পত্রিকার পাতা খুলতেই বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠল, সোনা চুরির অপরাধে অল্প বয়সী এক মেয়েকে থানায় নেওয়া হয়েছিল। থানার ভেতরেই এক পুলিশ অফিসার মেয়েটাকে রেপ করেছে। রাতভর উপর্যুপরি ধর্ষণ। কদিন আগে তারচেয়েও বীভৎস খবর পাঠ করে আমার বুকের ভেতর কাঁপুনি ধরেছিল।
দক্ষিণখান এলাকার এক মসজিদের ইমাম ঝাড়ফুঁকের সুযোগ নিয়ে অল্প বয়সী মেয়েদের ধর্ষণ করছে। এইসব জিনিস মোবাইলে ভিডিও করে মেয়েগুলাকে ব্ল্যাকমেইল করে আবারও ওর শয্যার আসতে বাধ্য করছে।
লোকটা র্যাবের হাতে ধরা খাওয়ার পর ওর মোবাইল থেকে এইসব ফুটেজ উদ্ধার করা হয়। নরকের কীট আর কারে কয়? কদিন আগে এক সাংবাদিক বন্ধুর বাসায় বসে আড্ডা দিচ্ছি। টুকিটাকি ফেসবুকিং করছি। বন্ধু আমার আচমকাই হাতের মোবাইলটা ফিক্কা মেরে দেয়ালের উপর ছুঁড়ে মারল। আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম, “এইটা তুই কি করলি?” বন্ধু জবাব দেয় না। জানালার পাল্লা খুলে রাস্তার উপর একদলা থুথু ছুঁড়ে মারে। আমি আবারও জানতে চাই,”সমস্যা কি?” সে বলে,”নরক, মূর্তিমান নরক!”
“কোথায় নরক? ঘটনা কি?” বন্ধুটা আমার দিকে তাকিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে,”চরাচরে সত্যিই কি ঈশ্বর বলে কেউ আছে?” ছেলেটা ঘোর বিশ্বাসী। ওর মুখে এই সংশয়? নাহ, সন্দেহ ওর ভেতরে এতটুকুও নেই। নিশ্চয়ই কোন অভিমান আছে। অভিমানের কারণ কি? বন্ধুর কাছ থেকেই জানতে পারলাম, কোথাকার দুই স্কুল মাস্টার আঁতাত করে তার ছাত্রীদের ধর্ষণ করছিল। প্রথমে কেউ টের পায় নি৷ কোন এক ছাত্রীর অভিভাবকের হাতে ধরা খাওয়ার পর এলাকায় আলোড়ন। এখন অবধি তেরটা মেয়ে এই ধর্ষণের কথা স্বীকার করছে। বাদ-বাকি ভিকটিমদের অনেকেই লজ্জায় মুখ খুলছে না।
ওর কথা শুনে মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। দুইজন ইস্কুল মাস্টার… মাস্টার… মাস্টার… কী ভীষণ সেনসেটিভ একেকটা শব্দ… আমি নিজেও তো শালা এই শব্দের মোহেই টিচিং প্রফেশনটা বেছে নিতে চাইছি! বন্ধু বলে,”এইসব কি হচ্ছে নূর? কেন হচ্ছে বল তো শুনি?” নিষ্প্রাণ কণ্ঠে বললাম,”জানি না। উত্তর নেই জানা।” “পত্রিকার পাতা খুলতে ভয় হয় আমার। একটা পর একটা বীভৎস খবর শুনি, আর শুধু বমি পায় আমার। ঘেন্না হয় শালার এই মানুষ জাতিটার নোংরামির কথা ভেবে!””ঘেন্না করে ফায়দা নেই৷ নোংরা মানুষ আগেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে- you better ignore them.””তাই বলে দুইজন ইস্কুল মাস্টার?”
“হু, এইটাই বিচ্যুতি। কিছুদিন আগেও একটা সময় ছিল, মানুষ তার পোশাকি পরিচয়টাকে সম্মান করত। এই পোশাক বা পদের সম্মান রক্ষার জন্যে হলেও পাপাচার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখত। এখন চলছে উল্টাধারা..”বন্ধু আমার বিতৃষ্ণা চোখে তাকিয়ে থাকে। মাথায় গুত্তা খাওয়া গরুর মতো এলোপাতাড়ি মাথা ঝাকায়। কাতর কণ্ঠে জানতে চায়,”এর থেকে উত্তরণের উপায় কি?” উপায় একটাই, পদ ও পোশাকের জেল্লা দেখে কারও প্রতি আলগা সমীহ না দেখানো। দুনিয়ায় প্রতিটা পুরুষেরই একফালি শিশ্নদণ্ড আছে এবং সে সু্যোগ পেলেই তার যথেচ্ছাচার ব্যবহার করে, এই সত্য মেনে নেওয়া। পাঁচশো বছরের পুরনো আস্থা ও মূল্যবোধ থেকে সবাইকে বের করে নিয়ে আসা!” “এইটা কীভাবে সম্ভব? কেউ তা বিশ্বাস করবে?”
“দশ বছর আগে হলে আমি নিজেই বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এখন করি। এবং প্রতিটা লেখায় ঘুরেফিরে এই কথাই বলার চেষ্টা করি হোক সে মন্দিরের পুরোহিত, মসজিদের ইমাম, থানাখানার পুলিশ কিংবা তোমার আদরের ছোট বোনটার মহামান্য টিচার আল্লাহর দোহাই লাগে, কাউকে তুমি আন্ধার মতো বিশ্বাস করো না… মানুষের ভেতর থেকে ক্রমে ক্রমেই শুভবোধটি উধাও হয়ে যাচ্ছে, মানুষের ভেতরে ক্রমে ক্রমেই নরক ঢুকে যাচ্ছেনরক হইতে সাবধান!”এইটাই তুই ভালো বলছিস। এইসব পিশাচের হাত থেকে নিজের রক্ষা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রতিটা পোশাকি পরিচয়কে উষ্টা মেরে জলে ফেলে দেওয়া!”
বন্ধুর কথা শুনে আমার কষ্ট হল। ওর ভেতর ভয়াবহ ক্ষোভ ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। ক্ষোব্ধ আমিও হই, অস্থিরতা আমাতেও আসে। কিন্তু ওর মতো উত্তপ্ত মস্তিষ্ক নিয়ে দম-নগদ লিখতে বসে যাই না৷ প্রথমে কয়েক ঢোক মদ খাই৷ এরপর কয়েকটা সিগারেট পুড়াই। এরপর খুব ঠান্ডা মাথায় লিখতে বসি। প্রতিটা লেখাই আমার কাছে আরাধনার মতো। যদিও জানি লুতুপুতু গল্পের চাইতে এইগুলার বাজারদর একেবারেই কম। লেখার শেষে যতটা-না ভালোবাসা পাই, তারচেয়েও বেশি পাই তাচ্ছিল্য। তবুও ভরসা হারাই না আমি। দেড় পৃষ্ঠার একটা লেখার নিচে দেড় হাজার গালাগাল থাকে… আর থাকে দশ-বিশটা শেয়ার৷
আমার গন্তব্য ঐ শেয়ার করা আইডিগুলা। অনেক দলকানার ভিড়ে অন্তত দশজন মানুষ হলেও তো বুঝতে পেরেছেন, লাত্থিটা আসলে কোথায় দেওয়া উচিত! বাল্যকাল পড়েছি, জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো বাল্যশিক্ষা মাথায় রইল। আমি বরং অন্য কথা কই। আমি কই,”কর্ম হোক যথাতথা জন্ম হোক ভালো।” একজন ভালো মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া একটা ছেলে যেকোন স্থানে, যে ধরণের পেশা বা কর্মে লিপ্ত থাকুক… জোর করে ধর্ষণের চিন্তাটা ওর মাথায় জায়গা পাবে না এখন যদি কেউ আমারে প্রশ্ন করেন,”ভালো মায়ের ভালো ছেলেটাকে চিনব কেমনে?”
উত্তর হইল,”মরার আগের দিন অবধি দুনিয়ার সব শালায় ভন্ড ও লুচ্চামি করার অপার সম্ভাবনা লালন করে। (অনুগ্রহ করে ভুল বুঝবেন না মহামান্য আদালত, আমিও তাহাদেরই একজন) মরার আগের দিন অবধি তাই কাউরেই চেনার চেষ্টা কইরেন না। আর যদি করতেই হয়, সন্দেহটা বাঁচায়ে রাখবেন..
ধুর বা* , হুদাই ত্যানা প্যাঁচাতে লাগছি কথা হইল, বিশ্বাস আপনি সবারেই করবেন, কিন্তু সন্দেহ করবেন সবার আগে… এবং এই সন্দেহটাকে আমৃত্যু বাঁচিয়ে রাখবেন বিশ্বাস করে ধরা খাওয়া মানুষের নজির আছে হাজারে হাজার, কিন্তু সন্দেহ করে ধরা খায় কয়জনে? খুবই কম… সিরিয়াসলি!
পরিশিষ্টঃ পুরো লেখাটাই একপেশে হয়ে গেল৷ এখন যদি কেউ বলে, শুধু ছেলেদের নষ্টামি দেখলেন, মেয়েরা কি তুলসী পাতা? আমি কইমু, না! ক্লাস এইটে পড়ার সময় অতি আধুনিকা দুই আপু আমারে ক্যারাম খেলার নাম করে ডেকে নিয়ে গিয়ে দরজার পাল্লাটা আস্তে করে বন্ধ করে দিয়ে খুব ফুরফুরে গলায় আওহান করছিল,”লাগাও!”
সেইদিনই প্রথম বুকের ভেতর একটা ধিক্কার উঠে৷ বুকের ভেতর থেকে কেউ একজন ফিসফাস করে বলেছিল,”পালাও!” আধুনিকা আপুদের একজনের নিতম্বে লাত্থি দিয়ে সেই যে পালনো শুরু করেছি, এখনো শালা দৌড়ের উপরেই আছি…