অদ্ভুত সম্পর্ক

অদ্ভুত সম্পর্ক

চৈত্রের উত্তপ্ত রোদে ছাতা ছাড়াই হাটতেছে সাকিব।এক হাতে ২টা স্থিরচিত্র আরেক হাতে একটা চিঠি। ঘেমে অবস্থা খারাপ তবু যেনো কোনো অনুভুতি নাই ওর। রোবটের ন্যায় হেটেই চলেছে। অবশেষে শফিক চাচার চায়ের দোকানে দাড়ালো। বসেই একের পর এক ২ গ্লাস পানি পান করলো।

শফিক চাচা-” ভাতিজা কি হইলো?কোনো সমস্যা?” সাকিব চুপ করে জোড়ে জোড়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলতেছে।

শফিক-” শরীর ঠিক আছে তো বাবা?”
সাকিব-” চাচা আমি ঠিক আছি। আচ্ছা চাচা আমি যাই।আর পানির জন্য ধন্যবাদ।”

এই বলে আবার আবার হনহনিয়ে হাটা শুরু করলো। ১০মিনিট হাটার পর বাড়িতে প্রবেশ…

সাকিবের মা-“কিরে তরে এমন দেখাইতেছে কেন?”
সাকিব-“কেমন?”
সাকিবের মা-“দেখে মনে হচ্ছে তর শরীর খারাপ।চোখ দুটো লাল। কি সমস্যা বাবা?”
সাকিব-“কিছু না, খেতে দাও খিধা লাগছে।”
সাকিবের মা-“গোসলটা করে নে, ঘেমে তো শেষ তুই।”
সাকিব-“পরে করবো, ভাত দাও।”

ভাত খেয়ে গোসল না করেই আবার বেরিয়ে পরে সাকিব।হাটতে হাটতে বটতলায় গিয়ে বসে।কতক্ষণ হাতের ছবি দুটা দেখে আবার কতক্ষণ চিঠিটা পরে।

চিঠিটা টিনা তার ছোট ভাইকে দিয়ে পাঠিয়েছে। টিনার আর সাকিবের প্রেমের সম্পর্ক দেড় বছরের।টিনা এইবার এইচএসসি দিসে আর সাকিব ২০১৬ তে এইচএসসি পাস করেই পড়া ছেড়ে দিয়ে একটি মুদির দোকানে কর্মচারীর চাকরি করা শুরু করে। পড়ার সমাপ্তি আর চাকরি নেওয়ার কারন ছিলো পরিবারের দারিদ্রতা। আবার টিনার পরিবারও তেমন স্বচ্ছল না।বলতে গেলে একই অবস্থা। সব কিছুই ভালোই চলতেছিলো দুজনের হঠাৎ এই চিঠি পেয়ে দিশাহারা হয়ে পরে সাকিব।

গতকালও টিনার সাথে দেখা হয়েছিলো সাকিবের তখনও তো সব ঠিক ছিলো। চিঠির মাধ্যমে টিনা এটা জানিয়েছে যে “আমাদের সম্পর্ক আর আগানো সম্ভব না।এখানেই ইতি টানতে হবে। মামা আমার জন্য বিরাট ব্যবসায়ী এক পাত্র দেখেছেন। যদিও পাত্রের বয়স অনেক তবে অনেক টাকা আছে।আমাদের পরিবারের দুর্দশা কিছুটা হলেও কমবে। তুমাকে দুটো ছবি দিলাম। একটা তুমার যা আমার কাছে ছিলো আর আরেকটা পাত্রের।তুমার কাছে আমার ২টা ছবি আছে সেগুলো ছিড়ে ফেলবে নয়তো ফেরত দিবে।আর আমার জন্য দোয়া করবে।দাওয়াত সবাইকে দেওয়া হবে তুমিও আসবে। ”

সাকিব বুঝতেছিলো না কি হচ্ছে এসব। নিজের ভাগ্যকে দোষ দিবে নাকি লোভী মেয়েটাকে। সম্পর্ক শেষ করার বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই ওর লিখায়। ছবিটা দেখলো পাত্র ওর দোকানেরই মালিক। বুঝতে বাকি রইলো না কিছু। “টিনা কি তবে দোকানে আমার জন্য আসতো নাকি আমার মালিককে মুগ্ধ করতে আসতো? আমি অনেক বার জানতে চাইছি দোকানে এতো সেজেগুজে আসো কেন? উত্তরে হাসিমুখে বলতো তুমার জন্য।আর আমি বোকা সেটা বিশ্বাস করে নিতাম।” একথা বলতে বলতে বাড়ি ফিরলো সাকিব। ঘরে ডুকেই টিনার ছবি দুটো সহ হাতের ২টি ছবি ছিড়ে ফেলে দিলো। পরদিন দোকানে যেতেই মালিক বললো “সাকিব আমার তো আগামী শুক্রবার বিয়ে। এই কদিন তুই দোকানটা সামলা আমার তো অনেক কাজ। আর শুক্রবারে দোকান বন্ধ থাকবো তুই সকাল সকাল চলে আসবি বাড়িতে।”

সাকিব-” ভালোই তো ভাই।তা ভাবী কোন গ্রামের?(জেনেও না জানার ভান করে)”
মালিক-” আরে ঐ যে আমাদের দোকানে একটা মেয়ে আসতো সেজেগুজে তোদের গ্রামেরই তরে তো চিনে ও। বললো গ্রামের চাচাতো ভাই হস।”

সাকিব-“জ্বি চিনছি।আচ্ছা শুভ কামনা ভাই”। মালিক চলে যাওয়ার পর ব্যাস্ত হয়ে পরে সাকিব।

শুক্রবার বিয়েতে অনেক পরিশ্রম করতেছে সাকিব।মনে হচ্ছে না ওর প্রেমিকার বিয়ে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে বর কনের কাছে গেলো সাকিব। টিনা মাথা নিচু করে বসে মুচকি হাসতেছে মালিকের বন্ধুদের কথা শুনে। আমি মালিককে জিজ্ঞাস করলাম “ভাই আপনারে আজ থেকে কি ডাকবো? ভাই নাকি দুলাভাই?” টিনা বড় বড় চোখ তুলে থাকালো। মালিক-“হ তরে আজ থেকে শালা বলেই ডাকুম। দুলাভাই বলতেই পারিস হাজার হোক আমার বউ এর গ্রামের চাচাতো ভাই তুই”। সাকিব হেসে উত্তর দিলো “হ ভাই উনি আমার সম্পর্কে বোন লাগে বোন।”

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত