চমক

চমক

প্রায় ১৫ মিনিট ধরে রেস্টুরেন্টে একা একা বসে আছি।। ১৫ মিনিটে ২ টা কোল্ড কফি খেয়েছি। আমার ঠান্ডা খাওয়া বারণ। গলা অলরেডী ব্যথা শুরু হয়েছে। নিজের উপরেই রাগ লাগছে। কেন যে মায়ের চাপে পরে আসতে গেলাম কে জানে।। ধূর, বিয়েটা তো এমনিতেও করবনা। এত তাড়া কিসের সেটাই বুঝে পাইনা। আমি কেবল অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ছি। আমার বয়স সবে মাত্র ২১ বছর। এখনি বিয়ে করতে চাইনা। প্ল্যান আছে অনার্স এটলিস্ট শেষ করে বিয়ে। কিন্তু ইদানিং বাড়িতে খুব বিয়ের প্রপোজাল আসছে এবং সবই ভীষণ ভালো ভালো। না করার কোন কারণ নেই। অনেক কষ্টে আগের ৩-৪ টা বাতিল করেছি। দেখা করতেই যাইনি। কেন যাব?? একে তো বিয়ে করতে চাইনা এখন, তার উপরে আমার বয়ফ্রেন্ড আছে৷

আমার বয়ফ্রেন্ডের নাম আসিফ মাহমুদ। আসিফের সাথে আমার ৩ বছরের সম্পর্ক। আসিফ একবছর হল এম.বি.এ শেষ করেছে। এখন জবের ট্রাই করছে। এর মধ্যে ৩-৪ টা পরীক্ষার প্রিলিতে পাসও করেছে। প্রাইম ব্যাংকে তো রিটেন পাস করে ভাইভা দিয়ে এসেছিল। ভেবেছিলাম অর চাকুরী টা হলে বাড়িতে জানাবো আমাদের সম্পর্কের কথা৷ কিন্তু চাকুরীটা না হওয়াই জানানোর সাহস পাইনি।

যাই হোক, বয়ফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও দেখা করতে এসেছি। না এসে উপায় ছিলনা। ছেলেটা নাকি খুবই ভালো। সব দিক থেকেই ভালো। মা বাবা বলেছে তুই শুধু একবার দেখা করে আয়। বিয়ে পরের ব্যাপার। দেখা করলেই বিয়ে হবে এটা কোন কথা না। বাবা -মার জোড়াজুড়িতেই দেখা করতে আসা। আমি অবশ্য ঠিক করেই রেখেছি ছেলেটাকে দেখে কোন একটা খুঁত বের করে রিজেক্ট করেই দেব। কিন্তু তাঁর তো পাত্তাই নেই।আমি ১৫ মিনিট ধরে একা একা বসে আছি। কিন্তু সেই ভদ্রলোকের আসার নাম নেই।

হঠাৎই সাদা শার্ট পড়া এক ভদ্রলোক আমার টেবিলের দিকে এগিয়ে এসে আমাকে সালাম দিল। সালামের উত্তর টা একটু বিরক্ত হয়েই নিলাম। লোকটা বেশ পরিপাটি হয়ে এসেছে। বুঝতে পারলাম ইনিই সেই লোক। উনি আমার সাথে পরিচিত হল, ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করল। দেরি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে লাগল। আমি বিরক্ত নিয়েই তার কথা গুলো শুনতে থাকলাম। ৪-৫ মিনিট কথা বলেই ওয়েটারকে ডেকে বললেন, সব কি রেডি আছে যেমন টা বলেছিলাম? ওয়েটার পজিটিভ উত্তর দিয়ে আমাদের কে ভেতরের দিকে রিজার্ভ টেবিলে গিয়ে বসতে বলল।
আমি আপত্তি করলাম কারণ আমি ওনার মতলব টা বুঝতে পারছিলামনা। অবশেষে মনে হাজারো খটকা থাকা সত্ত্বেও ওনার জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়ে গেলাম। ওখানে গিয়েই চমকে গেলাম। ছোট্ট রুমের মতো। পুরোটাই খুব সুন্দর করে সাদা আর নীল বেলুন দিয়ে সাজানো। টেবিলের উপর খুব সুন্দর একটা কেক রাখা আছে।  মি. রাসেল আমাকে জন্মদিনের উইশ করলেন। আমার চোখে পানি চলে এল। কারণ আজ আসিফ আমাকে উইশ করেনি। ওর ফোন কাল রাত থেকেই অফ। অথচ এই অপরিচিত লোকটি এভাবে সারপ্রাইজ দিচ্ছে? কিছুই মাথায় ঢুকছেনা। মি.রাসেল আমাকে বললেন –  খুশি হয়েছেন আপনি??

– আমি বললাম, জানিনা। তবে অবাক লাগছে খুব। আপনি কি করে জানলেন আমার জন্মদিন ??
– বাহ্ রে আজ বাদে কাল যে আমার বৌ হবে তার জন্মদিন জানবনা??

রাসেল হঠাৎ টেবিলের নিচে একটা বড় প্যাকেট থেকে একটা গোলাপের তোড়া বের করে দিল।  আমি এইবার কেঁদেই ফেলেছি। আমি আসিফকে খুব ভালোবাসি। এসব তো আসিফও করতে পারতো। তাছাড়া আসিফ আমাকে কখনো লাল গোলাপের তোড়া দেয়নি। কত্তবার চেয়েছি তাও দেয়নি। অন্য একটা ছেলের থেকে এত কিছু গ্রহন করতে পারবোনা।মি. রাসেল আমার চোখে পানি দেখে আমাকে বললেন-

– একি, আপনি কাঁদছেন কেন? খুশি হননি? খুশি করে দিব আপনাকে?

– মানে কি? কি বলছেন?

– জী একদম ঠিক বলছি। আপনি ১ মিনিট দাঁড়ান, আমি ৩ মিনিটে আপনাকে খুশি করে দিচ্ছি।।

আমাকে কিছু বলার চান্স না দিয়েই তিনি বাইরে গেলেন। ৩-৪ মিনিট পর উনি ফিরে এলেন, কিন্তু একা না আসিফ কে নিয়ে। কিছু বোঝার আগেই ২ জন একসাথে বলে উঠল – সারপ্রাইজ!!  আমি ভূত দেখার মতোই চমকে গেলাম। আমি বললাম – এসবের মানে কি?? আসিফ বলল মানে টা ক্লিয়ার করে দিচ্ছি আগে চোখ টা বন্ধ কর।  আমি চোখ বন্ধ করলাম। আসিফ আমার হাতে একটা খাম দিল। আমি খুলে দেখলাম আসিফের এপয়েন্টমেন্ট লেটার। প্রাইম ব্যাংকে ওর জব হয়ে গেছে। আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারলামনা । আসিফকে জড়িয়ে ধরে আবেগে কান্না করে দিলাম। আর মি. রাসেল আমাকে বললেন- বৌমনি, এই অধম দেবরের দিকে একটু নজর দেন।  আমি আসিফ কে ছেড়ে দিলাম। আসলে ৩য় একজন আছে এইটা ভূলেই গিয়েছিলাম। আমি অবাক হয়েই বললাম দেবর মানে??

দুজনই হেসে আমাকে সবটা বলে দিল। আসিফ এপয়েন্টমেন্ট লেটার পেয়েছে একসপ্তাহ আগে। কিন্তু আমাকে বলেছিল রেজাল্ট হয়েছে, কিন্তু ওর চাকুরী হয়নি। এদিকে ও দুজনের ফ্যামিলিতেই আমাদের সম্পর্কের কথা জানিয়েছে। আপাতত ইনগেজড করে রাখাতে চায়। তারপর ৬-৭ মাস সময় নিবে নিজেকে গোছানোর জন্য। তারপরে বিয়ে। আর এত সব কিছু শুধু আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। আর রাসেল ভাই আসিফের খুব ভাল বন্ধু। আমি ওনাকে আগে দেখিনি তাই চিন্তে পারিনি। যাই হোক, এরকম সারপ্রাইজ যে পাবো এইটা কল্পনা ও করিনি। এরপর বেশ কিছু সময় লাগল ঘোর কাঁটতে৷ ঘোর টা অবশ্য রাসেল ভাইয়ের কথাতেই কেটেছে। রাসেল ভাই বললেন- বৌমনি, অনেক হয়েছে এবার কেক টা কাটেন। তবে কেক কিন্তু আগে আমাকে খাইয়ে দিতে হবে। আমি হেসে বললাম অবশ্যই ভাইয়া। আপনারইতো আগে পাওয়া উচিৎ। আপনি হলেন দে+বর। তাই নয় কি?? আসিফ, রাসেল ভাই দুজনের মুখেই হাসি। কেক কাটতে গিয়ে দেখলাম ছুরি নেই। আমরা ৩ জনই একসাথে হেসে উঠলাম।।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত