ডায়রি পড়তে মানা

ডায়রি পড়তে মানা

শম্মী নামের মেয়েটা ভারী অদ্ভুত! পৃথিবীতে তার সবচেয়ে আপন জিনিস হলো ডায়েরি। সে তার সমস্ত আবেগ-অনুভূতি এতেই লিখে রাখে। শম্মীর যখন ১২ বছর বয়স তখন একবার তার বাবা তার ডায়েরির কয়েকটা পাতা পড়া অবস্থায় তার হাতে ধরা পড়ে। এই রাগে ২২ বছর বয়স পর্যন্ত সে তার বাবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।

তার ৩জন বয়ফ্রেণ্ডের সাথে তার এই কারণে ব্রেকাপ হয়ে যায় যে, তারা তার ডায়েরি পড়ার জন্য তাকে জোরাজোরি করেছিল। আরই ২জনতো সাহস করে তার সবসময়ের বিশ্বস্ত কাধব্যাগ থেকে ডায়েরিটা বের করে পড়ার দুঃস্বাহসও দেখিয়ে ফেলে। ফলস্বরুপ তাদের দুজনকে ব্রেক আপের সাথে সাথে ফ্রিতে ২টো করে কষে থাপ্পরও খেতে হয়। তার কত বন্ধু-বান্ধবের সাথে এই ডায়েরির কারণে সম্পর্কের ইতি ঘটেছে তার খবর নেই। তার মাও সর্বক্ষণ শম্মীর লেখা ডায়েরি গুলোর দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাতো। কিন্তু শম্মীর কথা মনে হতেই তার গলা শুকিয়ে যায়। ডায়েরি আর ছোয়া হয় না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর লোভ সামলাতে পারেননি তিনি। শম্মীর তখন ২২ বছর বয়স। একরাতে শম্মীর মা শম্মী অঘোরে ঘুমাচ্ছে ভেবে শম্মীর একটা ডায়েরি হাতে তুলে নিয়ে যেই কয়েক পাতা উল্টালেন সেই শম্মীর চোখে পড়ে গেল। আর ঘটল অঘটন।

শম্মী সিদ্ধান্ত নিল এই বাড়িতে সে আর থাকতে পারবে না। তার আদেশমতো পাত্র দেখা শুরু হলো। শম্মী রুপবতী হওয়ায় পাত্র খুঁজে পেতে তেমন কোনো ঝামেলা হলো না। শম্মী যে এত অল্পতেই অত রেগে যায় এই কথাগুলো পাত্রকে জানানো হলো না। কিন্তু শম্মীর বাবা-মা এবং সকলেরই ভয় ছিল এই তুচ্ছ কারণেই শম্মীর সংসারে যাবতীয় অশান্তি সৃষ্টি হবে এবং সে দীর্ঘদিন সংসার করতে পারবে না।

কিন্তু সবার ধারণা ভূল করে শম্মী তার ৫০তম বিবাহ বার্ষিকি পর্যন্ত সুখে শান্তিতে সংসার করতে লাগল। টেলিভিশনে এই ধরণের সুখি কাপলদের জন্য একটা রিয়েলিটি শোয়ের আয়োজন করা হয়। বৃদ্ধা শম্মী এবং তার স্বামীকে তাদের অর্ধশত বিবাহ বার্ষিকির দিন টেলিভিশনে নিমন্ত্রণও করা হলো। তারা সেখানে গেলে উপস্থাপিকা তাদের ইন্টারভিউ নেওয়ার এক পর্যায়ে শম্মীকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা দাদি, থুরী ম্যাডাম, আপনারা যে এই অর্ধশতক বছর পাশাপাশি সুখে শান্তিতে সংসার করছেন, এর পেছনে প্রেরণাটা কী ছিল? মানে আপনার স্বামীর কোন গুণটির জন্য আপনি এত বছর তার সাথে ঝগড়া-বিবাদ ছাড়া থাকতে পেরেছেন? শম্মী একটু মুচকি হেসে বলল, দেখ, কোন সংসার টিকে থাকতে একে অপরের বোঝাপড়াটা খুব জরুরী।

আর আমার ওর মতো আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারেনি। আমার মনের আবেগ অনুভূতি কিছুই আমি তাকে খুলে বলতাম না। তবুও ও কী করে যেন সব বুঝে যেত। আমার কোনো কিছু চাইবার আগেই ও তা পূরণ করে দিত। একই প্রশ্ন শম্মীর স্বামীকেও করা হলে তিনি উত্তর দেন, দেখ, একটা সংসারকে টিকিয়ে রাখতে হলে পুরুষটিকে স্ত্রীটির মন বুঝে চলতে হবে। এতেই সংসারে অশান্তি বলে কিছুই আসবে না। কিন্তু কথায় আছে না, নারী মন বড়ই বিচিত্র? এটা বোঝা ভার। আর একেকটা মেয়ের মন হয় একেক রকম। তাই একটাকে দিয়ে আরেকটাকে জানা অসম্ভব। তাই আমি আমার স্ত্রীকে জানতে চেয়েছি। আর একজন মানুষকে জানার জন্য তার ডায়েরি পড়ার চেয়ে আর কী ভালো উপায় থাকতে পারে! আর আমার কী সৌভাগ্য, আমার স্ত্রী এই ৭৭ বছর বয়সেও নিয়মিত ডায়েরি লেখে।

আর তাকে লুকিয়ে এই ৫০ বছর ধরে নিয়মিত আমি তার ডায়েরি পড়ছি। আর তার অব্যক্ত মনের সব কথা যেটা সে আমায় বলতে চেয়েছে বা চায়নি সবটাই জানতে পেরেছি। তার মন বুঝতে পেরেছি। তাইতো এখনও পর্যন্ত আমি তার বিশ্বস্ত হতে পেরেছি। আমার ধারণা প্রতিটা কাপলেরই ডায়েরি লেখার অভ্যাস করা উচিত এবং একে অপরের ডায়েরি লুকিয়ে পড়া উচিত। তাহলে তাদের সংসারে আর কোনোদিন অশান্তি আসবে না। শম্মী কথাটা শুনে পুরোই স্তব্ধ হয়ে গেল। পরেরদিন সকালে পত্রিকার ব্রেকিং নিউজ, ” লুকিয়ে ডায়েরি পড়ার অপরাধে ৫০ তম বিবাহ বার্ষিকি পার করার পর বৃদ্ধ দম্পতির ডিভোর্স।”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত