ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও কোম্পানির একটি প্রজেক্টের কাজে আমাকে চট্টগ্রাম যাওয়া লাগছে। তাও আবার তিনদিনের জন্য, বোরিং। অনেক সময় ধরে কমলাপুর রেলস্টেশন বসে আছি, চট্টগ্রামের ট্রেন ছাড়বে রাত বারোটায় কিন্তু বাজতেছে রাত পৌনে একটা, কোন খবরই নেই ছাড়ার। আশেপাশে যাত্রীরা কেউ ট্রেনে উঠছেনা, এদিক ওদিক ঘুরছে, বাদাম খাচ্ছে, কেউ কেউ যাত্রী চাউনিতে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। আজকে ট্রেন ছাড়বে কিনা চিন্তা হচ্ছে খুব। ট্রেনে উঠে সিটটা খোঁজে বের করে বসে আছি আমি। হালকা শীত শীত লাগছে। বাইরে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি মৃদু কুয়াশা। শীতের আগমন বার্তা।
জার্নিটা ভালোই লাগবে বোধহয়। মনটাকে সান্ত্বনা দিচ্ছি আরকি। এমন সময় প্লাটফর্ম থেকে আওয়াজ আসলো আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে ট্রেন ছাড়বে। এখন পুরো অবস্থাটারই উল্টো কাহিনী, পড়িমরি করে সবাই দৌড়ুচ্ছে। আজব শহরের আজব মানুষ আমরা। এসব ভাবতে ভাবতেই ট্রেন হুইসেল দিয়ে প্লাটফর্ম থেকে ছাড়লো। একটা মহিলা ভিড় ঠেলে কোনোরকম এসে আমার সামনের সিটে বসেছে। মহিলাটা অনেক মোটা, হাতে সাকা পরা, হিন্দু বিবাহিতা। আমি কিন্তু এক নজরে দেখে বিবরন দিলাম। চেহারার দিকে তাকাই নাই। আমি অপরিচিত কারো চেহারার দিকে তাকাতে পারিনা। চোখে চোখ পড়লে খুব অপরাধী মনে হয় নিজেকে, তাই। ট্রেন শহর থেকে বের হয়ে তার পূর্ণ গতিতে এগোচ্ছে। চোখটা নিভে আসতেছে, সারাদিন অফিসে বসে বসে ফাইল রেডি করেছি, একটুও রেস্ট নিতে পারিনি। লাইফটা পানসে লাগে আজকাল, কোন কালার নাই। চোখটা বন্ধ করতেই শুনলাম মহিলাটা আমাকে ডাকছে,
– এই যে শুনছেন?
– আমি কোনরকম চোখ নিভু নিভু করে বললাম, জ্বি বলেন।
– আমি ভুল না করলে আপনার নাম রবিন, তাইনা?
– এবার চোখ মেলতেই হলো। তাকালাম মহিলার দিকে। হাসতেছে আর বলতেছে,
– কী? চেনোনাই?
খুব চেনার চেষ্টা করছি, কেমন একটা চেনা অচেনার মাঝামাঝি আছি। আমার স্মৃতি শক্তি আজকাল কমে আসছে। কপালে লাল বড় একটা টিপ, কোঁকড়ানো চুল, চোখটা ক্লান্তি মাখা, ট্রেনের ঝাপসা আলোতে আন্দাজ করতে পারছি না। কে হতে পারে? হঠাৎ সে নিজেই বলে উঠলো, আমি নন্দিতা রায়। কঠিন একটা শিহরণ বয়ে গেলো।
“নন্দিতা” এই শব্দটা একটা সময়ের অক্সিজেন ছিলো আমার। অথচ দিব্যি ভুলে বেঁচে আছি আমি। কিভাবে সম্ভব?
নন্দিতার সাথে আমার পরিচয় হয় সিলেটে। আমাদের এলাকার চা বাগানের বাবুর মেয়ে ছিলো। বাগানে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে আব্বুকে নিমন্ত্রণ করা হয়। আব্বু ছিলেন এলাকার ইউপি মেম্বার। আব্বু যেখানেই যেতেন আমাকে সাথে নিয়ে যেতেন। বিয়ে বাড়িতে গিয়ে আব্বু আমাকে বললেন তাদেরকে যেনো কাজে সাহায্য করি। বর আসবে, আমাকে কিছু পিচ্চি পাচ্ছিদের সাথে দেয়া হলো চন্দন না কি যেনো একটা ছিটিয়ে বরযাত্রীকে বরন করানোর দায়িত্ব। আমি সবাইকে আস্লামলেকুম আস্লামলেকুম বলে রিসিভ করছিলাম। সবাই কেমন যেন আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। তখন পাশে তাকিয়ে দেখি নন্দিতা হেসে মরেই যাচ্ছে। ব্যাপারটা না বুঝেই আমি তাকে গিয়ে বললাম; “আপনি হাসছেন ক্যানো? আমাকে দেখতে জোকার মনে হয়?” তখন ও হাসি কোনরকম চেপে বললো, “মশাই এটা হিন্দু বিয়ে। আপনি সবাইকে সালাম দিয়ে কনফিউজড করে দিচ্ছেন।” এবার নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। আমি নন্দিতাকেই সরি বললাম। ও বললো, আরে ধ্যাত! ব্যাপারনা যা হওয়ার হয়েছে, বলে হাসি দিয়ে চলে গেলো। ওর হাসিটা সুন্দর, চোখ দুটো মায়াবী, চুল প্রায় তার সমানই। মেয়েটাকে প্রথম দেখি সেদিন।
অর্ধেক রাত হয়ে গেছে কোনো খাবার পাচ্ছিলাম না। বিয়ের লগ্ন নাকি ভোর চারটায়। নন্দিতাকে অনেক খোঁজে বের করে বললাম, কিছু খাবার দিতে পারবেন আমায় প্লিজ? আমার খুব খিদে আর ঘুম পেয়েছে। ও আমাকে ঘর থেকে বড় একটা থালা সাজিয়ে অনেক রকম তরকারি দিয়ে নিয়ে আসলো একটা আড়ালে। ওর হাতে প্লেট রেখেই হাত দিয়ে মাখিয়ে গপাগপ হালকা গিলে পাশের একটা টেবিল থেকে জল খেয়ে ওকে বললাম, “বাঁচালেন আমায়। আচ্ছা আপনার নাম কি? জানেন আপনাকে অনেক্ষণ ধরে খুঁজেছিলাম, নাম জানিনা তো তাই এতো লেট হলো।” ও একটা হাসি দিয়ে বলেছিলো, “আমি নন্দিতা, নন্দিতা রায়।”
আবার কল্পনার ঘোর থেকে বের হয়ে ট্রেনে; নন্দিতাকে বললাম খুব মোটিয়ে গেছো। ও বললো তুমিও। বললাম, কোথায় যাচ্ছো? নন্দিতা হেসে বললো, “এটা চট্টগ্রামের ট্রেন তুমি জানোনা?” আসলে আমি কথা খুঁজে পাচ্ছিলামনা। হাজারো অভিযোগ, হাজারো অব্যক্ত কথাগুলো আজ মৃত। একটা সময় এতো কথা বলতাম নন্দিতার সাথে নন্দিতা নিজেই হাঁপিয়ে যেতো। তখন নন্দিতা ক্লাস টেনে পড়তো আমি ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে। এটা স্কুল এন্ড কলেজ ছিলো। আমি ডেইলি ওকে বাগানে এগিয়ে দিয়ে আসতাম ছুটির পর। আস্তে আস্তে এতোটা ক্লোজ হয়েছিলাম যে যখন তখন আমি বাগানে চলে যেতাম। নন্দিতাকে দেখতেই হবে। ও খুব মিষ্টি মিষ্টি কবিতা লিখতো, আমাকে ডেইলি একটা একটা কবিতা লিখে দিতো। গানের গলা যা ছিলো তা এক শব্দে অতুলনীয়।
পাহাড়ের চূড়ায় বসে বসে ও আমাকে গান শুনাতো। পাহাড়ে প্রতিধ্বনি হতো। মনে হতো কোন এক পাহাড়ি কন্যা গান করছে। আমি শীতের সকালে ভোরে ঘুম থেকে উঠে কুয়াশা ঠেলে দুই ঘন্টা হেটে তারপর নৌকা করে নদী পার হয়ে চা বাগানে যেতাম। ও বাগানের খুব ভেতরে একটা মন্দিরে পুজো দিতে যেত। ও যখন চোখ বুঁজে পূজো দিতো আমি তখন ওকে মন ভরে দেখতাম। মাঝে মাঝে চোখ খোলে আমাকে ভেঙচি কাটতো। আমি বলতাম, “ভগবানকে যে ভেঙচি কাটলা তোমার পাপ হবেনা?” ও বলতো আমি তোমাকে ভেঙচি খাটছি ভগবানকে না। আবার ও আমাকে বলতো, “আচ্ছা রবিন তুমি নামাজ পড়োনা?” আমি বলতাম হ্যাঁ পড়িতো। আবার বলতো, “আচ্ছা তুমি আল্লাহ্র কাছে কি চাও?” আমি বলতাম, “তুমি ভগবানের কাছে যা চাও তাইই।” ও বলতো আমি একটা কঠিন জিনিস চাই জানিনা পাবো কিনা। আমি জোর করেও ওর চাওয়াটা জানতে পারতাম না, জানলে নাকি পূরণ হবে না।
নন্দিতা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতো আর আমি সিলেটি। ও আমাকে শুদ্ধ ভাষা শিখাতো। মাঝে মাঝে আমাকে পরীক্ষা নিতো। বলতো, শুদ্ধ ভাষায় দুইটা বাক্য বলো। আমি বলতাম, “তোমাকে দেখিতে বাক্কা সুন্দর লাগের। তুমি ইলা সুন্দর কেনো?” নন্দিতা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতো। “বাক্কা” শব্দের শুদ্ধ শব্দ যে “খুব” তা আমার মাথায় আসতোই না। তাও চেষ্টা করতাম অনেক। একদিন আমার খুব জ্বর হয়, আমি প্রায় তেরো দিন কলেজে যাই নাই। শহরে হসপিটালে ভর্তি ছিলাম। বাগানে বাগানে ঘুরায় মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে গিয়েছিলো। পরে বাড়ি এসে যখন বাগানে গিয়েছিলাম। আমাকে পেয়ে নন্দিতা খুব করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতেছিলো। আমাকে ইচ্ছামতো বুকে কিল ঘুষি দিচ্ছিলো আর বলতেছিলো, “কোথায় ছিলা তুমি?” শয়তান, কুত্তা, বিলাই, মহিষ, বানর আরো অনেক জাতের বকা দিলো। আমি বললাম, “আমি না থাকলে তোমার কি?” ও আমার মুখ চেপে বলছিলো, “তুমি আমার সব। আমি তোমাকে ভালোবাসি গাধা তুমি বুঝোনা ক্যান?” কান্না জড়িত কন্ঠে বলতো তুমি জানো ভগবানের কাছে আমি প্রতিনিয়ত তোমাকেই চাই। আমার অসুখের খবর শোনে ও আমাদের বাড়িতেও গিয়েছিলো। নির্ঘুমে চোখের নিচে কালি জমিয়ে ফেলেছিলো। এতো ভালোবাসার মধ্যে ভুলেই গিয়েছিলাম আমাদের সমাজ দুটো।
আমি নন্দিতাকে বলতাম, নন্দিতা আমি মুসলিম তুমি জানো? ও ছিটকে সরে গিয়ে বলতো, “ওমা! তাই নাকি? তুমি মানুষ না? আমিতো ভেবেছিলাম তুমি মানুষ।” ও আবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতো, “তুমি আমার।” আমি তার হয়ে যেতাম, আমি তারই ছিলাম। একদিন হঠাৎ ভোরে শুনি কে জানি বাড়িতে আব্বুকে এসে বলতেছে বাগানে একটা খুন হইছে। আমার সমস্ত শরীরে কাঁপুনি ওঠে গেছে কথাটা শুনে। আব্বুকে নিয়ে বাগানে গিয়ে শুনি নন্দিতার বাবাকে বাগানের লেবাররা মিলে খুন করে ফেলছে। এটা পার্বত্য অঞ্চলে ওসময় ভয়াবহ ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছিলো। লেবাররা ন্যায্য অধিকার না পেলেই সবাই মিলে বাবুকে খুন করে ফেলতো। আমি আর এগুতে পারতেছিলাম না। গিয়ে দেখি নন্দিতা পাগলের মতো কাঁদতেছে উঠোনে। আমাকে দেখে সবার সামনেই জড়িয়ে ধরে বলতেছিলো, “আমার সব শেষ হয়ে গেল রবিন।” আব্বু আমার দিকে অগ্নি মূর্তির দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে ছিলো সেদিন। আমি কাকে কী বলে বুঝাবো বুঝতে ছিলামনা। নন্দিতা তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলো।
আব্বু কিছু একটা আন্দাজ করে আমার অবাধ চলাফেরা বন্ধ করে দিলো। আমি নন্দিতার কোন খোঁজ নিতে পারছিলাম না। দুদিন রাতে লুকিয়ে বাগানে গিয়েও ওর জানালা বন্ধ পাই। কোন মোবাইল ফোন ছিলোনা আমাদের। হঠাৎ একদিন শুনি নন্দিতার মা ওকে নিয়ে কোথায় যেন চলে গিয়েছে। আমি পাগলের মতো হয়ে গেলাম। আমি এই প্রথম ওর কঠিন শূন্যতা অনুভব করতেছিলাম। মরে যাচ্ছিলাম যেনো। নন্দিতা আমার কতটা জোরে ছিলো তা যেন প্রতিটি নিশ্বাসে অনুভব করছি। ও আমাকে বলেছিল ওর বাবার বাড়ি কুষ্টিয়া আর মায়ের বাড়ি চট্টগ্রাম। আমি এখন কোথায় খুঁজবো?
প্রায় এক মাস হয়ে গেল একটা সময় আর পারলাম না, পাগলের মতো দিশেহারা হয়ে ব্যাগট্যাগ গুছিয়ে ওকে খুঁজতে বের হয়ে গেলাম। এই প্রথম বাড়ির বাইরে যাওয়া। রাস্তাঘাট কিছুই চিনিনা জানিনা। লোকাল বাসে করে রাত আড়াইটায় ঢাকায় আসলাম। একটা মসজিদে রাত কাটিয়ে ভোরে উঠে নামাজ পড়ে খুব কাঁদলাম। প্রথম কারো জন্য এতোটা কাঁদা। তারপর আরিচা ঘাট। তারপর কুষ্টিয়া পৌঁছাই তৃতীয় দিন। নন্দিতার বাবার বাড়িটা পেয়েও গিয়েছিলাম। গ্রামের অনেক ভিতরে, লক্ষীপুর গ্রাম। প্রায় পাঁচদিনের দিন খুঁজে পাই বাড়ি। বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি নন্দিতার বাবার একটা দাদা এখানে থাকেন আর কেউ নেই। ওনি নিজেও জানেন না নন্দিতার বাবা খুন হয়েছেন। ওনি দাঁড়ানো থেকে পরে গিয়েছিলেন আমার কথা শুনে। অনেকেই ভেবেছিলো আমি কিছু একটা করে ফেলছি ওনাকে। কয়েকজন আমাকে লাঠিসোঁটা নিয়ে দৌড়ানি দেয়। পেটে খাবার ছিলোনা। খুব কষ্টে একটা বাসে লাফিয়ে উঠে জান রক্ষা করি। বাস কোথায় যাবে নিজেও জানি না, ঘুমিয়ে পড়ি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে একটা স্টেশনে নামালো। ওঠে দেখি আমার ব্যাগ টাকা পয়সা সব চুরি গেছে।
পৃথিবীটা অন্যরকম লাগছিলো, একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম আমি। কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন। আমি কোথায় ছুটছিলাম জানিনা। শেষে দৌলোদিয়া লঞ্চ ঘাটে পুরোদিন কুলির কাজ করেছিলাম। সাড়ে তিন’শ টাকা ইনকাম করেছিলাম। জীবনের প্রথম আয়। আমার নন্দিতাকে খুঁজতে হবে। অনেকের কাছে সাহায্যও খুঁজেছিলাম। ওই টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম আমি। আমি চট্টগ্রাম নেমে ভুলেই গেছিলাম কি কারনে যেন আসলাম। আমার মাথায় তখন থেকেই এই ভুলে যাওয়ার সমস্যাটা শুরু হয়েছিলো। পরোটা, বিস্কুট, রুটি এসব খেয়ে খেয়ে বেঁচেছিলাম। ভাত নাই পেটে। চট্টগ্রামে ডানবাম খুঁজতেই কয়েকদিন কাটিয়ে ফেললাম। হাতে আর টাকা নেই। বাস স্ট্যান্ডে রেলস্টেশনে এসবে মাথা গুঁজে ঘুমাতাম। এভাবে কতদিন ছিলাম মনে হচ্ছে না। শেষে এক বিয়ে বাড়িতে ঢুকি পেটের খিদায়। হিন্দু বিয়ে।
বিয়ে তো বিয়েই, খাবার পেলেই হলো। আমার ময়লা পোশাকে কেউ চেয়ারে বসতে দিলোনা। আমি মাটিতে বসে পরলাম। একটা লোক মাটিতে একটা প্লেটে খাবার দিয়ে গেলো। মনে হচ্ছিলো আমি বহু বছর পর ভাত খাচ্ছি। ইচ্ছে মতো খেয়ে উঠে দাঁড়াতেই দেখি নন্দিতা। নতুন বউয়ের সাজে শুট পরা একটা লোকের হাত ধরে সবার সাথে পরিচয় হচ্ছে। আমি সামনে যাওয়ার সাহস পাইনি। আমি লুকিয়ে বের হয়ে আসি ওখান থেকে। মনে আছে চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড়ে দৌড়াচ্ছালাম আর কাঁদতেছিলাম। উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম আমি। তারপর এলাকার এক বড় ভাই আমাকে দেখে চিনে ফেলে। আর জানিনা কিছু। অনেকদিন সময় লেগেছিল আমি সুস্থ হতে। আম্মা পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলো আমাকে না পেয়ে। বড়ভাইটা নিয়ে আসছিলো আমায় সিলেটে। তারপর…
আবার পড়াশোনা এবং অবশেষে একটা চাকরী।
সতেরো বছর পর সেই নন্দিতা আজ আমার সামনের সিটে বসা। আমি আর কিছুই জানতে চাই না। জার্নিটা আমার ভাল্লাগছে না। খুব অশান্তি লাগছে। নন্দিতা ওড়না চেপে চেপে কাঁদছে বুঝা যাচ্ছে। আমি ওসব দেখতে চাচ্ছিনা। এসব আমি নিতে পারি না। সকাল হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে ট্রেন থামলো। ব্যাগটা কোনরকম হাতে নিয়েই নেমে হাঁটা শুরু করলাম দ্রুত। পেছন থেকে নন্দিতা ডাকছে আমাকে, “রবিন একটু শোনো প্লিজ।”
ডাকুক। দ্বিতীয় কোন অধ্যায় আর শুরু হবেনা।