কিপ্টা শিয়াল

কিপ্টা শিয়াল

দীর্ঘ ২ মাস পর শ্বশুর বাড়ি এলাম বউকে নিয়ে! কিন্তু দূঃখের কথা আর কি বলবো কিপটা শ্বশুর বাজার থেকে নিয়ে আসছেন ২০ টাকার পচা পুঁটি মাছ! সেগুলো আমার বউটাই রান্না করে খেতে দিয়েছিল আমাকে! কতবড় কিপ্টার কিপ্টা শ্বশুররে! ভাগ্যে এমন কিপ্টা শ্বশুর জুটলো ভাবতেই কষ্ট লাগে!  দুদিন পর কুরবানী ঈদ ৷ মনে করে নিলাম যে ঈদে অন্তত শ্বশুর বাড়িতে ভাল খাবার খেতে পারব!  এদিকে ঈদ উপলক্ষ্যে বউ বায়না ধরছে তাকে শপিং করে দিতে হবে ৷ বাজেট ধার্য করলাম ১০ হাজার টাকা ৷ টাকাগুলো বউয়ের হাতে দিয়ে বললাম,

__সায়মা আর তুমি একসাথে গিয়ে বাজার করে আসো!
___তুমি যাবেনা?
___নাহ!
___তাহলে আব্বাকে সাথে নিই?
___তোমার ইচ্ছা!

বাপ, মেয়ে আর বোন মিলে গেল শপিং করতে ৷ শপিং শেষ করে বাসায় এসে বউ তার শপিংয়ের পোশাক ও প্রসাধনী দেখাতে লাগল ৷ আমার হাতে মাত্র ৬০০ টাকার শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলছে এটা ৩ হাজার টাকা! শালিকার ৭০০ টাকার থ্রিপিস দেখিয়ে বলছে ৪ হাজার টাকা! বুঝতে পারলাম কিপ্টা শ্বশুর বউকে বোকা বানিয়ে আমার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ৷ অন্তত ৭হাজার টাকা তিনি মেরে নিয়েছেন!
বউকে বললাম,

___শপিংয়ের সময় তোমরা দোকানে ছিলেনা?  বউ জবাব দিল,

___নাহ, আমরা রেস্টুরেন্টে খাচ্ছিলাম ৷ আব্বু ফোনে কাপড়গুলো ক্যামেরা করে পাঠিয়েছিল, সেগুলো আমরা পছন্দ করেছি!

বুঝলাম কিপ্টা শ্বশুরের ব্যাপক বুদ্ধি! তাইতো এত সুন্দর করে মেয়েদের বোকা বানালেন তিনি!  ধৈর্য্য ধরলাম! আর ভাবলাম এতগুলো টাকা তুলব কেমনে? আজ ঈদ! শ্বশুর আব্বা ৩২ হাজার টাকায় কেনা গাভী গরু কুরবানী দিয়েছেন ৷ অথচ ওনার কুরবানী দেবার কথা ছিল ১লাখ টাকার ষাঁড় গরু ৷ শালা থাকে কুয়েত ৷ সে ১লাখ টাকা দিয়েছিল কিন্তু কিপ্টা শ্বশুরের যা করার স্বভাব সেটাই করলেন!

কিন্তু শ্বশুর সাহেবের কিপ্টামি কুরবানী গরুর গোশতের সাথেও বজায় থাকল ৷ তিনি ভাগের যাবতীয় গোশত রাখলেন চাচা-শ্বশুরের ফ্রিজে! কয়েক কেজি গোশত রাখলেন ঈদের ও পরের দিন খাওয়ার জন্য! সেখান থেকে কিছু গোশত দুপুরের জন্য রান্না করতে শ্বাশুরি আম্মার হাতে দিলেন ৷ তিনি রান্না করলেন ৷ খাবার সময় দেখি শ্বশুর আব্বা সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন ৷ লজ্জাজনক ব্যাপার কিপ্টার ঘরের কিপ্টাটা আমার প্লেটে মাত্র দুটা গোশতের টুকরা দিলেন ৷ লজ্জায় অপমানে ইঁদুরের বিষ গলায় পেঁচিয়ে ফাঁস খেতে মন চাচ্ছিল! তবুও শেষপর্যন্ত আশা করছিলাম পরেরবার আরো কয়েক পিচ গোশত দিবে! কিন্তু কি আর বলব শ্বশুরের লজ্জা বলতে কিছু নাই ৷ তিনি তরকারির প্লেটটা নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলেন, আর ফিরে এলেন খালি হাতে! অপমানে আমার মুখটা লাল বর্ণ হয়ে গেল! রাগে, দূঃখে কপাল চাপড়িয়ে বউকে চেঁচিয়ে বললাম,

___চলো, বাড়ি চলে যাব! বউ মিনমিন বলল,
___কেন কি হয়েছে? আমি আরেকটু উঁচু গলায় বললাম,

___কি হয়েছে মানে? দেখছনা তোমার বাপের কারবার! কুরবানী দেওয়া গরুর গোশত, অথচ আমার প্লেটে মাত্র দুটা  দিয়ে চলে গেলেন!  বউ একথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে রইল ৷ শ্বাশুরি আম্মা কিছু বলতে গিয়ে বললেন না ৷ কিন্তু কিপ্টা শ্বশুর বলে উঠলেন,

___জামাই আমি তো জানতাম তুমি এত খাদক না! খাওয়া খাওয়া করা তো তোমার মুখে মানায় না ৷ আর তোমার প্লেটে দুটা গোশতের টুকরা দিছি, সেগুলোর সাইজ দেখছো? ইয়া বড় বড়! অন্য বাসায় গিয়ে দেখ তাদের গোশতদের টুকরা কত ছোট! তোমার প্লেটের ঐ ২ টুকরা গোশত দিয়ে ১০ টুকরো বানাতো তারা! আর গোশত কম খেলেও যা বেশি খেলেও তা! ঐ ২ টুকরার যে স্বাদ পেয়েছো বেশি খেলে সেই স্বাদটা ভুলে যেতে!  শ্বশুরের কথা শুনে মনে হল আমি পৃথিবীতে নেই! অন্য কোনো গ্রহের পাগলা গারদে অবস্থান করে পাগলের প্রলাপ শুনছি! থম মেরে শ্বশুরের কথা শুনছিলাম ৷ তার কথার কোনো জবাব দিতে পারলাম না!  পরের দিন শ্বশুর আব্বা তার মেয়েকে বলতেছে,

___মা, তিনদিন হল বাসায় আসছিস! জামাইকে বল বাজার করতে! আমার টাকায় তো তিনদিন খরচ করলাম!
মলি বলল,

___বাবা, তোমার বাসায় ১দিনের বেশি কোনোদিন থাকিনি ৷ আর এবার একটু কয়েকটা দিন থাকছি বলে খোটা দেওয়া শুরু করছো? কেমন তুমি? আর দাঁড়াও আমি বাজার করার টাকা তোমার জামাইয়ের থেকে আনছি!  চালাকি করে বউয়ের হাতে দুটা হাজার টাকার জালনোট দিলাম যাতে সে শ্বশুরের হাতে দিতে পারে! শ্বশুরও বাজারে গেলেন আমিও গেলাম তার মতিগতি দেখতে! বাজারে চোর নিয়ে গণধোলায় চলছে ৷ হঠাৎ একটা সুন্দরী মেয়ে এসে আমাকে মিষ্টি করে বলতেছে,

___ভাইয়া, এই দুটা নোট একটু ভাংতি করে দিবেন? প্লিজ ভাইয়া প্লিজ! ঔষুধ কিনতে হবে!

আমি আবার মেয়েদের নরম গলায় বলা অনুরোধ ফিরাতে পারিনা ৷ নোট দুটা ভাল করে দেখে বুঝলাম জাল নোট হবেনা হয়তো! যদিও জাল নোট ধরতে পারিনা ৷ একারণেই আমার কাছে ৭টা হাজার টাকার জালনোট এসে জড়ো হয়েছে ৷ যার দুটা তো শ্বশুরকে দিয়ে দিছি! মেয়েটাকে টাকা ভাংতি করে দিলাম আর দুটা হাজার টাকার নোট পকেটে পুড়লাম ৷ ওদিকে শ্বশুর আব্বা মাছের বাজার ও কাঁচা বাজার থেকে সবকিছু কিনে আমার কাছে ফিরে এলেন!  বুঝতে পারলাম না শ্বশুর আব্বা জাল নোট চালালেন কেমনে?  নাকি তিনি নিজের টাকায় বাজার করছেন? কখনো না ৷ উনি যে মাপের কিপ্টা তাতে তিনি এমনটা কখনই করতে পারেননা!  শ্বশুর আব্বার সাথেই বাসায় ফিরলাম ৷ উনি শুধু মিটমিট করে হাসছেন ৷ বুঝলাম না ওনার এভাবে হাসার কারণ! আমাকে দেখে কেন উনি হাসবেন? হুহ! বাসায় এসে রেস্ট নিলাম ৷ রাত্রে খাওয়া দাওয়ার সময় শ্বশুর আব্বা চাপা হাসি হেসে বলতে লাগলেন,

___আজ বাজারে চোর ধরা পড়েছিল ৷ চোরের জন্য আমি দুটা জাল টাকা চালিয়ে নিতে পারছি! সায়মার জন্য  বোরখা কিনতে দোকানে ঢুকছিলাম তখনই চোরের আগমন হয় ৷ বোরখা কিনে টাকা দিব, তখনই নজর পড়লো টাকা তো জাল! দুটা নোটই জাল! দোকানের স্টাপ ছিল একটা মেয়ে তাকে বললাম, “আমার নিকট তো ভাংতি নেই, তুমি একটা কাজ করো মা; মেয়ে মানুষ ভাংতি চাইলে যে কেউ দিবে; ওখানে খুব ভিড়! কারো থেকে ভাংতি পেতে পারো! যাও ভাংতি করে আনো!”  মেয়েটা দুটা জাল নোটই অনায়াসে ভাংতি করে আনলো!  আমার মাথায় বাজ পড়লো, বড়সড় বাজ, কিপ্টা শালার বাপের কথা শুনে! চোখে সত্যি সত্যি অন্ধকার দেখলাম ৷ বুঝতে পারলাম জাল টাকা আমার পকেটে এসেই পড়লো, উল্টা আরো দু হাজার টাকা গচ্ছা গেল!  সিদ্ধান্ত নিলাম যেভাবে হোক শ্বশুরের থেকে বড় বাপের প্রতিশোধ তুলতে হবে!  অন্য একটা ফোনে আরেকটা সিম দিয়ে শ্বশুর আব্বাকে কল দিয়ে গলার স্বরটা পাল্টিয়ে মোটা আওয়াজে বললাম,

___আমি কিডন্যাপার বলছি, আপনার মেয়ে সায়মাকে আমরা কিডন্যাপ করেছি„ তাড়াতাড়ি ১লাখ টাকা নিয়ে এই জায়গাটিতে চলে আসুন!  শ্বশুর আব্বা চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,

___কে বলল আমার মেয়ে কিডন্যাপ হয়েছে?

আমি প্রমাণ দেখানোর জন্য শালিকাকে বেঁধে রাখা অবস্থায় একটা পিক তুলে ওনার ফোনে এমএমএস করে দিলাম! শালিকাকে প্ল্যানে আগেই যুক্ত করছিলাম বলে কাজটা করা সহজ হলো!  পিক দেখানোর পর শ্বশুর আব্বা বিশ্বাস করলেন! তিনি বললেন,

___হ্যাঁ, আমি টাকা নিয়ে আসছি!

বুঝলাম, ব্যাডা ঠ্যালায় পড়েছে ৷ ঠ্যালার নাম বাবাজী ফের প্রমাণিত হলো ৷ আজ তার কিপ্টামি ছুটে যাবে!  ৩ঘন্টা পর শ্বশুর আব্বা আমার আসল নাম্বারে ফোন দিয়ে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন,

___বাবা, আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে!  বুঝতে পারলাম তো বিষয়টা ৷ মনে মনে হাসি দিয়ে বললাম,
___কি সর্বনাশ বাবা?  উনি কান্নার আওয়াজ আরো বাড়িয়ে বললেন,
___তোমার শ্বাশুরি হাসপাতালে! সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়েছে! তার অপারেশনের জন্য দু-লাখ টাকা লাগবে! তুমি দেড় লাখ টাকা নিয়ে ঢাকা এই নামের হাসপাতালে চলে আসো!

শ্বশুর আব্বার কথা সত্য নাকি মিথ্যা বুঝতে পারলাম না ৷ তবে কান্না দেখে বুঝলাম সত্য! বউকে ফোন দিলাম সে শুধু কাঁদে ৷ কোনো কথা বলেনা ৷ বুঝলাম ঘটনা সত্যিই হবে! শ্বাশুরি আম্মার জন্য মায়া হলো! উনি আমাকে খুব ভালবাসেন ৷ ওনার চিকিৎসার জন্য যত টাকা লাগে খরচ করবো! আমি বিকাশ থেকে দেড় লাখ টাকা উঠিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম! হাসপাতালের ভেতরে শ্বশুর আব্বা যেতে দিলেননা ৷ উনি টাকাটা নিয়ে ভেতরে গেলেন ৷ আমিও গেলাম কিন্তু পেলাম না ওনাকে ৷ হাসপাতালের যে রুমে শ্বাশুরি আম্মার থাকার কথা সেই রুমে ঢুকে দেখি আমার বউ তার মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন!  বউকে কাতর কন্ঠে বললাম,

___আম্মা বলে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়েছেন, কই?  বউ কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
___আহতই তো, রিকশায় কাপড় পেছিয়ে গিয়ে পড়ে গেছিল ৷ ভাগ্যিস বড় কোনো দূর্ঘটনা ঘটেনি!

বুঝলাম শ্বশুর আব্বা ফের চালাকি করেছেন!  সে হয়তো টাকাগুলো নিয়ে আমার সাজানো কিডন্যাপারকে দিতে সেদিকে যাচ্ছেন! সিদ্ধান্ত নিলাম কেস খালাস করতে হবে ৷ আমার টাকা আমার হাতেই তো আসবে! এত নাটক করে আর কি লাভ?  ভিন্ন নাম্বারটা দিয়েই শ্বশুর আব্বাকে ফোন দিলাম ৷ উনি ফোন রিসিভ করেই বললেন,

___জামাই, ইয়ার্কি বাদ দিয়ে মেয়েকে বাসায় নিয়ে আসো ৷ সায়মাকে বলে দিও বাপের সাথে বেয়াদবি করলে সোহানের সাথে বিয়েটা ক্যানসেল করবো!  আমি আকাশ থেকে ধপাস করে পড়লাম ওনার কথা শুনে! বুঝলাম না উনি আমাকে ধরতে পারলেন কেমনে?  তাকে কৌতূহলের স্বরে বললাম,

___আপনি বুঝলেন কেমনে যে আমিই কিডন্যাপার সেজেছি?
___আরে বোকা ছেলে, তুমি যে নাম্বারটা দিয়ে ফোন দিয়েছো সেটা তো আমারই নাম্বার! মলিকে দিয়েছিলাম সিমটা যাতে সে ব্যবহার করে ৷ কিন্তু সে যে তোমাকে সিমটা দিবে কে জানতো?  আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম ৷ নিজেকে যুগের শ্রেষ্ঠ বোকা মনে হল! ভাবলাম শ্বশুর আব্বা আমার এতগুলো টাকা নিয়ে কি করবেন? ওনাকে ক্ষীণ স্বরে বললাম,

___আব্বা, আমার এতগুলো টাকা নিয়ে কি করবেন? আর কই গেলেন?  উনি খিলখিল করে হেসে বললেন,
___অনেক দিন ধরে একখন্ড জমি কেনার জন্য একটা লোকের সাথে কথা চলছিল ৷ টাকার জন্য কিনতে পারিনি ৷ আমার ৫০ হাজার আর তোমার দেড়-লাখ এই টাকা দিয়ে জমিটা কিনে নিলাম!  আমি বেহুশ!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত