুপচাপ সকল হোম-ওয়ার্ক করলো সে।আম্মুর সাথে যেন না খেতে হয় তাই আগেই খেয়ে নিল রাতে।
-তিথি এই তিথি
-দেয়াল আজ বিরক্ত করো না। মন ভালো নেই।
-তোমার মন ভালো থাকে কবে?গল্প শুনবে?
-না
-আরে শুনোই না৷ একদিন আমি গেলাম পুকুর পাড়ে গোসল করতে।আমাদের গ্রামের পুকুর ঘাট যেই পিচ্ছিল। নামতে না নামতেই ধপাস করে পড়ে গেলাম। আমাকে উঠানো বাদে সবাই কি করলো জানো?আমাকেই ঘাট বানিয়ে দিলো! রাগে কষ্টে আমি ফোন দিলাম ডলফিন কে৷ সে হেলিকপ্টার দিয়ে ল্যান্ড করলো পুকুরে
-প্লীজ আজ না। আমার মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে
তিথি চোখ বন্ধ করেছিল অজান্তে। “না” বলে কেঁদে উঠল মেয়েটি। আবার সেই মহিলা।কিছু করতেই হবে নাহলে আমি শেষ হয়ে যাবো। আমি আজ কথা বলব তার সাথে। কী চায় সে আমার জানতেই হবে। রাত ১২ টার মতন বাজে। তিথি চোখ বন্ধ করলো। কথা বলার চেষ্টা করছে সে। কিন্তু রক্তমাখা মানুষটিকে বেশিক্ষণ দেখতে পারছে না সে। তাই ভয়ে চোখ মেলে ফেলছে। এই যুদ্ধ করতে করতে রাত গেল।ভয়ের জয় হলো। তিথি বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে।৪ টা নাগাদ ঘুমালো সে।ক্লান্ত চেহারা তার। সকালে তিথি গেল তার বাগানে।আজ স্কুল যাবেনা। তিথি গাছের কাছে বসে আছে।হঠাৎ
-কেমন আছো?
-জানিনা। আবার কেন আসছো তুমি?
-তোমার সাথে কথা বলতে
-তুমি যাও তো। তুমি আমাকে এখন তাড়া করছো
-নিজের সাথে চাপা স্বভাবীর মতন করো না।
-বিশ্বাস করো আমি একলা থাকতে চাই এখন। রেহাই দাও আমায়।
-ঠান্ডা হও। বলতে পারছো না দেখে তোমার এই হাল
-ঠান্ডা! হাহা। আমার মাইন্ড আমাকে শান্ত করার জন্য তোমাকে পাঠিয়েছে। কিন্তু লাভ টা কী বলবে?আমার কথা আমিই জাজ করছি
-কথা সত্য। চোখ লাল কেন তোমার?
-রাতে ঘুম হয় নাই
-কেন?
-সাদা চামড়ার মহিলা আমায় বিরক্ত করে। রক্ত এবং রক্ত।
-নিজের রক্ত দেখে তো তোমার ভ্রুক্ষেপ হয়না, তাহলে এই রক্ত দেখে ভয়ই বা কেন পাচ্ছো?
-নিজের রক্ত আমার মনে দাগ কাটে না। ভীতি জাগায় না,তখন রক্তপাতে ক্ষতি হবে এমন মনে হয় না।
– তাহলে কী বলা যায় তুমি নিজের বেলায় উদাসীন?
-বলা যায় না, এটাই সত্যি।
-গতকাল ওই মহিলার সাথে কথা বলেছো?
-চেষ্টা করেছিলাম, তবে অসম্ভব ভয় পেয়েছি।
-কী জানতে চাইলে?
-কেন আমাকে তাড়া করে?
-উত্তর পেয়েছো?
-একটা পৈশাচিক অট্টহাসি যার তীব্রতা প্রখর, চোখ খুলে কেবল বড় বড় শ্বাস নিয়েছি
-ঘুমিয়েছো কখন?
-৪ টা বাজে।সকল চিন্তাশক্তি লোপ পেল আর ঘুমিয়ে পড়লাম।
-উঠলে কখন?
-৬:৩০ এরপর ৭:৩০ এ আবার ঘুৃম
-তাই তোমার চোখ লাল।রাত জেগে কী কী করলে?
-কিছুই না, মাথার মধ্যে ও বুকের মধ্যে যন্ত্রণা সহ্য করেছি। অশান্তি লাগছিলো আমার। আমায় সবকিছু তাড়া করছে। পাগল হয়ে যাবো আমি।
-নিজের সমস্যা বুঝতে পারো?
-হ্যাঁ অনেক কিছু একসাথে হয়েছে আমার। ফোবিয়া,বাইপোলার,স্কিতসোফ্রেনিয়া, এনজায়টি ডিজঅর্ডার. প্রায় সকল বৈশিষ্ট্য মিলে যায়। আমি শুধু দিন গুনছি।
-তোমার মনে এখন ঝড় বইছে আমি জানি
-তা থামানো সম্ভব না তাও জানো
-ডাক্তার দেখাও। স্পেশালিস্ট।
-কে নিয়ে যাবে?সবার কাছে এইসব ঢং। হাহা। কাউন্ট ডাউন করার সময় এখন।
-এমন কেন বলছো?
-কারণ টা সহজ।
আমার হ্যালুসিনেশন ওই মহিলা, ইলুশন তুৃমি,মোটিভেশন রিসেপ্টর জিরো ফলাফল স্কিতসোফ্রেনিয়া আর এর ছায়াও অনেক গভীর সময়কাল ব্যাপক। আমার মুড সুইং হয়, পিরিয়ডিক স্যাডনেস ,হঠাৎ করে একটিভ আবার লো এসটিম্ড ফলাফল বাইপোলার ডিজঅর্ডার। আগ্রহ হারিয়ে গেছে, খাওয়া দাওয়ার রুচি শেষ,নিজেকে অপ্রয়োজনীয় মনে করি,ঘুম হয় না আরো অনেক কিছু ফলাফল ডিপ্রেশন.কেউ কেয়ার করলে বিব্রতবোধ করি,কষ্ট পাই,মানুষ বিশ্বাস করিনা,সবার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি ফলাফল এনজায়টি ডিজঅর্ডার ।মনে অনেক ভয়। ফলাফল ফোবিয়া.সকল কিছু এখন লাইফ টাইম ব্যাপার। এরপরও কীভাবে আশা করা যায় আমি এভাবে কথা বলব না? আমি আমার ইসলাম নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করছি। তবে সবাই আমাকে তাড়া করছে। তুমিও করছো। আমার মধ্যে বাকি কিছু নাই গো। হাহা। উন্মাদ, শুধু তাই বাকি।
-হাসছো কেন?
-উন্মাদ দেখেছো?
-না
-সামনে দেখবে। দেখবে আমায় শক্ দেওয়া হচ্ছে। হাহা
-তুমি আবার হাইপার হচ্ছো
-আমি হাইপার না আমি সত্যি বলছি।কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো। তখন হয়ত আমি তোমাকে বেশি বেশি দেখতে পাবো। তোমার সাথে বেশি কথা হবে। তোমার কী হাসি আসবে তখন?
-তিথি তুমি কেঁদে নাও
-আমার কথার উত্তর দাও। তখন তুমি হাসবে?
-ঠান্ডা হও
-আমি অন্যদের সান্ত্বনা নেই না তো নিজের টা কীভাবে নিব!তুমি আসলেই বোকা। মানে আমিই বোকা হাহা। আমিই নিজেই প্রলাপ বলছি দেখো।তুমি চলে যাও
-একটু ঘুমাও
-না আমার বুকে মাথায় অনেক যন্ত্রনা। তুমি যাও।
-চলে যাব?
-হ্যাঁ। আমার আল্লাহ আমায় দেখবে। তুমি যাও।আমায় বিরক্ত করো না।
তিথি ঠিক করলো আজ যেভাবেই হোক কথা বলবে সেই মহিলার সাথে। ভয় পেলে চলবে না।দিনেই কথা বলবে। দুপুরে মিসেস হক বাইরে গেল। তিথি তার রুমে চেয়ার টেনে বসলো ফ্যানের নিচে। চোখ বন্ধ করলো সে। চারপাশে অন্ধকার। সামনে কেউ মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। তিথি ভেবে নিলো ইনিই সেই মহিলা।
-কী চান আপনি? কেন তাড়া করছেন আমায়?
-তুমিই এর কারণ
-আমি আপনাকে চিনিও না। জানিও না। কোথা থেকে আসেন আপনি? আপনার এই কালো রক্ত আমার সহ্য হয় না।
-(অট্টহাসি) আমি তোমার আত্মীয়।
-কখনও সম্ভব না। আমি শ্বেতাঙ্গ না
হাসির আওয়াজে তিথির মাথায় ব্যাথা শুরু হলো। সে চোখ খুলে ফেলল। কানে হাত দিয়ে কাঁদতে লাগল।অসহায় শুধু অসহায় লাগছে।মরে যেতে মন চাইছে তার।নাহ এভাবে চলবে না। আবার চেষ্টা করব আমি। আবার চোখ বন্ধ করলো তিথি।
-দোহাই লাগে আমাকে এভাবে কষ্ট দিবেন না। কী পাচ্ছেন এইসব করে? আমার ঘুম ও এখন হারাম। স্বপ্নে দেখি আপনাকে।
-হাহা। তার মানে তোমার আনকনশাস মাইন্ডে ঢুকতে পেরেছি
-এমন করে কী লাভ আপনার?
-যন্ত্রণা দিয়ে মজা পাচ্ছি।
-কিন্তু তা আমার জন্য সত্যিই কষ্টদায়ক
-মনে করো তুমি কখনো আমার ইলুশনে তৈরি করেছো কীনা?
-না। কখনও না। আমি রক্ত ভয় পাই। প্রশ্নই আসে না। আর এমন উদ্ভট জিনিস আমার ইলুশন হয়নি
-তাহলে আমি তোমার ভয় এটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে তোমার?
-কী করলে যাবেন আপনি?
-ভয়টা পাগলামি বানিয়ে চলে যাব
-এখন আমার ভয়ও আমার সাথে খেলছে।আপনি যাবেন না তাইনা?
-গেলেও তোমার মনে বীজ গেঁথে গেছে। ছাড়াতে পারবে না হাহা।
-আপনার হাসিটা আমায় যন্ত্রনা দেয়।
-তুমি বাস্তবিক জগতেও এই ব্যাথা অনুভব করো।
-বৃষ্টি হচ্ছে। অন্ধকারে বৃষ্টি কোথ্থেকে? আমাকে ভয় দেখাতে চাইছেন?
-তুমি এইসবে ভীতু না।তুমি বাস্তব জগতে ঘামছো।তার ফলাফল চিন্তাজগতে বৃষ্টি।
-আপনি আমার ফোবিক মনের ইলুশন যদি হন তাও আপনি ভয়ানক।
-তোমার বাকি বন্ধুদের থেকে নয়।
-বন্ধু!
-মানুষের কথা বলছি না। আছে আরো কিছু।(অট্টহাসি) চোখ খুলে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে তিথি। চোখ মলিন।কোনো আশা নেই। কেঁদেও লাভ নেই। চিৎকার করে বলে উঠল মেয়েটি
-আমার ডাক্তার প্রয়োজন। আমি ভালো নেই।আম্মু তুমি কোথায়।
কেউ বুঝলে হয়তো আজ মেয়েটির এমন অবস্থা হতো না। প্রকৃতির বিষাদ খেলা মেয়েটিকে গ্রাস করে ফেলেছে। শেষে তিথির কী হবে তা কেবল সৃষ্টিকর্তাই জানেন। আমাদের মাঝে অনেকে আছেন যারা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।আশেপাশের মানুষ তা বুঝার বদলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। স্কিতসোফ্রেনিয়া হচ্ছে এমন একটি মানসিক সমস্যা যাতে ব্যক্তি অবাস্তব জিনিস দেখতে পান, তাদের সাথে কথা বলেন। যাকে বলে হ্যালুসিনেশন ও ইলুশন।এদের আলাদা জগত থাকে কেননা মানুষদের থেকে এরা সহানুভূতিশীল আচরণ পায়না।কেউ তাদের বোঝে না। আর এই না বোঝা কাল হয়ে দাড়ায়।এরা মানসিক ভারসাম্যহীন নয় তবে মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ঠিক ও নয়।
মানসিক সমস্যার মানেই পাগল না। এমন অনেক তিথি আমাদের চারপাশে ঘুরছে। বাইপোলার ডিজঅর্ডার ও মানসিক সমস্যা যেখানে ব্যক্তি হঠাৎ হাসি খুশি থাকে আবার দুমড়ে যায়। এরা মানুষের থেকে দূরে থাকে। এরা ডিপ্রেশেনে পড়ে যায় যেকোনো কিছুতে।এদের মুড সুইং হতে থাকে। এরা ইনসোমনিয়াক হয়ে থাকে।সকলের মধ্যে যে একই ভাবে বাইপোলার প্রকাশ পায় তা কিন্তু নয় স্কিতসোফ্রেনিয়ার বেলায় ও ঠিক তাই। আরেকটি বিষয় হলো ফোবিয়া মানে ভয়।কোনো কিছুর উপর ভীতি কে ফোবিয়া বলে।এটাও একরকমের মানসিক রোগ। শেষমেশ এনজায়টি ডিজঅর্ডার,এটা হল অল্পতে বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়।
এই রোগীরা অল্প বা সামান্য বিষয়ে চিন্তিত হয়ে যায়।যেমন আপনি যদি এই ডিজঅর্ডারের রোগী হন তাহলে কেউ আপনাকে একটি ফুল দিলেও আপনি চিন্তিত,বিভ্রান্ত ও বিব্রতকর বোধ করতে পারেন। যারা এসকলের শিকার তারা ইচ্ছা করে এমন হতে চায় নি। তাদের আচরণ আপনাদের বিরক্তিকর লাগতে পারে তবে মানুষটিকে দূরে না সরিয়ে আরো কষ্ট না দিয়ে ঘাটিয়ে দেখলে বুঝবেন তারা কীসের উপর দিয়ে যাচ্ছে।সকলের অসহযোগিতায় মানুষগুলোর ভেঙ্গে পড়া ছাড়া উপায় থাকে না।একা একা লড়তে লড়তে তারা শেষ হয়ে যায়। তাই এমন কাউকে সাহায্য করতে না পারলেও মানসিকভাবে কষ্ট দিবেন না।