আঁকা বাকা

আঁকা বাকা

নাইট গার্ডের চাকরীটা পাওয়ার পর যেন রাতের সময়টাই যাই না।তাই ৮ বছর পর ফেসবুকে আবার আগমন।এই টাইমটা না হয় ফেসবুকেই দিই।”মাহবুব রহমান” নামের একটা আইডি খুললাম।রিলেশনশিপ এ ম্যারিড দিয়ে রাখলাম।শৈলির সাথে ৫ বছর হয়েছে বিয়ে হয়েছে কিন্তু ততটা বনাবনি নেই আমাদের মাঝে।আমি তাঁকে কখনও স্ত্রী হিসেবে মেনেই নিতে পারিনি।

ফেসবুকের নীল সাদার দুনিয়ায় কিছু চেনা মানুষের সাথে আবার দেখা হল।চলছে কোনভাবে,কারো সাথে চ্যাটিং করে অথবা নিউজফিডে বারবার চক্কর দিয়ে। একদিন যেন এই নীল সাদার দুনিয়ায় এসে চোখগুলো থমকে গেল।একটা সাদা মুখের ছবি।যা এক সময় আমাকে ভাবাতো।একটা মায়াবী মুখ যা দেখার জন্য সবসময় সাইকেল নিয়ে ছুটতাম হাওয়ার সাথে।people you may তে যে তাঁকে দেখবো কখনও আসাই করিনি।কাঁপাকাঁপা হাতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটা যেন পাঠালাম।সেও এখন মেরিড।প্রোফাইল পিকে তাঁর স্বামীর হাতে হাত রাঁখা একটা ছবি দিয়েছে।সাথে রয়েছে ৫ বছরের একটা অতি সুন্দর ছোট মেয়ে।

ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে থাকতেই তাঁকে আমার চোখে পড়ে।খুবই যেন ভালো লেগে যায়।খুবই নম্র স্বভাবের ছিল বিধায় আমার যেন আরো ভালো লেগেছিল তাঁকে।তাঁর নামটাই বলি।কল্যাণী ছিল এই অতি সুন্দরী নম্র ভদ্র মেয়েটার নাম।
একটা বছর শুধু তাঁর দিকে চেয়েই থাকতাম আর কল্যাণীর স্কুল ছুটির পর সাইকেলে করে তাঁর পিছু নিতাম।আবেগ আর ভালোবাসায় ভরপুর ছিল যেন জীবনটা।

একদিন সাহস করে তাঁর চলার রাস্তায় একটা চিঠি ফেলে দিয়ে সাইকেল নিয়ে চলে গেলাম।তাঁতে লিখেছিলাম,ভালোবাসি। পরেরদিন মেয়েটা স্কুল বাসে উঠার আগে হঠাৎ করে আমার পাঁয়ের সামনে কিছু একটা ছুড়ে মারল।এটাও যে একটা চিঠি।এভাবেই বারংবার চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমেই যেন একে অপরকে ভালোবেসেছিলাম।খুব ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই সব পাল্টে গেল।বাবা মারা গেলেন।ঘরটা ছাড়তে হল কারণ বাবার অফিস থেকে এই ঘরটা থাকার জন্য দিয়েছিল।চলে গেলাম মামার বাসায়।তাড়াহুড়ায় কল্যাণীকে জানাতেও পারেনি।অথচ কল্যাণীর ঘরের সামনে দিয়েই যেতে হয়েছিল আমায়। আমি কল্যাণীকে অনলাইনে দেখে নক করলাম।

:কেমন আছো?
:সীন বাট নট রিপ্লাই??
:কেমন আছো??
:ভালো কিন্তু কে আপনি??

কল্যাণী আমাকে চিনলো না।কিন্তু প্রোফাইল পিকে আমার সেই আগের তোলা পার্সর্পোট সাইজের ছবিটা।হয়তো চিনেও না চিনার ভান করলো।অনেক বর্ণনা দেওয়ার পর চিনলো আমায়।টুকি-টাকি কথা হলো সেই রাতে।
কল্যাণীর কথা:- অনেক দিন পর সেই মানুষটাকে দেখলাম।ফেসবুকেই দেখা হলো যেন।প্রথমে না চেনার ভান করলাম।কিন্তু বাধ্য হয়ে তাঁকে চিনতেই হল।সেই চোখগুলো যেন এখনও আমাকেই টানে।প্রোফাইলে দুই সন্তানের সাথে কিছু ছবি দেখলাম।কিন্তু স্ত্রীকে দেখতে পেলাম না।না চাইতেও যেন কথা বলতে হলো।ভালোবাসার মানুষ যে ছিল একসময়।কিন্তু সে সত্যিকারের ভালো না বাসলেও আমিতো বেসেছি। যখন শুনলাম তার বাবা মারা গেছে তখন যেন খুবই খারাপ লেগেছিল।এর চেয়ে বেশি খারাপ লেগেছিল এখান থেকে তার মামার বাড়ি চলে যাবে শুনে।ভেবেছিলাম যাওয়ার আগে দেখা করবে কিন্তু নাহ,দেখাটাও পর্যন্ত করলো না।স্বার্থপর একটা।

বাসার জানালার ধারেই বসে ছিলাম আমি তার চলে যাওয়া দেখেছিলাম।আমার বাসার দিকে যেন একবারও তাঁকালো না। ভেবেছিলাম আমাকে দেখার জন্য হলেও মামার বাড়ি থেকে একবার আসবে।তিন বছর অপেক্ষা করেছিলাম।এসেছিল কিন্তু বিবাহ করার পর।নিজের ভালোবাসাটাকে খুন করার পর।মোটর বাইক নিয়ে আমার বাসায় এসেছিল।আমার রুমটাতেও এসেছিল।কিন্তু লুকিয়ে গিয়েছিলাম বেলকনির পর্দার আড়ালে।এই বিশ্বাসঘাতককে দেখতেও চাই না আমি। দুজনার কথা:- এখন প্রতি রাতেই যেন কল্যাণীর সাথে আমার কথা হয়। একদিন চ্যাটে কথা বলার সময় হঠাৎ বলে উঠলাম,

:আচ্ছা কল্যাণী,আমি যখন তোমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম দেখা করলে না কেন??
:আমি ঘরে ছিলাম না।
:হুম,তাইতো তোমার ব্যালকনির পর্দার পেছনে কোন নারীর অবয়ব দেখেছিলাম।
:বিয়ে করার পর তার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে দেখা করতে আসলে দেখা না করাটাই স্বাভাবিক।
:wait….wait…আমি সেই সময় বিয়েই করিনি।আমিতো তোমার মা-বাবার কাছে তোমার হাতটা চাইতে এসেছিলাম।উনারাই তো বললেন তোমার বিয়ে হয়ে গেছে।

:মিথ্যা,আমিতো তখন বিয়েই করিনি।তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।মা তো বলল,তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। দুই জনেই কিছুক্ষন চুপ।এতদিনের মনের ব্যাথাটা যেন আরেকটু বাড়লো।নিয়তিই যেন তাদের এই পথ চলার সাথী ছিল না।বিধাতাই যে এই খেলাটা খেলেছেন তাদের সাথে।বিষন্ন মনে দুইজনাই এক সময় ঘুমিয়ে গেল।

জীবনটা এমনই। কখনও কখনও ভুল বুঝাবুঝির জন্যই যেন এমন সর্ম্পকগুলো নষ্ট হয়।কল্যাণীর মাকে আমি দোষ দেব না।কোন মা কে আমি অপরাধী ভাবি না।মা সবসময় সন্তানের কল্যাণের কথা চিন্তা করেন।কল্যাণীর ভালোর জন্য হয়ত তিনি এমনটা করেছেন।আর পুরো খেলটা খেলেছেন বিধাতা।রেলওয়ের লাইনের মত জীবনটা যেন এভাবেই চলতে থাকে।একসময় এই লাইনগুলো একে অপরকে ছেদ করে চলে যায় বহুদূর। জীবটা এমনই,জীবনটা অসমান্তরাল,জীবনটা আঁকাবাঁকা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত