এক.
‘এই বান্দির পুত, এইখানে মাগিবাজি করস?’
পিচিক করে একদলা থুথু ফেলে বললো ছেলেটা। ফাহিম কিছু না বলে তাকালো ছেলেটার দিকে ভালো করে তাকালো। বয়স বড়জোর ১৭-১৮ বছর। পেছনে আরও চার পাঁচজন দাঁড়ানো।
ফাহিম মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি এনে বললো, ‘কি বললা?’
‘আমি কি তোর বেরাদার লাগি বান্দির পুত, তুমি চোদাস?’
ফাহিমের কোনো ভাবান্তর হলো না। সেও থুথু ফেললো এক দলা। রুনু একটু ভয় পেয়ে গেছে। রুনু ফাহিমের মামাতো বোন। এইচএসসি দিয়েছে। কোচিং করতে এসেছে। ভাইয়ের সাথে ঘুরছিল। ঢাকা শহর দেখছিল। একটু আগে ঝুম বৃষ্টি হলো। রুনু বৃষ্টিতে ফিরতে চাচ্ছিল না। তাই ওকে নিয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানে এসেছিল৷ বাদামওয়ালা, আমড়াওয়ালা, ভ্রাম্যমাণ চা সিগারেট বিক্রেতারা গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিল। বৃষ্টি ধরে আসতেই আবার বিক্রির জন্য হাঁকানো শুরু করলো জোর গলায়। ওরা বাদাম আর আমড়া কিনে খাচ্ছিল আর আশেপাশের প্রেমিক-প্রেমিক
াদের জোড়া দেখছিল। খুব বেশিজন নেই। ওদের মাঝে ফাহিম রুনু কেও যে কেউ প্রেমিক-প্রেমিকাই ভাববে।
ফাহিম এই শহরেই থাকে। এই শহরের এইসব চিত্র প্রতিদিনকার৷ এই শহর, এই শহরের দুপেয়ে শুয়োরদের তার চেনা। কিন্তু রুনু প্রথম এসেছে। রুনু এমনিতেই চারপাশে দেখে লজ্জা পাচ্ছিল, এবার ভয় পেয়ে গিয়েছে৷ ও ওদের বলতে গেল, উনি আমার ভাই হয় তার আগেই ভাইয়া ওই কথাটা বলায় আরও দুটো কথা বলে দিল ওরা৷ কিন্তু ভাইয়া এতো শান্ত কিভাবে? মুখে আবার হাসিও মনে হচ্ছে!
ফাহিম পকেট থেকে প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরালো, সামনে দাঁড়ানো ছেলেটির দিকে এ.গিয়ে দিয়ে বলো, ‘সিগারেট?’
পেছনের ছেলেগুলো একটু চমকে গেছে৷ এই ব্যাটা এতো শান্ত কিভাবে, একটুও ভয় পায়নি। সামনের জন, রাজীবও চমকেছে, কিন্তু বিস্ময় ভাব লুকিয়ে ঘাড়ের রগ ফুলিয়ে আরও দুটো গালি দিল, ‘তোর সিগারেটে আমি মুতি। বান্দির পুত, কি করস এইখানে?’
‘বেনসনের দাম এখন তের টাকা, মুতে দিলে তো মানবো না’, গলগল করে মুখ ভর্তি ধোঁয়া ছেড়ে ফাহিম হেসে বললো।
‘হাসি চোদাইস, বাইঞ্চোদ?’ বলে সশব্দে একটা চড় লাগালো গালে। ফাহিমের চশমটা দূরে গিয়ে পড়লো। রুনু কেঁদে ফেলেছে।
রাজীব রুনুর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘কাঁদবি না, একদম কাঁদবি না। নাগরের লাইগা কষ্ট হয়? বুক ফাইটা যায়? দিমু বুকটা ডইলা, যদি কষ্ট একটু কমে?’
রাজীবের কুৎসিত মন্তব্যে হেসে দেয় পেছনে দাঁড়ানো ছেলেগুলো। রাজীব নিজেও নিয়মিত গাঁজা সিগারেট খাওয়া নোংরা দাঁত বের করে হাসে৷ ফাহিম উঠে গিয়ে চশমাটা কুড়িয়ে নিয়ে আসে৷ কাঁদা লেগে গিয়েছে। রুনুর ওড়না দিয়ে চশমাটা মুছে চোখে দেয়। রাজীব আর ছেলেগুলো চোখ বড় বড় করে দেখছে।+
‘এই বান্দির পুত শক্ত আছে।’ একজন আরেকজন কে বলে।
‘যতোই শক্ত হোক, রাজীবের হাতে প্যাদানি খাইলে সব নরম হয়ে যাইবো, প্যান্টের ভেতরেরটাও।’ জোরেই কথাটা বললো ছেলেটা। গ্রুপটাতে হাসির রোল উঠলো। রুনুর কানেও কথাটা ঢুকলো। রুনু ফাহিমের হাত ধরে বললো, চলো ভাইয়া চলে যাই এখান থেকে।
রাজীব এগিয়ে এসে বললো, ‘বস। চুপ কইরা বস। যাবি মানে? আগে তোগো যাত্রা দেখমু, তারপর।’ রাজীবের কথায় আবার হাসি উঠলো পেছনে। পেছন থেকে একজন বললো, ‘দেখছোস, এখন মুখ দিয়া ভাই বাইর হয়। এমনিতে তো সোনা, জান, বাবু ছাড়া বাহির হয় না!’
‘রাজিব এই পোলাডারে আগেও দেখছি এইখানে দুই একবার। তখন তো অন্য মাগী ছিল, আজকে আবার আলাদা। ভাড়ায় লইয়া আসে না কি?’ আবার হাসি।
ফাহিম রুনু সব শুনছে। রুনুর দুকান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে, চোখ দিয়ে পানি পড়ছে৷ এ কোন বিপদে পড়লাম, আল্লাহ? মনে মনে বললো।
ফাহিম বুঝলো, অনেকদিন থেকেই টার্গেট করছে ওরা। আরেকটা মেয়ের কথা যে বলছে, ওটা ওর প্রেমিকা, নিতু।
এই ফাঁকে রাজীব রুনুর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমাগো লগে যাইবি না কি? রেট বেশি দিমু।’ খ্যা খ্যা করে হাসলো কিছুক্ষণ। রুনু এবার সশব্দে কেঁদে বললো, ‘ভাইয়া চলো যাই।’
রুনু ফাহিমের হাত ধরে টান দিতেই রাজীব রুনুর হাত ধরলো। ফাহিম শুধু এটুকুই দেখলো, রাজীবের বান্দি শব্দটার পরে আর কিছু কানে ঢুকলো না ওর। এতোক্ষণ এটাকে মজা হিসেবে নিচ্ছিল। বোঝায় যাচ্ছে স্কুল কলেজ পড়ুয়াদল। কাউকে একবার সেটিং দিয়ে ভালো কামিয়েছিল বোধয়, এখন মজা পেয়ে গেছে। এদের কে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু বোনের গায়ে হাত দিয়ে এবার খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। সে শক্ত করে রাজীবের হাতটা ধরলো। এরপর কয়েক সেকেন্ড রাজীবের সব অন্ধকার হয়ে গেল।
রাজীব ভড়কে গেছে৷ নাকের নিচে হাত দিলো চ্যাটচেটে তরল পদার্থ পড়ছে। রক্ত৷ ফাহিম একদম নাক বরাবর শরীরের সব জোর লাগিয়ে ঘুষি মেরেছে। পেছনের দলটা ভড়কে গেছে। ওরা আশেপাশে তাকালো। একটা জোড়া শুধু আছে। বাকিরা ঝামেলা দেখেই সরে পড়েছে। এরাও চলে যাচ্ছে দ্রুত। ঝামেলায় কেউ থাকতে চায় না। ওদের একটু ভয় ভয় লাগছে। এরই মাঝে একজন চিৎকার দিয়ে উঠলো, ‘ওই বাইঞ্চোদ, রাজীবের গায়ে হাত দিস, এতো বড় সাহস।’ ছেলেটা এগিয়ে আসতে না আসতেই রাজীবের পেটে আরেকটা ঘুষি মারলো ফাহিম। রাজীব পড়ে গেল মাটিতে। ছেলেটা ওখানেই দাঁড়িয়ে গেল। এতোক্ষণ ধরে রাজীবকে নিয়ে যারা বাহাদুরি করছিল ওরা দু পা পিছিয়ে গেল। রাজীব এই এলাকায় মোটামুটি ত্রাস। এক স্থায়ী নেতার খুব ক্লোজ ছোটভাই৷ যে কলেজে পড়ে সেই কলেজে ভাইয়ের আউটলেট হিসেবে কাজ করে৷ গাঁজা, ইয়াবা, মদ এসবের ব্যবস্থা করে। ভাইয়ের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে ওরা এই রাস্তায় এসেছিল৷ যা লাভ পুরোটাই ওদের, ঝামেলা হলে ভাই দেখবেন। রাজীব ওর কাজের গুণে ভাইয়ের খুব স্নেহ পায়৷
গতো কয়েকদিন ধরেই ওরা ফাহিমের উপর নজর রাখছিল। একরকম রেকিই করছিল৷ ফাহিমকে আলাভোলা বলেই মনে হয় ওদের। পকেটে টাকা থাকে ভালোই। আজকে অনেকক্ষন থেকে এখানে বসেছিল ওরা। আজকে ফাহিম আসলেই অপারেশনে নামবে।
কিন্তু সব হিসাব উল্টাপাল্টা হয়ে গেল আজ। মাতারির গায়ে এতো জোর, কে জানতো? যে রাজীব গতো সপ্তাহেই পুরো পাঁচজন কে পিটিয়ে সাট করে এসেছে আজ সে দুটো ঘুষিতেই কাৎ৷ অবশ্য কিছুক্ষণ আগে সাঁটিয়ে গাঁজা টেনে আসার জন্যেও এমন হতে পারে।
গ্রুপটা বুঝছে না এখন কি করবে৷ রাজিব সামনে পড়ে কোকাচ্ছে মাটিতে। এরই মধ্যে ফাহিম একটা লাথি মেরেছে মুখ বরাবর। ওর আর উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাকফাইট করার মতো অবস্থা নেই বোঝাই যাচ্ছে। ওরা বিভ্রান্তের মতো একবার রাজীব আর একবার ফাহিমের দিকে তাকাচ্ছে। ফাহিম ঠান্ডা চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ফাহিমের চোখের দিকে তাকিয়ে ওদের কি হলো কে জানে, ঝেড়ে দৌড় দিলো একেকজন, একেকদিকে।
রাজিবের মুখের কাছে বসে ফাহিম বললো, ‘তোর শূয়োরের পাল পালিয়েছে, এইবার তুই কি একা কি করবি?’ রাজিব ব্যাথায় কঁকাচ্ছে। নাক ভেঙে গেছে। ঠোঁট গলে রক্ত ঢুকছে মুখে। ফাহিম ওর মুখে একদলা থুথু দিয়ে উঠে পড়লো। রুনুর দিকে তাঁকালো। রুনু ভয়ে কাঁপছে৷ এখনও ও বুঝতে পারেনি কি হলো এতোক্ষণ। ফাহিম এগিয়ে এসে বললো, ‘চল।’
রুনু কে নিয়ে ফাহিম চলে গেলো। আবার বৃষ্টি নেমেছে। রাজিব মাটিতে পড়ে ভিজতে লাগলো। রক্তের স্রোত থামছে না৷ ধীরে ধীরে ও অজ্ঞান হয়ে গেল।
দুই.
ফাহিম রুনু কে ওর মেসে পৌছে দিয়ে এসে গোসল করে নিল। রুনু প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছে। রুনু কে বলে দিল বাসায় কিছু না জানাতে। অযথা টেনশন করবে। ফ্রেশ হয়ে ফাহিম একটা সিগারেট ধরিয়ে শুয়ে পড়লো। সিগারেট টানতে টানতে ভাবতে লাগলো, এই বাচ্চা ছেলেগুলো এতো সাহস পায় কি করে। আর সাহসের কথা বাদ দিলেও, ওরা এইসব ব্যাপারে এতো পজেসিভ হয়ে উঠলো কি করে। ফাহিম যদিও জানে ওদের এটা পুরোটাই ধান্দা, কিন্তু ধান্দার আড়ালে কি আর কিছু নেই? মনের গহীনে কোনো নোংরা জিঘাংসা নেই?
এই সময় ওর রুমমেট অনিক এসে ঢুকলো।
‘ফাহিম, আজকে কি কিছু করেছিস তুই?’ ফাহিম চুপ থেকে বললো, ‘হু।‘
‘কি করেছিস তুই?’ ফাহিমের বিছানায় বসলো অনিক।
‘তুই জানলি কি করে?’
‘একটা ভিডিও দেখলাম। একজন মাত্র দুটো ঘুষিতে একটা কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে মাটিতে ফেলে দিল। ক্যাম্পাসের যারা দেখেছে তারা বলছিল, ফাহিমের মতো লাগছে। কিন্তু আমি ভিডিও দেখেই বুঝেছি এটা তুই। তুই জানিস ছেলেটা কে? আর ভিডিও তে তোকেই ভিলেন হিসেবে দেখানো হচ্ছে।’
‘ছেলেটা কে?’ কাকে পাবলিক ভালো আর কাকে ভিলেন হিসেবে দেখালো, ফাহিম এর ওসবে মাথা ব্যাথা নেই। ও জানতে চায় এই ছেলেটা কে। ছেলেটার পেছনে যে কেউ আছে তা ফাহিম তখনই বুঝতে পেরেছে। এখন জানা দরকার সেই মানুষটা কে।
‘ও বদি ভাইয়ের ছেলে। ক্যাম্পাসে বদি ভাইয়ের সাঙ্গপাঙ্গ আছে, ওরা যদি তোকে পায়…’
‘আগে বল তুই বদি কে ভাই বলছিস কেন?’ ফাহিম উঠে দেয়ালে হেলান দিয়ে আরেকটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে জিজ্ঞাসা করল। অনিক কিছুটা চমকে গেল প্রশ্ন শুনে।
‘সবাই তাকে ভাই বলে তাই আমিও… মানে মুখ ফসকে বলেছি আর কি…’
‘বদি কে তুই ভাই বললে আমাকে ভাই বলবি না। তোর বড়ভাইকেও ভাই বলবি না।’ সিগারেটে জোরে টান দিয়ে ফাহিম বললো।
অনিক কিছু বললো না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ‘আচ্ছা, বদির ওই পোলাকে তুই মারতে গেলি কেন?’
ফাহিম সিগারেট টানতে টানতে বললো, ‘ফাত্রামি করছিল এসে। মেরেছি। ’
‘কি হয়েছিল বল।’
ফাহিম একটু চুপ থেকে বললো সব। অনিক এতো কিছু ভাবে নি। সব শুনে বললো, ‘এখন তো ওরা তোকে টার্গেট করবে। আর ক্যাম্পাসের ছেলেপেলেদের দিয়ে তোর অবধি পৌছানো অনেক সহজ। নাহিদ ভাই কিন্তু বদির লোক।’
‘করুক। ওসব বদি-নাহিদ চোদার টাইম নাই।’ সিগারেটটা এস্ট্রে তে গুঁজে দিয়ে বললো ফাহিম।
‘কিন্তু রুনু?’ অনিক বললো।
ফাহিম এবার একটু চিন্তিত হলো। এদের হাত অনেক লম্বা হয়। ছেলেপুলে বেশি। রুনু কে যদি খুঁজে বের করতে চায় তবে কঠিন হলেও অসম্ভব না। এতোজন মানুষের মাঝে রুনু কে খুঁজে বের করা কঠিন কিন্তু ওইগ্রুপের কারো চোখে পড়ে গেলে রেহাই দেবে না।
ফাহিম আর অনিক চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থাকলো। অনিক এর মাঝে একটা সিগারেট ধরিয়ে অর্ধেক টেনে ফাহিম কে দিল। ফাহিম অর্ধেক সিগারেট হাতে নিয়ে বললো, চল।
তিন.
ফাহিম বসে আছে নাহিদ ভাই এর রুমে। নাহিদ ভাইয়ের কাগজের হিসেবে লেখাপড়া অনেক আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। অনেকগুলো লগ নিয়ে বসে আছে। ওর যাওয়ার তাড়াও নেই। ক্যাম্পাসে রাজনীতি করে, সাঙ্গপাঙ্গ আছে অনেক। জুনিয়ররা ভয়ও পায়। ক্ষমতা, গাঁজা, টাকা সবই সে পাচ্ছে। কি দরকার পাস করে বের হওয়ার?
অনিকের সাথে বের হয়ে ফাহিম কিছুক্ষণ টঙে আড্ডা দিল। এরপর অনিককে বিদায় করে দিয়ে নাহিদ এর রুমে এসেছে। নাহিদ কে যদিও এখন রুমে পাওয়ার কথা না, কিন্তু পাওয়া গেল।
নাহিদ ভাই চিন্তিত হয়ে বসে আছে। বদি ভাই ফোন দিয়েছিল ওকে। ক্যাম্পাসের কোনো ছেলে না কি বদি ভাইয়ের ছেলেকে মেরে এসেছে। সেই ছেলের রাগ নাহিদ এর উপর কিছুক্ষণ ঝাড়লো, এরপর বললো, ওই ছেলেকে খুঁজে বের করে নিয়ে যেতে বদি ভাইয়ের রুমে। নাহিদ ফোনটা কেটে আগে দুটো গালি দিল। বোঝা গেল না বদি ভাইকে না কি ক্যাম্পাসের ছেলেটাকে। এরই মধ্যে ম্যাসেঞ্জারে টুং করে একটা শব্দ হলো। ঘটনার লিংক পাঠিয়েছেন বদি ভাই। লিংকটা ওপেন করতেই মুখটা চেনা চেনা লাগলো।
এইসময় ফাহিম রুমে ঢুকলো। ফাহিম কে সামনে দেখতেই নাহিদ চিনে ফেললো ছেলেটা কে। ফাহিম কে নাহিদ চেনে। এর আগে দুবার ফাহিম আরও কয়েকজন কে পিটিয়েছিল। যার মধ্যে একজন নাহিদেরইর লোক। কিন্তু নাহিদ কিছু বলেনি। ফাহিম আজও জানে না নাহিদ কেন তাকে কিছু বলেনি।
‘আসসালামু আলাইকুম ভাই।’ ফাহিম সালাম দিল।
সালামের জবাব দিয়ে বিছানার পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে দিল নাহিদ।
‘কেমন আছো ফাহিম?’ সব জুনিয়রকে নাহিদ তুই করে বলে, কিন্তু ফাহিম কে তুমি বলে। ফাহিম জানে না কেন।
‘ভালো ভাই। আপনি?’
‘ভালো আর থাকতে দিলে কই?’ নাহিদ আফসোসের সুরে বললো।
‘কেন ভাই? কি করলাম?’
‘বদি ভাইয়ের ছেলেটা কে কেন মারলে?’
‘ও আচ্ছা, ওই ব্যাপার। আমি জানতাম না ওটা বদির লোক।’
‘বদির লোক’ কথাটা কানে বাজলো নাহিদের৷ এই ব্যাপারে কিছু বললো না, বললো, ‘বদি ভাইয়ের লোক জানলে কি মারতে না?’
‘একটু বেশিই মারতাম বোধয় তখন।’ স্মিত হেসে বললো ফাহিম।
নাহিদ ভাই বাঁকা হাসি দিল। ‘তাহলে? বলো কেন মারলে?’
ফাহিম খুলে বললো না সব।৷ কিছু রাখঢাক করে বললো।
‘দেখো ফাহিম, আমি জানি সবটা তুমি বলোনি। আমি সবটা জানতেও চাই না। এর আগে তুমি আমার ছেলেকে মেরেছো, কিছু বলিনি। এবারও বলবো না। কিন্তু বাঁচাবোও না কিছু হলে৷ তোমার ব্যাপার। তুমিই সর্ট আউট করবে কিছু হলে।’
ফাহিম মাথা নাড়লো।
‘তা কেন এসেছিলে তুমি আমার রুমে?’
‘আপনি আমাকে কিছু করবেন কি না জানতে।’
‘আচ্ছা।’ নাহিদ অবাক হলো না। এই ছেলেকে সে চেনে। ফাহিম কে যেতে বলে ও একটা সিগারেট ধরালো।
ক্যাম্পাসে প্রথম দিককার ঘটনা। ফাহিম নাহিদের ছয় বছরের জুনিয়র। একদিন নাহিদের কানে আসে কোনো এক ফার্স্ট ইয়ারের ছেলে তিনজন ছেলেকে পিটাচ্ছে, সিনিয়র ভাইয়া আপুকে উত্যক্ত করায়। নাহিদ যার কাছ থেকে শুনলো তার সাথে নিয়ে গেল ঘটনাস্থলে। ততোক্ষণে ফাহিমের গাল কেটে গিয়েছে, একটা চোখ ফুলে আছে। হাত থেকেও রক্ত পড়ছে। কিন্তু মার থামায় নি। তিনজন কে একলাই পিটাচ্ছে। সব ছাত্রছাত্রী ঘিরে আছে। যে সিনিয়র কে নিয়ে কাহিনী সে নাক ধরে আছে। নাকে ঘুষি মেরেছে তিনজনের একজন। ফাহিম তখন মারছে আর সমানে মুখ চালাচ্ছে, ‘মাদারচোদ, কোনো বখাটেকে তো মারিস নাই, মেয়ে দেখলেই তো জিভ লকলক করে, এখন এতো জোর আসলো কোথাথেকে মাদারচোদ? ক্যাম্পাসে আর যদি কোনো দিন দেখছি মেয়ে দেখলে, কাপল দেখলে কাহিনী চোদাইতে, একদম খুন করে ফালাবো।’ এই সময় একজন কোনো মতো উঠে পাশে থাকা একটা আধলা ইট ফাহিমের মাথায় মারে। তখন উপস্থিত ছেলেদের হুঁশ হয়। কিন্তু তিনজন অবস্থা বেগতিক দেখে দৌড় মারে।
থার্ড ইয়ারের অপু ভাই আর সৃষ্টি আপু বসে ছিল ক্যাম্পাসে। প্রেম করছিল, খুঁনসুটি করছিল৷ এইসময় ওই তিনজন এসে ঝামেলা করে। রাজিবের কথাগুলোই সে বলেছিল, মাগিবাজি করস ক্যাম্পাসে? এরপর অপু ভাই কিছু একটা বলায় অপুভাইয়ের মুখ ঘুষি বসিয়ে দেয়। সৃষ্টি আপুর আল্লাহ বলে চিৎকারে ফাহিম ঘুরে তাকায়। ফাহিম টঙে বসে চা সিগারেট খাচ্ছিল। অপু ভাইকে তখন দ্বিতীয় ঘুষিটা মেরেছে তারা। ফাহিম চায়ের কাপ সহ ছুটে আসে। চায়ের কাপটা মারে ছেলেটা মুখ বরাবর। এরপর এলো পাথারি মার৷ বাইক থেকে বাকিরাও নেমে আসে৷ কিন্তু ফাহিমের সেসবে হুঁশ নেই। ক্রমাগত মারছিল আর গালি দিচ্ছিল।
ফাহিম কে তখনই হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সাথে ক্যাম্পাসের কিছু ছেলে মেয়ে আর অপু ভাই ও সৃষ্টি আপু। ফাহিমের মাথায় সৃষ্টি আপুর ওড়না প্যাচানো। সৃষ্টি আপু বারবার বলছিল, ‘ভাই তোর কিছু হবে না। ভাই তোর কিছু হবে না।’ ফাহিমের মনে হচ্ছিল ওর বড় বোন তানিয়া ওকে আশ্বাস দিচ্ছে। যেভাবে একসময় সে তার আপু কে আশ্বাস দিয়েছিল। তানিয়া আপুকে তখন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল ও আর ওদের বাবা মা। আর আপুর বয়ফ্রেন্ড রাহাত ভাইয়া। রাহাত আর তানিয়া রিক্সায় করে ফিরছিলেন। মোহাম্মদপুর এর ওদিক দিয়ে ফার্মগেট যাচ্ছিল ওরা। মোহাম্মদপুরের ওদিকে কয়েকজন ওদের রিক্সা থামায়।
গালাগালি করে টাকা চায়। রাহাত টাকা দিতে রাজি হয়নি। রাহাত আর তানিয়াকে রিক্সা থেকে নামায়। রাহাতকে চড় লাথি মারে আর তানিয়াকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যায়। রাহাত চিৎকার চ্যাচামেচি করে কিন্তু লাভ হয় না। কয়েকজন বাইকার জোর টান দিয়ে চলে যায়৷ ভাইয়ার উপর উপর্যুপরি মার পড়তে থাকে। তানিয়াকে কে তখন খুবলে খেতে ব্যস্ত শুয়োরের দল। শেষে তানিয়াকে ওভাবে ফেলে রাহাতকে মেরে চলে যায় ওরা দুটো বাইকে। রাহাত কোনো মতে উঠে তানিয়াকে একটা রিক্সায় নিয়ে হাসপাতালে যায়৷ রাহাত তানিয়ার বাসায় ফোন দেয়। ফাহিম আর ওদের বাবা মা ছুটে আসে। ফাহিম ওর বোনের হাত ধরে বলছিল, কিচ্ছু হবে না আপু। কিচ্ছু হবে না৷ সব ঠিক হয়ে যাবে।
ওই রাতেই রাহাত এফআইআর করে। পুলিশদের মন্তব্য ছিল, অতো রাতে আপনারা ওই এলাকায় কি করছিলেন? ফাহিম শুনে চুপ হয়ে গিয়েছিল। ও জেনে গিয়েছিল, এই শহরে ডাস্টবিন একমাত্র বসবাসযোগ্য স্থান, কুকুরের দল বেশি মানবিক।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে সেসব দিনের কথা ফাহিমের মনে পড়ে যায়। ওকে ওর বাবা মা দেখতে এসেছিল। এসেছিল রাহাত ভাইয়া আর তানিয়া আপু। দুজনেরই সেই ঘটনার কদিন পরে বিয়ে হয়ে যায়। রাহাত ভাইয়া ভালোবাসার দাম দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই শুয়োরেরদল কে এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ। কিংবা খোঁজে নি। এই ধর্ষিত শহরের এই নিয়তি, ধর্ষকদের শাস্তি হয় না।
এরপর থেকে ফাহিম কে ক্যাম্পাসে মোটামুটি সবাই চেনে। নাহিদ ভাইও বুঝে গিয়েছিল, এই ছেলে অন্যরকম। খোঁজ খবর নিয়ে যখন ফাহিমের ব্যাপারে জেনেছিল তখন থেকেই ভেতরে ভেতরে ফাহিমের প্রতি সমীহ কাজ করতো। তাই যখন ওর ছেলেপিলেকে মেরেছিল ফাহিম, নাহিদ কিছু বলেনি।
নাহিদ এখন ভাবছে অন্য কথা। বদির নাম্বার নিয়ে গিয়েছে ফাহিম। নাহিদ বুঝতে পারছে, কিছু একটা ফাহিম করবেই। কিন্তু কি করবে, কতো বড় করবে জানে না। নাহিদের সবচেয়ে চিন্তা হচ্ছে এই ব্যাপারে, এই যুদ্ধে নাহিদ কার পক্ষে দাঁড়াবে।
চার.
ফাহিম নাহিদ ভাইয়ের কাছ থেকে বদির নাম্বার নিয়ে এসেছে। বদি কে ফোন দিলো ও, দুবার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ করলো, ওপাশ থেকে ভারি কন্ঠে কেউ বললো, হ্যালো।
‘হ্যালো। বদি বলছেন?
‘জ্বী। কে বলছেন?’ ওপাশে বিরক্ত কন্ঠ টের পেল ফাহিম। কেউ তাকে বদি ভাই না বলে শুধু বদি বলছে, কার এতো সাহস?
‘আমি।’
‘আমি কে?’
‘যে আপনার লোককে মেরেছে চন্দ্রিমা উদ্যানে।’
‘তুই? তোর এতোবড় সাহস…’ বদি রেগে গেল।
‘তুই তোকারি করছেন কেন? ভদ্রভাবে কথা বলুন।’
‘ভদ্রতা তোর পুটকি দিয়ে ভরবো। আমার ছেলেকে মেরেছিস কেন?’
‘বেয়াদবি করেছিল তাই। আর তাছাড়া জানতাম না ও আপনার ছেলে।’
‘ক্যান? জানলে মারতি না?’ ফোনের ওপাশে বদির মুখে তাচ্ছিল্য মার্কা হাসি।
‘বেশি মারতাম। বেঁচে ফিরতো না।’
‘শুয়োরের বাচ্চা…’
‘আবার অভদ্রতা করছিস মাদারচোদ? খুব রাগ আমার উপর, না?’
‘মাঙ্গির পুত তোকে হাতে পাই, তারপর দ্যাখ। বদি ভাইকে গালি দিস তুই, বদি ভাইকে?! তোকে আমি জ্যন্ত পুতে ফেলবো মাদারচোত।’ রাগে বদির কথা আটকাচ্ছে। সে ভাবতেও পারছে না দুদিনের ছোকরা কিভাবে তাকে গালাগালি, তুই তোকারি করে?
‘কালকে টিএসসিতে আয়। শুধু তোর ছেলেপুলে না, পুরুষাঙ্গ থাকলে কালকে নিজে আয়। কতো জোর দেখা যাবে।’
‘কি বললি তুই? জোর দেখতে চাস? কালকে তোকে রাস্তায় ল্যাংটা করবো মাদারচো…’ ‘কালকে সকাল ১১টায়, টিএসসিতে। তুই নিজে আসবি। সাথে যতোজন আনার আনিস। আর যদি ক্ষমতা থাকে একলা আমার সাথে লড়িস, চোদনা। সাথে তোর বেইশ্যা রাজিব কে আনিস। কালকে ওর বাপকে মাইর খাইতে দেখুক নিজের চোখে।’ বদির কথা শেষ না হতেই ফাহিম কথাগুলো বলে ফোনটা রেখে দেয়৷
ও জানে না কাল কে কি হবে। ও শুধু জানে কাল কিছু নিশ্চয় হবে। হয় ও মার খাবে, মরবে, নয়তো বদি আর বদির মতো মানুষজনের, রাজিবদের ভয়টা দূর করবে।
ফাহিম নিজের রুমে ঢুকে দেখলো অনিক আগে থেকেই রুমে আছে।
‘কোথায় ছিলি তুই এতোক্ষন?’
‘সিগারেট আছে তোর কাছে? থাকলে দে।’ ফাহিম অনিকের প্রশ্নটা কানেই তুললো না। অনিক বুঝলো, ফাহিম কিছু বলবে না এখন। একটা গোল্ডলিফ বাড়িয়ে দিল ওর দিকে৷
‘গোল্ডলিফ ক্যান? বিকেলেই না বেনসন টানলি? মালপানি শর্ট না কি?’ ফাহিম হেসে জিজ্ঞেস করলো।
‘হু।’ অনিক স্মিত হেসে জবাব দিল।
ফাহিম ওর ফোন থেকে ফেসবুকে লগইন করলো। স্ট্যাটাস লিখতে বসলো,
‘তখন ক্লাস ইলেভেন এ পড়ি। আমার আপু কে কিছু শুয়োরের দল ধর্ষন করে। সাথে আপুর বয়ফ্রেন্ড কে পিটিয়ে রেখে যায়। ভাইয়া আপু কে নিয়ে কোনোমতে হাসপাতালে যায়। ভাইয়া নিজের দিকে দেখেনি, আপু কে নিয়েই ব্যস্ত ছিল। আমরা পুলিশে কেস করি। কিছু হয় না। জানা কথা, কিছু হবে না। স্ট্যাটিস্টিক্স বলে এই দেশে গতো আঠেরো বছরে প্রতি ১০০ ধর্ষনে ১ জন সাজা পেয়েছে। পুলিশ তাদের খুঁজে বের করতে পারে নি৷ পেপারে কদিন খুব হইচই হয়েছে এরপর সবাই ভুলে গিয়েছে। সম্ভবত ধর্ষকরাও ভুলে গিয়েছে। প্রতিদিনই কতোজন কেই তো ধর্ষন করে, সবাই কে কি মনে রাখা সম্ভব? শুধু আমরা ভুলিনি। আপু, ভাইয়া, আব্বু আম্মু আর আমি ভুলিনি। ভাইয়া আপু কে বিয়ে করে নিভৃত জীবন যাপন করতে লাগলো। মানুষজন আপুকে নিয়ে কথা বলবে, ভাইয়ার এটা সহ্য হবে না এজন্য।
এসব কথা আমার খুব আপনজন ছাড়া কেউ জানে না। জানাই নি কাউকে। কি হবে জানিয়ে? এই দেশের প্রত্যেকটা আচোদা ধার্মিক তো সেই ধর্মকেই টেনে আনবে। লোকে কি বললো না বললো, তাতে অবশ্য আমার যায় আসে না। কিন্তু তাদের আফসোস আর সমবেদনা ভরা কথা আমি শুনতে পারবো না। তারা শাস্তি যখন দিতে পারবে না, চুপ থাকুক।
আজ বিকেলে আমার আর আমার বোনের প্রতি হামলা হয়েছিল। ছেলেটার নাম রাজিব। যে ভিডিওটা আপনার খুব শেয়ার দিচ্ছেন, জ্বী, ওটা আমিই। আমাকে ছেলেটা বলেছিল, এইখানে মাগিবাজি করস। এরপর আমার বোনের গায়ে হাত দিয়েছিল। যাকে আপনারা ভিলেন বানিয়েছেন, ওই ছেলেটা আমি। আমি আমার বোন কে রক্ষা করেছি৷ ব্যস৷
ওখানে আমি প্রায়ই যায়। আমার প্রেমিকাকে নিয়ে যাই৷ মাঝেমধ্যে চুমুও খাই। প্রেম করি। এতে সমাজ কি বললো, আপনারা কি ভাবলেন, সেইসব আমি ভাবি না। এই আচোদা পঁচে যাওয়া সমাজের ভাবনা আমি চুদি না। আমি ওখানে যাবো, প্রেম করবো। কার বাপের কি আমি দেখবো না৷ আমার দিকে, আমার প্রেমিকার দিকে বাজে মন্তব্য আসলে, আক্রমণ করলে আমি ডিফেন্ড করবো। আক্রমণ করবো। সে কার লোক, কার ছেলে, সে কোথাকার কোন বাল আমি দেখব না।
যদি আপনারা খুব সুশীল হন, ধার্মিক হন, মুসলমান হন, যদি রাস্তাঘাটে অবৈধ প্রেম না চান, চান যে আমি এইসব না করি, তবে ৯০% মুসলিমের দেশে আপনারা ধর্ষন ঠ্যাকান। মাদ্রাসায়, স্কুলে কলেজে ধর্ষন বন্ধ করান। যৌন নির্যাতন বন্ধ করে।
ধর্ষিতাদের গালি দেয়া বন্ধ করেন। রাস্তাঘাটে প্রস্রাব করা বন্ধ করেন৷ অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা দেন। মেয়েদের, শিশুদের নিরাপত্তা দেন। দুর্নীতি বন্ধ করেন৷ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সংবিধানে বিসমিল্লাহ এর জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন, আবার রাস্তায় নামেন। দেশটাকে পাপমুক্ত করেন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম না? সাকিবের বউকে পর্দা করতে বলেন না? আসেন, দেখি, ধর্মের জন্য প্রাণ দিতে পারেন কি না। শহরটাকে, দেশটাকে সমাজটাকে নিরাপদে রাখতে পারেন কি না। আপনাদের ধর্ম কি শুধু টুপি আর নামাজে না সবখানে, ধর্ম কে মনন আর মগজে না শিশ্নের মধ্যে লালন করেন দেখি। নইলে আপনার মুনাফিক। আপনারা জাত মুনাফিক। আপনাদের পালন করা ধর্ম আর আপনাদের বানানো নিয়মে আমি নিয়মিত প্রস্রাব করি।
ধর্ম বাঁচাইতে চান না? আজকের এই লেখার জন্য আমাকে নাস্তিক বানায়ে দিবেন আপনারা, তাতে আপনার ধর্ম বাঁচবে? না। ধর্ম বাঁচাইতে হইলে কালকে টিএসসিতে আসেন। বদি আসবে কালকে। আমাকে মারার জন্য আসবে। বদিকে চেনেন? আপনাদের এই এলাকার গডফাদার বদি। পাঁচটা ধর্ষনের মামলা যার নামে, এই সেই বদি। আমার বিশ্বাস যারা আমার বোন কে ধর্ষন করেছিল তারা এই বদির লোক। এই ধর্ষিত, নোংরা শহরের ধর্ষক কালকে বীরদর্পে আসবে আপনাদেরই ক্যাম্পাসে, আমাকে মারতে। আমি রাজিব কে মেরেছি তাই, বদি কে গালি দিয়েছি তাই। যদি মা বোন কে নিরাপদ চান, যদি শহর পরিস্কার করতে চান, কালকে আসেন। নইলে আমি একাই যাবো। আপনারা ফেসবুকে শেয়ার দিন পরবর্তী ঘটনা। এইটাই আপনাদের ধর্ম।
আর যদি না পারেন তো চুপ থাকেন। আমি প্রেমিকাকে চুমু খাবো এই শহরে, নৈতিক সমাজে, রাস্তায় সবার সামনে আমি প্রেম করবো। সিগারেট টানবো। এই সমাজ কে আমি চুদি না।
Who cares if one more light goes out
In a sky of a million stars?
আমি কেয়ার করি৷ আমি এই ক্যাম্পাসের কেয়ার করি, এই শহর, এই দেশ, এই সমাজের কেয়ার করি। আমি আমার ধর্মের কেয়ার করি। আমার পরিবার, বোন, প্রেমিকা, আমার বান্ধবীদের কেয়ার করি। আপনি করেন?
করলে দেখা হবে কাল৷ নইলে জেনে রাখেন, আপনাদের বধ করার জন্য গোকূলে শূয়োরের দল চলে এসেছে। আজকে ঘুরে না দাঁড়ালে, আর কখনোই নয়।’
ফেসবুকে পোস্ট করে ফাহিম ফোনটা রেখে দিলো। ঘুমিয়ে পড়েছিল প্রায়। ফোন বেজে উঠলো। নিতু ফোন দিয়েছে।
‘ফাহিম, কি হয়েছে তোমার? কি লিখেছো এসব?’
‘কিছু হয়নি ফড়িং৷ কিছু হয়নি। ফার্মগেটে আমার বোন রুনু থাকে। ওর দিকে খেয়াল রেখো, কেমন?’
‘এই ফাহিম, কি হয়েছে তোমার, বলো, কি হয়েছে? এসব বলছো কেন?’
‘আমার ঠোটে তোমার তৃষ্ণাগুলো রেখে দাও
তারপর ঠোটে ঠোট রেখে দুদণ্ড অবসর নাও
ভাবো-
পৃথিবীর আরও কিছু কি পাওয়া বাকি আছে?
ভালোবাসি। দেখা হবে, যদি বেঁচে থাকি কাল, দেখা হবে, এই শহরে। যখন শহরে সবাই ভালোবাসা শিখে যাবে।’
ফোনটা রেখে দিল ফাহিম। একের পর এক ফোন আসছে। ফাহিম এখন ফোন ধরবে না। ও নিজের মনে হিসেব করছে, কালকে বদি আসবে? মানুষরা আসবে? এই ধর্ষিতা শহর কি আরেকবার জেগে উঠবে তার সম্ভ্রম নিয়ে? ও জানে না। কিন্তু আশা করে৷ আশা খুব ভালো জিনিস। আশা আঁকড়ে ধরেই মানুষ বাঁচে।
পাঁচ.
সকাল দশটায় অনিকের ডাকে ঘুম ভাঙলো ফাহিমের। দেখলো অনিক রেডি হচ্ছে। হাতে দুটো হকিস্টিক।
‘কি রে? হকিস্টিক দিয়ে করবি?’
‘যাবি না?’
‘কোথায়?’
‘বদিদের বধ করতে।’
ফাহিম একটু অবাক হলো।
‘তুই যাবি?’ ফাহিম জিজ্ঞাসা করলো।
আয় আমার সাথে। অনিক ফাহিমকে টানতে টানতে নিয়ে গেল। ফাহিম বাইরে আসলো অনিকের সাথে। বাইরে ক্যাম্পাসের ছেলেমেয়েতে ভরপুর। উৎসুক জনতাও এসেছে।
নাহিদ ভাইকে দেখলো তাদের মাঝে। নাহিদ ভাই এগিয়ে আসলো, ‘কি রে, সব তো তোলপাড় করে দিয়েছো দেখছি!’
ফাহিম বিস্মিত, একটু হাসলো। ‘ভাই, বদি কি আসবে?’
‘বদি আসবে। যদিও ও জানে এদিকে এই অবস্থা তবু আসবে। তুমি ওর ইগোতে আঘাত করেছো।’
নাহিদ ভাই বদি কে বদি ভাই বলেনি। ফাহিম স্পষ্ট শুনলো। ওর ভালো লাগছে। ওর মনে হচ্ছে ও এই সময়ে নেই। অন্য কোনো ডাইমেনশনে অন্য কোনো সময়ে চলে গিয়েছে। ভিড়ের মধ্যে ও দেখলো নিতু রুনু কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে তানিয়া আপু, রাহাত ভাইয়া, ওদের বাবা মা। সৃষ্টি আপু অপু ভাইয়া এগিয়ে এলেন। হাতে একটা হ্যান্ড মাইক। সৃষ্টি আপু হাতে মাইকটা দিয়ে বললেন, লিংকিন পার্কের লাইন দুটো বলো তো।
ফাহিম বললো, Who cares if one more light goes out
In a sky of a million stars?
সামনের সবাই জোর গলায় বললো, We care, we care.
নিতু এগিয়ে এসে বললো, পৃথিবীতে আর কিছু পাওয়ার নেই আমার৷ ভালোবাসি৷
ফাহিম নিতুর কপালে একটা চুমু দিয়ে টিএসসির দিকে এগিয়ে গেল। এই ধর্ষিত নগরীর ধ্বংসস্তুপে আজ বর্ষার প্রথম কদম ফুল ফুটবে, ফুটবেই। নগরী আজ পাপীকে বিসর্জন দিয়ে শুদ্ধ হবে, শুদ্ধ হবেই…