আকাশে হালকা মেঘ বৃষ্টির জানান দিচ্ছে। এক্ষুনি হয়ত ঘন বর্ষণ পুরো ধরনীকে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে। এই মেঘের ফাকেঁ কৃষ্ণপক্ষের চাদঁ উকিঁ দিচ্ছে। বৃষ্টি আর জোৎস্যার এই অভুতপূর্ব মিলন খুব একটা দেখা যায় না। মেঘলার খুব ইচ্ছা করছে আসিফ কে ডেকে ছাদে গিয়ে জোৎস্যার মধ্যে বৃষ্টিবিলাস করতে। সম্পর্কটা তো ওনেক আগেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। আজ ওকে পুরোপুরি মুক্ত করার আগে এই শেষ ইচ্ছেটা তো পুরণ করাই যায়। ভেবেই বারান্দা থেকে রুমে গেল ও। আসিফ ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থায় কি অদ্ভুত সুন্দর লাগে ওকে মনেই হয়না ও কাউকে এভাবে ঠকাতে পারে। মেঘলা কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল। এমন বহুরাত মেঘলা না ঘুমিয়ে শুধু আসিফের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কাটিয়ে দিয়েছে। তখন সম্পর্কটা মরে যায়নি। ভালোবাসায় পরিপুর্ণ ছিল।
আর আজ ভেবেই একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে হাত বাড়িয়ে আসিফকে ডাকল ও। হুরমুর করে উঠে কিছুক্ষণ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল আসিফ ওর দিকে। এটা আসিফের একটা অভ্যাস হঠাৎ কেউ ঘুম ভাঙালে এভাবেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকবে। আজ এত কষ্ট না থাকলে ওর এই কান্ডে ঠিকই হেসে ফেলত মেঘলা। ওর কাধেঁ হাত দিয়ে দুইবার ঝাকুনি দিতেই ধাতস্থ হলো আসিফ। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল ও। মেঘলা সেজেছে। লাল শাড়ি, লাল টিপ,খোলা চুল, চোখে কাজল আর আসিফের সবথেকে পছন্দ গাড়ো লাল লিপস্টিকে রাঙা ঠোটঁ। কিন্তু আজ কেন? শেষ সময়ে এই নাটকের মানে কি? মেঘলা কি বোঝেনি এখন ওর এই সাজ আর টানেনা আসিফ কে? আসিফ তো এখন অন্য কারো মধ্যে ডুব দিয়েছে।
মেঘলার এই সামান্য সাজ ঐ চড়া পারফিউমের পাগল করা সুগন্ধ, পশ্চিমা পোশাক, উচুঁ করে বাধাঁ চুল, ভারি মেকাপ আর হাইহিলের সুন্দর খট খট আওয়াজের সামনে কিছুই না। আসিফের প্রশ্নভরা দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মেঘলা বলল, সম্পর্কটা তো শেষই। আজ শেষ বারের মত কিছু চাইছি প্লিজ না করোনা। তোমার সাথে বাইরের ঐ জোৎস্যা দেখা আর বৃষ্টিতে ভেজার লোভ কিছুতেই সামলাতে পারছিনা। শেষবারের মতো এই ইচ্ছেটা পুরণ করো। আসিফ বুঝতে পারছেনা কি বলবে। মাঝরাতে এসব যন্ত্রণা তার একদমই সহ্য হচ্ছেনা। কিন্তু মানা করলে পাছে আবার ডিভোর্স দিতে অস্বীকার করে তাই সাত পাচঁ ভেবে শেষে বলল, ঠিক আছে চলো। মেঘলা আসিফের হাত জরিয়ে ধরল। ইতিমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। মেঘলা আসিফের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,আমাকে আগের মতো কোলে করে ছাদে নিয়ে যাবে হাটতে ইচ্ছা করছে না।
কিছুক্ষণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে থেকে আসিফ তাই করল। ছাদে এসে মেঘলা বাচ্চাদের মতো ভিজতে শুরু করল। আসিফ না চাইতেও মেঘলার দিকে তাকাচ্ছে বারবার। লাল জর্জেটের শাড়ি মুহুর্তেই ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে, খোলা চুল গড়িয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে মোহনীয় সে রুপ। মেঘলা পুরো ছাদ ঘুরে ঘুরে ভিজছে। আসিফের চোখও অটোম্যাটিকলি মেঘলার সাথে ঘুরছে। হঠাৎ মেঘলা আসিফের দিকে এগিয়ে এল। কাছে আরো কাছে এতো কাছে যে ওদের দুজনের মাঝে হয়তো একটা চুলেরও জায়গা অবশিষ্ট নেই। মেঘলার ভেজা শরীরের মোহনীয় রুপ আগেই আকর্ষিত করেছিল আসিফকে। এখন মেঘলার লিপস্টিকে রাঙা ভেজা ঠোট এত কাছে পেয়ে নিজের পুরুষ প্রবৃত্তিকে আর সামলাতে পারলনা আসিফ। মুহুর্তেই ঠোটজোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিল ও। এক মুহুর্ত থেমে ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দিল মেঘলা ওকে। সাথে সাথেই একদলা থুথু ছুড়ে মারল ওর দিকে। মেঘলার আকস্মিক এই ধাক্কায় হকচকিয়ে দুরে সরে দাড়ালো আসিফ। মেঘলা হঠাৎ জোড়ে হেসে উঠল। সে হাসিতে আসিফের বুক কেপেঁ উঠল। হাসি থামিয়ে মেঘলা বলল,হায়রে পুরুষ। আজ যদি নিজেকে সামলাতে পারতে তাহলে কাল ভোরের সুর্যটা ঠিকই দেখতে পেতে।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুকে প্রচন্ড জ্বালা অনুভব করল আসিফ। মনে হচ্ছে বুকের ভেতর কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। হাত পাও অবশ হয়ে আসছে। পড়ে যাওয়ার আগে করুণ দৃষ্টিতে একবার মেঘলার দিকে তাকালোও। তার পর গলা দিয়ে গলগল করে রক্ত পরতে লাগল। ওভাবেই তাকিয়ে থেকে ছটফটানি বন্ধ হয়ে গেল ওর। বৃষ্টি থেমে গেছে ধীরে ধীরে আসিফের কাছে গেল মেঘলা। ঘুমের ওষুধের রিয়াকশন শুরু হয়ে গেছে তাই হালকা টলছে ও। আসিফের কাছে গিয়ে হাটু মুড়ে বসল ও। খোলা চোখ দুটো বন্ধ করে দিয়ে শাড়ির আচল দিয়ে আসিফের মুখে লেগে থাকা রক্ত মুছিয়ে দিয়ে বলল,তোমাকে এতটা ভালোবাসার পর ঘৃণা করে বেচেঁ থাকা অসম্ভব ছিল কিন্তু আমি একা মারা গেলে তোমার দেওয়া ধোকার শাস্তি কে দিত তাই এত যন্ত্রণা দিয়ে মারলাম। মনে আছে একবার বলেছিলাম তোমার বুকে মাথা রেখেই মরতে চাই আমি। সেদিন তুমি খুব কেদেঁছিলে আর বলেছিলে আমার আগে যেনো তোমার মৃত্যু হয়। আমি দুজনের ইচ্ছেটাই পুরণ করলাম। তোমার সবথেকে পছন্দের জিনিষেই তোমার মৃত্যু হলো। আমার এই লাল লিপস্টিক রাঙা ঠোটেঁ।
কথা শেষ করেই বুকের ওপর থেকে আসিফের হাতটা সরিয়ে দিয়ে ওর বুকে মাথা রাখে একটা হাত টেনে নিজের পিঠের উপর রাখল মেঘলা। আর সামলাতে পারছেনা ঘুমে চোখ জরিয়ে আসছে। অনেকগুলো রাত জেগে থাকার পর আজ লম্বা একটা শান্তির ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে ও তাও ওর সবচাইতে প্রিয় জায়গায় মাথা রেখে।