আমার শার্টের কলারে ছোট্ট একটা মাকড়সা, বেশ ছোট্ট। কলারে বসে আছে চুপচাপ। লালচে রঙ মাখানো গা। দূর থেকে মনে হবে লাল রঙের ছিটে পড়েছে কলারে। এমন লাল রঙের ও মাকড়সা হয়?
— আমার দাদী বলেন, গায়ে মাকড়সা বসা হচ্ছে নতুন জামা উপহার পাওয়ার ইঙ্গিত! আপনি একটা শার্ট উপহার পাবেন আজ… সাদা রঙা মেয়েটি কলারের দিকে দৃষ্টি রেখে মুচকি হাসছে। আমি চুপ করে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে পানি খেলাম। মাকড়সা বসে রইলো কলারে। জিজ্ঞেস করলাম,
— বিশ্বাস করেন ওসব?
মেয়েটি হাসিমুখে মাথা নাড়লো। আমি হতাশ হলাম। এই পর্যন্ত যতটুকু জানা হলো, এই জগত সংসারের কোন কিছুতেই মেয়েটির বিশ্বাস নেই। কোন কিছুতে না, কারো উপরে না। ঈশ্বরে ও না! মেয়েটির নাম কনক। কনক অর্থ স্বর্ণ, কনকলতা মানে স্বর্ণলতা। আমি স্বর্ণলতা দেখেছি গ্রামে। পুকুর পাড়ের একটা গাছের ডালে, পাতায় পাতায় সোনালী রঙের চিকন চিকন লতা ঝুলছে টলটল করে..। আমি পুকুরঘাটে হা করে বসে রইলাম অনেকক্ষণ। বিকেলের রোদ পুকুরজলে পড়ে কোনাকুনি গিয়ে স্বর্ণলতায় পড়ছিলো- নড়ছিলো লতাগুলো- এ এক আলো ঝলমল দৃশ্য! কনক এর নামের পেছনে লতা নেই, থাকা উচিৎ। নামের পূর্ণতা অপূর্ণতার ব্যাপার আছে। আম্মু বলেছিলেন, জীবনে অপূর্ণতা বলে কিছুই নেই। যে খালি অংশটাকে অপূর্ণতা মনে হয়, ওই খালি অংশটাও মূলত অপূর্ণতা দিয়েই পূর্ণ! আম্মু জটিল কথা বলেছেন; জটিলতা মাথায় নিয়েই অসুস্থ হয়েছেন। বিছানায় শুয়েই ঘোরে থেকে বিড়বিড় করেছেন- আলতা, আমার আলতা। বাবা কখনোই বলেন নি, আলতা নামের একটা বোন ছিলো আমার। আমি জেনে ফেলেছি। আলতা নামটাও অপূর্ণ! পেছনে বানু থাকাটা উচিৎ।
— আমার দাদী আমায় ডাকেন ভোম্বুস। কনক এতটুকুন বলেই হাসছে। আমিও হেসে বলি,
— আমায় দাদী ডাকেন, ইরুশ বুরুশ টুক্কা।
— ওমা, এর অর্থ কি?
— এসব নামের অর্থ নেই।
কনক শব্দ করে হাসছে। কনকের হাসি দেখেই আমি নিজের উপর যথেষ্ট সন্তুষ্ট হলাম। খুব উন্নতি করছি। চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারছি নির্দ্বিধায়। হাসির দমকে কনকের চোখে জল জমলো। অতটাও মজার ছিলোনা নামটা। মনোবিদ্যা বলে, অল্পতেই যারা হাসে তারা ভীষণ দুঃখী মানুষ! কনকের হাসি থামাতে বেগ পেতে হলো, কিছুক্ষণ পর পর ইরুশ.. বুরুশ.. পর্যন্ত বিড়বিড় করেই উচ্চস্বরে শব্দ করে হাসছে সে। আজিব!
— কেন ডাকতো এই নামে? আমি মুচকি হাসি দিয়ে বলি,
— যখন গ্রামে থাকতাম.. একটা পুকুর ছিলো আমাদের। আমাকে পুকুরে নামতে দিতোনা আম্মু আব্বু। কঠিন বারণ। কেন জানিনা। পুকুর থাকা সত্ত্বেও আমাকে গোসল করতে হতো নলকুপে। খুব মন খারাপ হতো। দাদী বুঝতো আমায়। চুপিচুপি নিয়ে যেত পুকুর পাড়ে। সাঁতার শিখিয়েছেন তিনি। নিজ হাতে গোসল করিয়েছেন। যখন সাঁতার শিখলাম পুরোপুরি- তখন তিনি পাড়ে বসে থাকতেন। আর বলতেন- আমি তিন পর্যন্ত গুনবো.. তুই একটা ডুব দিবি। ঠিকাছে? দেখি কতক্ষণ ডুব দিয়ে থাকতে পারিস! আমি হেসে মাথা নাড়তাম.. আর উনি গুনতেন, ইরুশ… বুরুশ… টুক্কা! হা হা, আমি অমনি ডুব দিতাম। টুপ্স। পরে নাম-ই হয়ে গেল ওটা। কনক হাসতে হাসতে বলে,
— আপনার দাদীর সাথে আমি কথা বলবো.. অবশ্যই বলবো.. কবে নিয়ে যাবেন আমায়? আমি মাথা চুলকে বলি,
— কোনো এক দিন।
— কে কে আছে আপনার আর?
— আব্বু, আম্মু, দাদা, দাদী, নানা, নানী, চাচা, চাচী, ফুফা ফুফি, মামা, মামী, খালা আর বোন একটা। আলতা বানু নাম। ক্লাস সিক্সে পড়ে। ভেরী ট্যালেন্টেড! কনক মুগ্ধ হয়। আলতা বানু নাম শুনে মুগ্ধ হওয়ার কিছু নেই। নামটা খুব সেকেলে। আমার ব্যক্তিগত অপছন্দের।
— আলতা, আলতা বানু। ওয়াও। ছবি দেখাবেন? কনকের ভীষণ আগ্রহ। আমি ফোন বের করি, একটা ছোট্ট মেয়ে পেয়ারা গাছে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে দুষ্টুমি, বেণী করা চুল। হাতে একটা আধখাওয়া পেয়ারা। দাঁত বের করে হাসছে। কনক ছবি দেখে পলক ফেলেনা। ওমা কত্ত কিউট উফফ। আমি কনকের দিকে তাকাই। অল্পতেই এই মেয়ে এত মুগ্ধ হয়। কনক টেবিলে কনুই রেখে থুতনিতে দুইহাতের তালু রেখে আমার দিকে তাকায়, বলে,
— ইদ কেমন কাটলো? পরিবারের সাথে.. বাহ, খুব মজা না? কয় আইটেম রান্না হলো?
— এবার গ্রামে যাইনি আর খানাদানায় আমার আগ্রহ নেই। নামাজ পড়লাম আব্বুর সাথে, বাসায় এসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম অনেকক্ষণ। প্রতি ইদেই করি অমন। ঘ্রান নিই। তারপর আব্বুর পাশে গিয়ে বসে থাকি। তাকে জড়িয়ে ধরতে লজ্জা পাই। উনি প্রতিবার বুঝে ফেলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে হাসেন। তারপর উঠে চলে যান। এই ইদে কি হলো জানিনা, তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে টেনে দাঁড় করিয়ে বুকে জড়িয়ে নেন আমায়। অনেকক্ষণ।
— কতক্ষণ হবে? দশ মিনিট?
— উহু, দুই মিনিট প্লাস হবে.. কনক তাকিয়ে থাকে। চোখের পলক ফেলেনা, শরীর নড়েনা। মাথা একটুও না নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
— ঘ্রানটা কেমন? আমি রুমাল বের করি, প্রচণ্ড গরম। মুখ ঘামে চটচটে হয়ে যাচ্ছে। মুখ মুছে বলি,
— বুঝাতে পারবোনা। ভেজা মাটিতে যে টাইপ গন্ধ থাকে… বাজে বলছিনা, ভীষণ অন্যরকম। আম্মুর গন্ধ আলাদা, আব্বুর গন্ধে ঝাঁঝ বেশি। বুকে মুখ গুজে যেন ঝাঁঝেই আমার চোখে জল এলো কনক চুপচাপ শুনছে। শক্ত চোখ দুটোয় তার একরাশ তৃষ্ণা। একফোঁটা জল নেই। আমি তাকে গল্প শুনাই। দাদা দাদী, নানা নানী আর আমার ছোট্ট বোন আলতা বানুর গল্প। আমার দারুণ এক পরিবারের গল্প! আমি এক গ্লাস পানি আস্তে আস্তে চুমুক দিয়ে খাচ্ছি। সামনে বসা এ্যাশ কালারের শার্ট পড়া ছেলেটি মাত্র গল্প বলা শেষ করে হাঁপাচ্ছে।আমি আরো শুনতে চাচ্ছি। আমার ভীষণ তৃষ্ণা পাচ্ছে। এতবড় একটা পরিবার, গল্পগুলো এত ছোট ছোট কেন… আশফাক বললো,
— কনকলতা, এবার আপনি ছেলেটির নাম আশফাক। আমাকে সে ডাকছে কনকলতা বলে। সবাই কনক ডাকে, পুরো নামে আব্বু ডাকতো আমায় শুধু। পাস্ট টেন্স। আমি একটু কেশে নিয়ে বলি,
— আমাদের ও একিই রকম পরিবার। আমি খুব আদর- স্নেহে মানুষ হয়েছি। গায়ে কখনো একটা ফুলের টোকা পড়েনি। আব্বুর পাগল বলা যায়। এখনো আব্বুর কাঁধে চড়ে বসি। দেখুন.. এখানে এইযে কনুইয়ের নিচে ক্ষতটা, ওইদিন স্লিপ খেয়ে পড়েছিলাম। আব্বু চোখে জল নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো। চোখে জল দেখে দাদী ফোঁড়ন কাটে, ‘এ্যাহহহ.. কই আমার স্ট্রোক হইলো দুইবার, তোর চোখে এক ফোঁটা পানি দেখিনাই, এখন গামলা গামলা জল। নাহ?’- হি হি আমি হাসলাম, আশফাক ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। ওর চোখেও তৃষ্ণা। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হুট করেই ফোন বেজে উঠতেই চমকে উঠলো, পরক্ষণে রিসিভ করে লাউড স্পিকার দিলো, একটা ভারী পুরুষ কন্ঠস্বর জিজ্ঞেস করলো,
— কই আছিস আব্বু? খাইছিস? কখন আসবি আমি অন্যদিকে দৃষ্টি সরিয়ে রাখি। দুই মিনিট কথা বলে আশফাক ফোন রেখে আবার আমার দিকে তাকায়, গভীর তৃষ্ণা তার চোখে, আরো শুনতে চায়। আমি বলি,
— দাদী তো পাগল আমার জন্য। রাতে উনার পাশেই থাকি এখনো। প্রতি রাতে গল্প বলে। কি যে আজিব কিসিমের গল্প বাপরে। আপনি শুনলে হাসতে হাসতে মরে যাবেন। দাদার সাথে বিকেলে হাঁটতে বের হই। আম্মুর আঁচল টেনে টেনে জ্বালাই এখনো। ভাইটার কথা বলতে তো ভুলেই গেছি। এত্তটুকুন ভাই আমার। নাম পটল। হি হি, এটা রিয়েল না। দাদী নাম দিয়েছে। আমিও ডাকি। ক্ষেপানোর জন্যই। পটল সারাদিন আমায় জ্বালাবে। আর আমি বাকি সবাইকে। হি হি.. সেদিন কি হলো শুনুন আশফাক একটা কথাও বলেনা। চুপ করে তাকিয়ে থাকে। একেকটা শব্দ যদি চিবোনো যেত, আশফাক খুব আয়েশ করে আমার গল্পগুলি চিবিয়ে চিবিয়ে খেত। আমার গল্প বলা শেষ হয়না, দুপুর গড়িয়ে যায়। আশফাক খুব আর্দ্র স্বরে জিজ্ঞেস করে,
— আম্মুর বুকে শুয়ে ঘুমোনোর সময় ঘ্রানটা পাননি? আমি ইতস্তত করে বলি,
— হু হুমমম.. পেয়েছি তো। উফফ, এত্ত ভেজা ঘ্রান। নাক থেকে সোজা গিয়ে বুকে লাগে। আম্মু তো বকে শুধু। রেগে যাওয়ার ভান করে। বলে, ঢং করিস না তো। কিন্তু ঘুমোলেই জাপটে ধরে রাখে আমায়। আমি টের পাই; ঘুমাইনা। আমিও ভান করি। হি হি.. তারপর কি হলো শুনুন আশফাক হাসে। আমিও। দুপুর গড়ায়। আমার ফোন বেজে উঠে। রিসিভ করে লাউডস্পিকার দিই, ওপাশ থেকে একটা মায়া মায়া নারীকন্ঠ জিজ্ঞেস করে,
— কই রে আম্মি, খাইছিস? দুপুর হইছে। তাড়াতাড়ি বাসায় আয় প্রায় বিকেল হবে হবে করছে। কনক বের হয়ে আসলো রাস্তায়। টানা তিনঘন্টা কথা বলেছে সে আশফাকের সাথে। বাসায় যেতে ইচ্ছে করছেনা। লাইব্রেরী হয়েই বাসায় যাবে বলে ঠিক করলো। সাথি ফোন দিয়েছে আবার। ওই একিই চিকন মায়া মায়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— কই রে তুই? বাসায় আয়…
— আসছি আম্মু।
— এখনো ছেলেটি সামনে?
— আরে নাহ।
— তো আম্মু আম্মু করছিস কেন? আজিব তো। খাবি কখন গাধি, জলদি বাসায় আয়।
কনক হাসে, এই মেয়েটি এক বৎসরের বড় তার। রুমমেট। একিই রুমে থাকে ওরা। মায়ের মতোন কেয়ার করতে জানে। ভারী মায়াবতী মেয়ে একটা। কনককে-ই যেন খুব বেশি ভালোবাসে। খুব বেশি একা বলেই হয়তো। কনক ওয়ার এন্ড পিস হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে ভাবলো আশফাকের কথা। আশফাককে ভারী পছন্দ হয়েছে ওর। পরিবারটাও। একটা পরিবার দরকার ওর। সত্যি সত্যি পরিবার। সত্যি সত্যি ক’টা নির্দিষ্ট স্বত্তা! যেটা গল্প ছাড়া বাস্তবে কখনোই ছিলোনা তার।
লাইব্রেরী থেকে বের হওয়ার পথেই ধাক্কা খেলো কনক। চোখের ধাক্কা। সামনে আলতা বানু। রাস্তার ওপাশেই। আশফাকের ফোনে যেমনটা দেখেছে, অবিকল তেমন। বেণী করা চুল, দুষ্টু চোখ দুটো। কালো বোরকা পড়া একজন মহিলার হাত ধরে রেখেছে আলতা বানু। রাস্তা পার হবে। মহিলাটা আশফাকের মা নয়তো? কনক আশ্চর্য হলো। প্রথম কয়েক মিনিট ভাবলো, গিয়ে কথা বলে আসি। পরে লজ্জা পেলো। দুর। আলতা বানু মা সহ রাস্তা পার হলো। কনকের কি যেন হলো, আস্তে করে ডাক দিয়ে বসলো,
— আলতা আলতা বানু প্রথমে বুঝলো না, তাকেই ডাকা হচ্ছে। কনকের লজ্জায় মাথা কাটা গেল। তারপরেও এগিয়ে গেল কাছে। লজ্জা লজ্জা মুখে মহিলাকে কদমবুসী করে বসলো। আলতা বানুর থুতনিতে হাত রেখে বললো,
— ওমা কত্ত কিউট। আলতা বানু ক্ষেপে গেলো, একসাথে দুই দুইটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো,
— হালতা কে? আপনি কে? কনক ভ্যাঁবাচেকা খেয়ে মহিলাকে বললো,
— আন্টি আমি আশফাকের ফ্রেন্ড। পরবর্তী প্রশ্ন করলেন, মহিলাটিই,
— আশফাক কে?
আশফাক রাস্তায় নেমে পকেটে হাতড়ে মানিব্যাগ বের করলো, ছয় হাজার টাকা আছে। হাতে একটা প্যাকেট। কনক দিয়েছে। ভেতরে কিছু আছে। অল্প খুলেছে সে, শার্ট! ধবধবে সাদা রঙা। মুচকি হাসলো সে। হয়তো মাকড়সা টের পেয়েছিলো শার্ট উপহার দেবে অথবা কনকলতাই টের পেয়েছিলো আজ ঠিক ওই মুহূর্তে কলারে একটি ছোট্ট মাকড়সা বসবে তার! মাস প্রায় শেষ। আশফাক মানিব্যাগ পকেটে রাখে। এনায়েত চাচাকে জোর করে এক হাজার টাকা গচিয়ে দিতে হবে। রোজ তিন বেলার ফোন বিল, দুই মিনিট করে কথা বলা… এনায়েত চাচা নিতে চায় না। ভারী গমগম স্বরে বলে,
— বাজান, এটা কোনো কথা? তুমি আমার পোলার মতোন ই তো। তিনবেলা তোমারে ফোন দিতে বলছো- তাই দিই; খাওয়া দাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করি, কেমন আছো জিজ্ঞেস করি.. এমনডা না তো! পরথম পরথম তো অমন ই দিতাম। এখন তো নিজ থেইকাই দিই। ফোন না দিলে খালি খালি লাগে। এইডা তো নিজের সন্তুষ্টি। টাকা দিওনা।
আশফাক জোর করে দেয়। বলে,
— চাচা, এটা তো ফোনের জন্য না। এমনিই দিই। বাজার কইরেন, রাতে এসে হয়তো খাব। এনায়েত চাচা গোমড়া মুখে বসে থাকে। এনায়েত চাচার বাচ্চাটার ছেঁড়া পকেটে টাকাটা গুজে দেয় আশফাক। তারপর হাঁটতে শুরু করে। এইদিকের বস্তিগুলো একটু বেশি উৎকট গন্ধভরা। আশফাক দম বন্ধ করে হাঁটে। এনায়েত নামের একগাল দাড়িওয়ালা লোকটা কেমন করে যেন তাকায় আশফাকের হেঁটে চলার দিকে। কত রকমের অসুখী মানুষ পৃথিবীতে!
খোদা মিথ্যে পছন্দ করেন না। এনায়েত হু হু করে কাঁদে। এই অনাথের এইটুকুন মিথ্যের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা তাকে ঠিক কতটুকু শাস্তি দেবেন, জানার খুব ইচ্ছে তার। আশফাকের পা চলেনা আর। প্রচণ্ড গরম। একটা পুকুর যদি পেত। ছোট্টবেলার পুকুরটা; পাড়ে তিনটি কবর। সর্বপ্রথম কবরটি আলতা বানুর। টলটলে পানিতে ডুবে গিয়েছিলো যে ছোট্ট মেয়েটি। একা। পাড়ের আমগাছে ঝুলন্ত স্বর্ণলতা। টলমল টলমল। আলতা বানুকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হয় ওর। ডুব দিয়ে আর উঠেনি মেয়েটি। অথচ তাকে উঠতে হয়! রোজ। উপরে জ্বলজ্যান্ত রুক্ষ একা একটা শহর!
আশফাক দ্রুত হাঁটে- সামনেই একটা মিথ্যে পুকুর। আশফাক মনে মনে মুচকি হাসে। পাড়ে একটা আস্ত পরিবার তার। আব্বু আম্মু আর আলতা বানু পেয়ারা গাছে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে। দাদা চা খাচ্ছে, দাদী ভাঙা স্বরে গুনছে,
ইরুশ… বুরুশ… টুক্কা! ব্যস, রোজকারমতোন আরেকটা ডুব। টুপ্স।