১!!
বিয়ের পর থেকেই দেখতাম লিমা আপু অসম্ভব রকমের সুন্দর হয়ে ওঠেছে। বিষয়টা আমাকে বেশ ভাবত। হ্যাঁ আপু আগেও খুব সুন্দর ছিলো কিন্তু বিয়ের পর তার রূপ যেনো ধরে না। আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,
_আপু তুই বিয়ের পর এত সুন্দর কেন হয়েছিস!
_আপু লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মিষ্টি করে বলত জানি না।
আমার ভাবিরাও বলত কপাল করে লিমা বর পেয়েছে লিমাকে চোখে হারায়। দেখ মেয়েটা কী পরিমান সুন্দর হয়েছে। অন্য ভাবি বলত ওর বর ওকে যা যত্ন করে সুন্দর না হয়ে যাবে কোথায়।
আমি ভাবলাম, হয়ত ভাইয়া সুন্দর হবার কোন টোটকা জানে। ভাইয়াকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
_আপুকে সুন্দর হবার যে সিক্রেট বলছেন সেটা আমাকেও বলুন।
_ভাইয়া অনেক লজ্জা পেলো বোধয়। তারপর বলল, বিয়ের পর মেয়েরা এমনি সুন্দর হয়, কোন সিক্রেট লাগে না।
তখন থেকে আমি ভাবতে লাগলাম বিয়ের হলে বোধয় আমিও সুন্দর হবো। জলদি মাকে গিয়ে বললাম,
_মা আমি সুন্দর হবো, আমাকে বিয়ে দিয়ে দাও।
তখন মা হেসে বলছিল কেবল তো তোর ষোল বছর বয়স আঠেরো পেরোক তবে বিয়ে দিবে। মুখ ঝামটা দিয়ে মায়ের কাছ থেকে চলে গেছিলাম সেদিন। কেউ চায়না আমি সুন্দর হই। লিমা আপুকে মনে মনে হিংসা করতে লাগলাম।
২!!
আজ সাত বছর হলো আপু আর দুলাভাইয়ের বিয়ের। আপু আগের মতই সুন্দর স্নিগ্ধ আছে। লোকে বলে মেয়েদের বয়স বাড়লে চেহারা সৌন্দর্য্য কমে। কিন্তু লিমা আপুর ক্ষেত্রে হয়ত উল্টা হচ্ছে, তার বয়স যত বাড়ছে সে তত সুন্দর হচ্ছে। তার চেহারায় সবচেয়ে যেটা আর্কষনীয় তা হলো লজ্জাময় গোলাপী আভা। বিয়ের পর থেকে লিমা আপুর পুরোটা জুড়ে এ আভাটা আমি দেখছি। এত বছরেও সে আভা কমেনি। কিন্তু আমার বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় আমার চেহারার সকল সৌন্দর্য্য কেন জানি কমে যেতে লাগল। নিজেকে দেখলে মনে হতো তাজা ফুলটা রোদের তাপে ধীরে ধীরে নেতিয়ে যাচ্ছে। আপু আমার থেকে ছয় কি সাত বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও তাকে দেখতে আমার থেকে ছোট মনে হয়। অথচ আমি কী ভুলটাই না ভাবতাম। ভাবতাম বিয়ের পর মেয়েরা সুন্দর হয়। তাহলে আমার সৌন্দর্য্য কেন কমে গেলো!
আসলে সুন্দর বিয়ের পর হয় না। সুন্দর হয় স্বামীর যত্নে, সম্মানে, ভালোবাসায়। আমি দেখেছি ভাইয়া আপুকে পারলে মাটিতে পা রাখতে দেয় না। আপু সামান্য কষ্ট পেলে সে তার তিনগুন কষ্ট পায়। আপু কাঁদলে সে দিশেহারা হয়ে যায়। প্রচন্ড সম্মান শ্রদ্ধাবোধ আর ভালোবাসা দিয়ে তাদের সম্পর্ক আগলে রাখতে দেখেছি।
সে আপুর জন্য এতটাই পাগল যে, বিয়ের তিন বছর পর যখন তারা বাচ্চা নেবার প্রস্তুতি নিয়ে ডাক্তার কাছে গেছিল তখন ডাক্তার বলেছিল আপুর কিছু কমপ্লিকেশন’স এর কারণে এখন বাচ্চা নিলে আপুর জীবনের ঝুঁকি আছে। বাস কাজ হয়ে গেলো। আপু তারপর শত বলেও ভাইয়াকে বেবির জন্য রাজি করাতে পারেনি। তার একটাই কথা,
_বাচ্চা ছাড়া আমার জীবন চলবে কিন্তু তোমাকে ছাড়া চলবে না।
গত বছর আপু খুব মন খারাপ করে বলল,
_আমার খুব করে মা ডাক শুনতে ইচ্ছে করে কিন্তু তোর ভাইয়া ভয় পাচ্ছে বেবি হবার সময় যদি আমার কিছু হয়ে যায়। পাগলটাকে কিছুতেই বুঝাতে পারছি না।
সত্যি বলতে এখন বুঝতে পারছি, ভাইয়ার ভালোবাসাই আপুর সৌন্দর্য্যের সিক্রেট ছিল।
যদি তা না হতো তবে বিয়ে আমারও হয়েছে। কই আমার সৌন্দর্য্য তো বাড়েনি বরং কমেছে। আমার সে বিয়েতে ভালোবাসা, সম্মান, যত্ন আছে কিনা আজও বুঝতে পারি না। প্রবল শারীরিক টানে দুজন কাছে আসলেও সে টান ঘন্টা দু পর শেষ হয়ে যেতো। তারপর যে যার মত থাকতাম বা থাকছি। একটা বছর স্বামীর সাথে থেকে এটা বুঝতে পেরেছি শরীরে টান, চাহিদা তো খনিক সময় পর শেষ হয়ে যায়। কিন্তু মনের টান, মনের চাহিদা জন্ম জন্মান্তর থেকে যায়।
যদি শরীর চাহিদা মূখ্য হতো তবে সাত বছরের আমার আপুর প্রতি দুলাভাইয়ের নেশা হয়ত কেটে যেতো। কিন্তু দুলাভাই তো আপুর শরীরের নেশা নয় বরং মনের নেশায় মাতাল। তাইত এত বছরেও আপুর চেহারা থেকে এক চিমটি সৌন্দর্য্য কমেনি বরং বেড়েছে। কারণ আপু মনের দিক থেকে খুশি। মন খুশি থাকলে চেহারার সৌন্দর্য্য এমনি ঝলক দিয়ে ওঠে। কারণ ভাইয়া তাকে পরিপূর্ণ মন থেকে ভালোবেসেছে।
৩!!
শুনলাম তাদের খুশি বাড়াতে শিঘ্রই তারা দুজন থেকে তিনজন হচ্ছে। মাত্র তিন মাস চলছে আপুর অথচ ভাইয়া তাকে এমনভাবে সামলাচ্ছে যে দেখলে মনে হয় আপু নিজেই বাচ্চা হয়ে গেছে আর ভাইয়া তাকে পরম যত্নে সামলাচ্ছে। ভাইয়া সবসময় একটা কথা বলে,
ভালোবাসলেই হয় না। ভালোবাসাকে ভালোবাসার মত করে আগলে রাখতে জানতে হয়। স্পর্শ করলেই হয় না, সে স্পর্শে মুগ্ধতার ছোঁয়া রাখতে হয়। শরীর সবাই ছুঁয়ে দিতে পারে কিন্তু মন ছুঁতে হলে হৃদস্পর্শি মন দরকার।
ভাইয়া আপু হয়ত তাদের স্পর্শে মুগ্ধতা পেয়েছে কিন্তু আমি পাইনি। কবে পারো তাও জানি না!
আমি আরবিয়ার লিসা। এটা কিন্তু আমার কাহিনী নয়। এটা আমার আপু আর দুলাভাইয়ের মুগ্ধতার গল্প। তাদের জীবন কাহিনীর ছোট্ট সারমর্ম।