আমার প্রেমিকা দীপ্তি আমায় কল দিয়েই বলে উঠলো,
– হ্যালো আকাশ, আমি প্রেগন্যান্ট।
– আস্তাগফিরুল্লাহ, ওই কি বলো এসব? মাথাখারাপ হইছে তোমার?
– আমি ঠিকই বলছি।
– মানে কী? এই দীপ্তি, কি সব বলতেছ তুমি? ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আবোল-তাবোল বলতেছ এত রাতে।
– আমি আবোল-তাবোল বলতেছি না । কসম আমি প্রেগন্যান্ট।
– মেয়ে বলে কী? ওই তোমার সাথে তো আমার কিছুই হয় নাই তাহলে তুমি প্রেগন্যান্ট হও কিভাবে?
– কিভাবে সেটা আমি জানিনা আমি প্রেগনেন্ট এটাই সত্য। আমি কাল তোমারবাসায় আসতেছি। বাই।
– ফোন রাখবা না। রাখবা না বললাম। এই দীপ্তি, কথা ক্লিয়ার করো। ফোন কাটার শব্দ শোনা গেল। আমার মাথাটা একটা চক্কর দিয়ে উঠলো। এসব কি বললো ও? আমি এটা জানি ও কখনো মিথ্যা কথা বলে না। কিন্তু মিথ্যা কথা না বললেও তো এটা কখনো সত্য হবেনা কারণ আমার সাথে ওর এমন কিছুই হয়নাই যে সে প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবে।
নোংরামো প্রেম যেটা আজকাল অহরহ হচ্ছে সেটার ধারে কাছেও আমি নাই। তাহলে? আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। মাথাটা ভনভন করতেছে। বাথরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছি আসলে ব্যাপারটা কী ঘটলো? হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ল, আমার এক পরিচিত বড় ভাই আমায় একদিন বলেছিলেন এ যুগের মেয়েরা নাকি অনেক খারাপ। একটাও ভালো মেয়ে নাই দুনিয়াতে। তারা নাকি ভালো ভালো ছেলেদের জীবনটা কয়েক মিনিটে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাহলে কি ভাইয়ার কথাটাই ঠিক। আমার জীবনও ধ্বংস হতে যাচ্ছে। হায় আল্লাহ! বড় ধরনের পাপ তো কখনো করি নাই তাহলে আমাকে কেন এত বড় শাস্তি দিচ্ছেন? অবশ্য যে ভাই কথাটা বলেছিলেন তিনি টানা ৪ টা ছ্যাঁকা খেয়েছেন।
কোনভাবেই নিজেকে শান্ত রাখা যাচ্ছে না। সত্যিই যদি কালকে দীপ্তি আমার বাসায় চলে আসে কী হবে? এমনিতেই বাসায় বড় আপু এসেছে, দুলাভাই এসেছে আরও অচেনা বেশ কয়েকজন মেহমান এসেছে। যাদের দেখলেই আমার রীতিমতো রাগ উঠে। ঘরভর্তি মানুষ, যদি আসলেই এসব মজা না হয়ে সত্যি হয়ে যায়? আল্লাহ রক্ষা করো আমায়। এ কেমন বিপদে পড়লাম? ফোনটা নিয়ে একটু নেটে ঢুকলাম মাথা ঠান্ডা করার জন্যে। ফেসবুকে ঢুকে দেখি কাউকে পাই কিনা। মাথাটা ঠান্ডা করতেই হবে নয়তো যেকোনো একটা গন্ডগোল হয়ে যেতে পারে। ফেসবুকে ঢুকেই যেটা দেখলাম সেটা দেখে এক লাফ দিয়ে বাথরুমে চলে গিয়ে মাথায় পানি ঢালতে লাগলাম। নিউজফিডের প্রথম পোস্ট “কুমিল্লাতে প্রেমিকের বাসায় প্রেমিকা চলে এসেছে কারণ হিসেবে প্রেগন্যান্সির দাবী তুলছে।”
অনেকক্ষণ পানি ঢাললাম মাথায়। আমি কিছুই বুঝতেছিনা, তিন দিন পর বনভোজনে যাব। আনন্দঘন এই রঙিন কালে এ কেমন ঝড় শুরু হলো খোদা? দীপ্তি কি ইচ্ছা করেই এই ফাজলামোটা করতেছে? কিন্তু ও কখনো মিথ্যা কথা বলে না। ব্যাপারটা কি আসলেইসত্যি? কসমও তো কাটলো। আমি কিছুই বুঝতেছি না। ও কি আমায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে? কী করব এখন আমি? সারারাত ঘুম হলো না। অনেক উল্টাপাল্টা চিন্তা করার পর অবশেষে ভোর চারটা কি পাঁচটার দিকে একটু ঘুমালাম। ঘুমাতেই ছয়টার দিকে ফোন আসলো দীপ্তির নাম্বার থেকে। কি আশ্চর্য এতো সকালেই চলে আসতেছে? আমার দম আটকে গেছে। কল ধরলাম না। আবার কল। ধরলাম না। টানা ৫ বারের মাথায় ধরলাম। ভয়ে ভয়ে আমিঃ দীপ্তি আমি মরে যাব এমনটা করো না”
– আকাশ। এই আকাশ। প্লিজ, আই এম সরি। মাফ করে দাও। কাল রাতে শিলা আপু তোমায় ফোন দিয়ে মে বি কিছু বলেছে। কী বলেছে আমি জানিনা। তবে কোনো রকম ফাজলামো করে থাকলে আমায় মাফ করে দাও প্লিজ। আমি চুপ করে আছি।
– কি হলো আকাশ, কিছুতো বলো?
– না, না উনি তেমন কিছুই বলেনাই। আমি ঠিক আছি।
ফোন কাটার পর মনে পড়লো শিলা আপুর আসলেই বাচ্চা হবে। আর উনার ভয়েস সেইম দীপ্তির মতো। আরো একবার এরকম ফাজলামো করেছেন। কিন্তু দীপ্তিদের বাসায় উনি কখন এলেন সেটা আমি জানিনা বলেই এসব ঘটলো। আবার বাথরুমের আয়নাটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার সাথে অস্বাভাবিক কিছু ঘটলেই আমি সাধারণত আয়নার সামনে গিয়েই দাঁড়াই। সারা শরীর দিয়ে রাগ যেন ফেটে বেরুচ্ছে। আচমকা চোখ আটকে গেল। ওমা একি চুল গুলা সাদা কেন? কোথায় যেন পড়েছিলাম এক বিখ্যাত ব্যাক্তি অতিরিক্ত চিন্তা করে এক রাতেই তার মাথার সব চুল পাকিয়ে ফেলেছিলেন। আমারো কি তাই হলো? ও আল্লাহ। এ কী হলো? রাগে আয়নাটা ভেঙ্গে ফেললাম এক ঘুষি দিয়ে। শব্দ শুনে মা ছুটে এলো।
– এ কি, এ কি করলি তুই? কি হইছে এই ভোরবেলায় তর?
– মাগো আমার মাথার সব চুল পেকে গেছে। এই বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি। মা আমায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো “কই তর মাথার চুল পাকছে? আমি তো দেখিনা।”
– এই যে দেখো সব।
– একটাও না। দেয়ালের সাদা রঙ কেমনে মাথায় এলো এইডা বল?
সব মনে পরলো আমার। রাতের দুশ্চিন্তাতে এসব হইছে। দেয়ালে মাথা ঠেকিয়েই কখন যেন ঘুমিয়েছিলাম। এতক্ষণে বাবাও চলে এসেছেন। এরপর? এরপরে আর কী হয়েছিল সেদিন? অবশেষে নিজের জমানো বনভোজনের দু হাজার টাকা দিয়ে নতুন আয়না আনিয়েছিলাম। বনভোজনে আর আমার যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আর এখন বন্ধুদের কাটিয়ে আসা বনভোজনের ছবিগুলার নিচে কমেন্ট করতেছি, হুর, সুন্দর নাই প্লেসটা। কী নোংরা খাবার, ইয়েক।” “এই বাসে গেছিলি? ভাগ্য ভাল আমি যাই নাই। এটার চেয়ে ঠেলাগাড়ি ভালো রে।”