রিমি সবচেয়ে বোকা মেয়ে। এমন তার বন্ধুদের ভাবনা। বলাটাই স্বাভাবিক। গাছের মতো নিশ্চুপ সকল অত্যাচার সহ্য করে সে। জীবনে বাঁচতে হলে যেমন নিজ অধিকার টা আদায় করে নেওয়া দরকার তেমন নিজের উপর অন্যায় হলে তার প্রতিবাদ করা দরকার। যা সে একেবারেই করেনা। নিজ দোষে কষ্ট পেলে অন্যে কি বা করবে?? রিমি অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী। তবুও বোকার খাতায় তার নাম আছে। নিজেই আবার নিজেকে বলে সে “তুই কি মানুষ?? নাকি পাথর? পাহাড় নাকি বৃক্ষ? ” উত্তর তার অজানা।
সে নিজেকে মানবদরদী ভাবে কিন্তু সে তা নয় সে আসলেই বোকা। রিমির পরিচয়টা দি। সে একটা ছোট পরিবারের বড় সন্তান তার বোন তার আড়াই বছরের ছোট। সে তার বোনকে অনেক ভালোবাসে। তার বোনের নাম রিতা। রিতাও তার বড় বোনকে অনেক ভকলোবাসে। ছোটবেলা থেকেই দু বোন একে অপরকে অনেক ভালোবাসে। রিমি বোকার মতো মার খায়, কথা শুনে কিন্তু প্রতিবাদ করতোনা বলে রিতাই তার হয়ে অন্যের সাথে ঝামেলা করতো।
এক সময় রিতার জীবনে তার ভালোবাসা আসে। বড়ি বোন হিসেবে রিমি তাকে নানা ভাবে বাধা দেয়। এই বাধা দেওয়াই যে দু বোনের সম্পর্ক এর কাল হবে তা কি করেই বা রিমি জানতো?? রিতার এখন যথেষ্ট বিরক্ত লাগে রিমির চলাফেরা, কথা। রিতা এখন আর রিমির সাথে গল্প করেনা, আড্ডা দেয় না, কাছে ঘেষতে চায় না, খুব কম কাছে আসে তাও তার স্বার্থ উদ্ধার করতে। কাজ শেষে আবার রিমিকে যেনো ছুড়ে ফেলে আবর্জনার মতো। পাথর আর নির্বাক রিমি সব মেনে নেয়। দু চোখ গড়িয়ে জল আসে রিমির। কিন্তু তার যে কাঁদতে মানা। কি বা বলবে সে লোককে?? কার নামেই বা বলবে??
প্রায়ই রিতা রিমির গায়ে হাত তোলে, কখনো খুব রেগে গেলে লাথি দেয়। একদিন রিমি সেই ছেলের কথা তুলতেই রিতা রেগে গিয়ে খুব জোরে লাথি দেয় রিমির তলপেটে। আড়ালে গিয়ে ব্যাথায়, যন্ত্রণায় কাদে রিমি। তবুও মুখ খুলেনা। আরো একদিন তার মা এর কাছে ছেলেটার কথা বলে দেওয়ায় অন্য রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকে রিমির গলা টিপে ধরে রিতা। কোনো ভাবে বাঁচিয়ে নেয় রিমি নিজেকে। তবুও সে কিছুই বলতোনা। এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে গভীর যন্ত্রণায় ভুগতে ভুগতে সে ভুলে যায় জগতটাকে। ধিরেধিরে সে নিজেকে একা করে ফেলে। শেষ বার রিমি একদিন রেগে গিয়ে রিতার গলা টিপে ধরতেই রিতা রিমির ভুকে সজোরে লাথি দেয়। তবুও রিমি কিছুই বলতে পারেনি শুধু এটুকুই বিলেছিলো “আজ থেকে তোর আর আমার সম্পর্ক শেষ “।
এভাবে ডিপ্রেশড ছিলো রিমি একাকিত্বতা নিয়ে। সে চাইতো খুব কেউ আসুক তাকে উদ্ধার করুক এ কষ্ট থেকে ভালোবাসা দিয়ে। যা আজ বিলিন রিমির জীবন থেকে। সে চাইতো কেউ আলতো করে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে, তাকে অনেক ভালোবাসবে ভুলিয়ে দিবে অতীত টাকে। সে অপেক্ষা করতো সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য। আর এ সব স্বপ্ন লিখে রাখতো তার ডায়েরীর পাতায়।
গত সপ্তাহে সে কলেজ যাচ্ছিলো। বোনের আর পরিবারের কথা ভাবতে সে মগ্ন। “কি ছিলো আমার অন্যায়? আমি কি আসলেই খুব খারাপ?? কেনো এত দূরত্ব তবে পরিবার এর সাথে?? আমার বাচ্চামি, নিরবতা, আমার উপস্থিতিতে কি সবাই খুবই বিরক্ত?? তবে কি করা উচিত আমার?? ” যখন সে তার ভাবনায় মগ্ন। পেছন থেকে একটা কিছু এসে খুব জোরে ধাক্কা দেয় রিমিকে। সে উপলব্ধি করতে পারে সে মাটিতে লুটিয়ে গেছে। চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে , মাথা আর মুখ দিয়ে রক্ত। বাকশক্তি নেই তার। কথা বলার ইচ্ছেও নেই।
লোকজনের ভিড় জমলো সবাই তাকে হাসপাতালে নিতে ব্যস্ত। লোকজনের ভিড়ে একজনকে ইশারায় ডেকে কাছে এনে বললো ” আমায় মরতে দিন। এটা আত্মহত্যা নয় এক্সিডেন্ট তবুও আপনজন কাছে থেকে ও দূরে চলে যাওয়ার কষ্টর চেয়েও আজ মৃত্যুর পথযাত্রী আমি মৃত্যুকে আলিঙন করতে চাই এ কষ্ট আপনজনদের দূরে সরে যাওয়া দেখার কষ্টের চেয়েও অনেক মধুর ”
তার কথা শেষ হয়নি হয়তো তখনো কিন্তু লোকটা দেখলো অশ্রু ভেজা চোখ নিস্তব্ধ হয়ে যেতে। প্রাণ থাকা কালিন জীবিত লাশটাকে প্রাণহীন হতে। হ্যা সে লোক আমি। আমি ফাহমিদ। গত সপ্তাহে রিমির শেষ কথা শুনেছিলাম। তাকে আমি চিনতাম না। সে আমার কেউই হয় না। তবে তার সেই চেহারা, সে চাহুনি আর বলে যাওয়া কথায় অনেক রহস্য ছিলো।
তাই তার যাওয়ার পর আমি ঘুমোতে পারিনি শান্তিতে। তার সম্পর্ক এ জানতে উঠে পড়ি। তার পরিবার এর সাথে কথা বলার সাহস পাইনি। তার মা জীবিত লাশ হয়ে আছে আর বাবা সেদিনই স্ট্রোক করে মারা যায় যেদিন রিমির মৃত্যুর সংবাদ তার কানে পৌছায়। তাই তার বন্ধুদের সাথে আলাপ করি। সব জেনে এটুকু আবার প্রমাণ পেয়েছি ” দাত থাকতে আমরা কেউই দাতের মর্ম বুঝিনা।”
সবার প্রিয় মানুষ আজ লাশ। কিছুদিন আগেও যার নাম ধরে ডাকা হতো আজ তাকে বলা হয় লাশ। একটা প্রশ্ন আমায় বেশি ভাবায় সে কি এক্সিডেন্ট এর পর লাশ হয়েছিলো?? নাকি জীবদ্দশায় আপনজনের অবহেলায়?? আমাদের উচিত আপন-পর, ভাই-বোন, মা-বাবা, বন্ধু -প্রতিবেশী সবার সাথে সম্মান আর ভালোবাসার সাথে চলা। কে জানে কার কথা কবে শেষ কথা হয়? কার নাম কবে লাশ নামে পরিচিত হয়?