মীরার বিয়ে হয়েছে ধনাঢ্য এক পরিবারে, এই বাড়ির বড় ছেলের সাথে, এই বাড়ির ছোট ছেলের নাম হাসান, মীরা এবং হাসান সমবয়সী। মীরার স্বামী ভবঘুরে, ঘরের মধ্যে সে থাকেনা, রূপবতী স্ত্রী, সুন্দর সংসার, এগুলোর প্রতি তার কোন টান নেই, সে আছে তার জগৎ নিয়ে, নাচ,গান,জুয়া,মদ নিয়েই দিব্যি ব্যাস্ত। হাসান একজন তরুণ কবি, সমবয়সী ভাবি মীরার সাথে তার ভালো সম্পর্ক, মীরার পুরো দিন কাটে হাসানের সাথে। বলা হয়ে থাকে কবিতা কিংবা কবিদের প্রতি মেয়েদের একটা দূর্বলতা আছে, এক্ষেত্রে ঠীক সেরকমই হাসানের প্রতি মীরার দূর্বলতা রয়েছে, এই দূর্বলতা হতেই দুজনের প্রেম শুরু হয়, ভাবি এবং দেবরের প্রেম, যা আমাদের সমাজের পরকীয়া নামে খ্যাত,।
দুবছর পেরোলো, হাসান ৫টা কবিতার বই লিখলো, খুব সুখ্যাতি অর্জন করলো, তার কবিতার উপপাদ্যই মীরা, প্রতিটি কবিতাই মীরাকে নিয়ে লিখা, তাদের দুজনের পরিকল্পনা তারা পালিয়ে যাবে, অনেক দূর যাবে, যেখানে তাদেরকে কেউ চিনেনা, কেউ জানেনা, পরিকল্পনার বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন হাসানের বাবা, হঠাৎ করে হাসানের বিয়ে ঠিক করে ফেললেন, পিতৃভক্ত ভীতু হাসান, বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো, যেদিন হাসানের বিয়ে ঠিক সেদিন মীরা আত্মহত্যা করলো, ধুমধামে বিয়ে হলো, মীরার আত্মহত্যার বিষয়টা ঢাকা পরেগেলো।
হাসানের যে মেয়ের সাথে বিয়ে হলো তার নাম লাবণ্য, অতি ভালো এবং মিষ্টি একটা মেয়ে, আজকে ২৫ তম জন্মবার্ষিকী নীলয়ের , , নীলয় হলো হাসান এবং লাবণ্যের২৬বছর সংসার জীবনের একমাত্র ছেলে, হাসান নীলয়ের হাতে একটা ছবি দিয়ে বললেন দেখেতো মেয়েটাকে কেমন লাগে? মেয়েটার ছবি দেখে নীলয় থমকে দাঁড়ালো, মানুষ এতো সুন্দর হয় কেমনে? এতো মায়াবী চেহারার অধিকারি কেউ হয়? নীলয় মেয়েটাকে পছন্দ করলো, তাদের ধুমধামে বিয়ে হলো, মেয়েটার নাম সোহাসিনি, নীলয় তার বাবার মতো একজন লেখক, তবে তাদের মধ্যে পার্থক্য হাসান তার লেখা পাবলিশ করে কিন্তু নীলয় হলো উল্টো, সে তা লুকিয়ে রাখে,।
এবার আসি সোহাসিনি মেয়েটা সম্পর্কে, এই চমৎকার মেয়ের বিয়ের আগে আরেকজনের সাথে সম্পর্ক ছিলো, শুধু তাই নয় সে বিয়ের পর নীলয়কে ঠীক মানিয়ে নিতে পারছেনা, তাই বিয়ের মাএ কয়েকমাসের মধ্যে তার পুরনো প্রেমিকের সাথে সোহাসিনি পালিয়ে যায়, নীলয় খুব কষ্ট পায়, শুধু কষ্ট নয় অপমান, দুঃখ, এবং হতাশায় পরিশেষে সে আত্মহত্যা করে, তার মৃত্যুর পর তার লুকানো লেখা গুলো বের করা হলো, এবং তা প্রকাশ করা হলো, তার লেখা এতটাই ভালো হয়েছে যে শুধু দেশে নয় বিদেশেও সাড়া জাগালো। সোহাসিনি তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে সুন্দর একটা সংসার শুরু করলো, তাদের একটা ফুটফুটে ছেলে হলো, ছেলের নাম রুদ্র,।
২০ বছর পরঃ রুদ্র ভার্সিটিতে ওঠার পর কবিতার বই লিখে নাম করে ফেললো, বইমেলায় গেলে এক ঝাঁক তরুণী তাকে ঘিরে রাখে, তার আশেপাশে থাকে, এই সূত্রে পরিচয় হলো নীড়ার সাথে , অতঃপর প্রেম, রুদ্র ভীতু প্রকৃতির, সে তার পরিবারকে বলতে পারেনি তাদের সম্পর্কের কথা, তাই সে এবং নীড়া পালিয়ে যায়, রুদ্রের বাবা মায়ের সাথে রুদ্রের সম্পর্ক ছিন্ন হয়, সোহাসিনি খুব কষ্ট পেলেন, ভাবতে লাগলেন অতীতের কথা, তিনি যখন এরকম কাজ করেছেন তখন নীলয়ের কত কষ্ট হয়েছে। রুদ্র এবং নীড়া মাএ ২ বছর সংসার করেছে, তারপর নীড়া রুদ্রের এক বন্ধুর সাথে পালিয়ে যাই, নীড়া নতুন আরেকটা সংসার শুরু করলো, রুদ্র খুব ভেঙে পরলো,রুদ্রের নতুন জীবন শুরু হলো, তার নতুন জীবনের সঙ্গী হচ্ছে মদ, হতাশায় ভুগতে ভুগতে একসময় রুদ্র ক্লান্ত হয়েগেলো, এবং আত্মহত্যা করলো?
হাসান সাহেব অসুস্থ, বিছানা থেকে উঠতে পারেননা, হাত পা ও নাড়তে পারেননা, তিনি বুঝতে পারছেন তার মৃত্যুর সময় চলে এসেছে, তার চোখের সামনে মীরার ছবি ভাসে, তিনি বুঝতে পারছেন তিনি কতটা ভুল করেছেন, তিনি চীৎকার দিয়ে বলতে চান, মীরা আমাকে ক্ষমা করে দাও, কিন্তু এখন আর এটা সম্ভব নয়, তাইতো নীরবে চোখের জল ফেলেন।
সোহাসিনি খুব সুখে নয়, তার চেহারা আগের মতো মায়াকারা নয়, সোহাসিনি ভাবেন নীলয়ের কথা, নীলয়কে তিনি ঠকিয়েছেন, তাইতো পুরো পৃথিবী উনাকে ঠকাচ্ছে, উনার ছেলে রুদ্র বেঁচে নেই, আজ উনি পুরো একা, একটা বৃদ্ধাশ্রমে উনার বসবাস।
নীড়ার নতুন সংসার বেশিদিন ঠেকেনি, নীড়ার নতুন স্বামী তাকে ফেলে চলে গেছে অনেকদিন থেকে, বিয়ে করেছে নতুন, নীড়া অসহায়, তার চারপাশে কেউ নেই, নীড়া শুদ্ধ মানব নয় যে আত্মহত্যা করবে, নীড়া অশুদ্ব মানব তাইতো তার স্থান ব্যৈশাপল্লি।