দুপুর বেলায় মোবাইলটা টেবিলের উপর রেখে আমি টিভি দেখতে ছিলাম ।কিছুক্ষণ পরেই ছোট বোন এসে টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে যায় । আমার মোবাইল দিয়েই ছোট বোন আর ছোট ভাই ওরা অনেক সময় গেমস খেলে মুভি বা নাটক দেখে। আমি তাই কখনোই মোবাইল লক করে রাখি না । তার চেয়ে বড় কথা হয়েছে কখনো লক করে রাখার প্রয়োজন বোধ হয় না কারন আমার মোবাইলে এমন কিছু থাকে না যা পরিবারের কেউ দেখলে সমস্যা হবে ।
কিছুক্ষণ পরেই ছোট বোন চিৎকার দিয়ে মাকে ডাকলো , ডেকে বলতেছে মা আপনার বড় ছেলের কান্ড দেখে যান । তার চিৎকার শুনে ঘরের সব সদস্য এসে হাজির । ছোট বোন আমাকে মোবাইল দেখিয়ে বলে , এসব কি ভাইয়া ।
আমি মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি ।
কে যেন আমাকে এস এম এস এ লিখছে , কেমন আছো বাবু , তোমাকে অনেক মিস করতেছি , তোমার সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে , তিন দিন হয়ে গেছে তোমার সাথে দেখা হয়নি , আমার কিছু ভালো লাগছেনা বাবু ।
আমি মেসেজ গুলো দেখে পুরাই টাস্কি খেয়ে বসে আছি । এসব কি , আমি জীবনে কোন মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারলাম না। কিন্তু এখন যখন একটা মেয়ের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হয়েছে । ঈদের কয়েকদিন পরেই তার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা । এর মধ্যে এ আবার কোন মেয়ে আমাকে এসব লিখছে ।
আমি পরিবারের সবাইকে বোঝাতে লাগলাম যে আমি এই মেয়েটার সম্পর্কে কিছু জানি না , বলতেও পারব না । কিন্তু কে শুনে কার কথা কেউ আমাকে বিশ্বাস করলো না ।
কিছুক্ষণ পর সেই নাম্বার থেকে আবার একটা এসএমএস আসে । তাতে লেখা , আচ্ছা বাবু তোমার পরিবার যদি আমাকে পছন্দ না করে তুমি বলছিলে তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে তুমি আমাকে বিয়ে করবে । আচ্ছা যদি সত্যি সত্যি তোমার পরিবারের আমাদের সম্পর্ক মেনে না নেয় তাহলে কি সত্যিই আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে ।
এই মেসেজটা দেখার পর মনে হয় ঘরের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে । ছোট বোন বলতেছে ভাইয়া আপনার কাছ থেকে এসব আশা করিনি । আমাদের কত স্বপ্ন আছে আমাদের বড় ভাইয়ের বিয়েতে আমরা অনেক আনন্দ ফুর্তি করব । আর আপনি কিনা পালিয়ে বিয়ে করে আমাদের সব স্বপ্ন মাটি করে দিতে চান ।
মা রেগে গিয়ে বলল , তোকে আমি কতবার জিজ্ঞেস করছিলাম, কোন মেয়ের সাথে তোর রিলেশন আছে কিনা থাকলে আমাদেরকে বল। তুই বলছিলি তোর রিলেশন নাই , এখন যখন তোরে বিয়ের কথা বার্তা ফাইনাল হয়েছে আর এসব কি দেখতেছি । তোর থেকে এটা আমি আশা করিনি জাবেদ ।
আব্বা তো রেগে আগুন, তোর জন্য আমাদের সব মান সম্মান মাটিতে মিশে যাবে । ঈদের পরে তোর বিয়ে , এখন যদি সুমির বাড়ির লোকেরা এ সব জানতে পারে । তাহলে কি অবস্থা হবে তুই একবার ভেবে দেখছিস ।( সুমি হচ্ছে যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে )
আমার ছোট ভাই মমিন বললো , বড় ভাইয়ের কাছ থেকে তো ছোট ভাইয়েরা অনেক কিছু শিখে । আপনি যদি এখন এই অবস্থা করেন তাহলে আমরা বড় হলে আমরা কি করব ।
তখনই আমার মেজো ভাই জাহেদ বাইরে থেকে এলো , এসে যখন দেখল সবাই আমাকে ঘিরে আছে তখন সে জানতে চাইল কি হয়েছে । সবাই যখন বলল আমি কোন মেয়ের সাথে রিলেশন এ আছি ।কথাটা শুনে জাহেদ আমার পাশে এসে বসে বললো – ভাইয়া মেয়েটা কোথায় থাকে, নাম কি, দেখতে কেমন, আমাদেরকে তো কখনোই বললেন না ভাবীর কথা ।
মানে কাটা শরীরে লবণ ছিটা দেওয়া । আমার তখন করুন অবস্থা আমি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে সবাইকে অনেক করে বোঝাতে চাইলাম । আমি সত্যিই কোন প্রেম করিনা কোন রিলেশনে আমার নেই । কিন্তু তারা কেউ আমার কথা বিশ্বাস করল না ।
কিছুক্ষণ পরে সেই নাম্বার থেকে আবার এসএমএস । তখনো মোবাইল আমি আমার হাতে পায়নি ।ছোট বোনের হাতে মোবাইল ছিল সে সবাইকে পড়ে শোনাচ্ছিল এসএমএস ।
সে লিখলো – আচ্ছা বাবু তুমি কোন রিপ্লাই দিচ্ছ না কেন , আর তোমার আগের সিমটা বন্ধ কেন কি হয়েছে ।
ছোট বোন বলে, দেখছেন ভাইয়া কত চালাক গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথাবার্তা বলার জন্য আলাদা সিম নিয়ে রেখেছে । যাতে করে আমরা বলতে না পারি , দাঁড়ান দেখাচ্ছি মজা ।
তারপর আমার ছোট বোন রিপ্লাই দিলো , আমিও তোমাকে অনেক মিস করছি জান আমারও ইচ্ছে করছে তোমার সাথে দেখা করতে, চলো আজকে বিকেলে আমরা দেখা করি ।
কিছুক্ষণ পরেই আবার এসএমএস আসলো – ছোট বোন এসএমএস পড়ে সবাইকে শুনাচ্ছে ।তাতে লেখা – ওকে ঠিক আছে বাবু তাহলে আমরা আজকে বিকালে দেখা করতেছি । সব সময় যেখানে দেখা করি আজকে সেখানে আসবে । আর শোনো বাবু তুমি যে আমাকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলে আমি সেই শাড়ি পরে আসবো ।আর আমি যে তোমাকে দুটো পাঞ্জাবি গিফট দিয়েছিলাম, সেখান থেকে তুমি একটা পাঞ্জাবী পড়ে আসবে ।
এ কথা শোনার পর থেকেই পরিবারের সবাই একে আরেক জনের মুখের দিকে তাকাতে লাগল । কারণ আমার জীবনে আমি কখনো পাঞ্জাবি পড়িনি , আমার কোন পাঞ্জাবি ও নাই । কিছুক্ষণ পরে সবার নজর গেল আমার মেজো ভাই জাহেদের দিকে , কারণ তিন দিন আগে সে দুইটা পাঞ্জাবি নিয়ে এসেছিলো , সে বলছিল সে মার্কেট থেকে কিনে এনেছে ।
সাথে সাথে কি দেখলাম জাহেদ আমার পাশ থেকে উঠে দিল এক দৌড় , দৌড়ে সেখান থেকে পালালো ।
পরে জানতে পারলাম আসল ঘটনা , ওই মেয়েটা হচ্ছে আমার মেজ ভাই জাহেদের গার্লফ্রেন্ড । সকালেই হাত থেকে পড়ে তার মোবাইলটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল । তাই সে সকালে আমার মোবাইল দিয়ে তার প্রেমিকার সাথে কথা বলছিলো । আর সেখান থেকেই এত কিছু ।
রাত আটটা বাজে জাহেদ বাসায় আসলে , তাকে ঘিরে বসে পরিবারের সবাই । দুপুরে আমার যে অবস্থা হয়েছিল , সেই একই করুন অবস্থার মধ্যে এখন জাহেদ আছে ।
সমাপ্ত